ইসলাম

কৃপণতার শাস্তি

কৃপণতা একটি মন্দ স্বভাব। তা শুধু মানুষের অভাবই বাড়িয়ে দেয়। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, তারা যেন সম্পদগুলোকে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করছে। রাসুল (সা.) কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে বনু সালামা! তোমাদের নেতা কে?’ আমরা বললাম, ‘জুদ্দ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি।’ তিনি বলেন, ‘কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কী হতে পারে?’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৯৬) অতিরিক্ত লোভ-লালসা থেকে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। অথচ লোভ-লালসা মানুষকে পাপাচারে ডুবিয়ে দেয়, যা মানুষের সফলতার চেয়ে ধ্বংসই বেশি ডেকে আনে।

কৃপণতা পূর্ববর্তী অনেক জাতির ধ্বংসের কারণ হয়েছে। তাই রাসুল (সা.) স্বীয় উম্মতদের এই অভ্যাস ত্যাগ করার তাগিদ দিয়েছেন। একদা রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে।

অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)

রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা এই অভ্যাস থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৪০)

তিনি বলতেন যে মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে সে-ই নিকৃষ্ট মানুষ।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫১১)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের মধ্যে দুটি স্বভাব একত্রে জমা থাকতে পারে না—কৃপণতা ও অসদাচরণ। (মিশকাত, হাদিস : ১৮৭২)। সম্পদ আল্লাহর দান। আল্লাহর দেওয়া সম্পদ তার দেওয়া নিয়ম মেনেই পরিচালিত করতে হবে। সময়মতো তার জাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। পরিবার-পরিজনের জন্যও খরচ করতে হবে, অন্যথায় নিজের যত্নে গড়া সম্পদই সাপ হয়ে নিজেকে দংশন করবে।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, ‘আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত অর্থ।’ অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) তিলাওয়াত করেন, ‘আল্লাহ যাদের সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরেই কিয়ামত দিবসে যা নিয়ে কার্পণ্য করছে, তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে।’ (আল-ইমরান, আয়াত : ১৮০; বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *