হিংসার প্রথম চিকিৎসা
এই হিংসা রোগের প্রথম চিকিৎসা হল ঐ ব্যক্তি এটা চিন্তা করবে যে,মহান আল্লাহ এ জগতে আপন বিশেষ হেকমত ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে নিজ নেয়ামতসমূহ বণ্টন করেছেন। কাউকে এই নেয়ামত দিয়েছেন, তো কাউকে দিয়েছেন ঐ নেয়ামত। কাউকে সু-স্বাস্থ্যের নেয়ামত দিয়েছেন, কাউকে ধন-সম্পদের নেয়ামত দিয়েছেন। কাউকে দিয়েছেন ইজ্জত-সম্মানের নেয়ামত। কাউকে দিয়েছেন সৌন্দর্যের নেয়ামত। আবার কাউকে দিয়েছেন প্রশান্তির নেয়ামত। এ পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে কোন না কোন নেয়ামত পায়নি। অথবা কোন না কোন কষ্টে নিপতিত নেই।
কেননা মহান আল্লাহ তিনটি জগত সৃষ্টি করেছেন। একটি হলো ঐ জগত যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি। কোন দুঃখ-কষ্ট নেই। সেটা হল জান্নাতের জগত। মহান আল্লাহ আপন অনুগ্রহে আমাদেরকে সেখানে পৌঁছে দিন। আমীন। সেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি আরামই আরাম ।
আরেকটা জগত ঠিক এর বিপরীত। যার মধ্যে শুধু কষ্ট আর কষ্ট। দুঃখ আর দুঃখ। ব্যথা আর ব্যথা। সুখ শান্তির কোন নাম নিশানাও সেখানে নেই। সেটা হল জাহান্নামের জগত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এর থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
তৃতীয় একটি জগত আছে সেটা উভয়টার সমন্বয়ে গঠিত। যার মধ্যে সুখও আছে, দুঃখও আছে, শান্তিও আছে, অশান্তিও আছে। সেটা হল এ পৃথিবীর জগত। যেখানে আমরা বসবাস করছি। এই পৃথিবীর জগতে এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না যে এ কথা বলবে যে, আমার সারা জীবনে কখনো কোন কষ্ট হয়নি। আবার এমন কোন মানুষও পাওয়া যাবে না যার কখনো আরাম বা শান্তি লাভ হয়নি। এ জগতে প্রত্যেক খুশীর সাথে দুঃখের কাঁটাও লাগানো থাকে। আর প্রত্যেক কষ্টের মধ্যে শান্তিও লুকায়িত থাকে। এখানের সুখ ও নিরবিচ্ছিন্ন নয়, আবার এখানের দুঃখও নিরবিচ্ছিন্ন নয় ।
প্রকৃত শান্তি পেয়েছে কে?
যাই হোক, আল্লাহ তাআলা আপন হেকমতে পুরো জগত সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে একেক জনকে একেক নেয়ামত দান করেছেন। কাউকে স্বাস্থ্যের নেয়ামত দান করেছেন, তো অপর কাউকে তার বিপরীত ধন-সম্পদের নেয়ামত দান করেছেন । এখন ধন- সম্পদওয়ালা ব্যক্তি স্বাস্থ্যওয়ালা ব্যক্তির ব্যাপারে হিংসা করছে যে, সে এতো ভাল স্বাস্থ্য কেন পেল? আবার এদিকে ঐ স্বাস্থ্যওয়ালা ব্যক্তি ধন-সম্পদওয়ালার ব্যাপারে হিংসা করছে যে, সে এত এত সম্পদ কিভাবে পেল? কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে এটা হল তাকদীরের ফয়সালা এবং তারই হেকমত ও মাসলাহাত এর উপর নির্ভরশীল । আর কোন মানুষ অন্যের ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবে না যে, কোন্ মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শান্তিতে আছে।
বাহ্যিকভাবে অনেক সময় দেখা যায় একজন মানুষের অনেকগুলো কারখানা চলছে। বাংলো দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ী চলছে, চাকর নকর আছে, দুনিয়া ভর্তি আরাম আয়েশের উপকরণ বিদ্যমান পক্ষান্তরে একজন শ্রমিক মানুষ যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর ভাঙ্গে, আর অতি কষ্টে নিজ পেট ভরার ব্যবস্থা করে। এখন যদি এই শ্রমিক ঐ ধন সম্পদশালী মানুষটাকে দেখে তাহলে এটাই চিন্তা করবে যে, সে তো পৃথিবীর অনেক বড় বড় নেয়ামত পেয়েছে।
কিন্তু যদি সাথে সাথে এ উভয় জনের ভিতরগত জীবনে উঁকি মেরে দেখা হয়, তাহলে বুঝা যাবে যে, যে ব্যক্তির মিল কারখানা প্রতিষ্ঠিত, যার বাড়ী গাড়ী আছে, আর যার কাছে অসংখ্য ধন সম্পদ ও সীমাহীন প্রাচুর্যের উপলক্ষ বিদ্যমান; তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, রাতে যখন বিছানায় শোয় তো ঐ সাহেব বাহাদুরের ঐ সময় পর্যন্ত ঘুম আসে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঘুমের ট্যাবলেট না খায়! অথচ তার দস্তরখানে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যসামগ্রী বিদ্যমান। নানা ধরণের ফল- ফ্রুট উপস্থিত, কিন্তু তার পাকস্থলী এত খারাপ যে, এক দুই লোকমাও গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। কেননা তার পাকস্থলীতে হয়েছে আলসার। এজন্য ডাক্তার সাহেব নিষেধ করে দিয়েছেন অমুক অমুক জিনিস খাবেন না। এখন সমস্ত নেয়ামত সমস্ত খাদ্য তার জন্য বেকার।
এবার আপনিই বলুন কোন্ ব্যক্তি শান্তিতে আছে? যার কাছে শান্তি সুখের সমস্ত আসবাব আছে কিন্তু সে ঘুম হতে বঞ্চিত। খানা হতে বঞ্চিত। আর আরেকজন মানুষ সাধারণ শ্রমিক। যে আট ঘণ্টার কঠিন ডিউটি দেয়ার পর শাক-রুটি আর চাটনী রুটি খুব ক্ষুধা লাগার পর স্বাদ ও মজা নিয়ে খায়। আর যখন বিছানায় ঘুমায় তখন সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে। আট-দশ ঘণ্টা পর্যন্ত ভরপুর ঘুম দিয়ে উঠে। প্রকৃত শান্তি কার মধ্যে আছে? গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝে আসবে যে, প্রথম ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসবাব ও সামান নিঃসন্দেহে দান করেছেন। কিন্তু প্রকৃত শান্তি দান করেছেন ঐ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে। এসবই হল মহান আল্লাহর হেকমতের ফয়সালা।
“রিযক” একটি নেয়ামত আর “খাওয়ানো” আরেকটি নেয়ামত
আমার সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী ছাহেব রহ. আল্লাহ তাআলা তাঁর দারাজাত বুলন্দ করুন, আমীন । একবার বলছিলেন : খানার পরে এই যে দু’আ পড়া হয় الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِى هَذَا وَرَزَقْنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّى وَلَا قُوَّةٍ، غُفِرَلَهِ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ অর্থাৎ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ খানা খাইয়েছেন এবং এ রিযিক আমাকে আমার কোন প্রচেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই দান করেছেন। যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এ দু’আ পড়বে আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দিবেন।
অতঃপর আমার সম্মানিত পিতা বলেন : এ হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি শব্দ পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন। একটি হল رَزَقْنِيْهِ আর অপরটি হল أَطْعَمَنِى অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাকে রিযিক দিয়েছেন এবং এ খানা খাইয়েছেন ।
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, যখন উভয় শব্দের মর্ম একই, তখন উভয়টিকে পৃথক পৃথকভাবে কেন উল্লেখ করলেন? একটি শব্দই বলে দেয়া যথেষ্ট ছিল। অতঃপর তিনি নিজেই উত্তর দিয়ে বলেন, উভয়টি ভিন্ন ভিন্ন। কেননা রিযিক হাসিল হওয়া একটি স্বতন্ত্র নেয়ামত আর খানা খাওয়ানো আরেকটি স্বতন্ত্র নেয়ামত। কেননা অনেক সময় রিযক হাসিল হওয়ার নেয়ামত তো হাসিল হয় যে, ঘরে উন্নত খানা রান্না অবস্থায় প্রস্তুত, আর সব ধরণের ফল-ফ্রুট বিদ্যমান কিন্তু ক্ষুধা লাগছেনা। পাকস্থলী খারাপ। আর ডাক্তার সাহেবও গরুপাক জাতীয় খাদ্য খেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। এখন এমতাবস্থায় رزقنا তো হাসিল আছে, কিন্তু اطعمنا হাসিল নেই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ রিযিক দিয়ে রেখেছেন কিন্তু খাওয়ার যোগ্যতা এবং হজম করার শক্তি দেননি।
যাই হোক, এর মধ্যে আল্লাহ তাআলার হেকমত ও মাসলাহাত আছে যে, একেক জনকে একেক নেয়ামত দান করেছেন।
মহান আল্লাহর হেকমতের ফয়সালা
এজন্য হিংসার চিকিৎসা হচ্ছে এই যে, হিংসুক ব্যক্তি এটা চিন্তা করবে যে, যদি অন্য কেউ বড় কোন নেয়ামত হাসিল করে, আর সেটার কারণে তার অন্তরে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়, তাহলে কত নেয়ামত তো এমনও আছে যেগুলো আল্লাহ তাআলা তোমাকে দান করেছেন আর ঐ ব্যক্তিকে দান করেননি। হতে পারে মহান আল্লাহ তোমাকে তার থেকে ভালো স্বাস্থ্য দান করেছেন। অথবা হতে পারে যে মহান আল্লাহ তোমাকে তার থেকে বেশি সৌন্দর্য দান করেছেন, অথবা অন্য কোন নেয়ামত মহান আল্লাহ তোমাকে দান করেছেন, যেটা সে পায়নি। সুতরাং এসব নেয়ামতের বণ্টনের মধ্যে আল্লাহ তাআলার হেকমত ও গূঢ় তত্ত্ব আছে। যেটা মানুষ বলতেও পারে না। এভাবে চিন্তা করলে হিংসা ব্যাধি কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
উর্দূ ভাষায় একটি প্রবাদ প্রসিদ্ধ যে, اللہ تعالی گنجے کو ناخن نہ دے “আল্লাহ তাআলা টাক মাথা বিশিষ্ট মানুষকে নখ না দিক” এটা দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত উদাহরণ। যার মর্ম হল, যদি মাল দৌলতের নেয়ামত তোমার হাসিল না থাকে, যদি তোমার এসব থাকত তাহলে না জানি এর কারণে তুমি কী ফাসাদ সৃষ্টি করতে আর কোন আযাবে লিপ্ত হতে! আর এটার কী পরিমাণ অবমূল্যায়ন করতে, যদ্দরূন তোমার অবস্থা না জানি কেমন হত, এখন যখন মহান আল্লাহ তোমাকে এ নেয়ামত দেননি সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে নিশ্চয়ই কোন বিশেষ কারণে দেননি।
এজন্যই কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ অর্থাৎ “মহান আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কতক কে কতকের উপর যা দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, সেটার আকাংখা করো না। কেন? কারণ তোমার কী জানা আছে যে যদি ঐ নেয়ামত তোমারহাসিল হত, তাহলে তুমি কী দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে!! এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় যে, একজন মানুষ আকাংখা করে যে, আহা আমি যদি ঐ নেয়ামতটি পেতাম, কিন্তু যখন ঐ নেয়ামতটি পেয়ে যায়, তখন সেটা উপকারী হওয়ার পরিবর্তে তার জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।
এজন্য সর্বপ্রথম এটা চিন্তা করা উচিত যে, এই যে অন্য কেউ নেয়ামত পেয়ে যাওয়ার কারণে আমার অন্তর জ্বলতেছে, এটা বাস্তবিক পক্ষে মহান আল্লাহর তাকদীরের উপর আপত্তি উত্থাপন এবং এর হেকমত থেকে উদাসীনতার ফলাফল। হতে পারে একারণে আপনার আরো বড় কোন নেয়ামত হাসিল হবে। যেটা তার হাসিল নেই।
স্বীয় নেয়ামতসমূহের প্রতি লক্ষ্য করুন
আর এই সব খারাবী এজন্যই সৃষ্টি হয় যেহেতু মানুষ নিজের দিকে তাকানোর পরিবর্তে অন্যের দিকে তাকায়। নিজের যে নেয়ামত হাসিল আছে, সেদিকে কোন ধ্যান খেয়ালই নেই। সেটার উপর আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের তাওফীক হচ্ছেনা। কিন্তু অন্যের নেয়ামতের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনিভাবে নিজের দোষ-ত্রুটির প্রতি লক্ষ্য নেই। অন্যের দোষ অনুসন্ধান করে বেড়াচ্ছে। যদি মানুষ তার উপর মহান আল্লাহ সব সময় যে নেয়ামত নাযিল করছেন, সেটার ধ্যান খেয়াল রাখে, তাহলে অন্যের উপর কখনো হিংসা করতে পারে না। তুমি যে অবস্থাতেই থাকো না কেন, এরপরও আল্লাহ পাক তোমাকে নেয়ামতসমূহের এমন বৃষ্টিতে সিক্ত করেছেন আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নেয়ামতের এমন দরিয়ায় ডুবিয়ে রেখেছেন যে, যদি তুমি সেটার কল্পনা করতে থাক, তাহলে অন্যের নেয়ামতের ব্যাপারে তোমার অন্তরে কখনো জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হবে না । সব সময় নিজের থেকে নিচের মানুষের দিকে দেখবে বর্তমানে আমাদের সমাজে অন্য মানুষের ব্যাপারে খোঁজ-খবর ও অনুসন্ধানের খুব আগ্রহ দেখা যায়। যেমন অমুকের কাছে টাকা কিভাবে আসে? কোথা হতে আসে? কিভাবে সে বাড়ী বানাচ্ছে? কিভাবে গাড়ী ক্রয় করছে? ইত্যাদি প্রতিটা বিষয়ে সমীক্ষা নেয়ার চিন্তা।
পরবর্তীতে এই অনুসন্ধানের ফলাফল দাঁড়ায় এটাই যে, যদি এমন কোন জিনিস সামনে আসে যেটা সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক, কিন্তু সেটা নিজের কাছে নেই, তাহলে সেটার দ্বারা হিংসা পয়দা হবে না তো কী হবে? এজন্য ঐ কথাটা মনে রাখবেন যেটা আমি আগেও বলেছি: “দুনিয়ার ব্যাপারে সব সময় নিজের থেকে নিচের মানুষকে দেখবে। আর দ্বীনের ব্যাপারে সব সময় নিজের থেকে উপরের মানুষকে দেখবে।”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. এবং শান্তি
প্রখ্যাত বুযুর্গ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. বলেন, আমিএক লম্বা সময় পর্যন্ত ধনী ব্যক্তিদের মহল্লায় ছিলাম এবং তাদের সাথে১৯উঠা-বসা করতাম। তো ঐ সময় আমার থেকে বেশি বিষণ্ণ আর দুঃখীমানুষ কেউ ছিল না। কেননা যার দিকেই তাকাতাম, দেখতাম যে তারকাপড় আমার কাপড় থেকে উন্নত। তার সওয়ারী আমার সওয়ারীথেকে শ্রেষ্ঠ। তার বাড়ী আমার বাড়ী হতে আরো ভালো। ফলশ্রুতিতেসব সময় এই বিষণ্নতায় ভুগতাম যে, তার তো এসব নেয়ামত হাসিলআছে অথচ আমার নেই। এজন্য আমার থেকে বেশি বিষণ্ন মানুষ আরকেউ ছিল না ।কিন্তু পরবর্তীতে আমি এমন মহল্লায় বসবাস আরম্ভ করি যারা দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে দরিদ্র ও নিম্নস্তরের মানুষ। এদের সাথে আমি উঠাবসা আরম্ভ করি। এর ফলে আমি শান্তি পাওয়া আরম্ভ করি ।কেননা এখানে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। কারণ যার দিকেইতাকাই দেখি যে, আমার পোষাক তার থেকে উন্নত। আমার সওয়ারীতার সওয়ারী অপেক্ষা উত্তম। আমার বাড়ী তার বাড়ী হতে ভালো ।ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ আমাকে আত্মিক প্রশান্তি দান করেন।
মানুষের চাহিদা কখনোই শেষ হয় না
মনে রাখবেন, কোন মানুষ যদি দুনিয়ার আসবাব জমা করারক্ষেত্রে অগ্রসর হতে থাকে, তো এর কোন সীমা পরিসীমা নেই । কবি বলেন : کار دنیا کے تمام نہ کرد অর্থাৎ দুনিয়ার কাজ কেউ শেষ করে যেতে পারেনি ।এই পৃথিবীতে যিনি সবচেয়ে বেশি ধনী মানুষ, তাকে গিয়েজিজ্ঞেস করুন আপনি কি সবকিছু পেয়েছেন? আপনার কি আর কোনচাওয়া পাওয়া আছে? দেখবেন উত্তরে তিনি এটাই বলবেন যে, আমারতো আরো অনেক কিছু দরকার। অর্থাৎ তারই ফিকির এটাই যে,আমার সম্পদ আরো বাড়ানো দরকার।আরবী ভাষার বিখ্যাত কবি মুতানাব্বী দুনিয়ার ব্যাপারে দারুণজ্ঞানগর্ভ একটি কবিতা বলেছেন। সেটা এই—وَمَا قَضَى أَحَدٌ مِّنْهَا لَبَانَتَه وَلَا انْتَهَى أَرَبِّ إِلَّا إِلَى أَرَبٍ অর্থাৎ এ দুনিয়া হতে আজ পর্যন্ত কারো পেট ভরেনি। যখনইকেউ কোন চাহিদা পূরণ করবে, তখনই আরেকটি চাহিদা সৃষ্টি হয়েযাবে। প্রত্যেক চাহিদা নতুন চাহিদার জন্ম দেয় এবং প্রত্যেক প্রয়োজনএক নতুন প্রয়োজন সৃষ্টি করে ।
এটা আল্লাহ তাআলার বণ্টন
কোন্ পর্যন্ত হিংসা করবেন? অন্যের নেয়ামতসমূহের উপর বিষণ্ণ থাকবেন? কেননা এমনটি তো হবেই। কেউ না কেউ নেয়ামতের দিক দিয়ে আপনার চেয়ে অগ্রসর দেখা যাবে। এজন্য সব থেকে বেশি এটা চিন্তা করা দরকার যে, এটা মহান আল্লাহর বণ্টন। আর আল্লাহ তাআলা এসব জিনিস আপন হেকমত ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী বণ্টন করেছেন। এই হেকমত আপনি বুঝতেও পারবেন না। কেননা আমরা অত্যন্ত সীমিত সীমারেখা নিয়ে চিন্তা করি। আমাদের আকল সীমিত, সীমিত আমাদের চিন্তার পরিধি, এই সীমিত বৃত্তের মধ্যেই আমরা চিন্তা-ভাবনা করি অথচ এর বিপরীতে মহান আল্লাহ আপন অসীম হেকমত দিয়ে পুরো জগতকে বেষ্টন করে আছেন। এই ফয়সালা তিনিই করেন যে, কাকে কী দিবেন? কতটুকু দিবেন? কাকে কোন্টা দিবেন না।
ব্যস এভাবে চিন্তা করলে ইনশাআল্লাহ হিংসা বা পরশ্রীকাতরতার বদস্বভাব দূর হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ।
বই : হিংসা ও গোস্বা: দুটি ধ্বংসাত্বক ব্যাধি