ইসলাম

স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলার বিধান

আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিন ক্ষেত্র ছাড়া মিথ্যা বলা বৈধ নয় : স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য মিথ্যা বলা, যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলা এবং মানুষের মধ্যে মীমাংসার জন্য মিথ্যা বলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯২১)

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে মুহাদ্দিসরা শর্ত সাপেক্ষে তিন ক্ষেত্রে সত্যের বিপরীত বলার অবকাশ আছে বলে মন্তব্য করেছেন। তা হলো মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং বৃহত্তর অকল্যাণ থেকে রক্ষা করা। অপর এক হাদিসে যেমনটি বলা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয় যে মানুষের মধ্যে আপস করে, যে কল্যাণের কথা বলে এবং যার কথায় কল্যাণ বৃদ্ধি পায়। (মুসলিম, হাদিস : ২০৬৫)

মিথ্যা কথার ব্যাখ্যা

হাদিসে স্ত্রীর কাছে মিথ্যা বলার যে অবকাশ স্বামীকে দেওয়া হয়েছে—সে সম্পর্কে ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘স্বামীর কাছে স্ত্রীর মিথ্যা বলা বা স্ত্রীর কাছে স্বামীর মিথ্যা বলা দ্বারা উদ্দেশ্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এবং এমন অঙ্গীকার, যা কোনো কিছু আবশ্যক করে না বা অনুরূপ কিছু। কিন্তু প্রতারণা, যা স্বামী বা স্ত্রীর ওপর থাকা অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য করা হয়; অথবা স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নয় এমন সুযোগ বা অধিকার আদায় করা হয় তা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম বা অবৈধ।’ (তুহফাতুল আহওয়াজি : ৬/৬৯)

অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিথ্যা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ভালোবাসা ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশে মিথ্যা বা বাড়িয়ে বলা।

যাতে পারস্পরিক ভালোবাসা স্থায়ী হয় এবং পরিবার দীর্ঘস্থায়ী হয়। যেমন—এমন কথা বলা যে তুমি অমূল্য, তুমিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, আমার চোখে তুমিই সবচেয়ে সুন্দরী ইত্যাদি। অধিকার হরণ বা দায়িত্ব থেকে পলায়নের জন্য মিথ্যা বলা বৈধ নয়।

কখন মিথ্যা বলা যাবে

আবু সুলায়মান খাত্তাবি (রহ.) হাদিসে উল্লিখিত অবকাশ লাভের জন্য কল্যাণ ও সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা থাকার শর্তারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এসব (হাদিসে উল্লিখিত তিনটি) ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও ক্ষতি থেকে বাঁচতে মানুষ কখনো কখনো বাড়িয়ে বলতে এবং সত্য অতিক্রম করতে বাধ্য হয়। তাই যেখানে মীমাংসার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে সামান্য সমস্যা হলে কখনো কখনো অবকাশ (অসত্য বলার) আছে। যেমন দুই ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসার জন্য এক পক্ষের ভালো দিকগুলো অন্য পক্ষের কাছে বাড়িয়ে বলা এবং তার সুন্দর দিকগুলো তুলে ধরা। যদিও সে বিবদমান পক্ষ থেকে কথাগুলো শোনেনি। আবার যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে প্রচার করা, এমন কথা বলা যাতে সঙ্গীরা সাহস পায় এবং শত্রুরা ধোঁকায় পড়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যুদ্ধ কূটকৌশলের নাম।’ (শরহুস সুন্নাহ : ১৩/১১৯)

স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলার বিধান

বেশির ভাগ আলেমের মতে, শর্তসাপেক্ষে স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলা মুবাহ বা পাপ নয়, এমন কাজ। তা কখনোই প্রশংসনীয় অভ্যাস বা আবশ্যক কিছু নয়। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ‘কথা উদ্দেশ হাসিলের মাধ্যম। প্রত্যেক প্রশংসনীয় মাধ্যমে সত্য ও মিথ্যা উভয় উপায়ে পৌঁছানো যায়। তবে (ইসলাম অনুমোদিত) প্রয়োজন ছাড়া মিথ্যা বলা হারাম। যদি মিথ্যা না বলে, সত্য বলে উদ্দেশ্যে পৌঁছা সম্ভব না হয়, তাহলে উদ্দেশ্য বৈধ হলে মিথ্যা বলা বৈধ। আর উদ্দেশ্য ওয়াজিব হলে মিথ্যা বলা ওয়াজিব (যেমন—জীবন রক্ষা)।’ (আজকারুন-নাবাবিয়্যা : ১/৩৭৭)

নিষ্পাপ মিথ্যার দৃষ্টান্ত

খলিফা ওমর (রা.)-এর যুগে এক লোক স্ত্রীকে বলল, ‘তোমাকে আল্লাহর কসম করে বলছি, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’ স্ত্রী বলল, ‘আল্লাহর কসম করেই যেহেতু বলেছ, তাহলে (আমি বলব) না।’ লোকটি বের হয়ে গেল এবং ওমর (রা.)-এর কাছে এলো। ওমর (রা.) তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালেন এবং বললেন, ‘তুমি কি তোমার স্বামীকে বলেছ, তুমি তাকে ভালোবাসো না?’ সে বলল, ‘আমিরুল মুমিনিন, সে আমাকে আল্লাহর কসম করে বলেছে, তো আমি কি মিথ্যা বলব?’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, মিথ্যা বোলো। সব ঘরই ভালোবাসার ওপর বাঁধা হয় না। তবে মানুষ ইসলাম ও সামাজিক মর্যাদার কারণে একসঙ্গে বসবাস করে।’ (শরহুস সুন্নাহ : ১৩/১৬০)

আল্লাহ সবাইকে মিথ্যা পরিহারের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *