ইসলাম

জুয়ার অপকারিতা

জুয়া খেলাতে বহু অপকারিতা নিহিত আছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হল।

১. জুয়ার মধ্যে লাভ ও ক্ষতি উভয়বিদ সম্ভাবনা থাকে। এতে জয়লাভকারীর কেবল লাভই লাভ। আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। এ খেলায় পরাজিত ব্যক্তির মাল জয়লাভকারী ব্যক্তির হাতে চলে যায়। যে ব্যক্তি লাভবান হয় সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে রক্তপিপাসুতে পরিণত হয়ে পড়ে এবং জয়লাভকারী ব্যক্তি রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ে তোলে। আর পরাজিত ব্যক্তি দিন দিন সম্পদহারা হতে থাকে। জুয়ারী ব্যক্তির টাকা পয়সা না থাকলে সে সম্পদ বিক্রি করে, প্রয়োজনে ঘরের সামানপত্র; এমনকি বাড়ি-ঘর বিক্রি করেও এ খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। তাতেও খেলা সম্ভব না হলে চুরি, ডাকাতি করে হলেও খেলায় অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করে। অভিজ্ঞতা এ কথা প্রমাণ করে যে, জুয়া খেলার সাথে চোর ডাকাতের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি।

মোট কথা হচ্ছে, এই খেলায় যেমন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় তেমনি এতে মানুষের চারিত্রিক ক্ষতিও রয়েছে চরমভাবে।

২. জুয়ার একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, জুয়ারী প্রকৃত উপার্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। কেননা তার একমাত্র চিন্তা থাকে যে, বসে বসে একটি বাজির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই অন্যের মাল হস্তগত করা যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না । পরিণামে জুয়ারী মানুষগুলো ক্রমান্বয়ে অলস হয়ে পড়ে। দেশের ও দশের উন্নয়নে তারা কোন অবদান রাখতে পারে না।

৩. জুয়ার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, জুয়াও মদের মত পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। পরাজিত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই জয়ী ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। জুয়ার জয়-পরাজয় এক পর্যায়ে মারামারি এমনকি হত্যা পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়। এর ভুরি ভুরি নজির আমাদের নিকট বিদ্যমান আছে।

৪. জুয়ারী ব্যক্তি জুয়ার নেশায় মদখোর ব্যক্তির ন্যায় মাতাল অবস্থায়ই থাকে সর্বদা। এ কারণে সে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, আত্মীয় কারোই খবর রাখতেপতির তা। ফলে জুয়ারী ব্যক্তি তার পরিবারকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলতে পারে না। ছেলে-মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত বানাতে পারে না। বরং তারাও পিতার দেখাদেখি ঐ সর্বনাশা খেলায় অংশগ্রহণের প্রয়াস পায়। এমনি করে জুয়ারী ব্যক্তির পরিবার ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে যায়। জুয়ারী ব্যক্তির মেজাযে সর্বদা রুক্ষতা বিরাজমান থাকে। লাভবান ব্যক্তি আরো লাভের নেশায় মাতাল হয়ে ওঠে। আর পরাজিত ব্যক্তি প্রতিশোধের আশায় উন্মাদ হয়ে ওঠে। তাই স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের সাথে তার বিবাদ ও ঝগড়া সর্বদা লেগেই থাকে। বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা এ জাতীয় লোমহর্ষক ঘটনার পেছনে জুয়ার প্রভাবকে খাটো করে দেখা যায় না ৷

৫. জুয়ার সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকর দিকটি হল, এ খেলায় মানুষ আল্লাহর থেকে বিমুখ এবং নামায রোযা তথা ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে চরমভাবে উদাসীন হয়ে যায়। কেননা, জুয়ারী ব্যক্তির একমাত্র ধ্যান থাকে কেমন করে আরো টাকা হাসিল করা যায় অথবা কেমন করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। কাজেই জুয়ার এ সর্বনাশা গ্রাস থেকে আমাদের দূরে থাকা অপরিহার্য।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *