যাকাতের থিওরি এবং প্রশ্নত্তর

যাকাত গরিবের হক। যা ধনিদের কে দিতে হবে গরিবদের। যাকাত দেওয়ার জন্য যেদিন আপনি নিছাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হবেন সেইদিন তারিখ সহ লিখে রাখবেন। একবছর পর ঐদিন যদি আপনার নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে আর যদি এই একবছরের মাঝখানে কোটি টাকার মালিক হন না কেন তাও পরবর্তি বছরের ঐদিন যেটা প্রথমে লিখে রেখেছিলেন সেইদিন নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি না থাকে তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে না। আবার পরবর্তি যেদিন নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি এর মালিক হবে সেইদিন আবার তারিখ সহ লিখে রাখবেন এবং ঐদিন থেকে পরবর্তী একবছর অপেক্ষা করতে হবে। এইভাবে যাকাতের জন্য হিসাব রাখতে হবে।

যাকাতের বছর শেষ হওয়া ইংরেজী বা বাংলা বছরের হিসেবে হবে না। বরং আরবী মাস হিসেবে বছর হওয়া ধর্তব্য হবে। – সূত্র

আল্লাহ মানুষকে আর্থিক দিক থেকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন।

একঃ ফকির-মিসকিন: কিছু লোক আছে এমন মিসকিন দিনে যা ইনকাম করে তা খেয়ে শেষ পরের দিনের জন্য কিছু নাই। আর কিছু লোকের কাছে কিছু না কিছু আছে। এদের কে বলা হয় মিসকিন। আবার আরেক প্রকার আছে যারা সারা মাস সংসার চালানোর পর মাস শেষে কোন কিছু থাকে না। সংসারের মধ্যেই সবকিছু ব্যয় হয়ে যায়। বরং কিছু শর্ট পড়ে এবং কিছু লোন করতে হয় বড় কষ্টে জীবন যাপন করে তাকে বলা হয় ফকির।

এই দুই শ্রেণির মানুষ হলও আল্লাহর কাছে এক শ্রেণী। এদের উপর যাকাত ফরয নয়। এরা আর্থিকভাবে এত দুর্বল এরা সদকায়ে ফিতর খেতে পারবে, যাকাত খেতে পারবে, যা দেন সবই খেতে পারবে।

দুইঃ যারা যাকাত দিতে পারে: যেই ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ আছে। যারা কারও উপর মুখাপেক্ষী নয়। আল্লাহ যা দিয়েছেন তার মধ্যেই তার সকল হাজত পুড়ুন হয়ে থাকে। এরা বড় নেছাবের মালিক

তিনঃ যারা যাকাত দিতেও পারে নাহ খেতেও পারে নাহ: এই শ্রেণীর লোক যাকাত খেতেও পারে নাহ আবার যাকাত দেওয়াও লাগে নাহ। এদের সারা মাস সংসার চালানোর পর যাকাত যোগ্য যে চার প্রকার সম্পদ এর মধ্যেই কোনটাই নাই, তাই তার যাকাত ও নাই। যদিও তার বাড়ি থাকুক, জমি থাকুক অন্যান্য সম্পত্তি থাকুক সেগুলো যাকাত যোগ্য নাহ। তবে এই সম্পত্তি থাকার কারণে তার উপর সদকাহ ফিতর, হজ্জ, কুরবানি এসব আবশ্যক, আর তাই এসব যাকাত অযোগ্য সম্পত্তি থাকার কারণে এরা যাকাত খেতেও পারে নাহ। এই প্রকার লোককে বলা হয় ছোট নিছাবের মালিক।

 

যেসব সম্পত্তির উপর যাকাত ফরয

আল্লাহপাক সমস্ত সম্পত্তির উপর যাকাত রাখেন নাই। হিরা মনি মুক্তা আপনার ঘরে আছে দামী দামী জিনিসপত্র আপনার ঘরে আছে এবং ঘড়ে  যে পড়ে আছে যে গুলোর দাম অনেক কোটি টাকা কিন্তু সেই গুলোর উপরে যাকাত ফরজ নয়। আল্লাহ নির্দিষ্ট সম্পদের উপরে যাকাতকে ফরজ করেছেন।

  1. ক্যাশ টাকা
  2. স্বর্ণ
  3. রুপা
  4. ব্যবসার পণ্য
  5. গবাদি পশু

ক্যাশ টাকা

ক্যাশ টাকা প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা যদি স্বর্ন বা রুপার  নিছাবের সমান হয় তাহলেই যাকাত ফরয। ক্যাশ টাকার অন্তর্ভুক্ত হবে – নিজের পকেট এর টাকা, আলমারি জমানো টাকা, ব্যাংক এর টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড এর টাকা, প্রাজ বন্ড এর কাগজ, শেয়ার এর টাকা যেটা কোন কোম্পানির অংশীদারি এর জন্য নাহ শুধু শেয়ার কেনা বেচার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এটা টাকা হোক অথবা টাকার বিপরীতে কোন কাগজ হোক। সব ধরনের পাওনা টাকার উপর যাকাত আসবে তবে শর্ত হলো সেগুলো যদি আদায় যোগ্য হয় তাহলে। পরিশেষে, সর্বনিম্ন নিছাব যেটা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমান হয় তাহলে যাকাত ফরয হয়ে যাবে।

স্বর্ণ

স্বর্নের নিছাব হল সারে সাত ভরি স্বর্ন বর্তমান বাজার মূল্য হতে হবে। সাড়ে সাত ভরি এর নিচে হলে তার উপর যাকাত ফরয নয়। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, স্বর্নের দিক থেকে নিছাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলেও এই লোকের রুপার নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার উপর যাকাত আবার ফরয হয়ে যাবে।

রুপা

রূপার নিছাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা বর্তমান বাজার মূল্য । এর কম হলে তার উপর যাকাত ফরয নয়।

ব্যবসার পণ্য

ব্যবসার বিক্রিযোগ্য পণ্যের মূল্য যদি সর্বনিম্ন নিছাব যেটা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমান হয় তাহলে যাকাত ফরয হয়ে যাবে। ব্যবসার পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে – বিক্রিযোগ্য পণ্য, শেয়ার এর টাকা যেটা কোম্পানির অংশীদার হবার জন্য থাকে।

গবাদি পশু

গবাদি পশু যেমনঃ গরু ও মহিষ, উট, ছাগল-ভেড়া ও দুম্বা। যাকাত ফরয হতে হলে – নুন্যতম ৪০ টা ছাগল হতে হবে, ৫ টা উট হতে হবে, ৩০ টা গরু অথবা মহিষ হতে হবে। এই তিন ধরনের পশুর জন্য তিন ধরনের নেছাব ( আমাদের দেশে সাধারণত এই রকম পশু নাই যেই রকম টা বলা হয়েছে, যে মালিক ঘর থেকে ছেড়ে দেয় সেই পশু গুলো একা একাই খেয়ে দেয়ে আবার ঘড়ে চলে আসে, মানে মালিকের কোন খরচ এখানে নাই। এই রকম পশু হতে হবে।)

 

বিঃদ্রঃ স্বর্ন ও রূপার যেকোন একটার নিছাব এর মালিক হলেই যাকাত ফরয। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, দুই নিছাব এর ব্যবধান কিন্তু অনেক পার্থক্য কারণ স্বর্ন এর দাম অনেক বেশি সেই তুলনায় রুপার দাম কম বর্তমান বাজারে। কিন্তু এই হুকুম যখন হয়েছিল তখন স্বর্ন এবং রুপার দাম কাছাকাছি ছিল। তাই শুধু স্বর্নের নিছাব না হোলে যাকাত আসবে না বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে নাহ। রূপার দাম আসলেই যাকাত ফরয হয়ে যাবে। এমনকি, ধরা যাক কারও কাছে যদি স্বর্ন দুই ভরি থাকে এবং এবং নগদ কিছু টাকাও থাকে এবং এই দুই ভরি ও নগদ টাকা মিলে সর্বনিম্ন যেটা রুপার নিছাবের সমান মূল্য হয় তাহলেও তার উপরে যাকাত ফরয। এটা চার মাযাহাব সম্মিলিত মতামত। 

চলবে…।

তথ্য সূত্রঃ উপরের আলোচনা মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ দাঃবাঃ 
এর একটা বয়ান থেকে নেওয়া হয়েছে। আপনারা চাইলে পুরো বয়ান দেখে নিতে পারেন।

যাকাতের নেসাব সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা পর্ব:১  - Watch Now
যাকাতের নেসাব সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা পর্ব:২ - Watch Now

 

যাকাত নিয়ে প্রশ্ন-উত্তরঃ

প্রশ্নঃ স্বর্ণ রোপা এবং টাকা থাকলে কোনটির উপর ভিত্তি করে যাকাত আবশ্যক হয়?
প্রশ্নঃ প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ফিক্সড ডিপোজিট ও আপন ভাইকে যাকাত দেয়ার হুকুম.।
প্রশ্নঃ বছর হবার আগেই অগ্রীম যাকাত আদায় করলে কি আদায় হবে?
প্রশ্নঃ ঋণ মাফ করে দিয়ে যাকাতের নিয়ত করলে যাকাত আদায় হবে?
প্রশ্নঃ নিকটত্মীয়কে যাকাত না দিয়ে অন্যদের যাকাত দিলে গোনাহ হবে?
প্রশ্নঃ অনাদায়কৃত বিগত ৫ বছরের যাকাত কিভাবে আদায় করবে?
প্রশ্নঃ কোন সম্পদে যাকাত আবশ্যক? আসবাব-গাড়ি ও জমির উপর যাকাত আবশ্যক হয়?
প্রশ্নঃ যাকাতের হকদারকে হাদিয়া বা তোহফা বা পুরস্কার ইত্যাদি বলে যদি যাকাত প্রদান করার হুকুম কী?
প্রশ্নঃ বাড়ী করার জন্য জমানো টাকার উপর যাকাত ও কুরবানী আবশ্যক হবে?
প্রশ্নঃ যাকাতের টাকা কাউকে ঋণ হিসেবে প্রদান করা যাবে?
প্রশ্নঃ আপন ভাইকে পড়াশোনার খরচ বাবদ যাকাতের টাকা দেয়া যাবে?
প্রশ্নঃ ডিপিএসের টাকা ছয় বছর পর উঠানো যাবে এর আগে উক্ত টাকার যাকাতের হুকুম কী?
প্রশ্নঃ দুই এক বছরের যাকাত অগ্রীম আদায় করলে যাকাত আদায় হবে কি?
প্রশ্নঃ যাকাতের টাকা মসজিদে পানির পাম্প স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে কি?
প্রশ্নঃ যাকাতের টাকা ত্রাণ হিসেবে প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে?
প্রশ্নঃ বিকাশ নগদ ইত্যাদির মাধ্যমে যাকাত পাঠালে খরচসহ পাঠানো কি জরুরী?
প্রশ্নঃ স্বর্ণের যাকাত বর্তমান বাজরের ক্রয়মূল্য হিসেবে আদায় করবে নাকি বিক্রয়মূল্য হিসেবে?
প্রশ্নঃ রমজানের শেষে যাকাত আদায়কারী ব্যক্তি এক বছর মাসের শুরুতে আদায় করে তাহলে আদায় হবে কি?
প্রশ্নঃ স্বর্ণ রোপা এবং টাকা থাকলে কোনটির উপর ভিত্তি করে যাকাত আবশ্যক হয়?

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *