মজলিসের কথাবার্তা ও অন্যের গোপন কথাও আমানত
মজলিসের কথাবার্তা আমানত
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেন, الْمَجَالِسُ بِالْامَانَةِ ‘মজলিস আমানতের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ মজলিসে যারা উপস্থিত থাকে মজলিসের কথাসমূহ তাদের জন্য আমানত। এর হেফাজত জরুরি।
উদাহরণত এক বৈঠকে দু’তিনজন লোক ছিল। পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুসুলভ সরলতাবশত তাদের একজন তার একান্ত কোন ব্যক্তিগত কথাও সেখানে বলে ফেলল এবং নিজের গোপন কোন বিষয় প্রকাশ করে ফেলল। ব্যস তার সে কথা অন্যদের জন্য আমানত হয়ে গেছে। তার অনুমতি ছাড়া সে কথা অন্য কারও কাছে বলা জায়েয নয়। বললে তা খেয়ানত হয়ে যাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে মানুষ সচেতন নয়।
অনেকেরই অভ্যাস হল এর কথা ওর কাছে এবং ওর কথা এর কাছে লাগিয়ে দেওয়া। এর থেকে নানা অশান্তি ও কলহের সৃষ্টি হয়। হ্যাঁ মজলিসে যদি কেউ এমন কোন কথা বলে যা দ্বারা অন্য কারও ক্ষতির আশংকা আছে, তবে সেই ব্যক্তিকে তা জানিয়ে দেওয়া কর্তব্য। যেমন দু’তিনজন মিলে কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে । তারা সিদ্ধান্ত নিল অমুক সময়ে তার বাড়িতে তারা আক্রমণ চালাবে । বলা বাহুল্য এরূপ কথা গোপন করার বিষয় নয় ; বরং দ্রুত সেই ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত যে, তোমার বিরুদ্ধে এরূপ ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু এরূপ বিষয় না হলে মজলিসে বলা কারও গোপন কথা অন্যদের কাছে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ।
অন্যের গোপন কথাও আমানত
অনেক সময় এমনও হয় যে, মজলিসে কেউ কারও একটা গোপন কথা শুনল । সে অন্য কারও কাছে গিয়ে তা বলে দিল এবং সাবধান করে দিল যে, দেখ এটা কিন্তু অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার । তোমাকে জানালাম, কিন্তু তুমি যেন অন্য কারও কাছে প্রকাশ করো না। সে মনে করে যেহেতু কাউকে বলতে মানা করে দিয়েছে, তাই তার দ্বারা আমানতের খেয়ানত হয়নি, সে আমানতের যথাযথ হেফাজত করেছে । অতঃপর ওই দ্বিতীয় ব্যক্তিও এক্ই কাজ করে। তৃতীয় একজনকে তা জানিয়ে দেয় এবং সাবধান করে দেয় অন্য কাউকে যেন না বলে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তা বিস্তার হতে থাকে আর প্রত্যেকেই মনে করে সাবধান করে দেওয়ার কারণে গোপন কথা প্রকাশে তার কোন দোষ হয়নি এবং সে আমানত রক্ষা করেছে । অথচ ব্যাপারটা গোপনীয় হওয়ায় প্রথম ব্যক্তির জন্যও তা প্রকাশ করা জায়েয হয়নি। যতই সে তা অন্যকে বলতে নিষেধ করুক। তারপরও সে আমানতের খেয়ানত করে ফেলেছে এবং একটি নাজায়েয কাজ করেছে।
মানুষের এ অভ্যাস সমাজের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। আমাদের সমাজে নানারকম অশান্তি এ পথেই বিস্তার লাভ করে। আপনি লক্ষ করলে দেখবেন, লাগানি-ভাঙ্গানি সামাজিক সব অশান্তির মূল। একজন কারও কাছে গিয়ে বলল, অমুকে আপনার সম্পর্কে এই-এই কথা বলছিল। এ কথা শোনামাত্র তার অন্তরে সেই ব্যক্তির প্রতি ক্ষোভ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেল। অতঃপর উভয় পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে কতটুকু কি করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল। সেই প্রতিযোগিতা থামানোর সাধ্য কার ? এ কারণেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই লাগানি-ভাংগানির কাজে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন।
বই : মন্দচরিত্র ও তার সংশোধন
লিখক : জাস্টিজ আল্লামা তাকী উসমানী