ইবাদত

লটারীও এক প্রকার জুয়া

লটারীও এক প্রকার জুয়া। লটারীকে সাধারণ জিনিস মনে করা এবং একে জনকল্যাণমূলক কাজের নিমিত্তে জায়েয মনে করা কোনক্রমেই সহীহ হতে পারে না। জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে যারা লটারীকে জায়েয মনে করে তারা নৃত্য ও হারাম শিল্প ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতেও পিছপা হয় না । অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ الَّا طَيِّبًا আল্লাহ তাআলা পাক-পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিসই কবুল করে থাকেন।

যারা লটারী ব্যবস্থাপনা করে থাকে তাদেরকে এ সম্বন্ধে শরীয়তের বিধান শুনানো হলে তারা বলে, এতে ক্ষতি কি, এতে তো মানুষের বহু উপকার রয়েছে। তাদের নিকট আমাদের বক্তব্য হল, কোন বস্তুতে সাময়িক কিছু উপকার বা লাভ আছে বলেই তা হারাম হতে পারে না এমন কথা নয়।

কেননা, যে বস্তুতে উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি তাকে কোন অবস্থাতেই প্রকৃত উপকারী বস্তু বলে স্বীকার করে নেওয়া যায় না। অন্যথায় পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বস্তুতেও কিছু না কিছু উপকার নিহিত থাকা মোটেও বিচিত্র নয় । প্রাণ সংহারক বিষ, সাপ, বিচ্চু বা হিংস্র জন্তুর মধ্যেও কিছু না কিছু উপকারিতার দিক অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু সামগ্রিকতার বিচারে এগুলোকে ক্ষতিকর মনে করা হয় এবং এসব থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেওয়া হয়। অনুরূপভাবে আভ্যন্তরীণ দিক থেকে যে বস্তুতে উপকারের তুলনায় ক্ষতি বেশি, শরীয়ত সেগুলোকেও হারাম সাব্যস্ত করেছে। চুরি-ডাকাতি, যিনা, প্রতারণা এমন কি জিনিস আছে যাতে উপকার কিছুই নেই। উপকার আছে বলেই এগুলোকে কেউ জায়েয মনে করে না। লটারীর বিষয়টিও ঠিক তদ্রূপ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও এতে উপকার আছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ হচ্ছে জুয়া এবং ধোকা। কাজেই শরীয়তের দৃষ্টিতে লটারীও হারাম। স্মর্তব্য যে, কোন মহৎ কাজের জন্য নাজায়েয তরীকা অবলম্বন করা কোনভাবেই বৈধ নয়। কুরআন-হাদীসে এর কোন নজির নেই। বস্তুত জনকল্যাণের ধোয়া তুলে যারা এসব লটারীর ব্যবস্থা করে থাকে মূলত জনসেবার পরিবর্তে আত্মসেবাই তাদের সামনে থাকে মুখ্য। সুন্দর চাকচিক্যময় লেভেল লাগিয়ে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়াই তাদের লক্ষ্য। মুসলমান হিসাবে এসব প্রতারকদের থেকে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য যে, বন্ডও এক প্রকার লটারী। কাজেই লটারীর ন্যায় এটিও হারাম।

দাবা খেলা

দাবা খুব নাম করা খেলা। আরবী ভাষায় একে শতরঞ্জ বলা হয়। ফকীহদের কেউ কেউ এ খেলাকে হারাম বলেছেন। ইবন উমর (রা.) বলেন- هُوَ شَرٌ مِّنَ النَّرْدِ দাবা খেলা পাশা তথা ছক্কা-পাঞ্জা থেকেও খারাপ। হযরত আলী (রা.) বলেন-এই খেলাও এক প্রকার জুয়া। হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ বেহেশতি জেওরে এ কথা উল্লেখ করেছেন যে, হাদীস শরীফে দাবা খেলা সম্বন্ধে নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান রয়েছে। অধিকন্তু এ খেলাতেও এমন নেশা রয়েছে যা মানুষকে দীন-দুনিয়া তথা সব কিছু থেকে গাফিল করে দেয়। কাজেই এ খেলা কোনক্রমেই পছন্দনীয় খেলা হতে পারে না। [আল হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম] অনুরূপভাবে ক্যারম, লুডু ইত্যাদি খেলাও লোকদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন বানিয়ে দেয় এবং এতে সময় অপচয় হয় দারুণভাবে। তাই এই সমস্ত খেলাও পছন্দনীয় নয় । [বাংলা বেহেশতি জেওর : ২য় খণ্ড : পৃ. ১৮২]

ফুটবল, ক্রিকেট, হা-ডু-ডু ইত্যাদি খেলা

ফুটবল, ক্রিকেট, হা-ডু-ডু ইত্যাদি খেলাও নাজায়েয হওয়ার বহু কারণ বিদ্যমান রয়েছে। কেননা, এসব খেলায় বহু ক্ষতিকারক বিষয়াশয় এবং অপকারিতা রয়েছে।

প্রথমত এসব খেলায় হার-জিত রয়েছে। এগুলো জয়-পরাজয় ছাড়া চিন্তাওকরা যায় না। এ কারণে খেলোয়াড়দের মধ্যে ভীষণ জিদ ও হিংস্রতা এসে যায় যা আমরা সর্বদাই প্রত্যক্ষ করে থাকি। যার ফলে খেলার মধ্যে উভয় পক্ষ জয় লাভের জন্য গোয়ার্তুমি, অন্যায় ও নিষিদ্ধভাবে শক্তি প্রয়োগ, মিথ্যা কলা-কৌশল ইত্যাদির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এসব কাজ শরীয়তে নিষিদ্ধ এবং হারাম।

দ্বিতীয়ত খেলার মধ্যে যে পক্ষ হেরে যায় তারা তাদের এ হারকে কেটে উঠে জয়কে নিজেদের করায়ত্ব করার জন্য ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিয়ে উন্মাদের মত হয়ে যায়। কার্যসিদ্ধির জন্য প্রয়োজন বোধে এক পক্ষের খেলোয়াড় অন্য পক্ষের খেলোয়াড়ের প্রতি অন্যায়ভাবে আঘাত হানে। এমনকি বিভিন্ন সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দারুণ ক্ষতি সাধন করে হলেও উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করে। ফলে খেলার মাঠে সংঘর্ষ, হানাহানি এবং মারামারি পর্যন্ত সংঘটিত হয়। অনেক সময় এ বিবাদ শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা দর্শক এবং উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তখন খেলাটি আর খেলা থাকে না। বরং তা দস্তুর মত একটা যুদ্ধের রূপ ধারণ করে। এরই ফলশ্রুতিতে একটি সামান্য খেলাকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষের শত শত লোক আহত হয় ।

তৃতীয়ত কোন কোন খেলার মধ্যে আরেকটি বড় ধরনের পাপের কাজ হল ফরয তরক করে খেলায় অংশগ্রহণ করা। এমনিভাবে খেলার কারে খেলোয়াড়রা স্বভাবতই নামাযও তরক করে থাকে। এছাড়াও খেলার আরেকটি ক্ষতিকর ব্যাপার হল এই যে, এতে পার্থিব আমোদ-প্রমোদ ছাড়া আর কিছুই নেই । এর মধ্যে মুসলমানের কোন ফায়দা নেই।

উপরোল্লেখিত কারণসমূহের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, এ সব খেলাধুলা হারাম। এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, খেলাধুলার মধ্যে আমোদ-ফুর্তি তথা বিনোদন প্রকাশ হয় যা মানব জীবনের স্বাভাবিক চাহিদা। সর্বোপরি এর মধ্যে শারীরিক ব্যায়ামও রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য মজবুত হয় এবং রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। কাজেই খেলাধুলা নাজায়েয হতে পারে না। এ প্রশ্নের জবাবে আলিমগণ বলেন, যদিও খেলাধুলার মধ্যে উপরোক্ত ফায়দা নিহিত আছে কিন্তু এর অপকার উপকারের চেয়ে অনেক বেশি। কাজেই উক্ত খোঁড়া যুক্তির ভিত্তিতে খেলাধুলাকে বৈধ বলা আদৌ ঠিক নয়।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *