সমকাম বা পায়ুগমন কি ?
সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয় ৷ সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহ্’র কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত্ব (আ:) এর সম্প্রদায়কে এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَلُوْطاً إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِيْنَ ، إنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّساءِ ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُوْنَ )
অর্থাৎ আর আমি লূত্ব কে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় ৷ (আ’রাফ : ৮০-85 )
আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেনঃ وَ لُوْطاً آتَيْنَاهُ حُكْماً وَّ عَلْماً ، وَ نَجَّيْنَاهُ منَ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ تَعْمَلُ الْخَبَائِثَ ، إِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسقَيْنَ )
অর্থাৎ আর আমি লূত্ব কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাঁকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায় ছিলো। ( আম্বিয়া : ৭৪ )
আল্লাহ্ তা’আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেনঃ قَالُوْا إِنَّا مُهْلَكُوْا أَهْل هَذه الْقَرْيَة ، إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوْا ظَالِمِيْنَ )
হযরত লূত্ব (আ:) এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ قَالَ رَبِّ انْصُرْنِي عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِينَ )
অর্থাৎ ফেরেশ্তারা হযরত ইব্রাহীম (আ:) কে বললেনঃ আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয়ই জালিম। (আনকাবূত : ৩১)
অর্থাৎ হযরত লূত্ব ( আ: ) বললেনঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।(আনকাবূত : ৩০)
হযরত ইব্রাহীম (আ:) তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছেঃ مَرْدُود يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا، إِنَّهُ قَدْ جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ، وَ إِنَّهُمْ آتِيْهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ
অর্থাৎ হে ইব্রাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার প্রভুর ফরমান এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়। (হুদ : ৭৬)
যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত্বকে জানিয়ে দেয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাঁকে বলা হলোঃ অর্থাৎ সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!(হূদ : ৮১)
আল্লাহ্ তা’আলা লূত্ব (আ:) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেনঃ فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَ أَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلِ مَّنْصُوْد، مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ، وَ مَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ببعيد)
অর্থাৎ অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খণ্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো আপনার প্রভুর ভাণ্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয় ।(হূদ : ৮২-৮৩)
আল্লাহ্ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِيْنَ، فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَ أَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ، إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِيْنَ وَ إِنَّهَا لَبِسَيْلٍ مُّقِيْمٍ، إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ )
অর্থাৎ অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়ই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমি জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী (বহু প্রাচীন) লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন।(‘হিজর : ৭৩-৭৭ )
আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূল সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা’নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেননি। হযরত ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা:) ইরশাদ করেনঃ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمٍ لُوْطٍ ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمٍ لُوْطٍ ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمٍ لُوْطِ
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা’আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্তা ‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন।( আহমাদ, হাদীস ২৯১৫ ইবনু হিব্বান, হাদীস ৪৪১৭ বায়হাক্বী, হাদীস ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ১১৫৪৬ আবু ইয়ালা, হাদীস ২৫৩৯ ‘আব্দুব ‘হুমাইদ, হাদীস ৫৮৯ হা’কিম ৪/৩৫৬)
হযরত আবু হুরাইরাহ্ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল ইরশাদ করেনঃ مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمٍ لُوْطٍ ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمٍ لُوْطٍ ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمٍ لُوْطِ অর্থাৎ সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত ৷(সহীহত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪২০)
বর্তমান যুগে সমকালের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল এর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ এসে যায় যাতে তিনি বলেনঃ إِنْ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ عَمَلُ قَوْمٍ لُوْط অর্থাৎ আমার উম্মতের উপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি। (তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৭ ইনু মাজাহ্, হাদীস ২৬১১ আহমাদ ২/৩৮২ সহীহত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪১৭ )
হযরত ফুযাইল্ ইব্ ‘ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ لَوْ أَنْ لُوْطيًّا اغْتَسَلَ بِكُلِّ قَطْرَة مِّنَ السَّمَاءِ لَقِيَ اللَّهُ غَيْرَ طَاهِرٍ
অর্থাৎ কোন সমকামী ব্যক্তি আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে।(দূরী / যন্মুল্লিওয়াত্ব : ১৪২)