শয়তানকেও গালমন্দ করা যাবেনা
শয়তান অর্থ বিতাড়িত, বিদূরিত, বঞ্চিত ইত্যাদি। শয়তান হক থেকে বিদূরিত এবং কল্যাণ থেকে বঞ্চিত বলে তাকে শয়তান বলা হয়। এ ছাড়া তার আরও নাম আছে। শয়তানের খাদ্য হলো, হাড়, গোবর ইত্যাদির ঘ্রাণ ও বিসমিল্লাহবর্জিত খাদ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, শয়তান তা নিজের জন্য বৈধ মনে করে।’ তার পানীয় হলো মদ, শিকারের ফাঁদ হলো নারী, বার্তাবাহক হলো গণক, কিতাব হলো অশ্লীল কল্পিত গ্রন্থাবলি, কথা হলো মিথ্যা, মুয়াজ্জিন হলো বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র, উপাসনালয় হলো বাজার।
মহানবী (সা.) বলেন, জিন তিন ভাগে বিভক্ত। এক দল পাখাবিশিষ্ট, বাতাসে উড়ে বেড়ায়। আরেক দল সাপ ও কুকুর (উভয় প্রাণী আদিতে শয়তানের সহায়ক শক্তি ছিল), অপর দল পৃথিবীতে বিচরণ করে। (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ৩৭০২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ইবলিসের নাম ছিল আজাজিল। সে ছিল ফেরেশতাদের মধ্যেও সম্মানী। তার চারটি পাখা।’ তিনি অপর বর্ণনায় বলেন, ‘ইবলিস ছিল ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করার কারণে তাঁর ক্রোধে পড়ে শয়তান হয়ে যায়।’ আবু জায়েদ, হাসান, কাতাদাহ প্রমুখ বলেন, ইবলিস জিন জাতির আদি পিতা, যেমন—আদম (আ.) মানবজাতির আদি পিতা। তবে সে ফেরেশতা নয়। গ্রিক ভাষায় তার নাম আজাজিল, আর আরবি ভাষায় হারিস। (তাফসিরে কুরতুবি : ১/২৩৬)
শয়তানের প্রধান কাজ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, কুমন্ত্রণা দেওয়া, খারাপ ও হারাম কাজকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ শিক্ষা দেওয়া—এগুলোই তার প্রধান কাজ। মানুষ এসব কাজ করলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর ক্রোধান্বিত হবেন, মানুষ আল্লাহর নাফরমানির ক্ষেত্রে শয়তানের সমান হয়ে যাবে, এ জন্য শয়তান প্রতিনিয়ত এসব করে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, মানুষকে এভাবেই বিভ্রান্ত করে চলে। এটাই তার প্রধান কাজ ও মিশন।
শয়তানকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন, যাতে পৃথিবীতে সে একটা নিদর্শন হিসেবে থাকে। অন্যরা তার থেকে শিক্ষা নেবে। বিশেষভাবে মানুষ যেন তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। যারা আল্লাহর অনুসরণ করে না, আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী চলে না, ভেতরে অহংকার লালন করে, তাদের পরিণতি কী হয়, এটার অন্যতম দলিল, শয়তান। যদি মানুষ শয়তানের অনুসরণ করে, তার মতো হয়, তাহলে তার পরিণতিও শয়তানের মতো হবে।
অনেকে শয়তানকে গালমন্দ করে থাকে। এটা অনুচিত। কারণ শয়তানকে গালি দিলে তার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। আবু মালিহা (রহ.) বলেন, একজন সাহাবি আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘একদিন আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে আরোহণ করলাম। এমন সময় উট লাফালাফি করতে থাকলে আমি বললাম, শয়তানের সর্বনাশ হোক।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি বলো না শয়তানের সর্বনাশ হোক! কেননা এমন বললে শয়তান আত্মগৌরবে ফুলে উঠে ঘরের সমান হয়ে যায় এবং বলতে থাকে আমি খুবই শক্তিমান। তুমি আল্লাহর নাম নেবে। কারণ এমন সময় যদি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তবে সে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ : ৪৯৮২)