খলীফা নিযুক্ত করার ব্যাপারে হযরত উমর (রাযি.)- এর আমানতদারিতা
হযরত উমর ফারুক (রাযি.) যখন আততায়ীর আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন, তখন কয়েকজন সাহাবী তাঁর কাছে এসে আরয করেছিলেন, দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার আগে আপনি কাউকে স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে যান, যাতে আপনার পর তিনি রাষ্ট্রের শান্তি-শৃংখলা রক্ষা করতে পারেন।
কেউ কেউ তাঁর পুত্র বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ‘আব্দুল্লাহ (রাযি.)-এর নাম প্রস্তাব করল। হযরত উমর (রাযি.) প্রথমে বললেন, তোমরা আমার সামনে খলীফা হিসেবে এমন একজনের নাম প্রস্তাব করছ, যে স্ত্রীকে তালাক কেমনে দিতে হয় তাও জানে না । তারীখুল খুলাফা, পৃ: ১১৩
ঘটনা হল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যমানায় একবার হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) তাঁর স্ত্রীকে মাসিক চলা অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন। কিন্তু শরী’আতের বিধানে স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় তালাক দেওয়া জায়েয নয়। হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.)-এর এ মাসআলা জানা ছিল না। নবীজি তা জানতে পেরে বললেন, তুমি এটা ভুল করেছ। কাজেই স্ত্রীকে এখন ফেরত নিয়ে নাও আর একান্ত যদি তালাক দিতেই চাও, তবে পবিত্র অবস্থায় তালাক দিও।
হযরত উমর (রাযি.) এই ঘটনার দিকেই ইংগিত করে বলেন, তোমরা এমন এক ব্যক্তিকে খলীফা বানাতে চাও যে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়মও জানে না। অতপর হযরত উমর (রাযি.) তাদেরকে দ্বিতীয় উত্তর দিলেন যে, খিলাফতের এ ফাঁস খাত্তাবের সন্তানদের একজনের গলায় লেগেছে এই তো যথেষ্ট। অর্থাৎ বার বছর যাবত এই ফাঁস আমার গলায় লেগে আছে । ব্যস যথেষ্ট হয়েছে । আমার বংশের আর কারও গলায় আমি এ ফাঁস লাগাতে চাই না। কেননা, আমি জানি না, আল্লাহ তা’আলার দরবারে যখন এ দায়িত্ব সম্পর্কে আমাকে হিসাব দিতে হবে তখন আমার কী অবস্থা হবে ।
হযরত উমর ফারুক (রাযি.) তো সেই মহান খলীফা, যার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুসংবাদ শুনিয়েছেন উমর জান্নাতে যাবে।
এ সুসংবাদের পর তো তার জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলার সামনে হিসাব নিকাশের কী প্রবল ভীতি তাঁর অন্তরে কাজ করত এবং খিলাফত যে এক গুরুভার আমানত এর কী গভীর অনুভূতি তিনি লালন করতেন !
এ গুরুভার সম্পর্কে তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন এ আমানতের হিসাব দিয়ে যদি আমি সমান-সমান পার পেয়ে যাই এবং আমার কাঁধে ছওয়াব ও গুনাহ কিছুই না থাকে, ফলে পাপ-পুণ্য যাদের সমান-সমান তাদের মত জান্নাত-জাহান্নামের মধ্যবর্তী এলাকা আ’রাফে আমাকে পাঠিয়ে দেওয়৷ হয়, তাতেও আমি খুশী। কারণ অন্তত জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি তো পেয়ে গেলাম । প্রকৃতপক্ষে এটাই আমানত ভার সম্পর্কে যথাযথ অনুভূতি, যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর অন্তরে দান করেছিলেন । আল্লাহ তা’আলা এ অনুভূতির সামান্য একটা অংশও যদি আমাদের অন্তরে সৃষ্টি করে দেন তবে অতি সহজেই আমাদের বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।
বই : মন্দচরিত্র ও তার সংশোধন
লিখক : জাস্টিজ আল্লামা তাকী উসমানী