ইসলাম

কবিরা গুনাহ

কবীরা গুনাহ করলে ঈমান অত্যন্ত কমজোর হয়ে পড়ে এবং অনেক দিনের ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা অর্জিত নূর নষ্ট হয়ে যায়। আর এর ভয়াবহতা এমন যে, একটি গুনাহে কবীরাই মানুষকে জাহান্নামে নেয়ার জন্যে যথেষ্ট। তাওবা ছাড়া গুনাহে কবীরা মাফ হয় না। কবীরা গুনাহকে জায়িয বা হালাল মনে করলে ঈমান চলে যায়। নিম্নে কিছু কবীরা গুনাহের তালিকা দেওয়া হল। যথা-

1. নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম, নখ বর্ধিত করে রাখা।
2. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা।
3. যিনা ব্যভিচার করা।
4. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
5. সূদ খাওয়া।
6. কোন মুসলমানকে গালি দেয়া।
7. অহংকার করা।
8. সিনেমা-টিভি ইত্যাদি দেখা।
9. মৃত ব্যক্তির জায়িয ওসীয়ত পালন না করা।
10. ঘরবাড়ী, আঙ্গিনা, আসবাবপত্র, থালা-বাসন, কাপড়-চোপর নোংরা রাখা এবং ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনায় মন-মস্তিস্ক গান্ধা করে রাখা।
11. পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া।
12. নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ দেখা।
13. বদগুমানী বা কারো প্রতি খারাপ ধারনা রাখা।
14. মেহমানের খাতিরে আদর যত্ন ও অভ্যর্থনা না করা।
15. আমানতের যোগ্য সৎকর্মীকে নিযুক্ত বা নির্বাচন না করে স্বজন প্রীতি করা।
16. নিজে ইচ্ছা করে বা দাবী করে জোরপূর্বক কোন পদ গ্রহণ করা।
17. অসৎ কাজ দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাধা না দেয়া।
18. ফরয গোসলে অনর্থক দেরী করা।
19. গীবত করা।
20. চোগলখুরী ও কূটনামী করা।
21. মানুষ বা জীবের ফটো তোলা, ঘরে রাখা বা টাঙ্গানো। উল্লেখ যে আজকাল অনেকে মনে করে যে, ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবি নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি অতি মারাত্মক ভুল, কেননা হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে কাপড়ে অংকিত ছবির কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তির ব্যাপারেও ধমকি এসেছে। দেখুন: বুখারী শরীফ হা: নং ৫৯৬১। আর জানা কথা যে কাপড়ে অংকিত ছবি ও ক্যামেরার দ্বারা তোলা ছবির মধ্যে পার্থক্য করার কোন কারণ নেই। অনুরূপভাবে ভিডিওতে রেকর্ড করা ছবিও যেহেতু ছবির সকল উদ্দেশ্য খুব ভালভাবে পুরা করে কাজেই ভিডিওর ছবিও নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত।
22. তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সহিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে কাউকে ডাকা, যেমন- হে জোলা, বান্দীর বাচ্চা ইত্যাদি।
23. শিরক করা।
24. মা-বাপকে কষ্ট দেওয়া।
25. চুরি করা।
26. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।
27. মিথ্যা অপবাদ লাগানো।
28. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
29. না হক যাদু করা।
30. আমানতের খেয়ানত করা।
31. বিদ্রোহী বানানো অর্থাৎ, অধীনস্থদেরকে মালিকের বিরুদ্ধে উস্কানী দেয়া।
32. নেশাযুক্ত জিনিষ পান করা।
33. অবৈধ যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা।
34. জুয়া খেলা ও লটারী ধরা।
35. ঘুষ খাওয়া।
36. জোর-জুলুম করে অর্থ-সম্পদ লুটে নেয়া।
37. অনাথ এতিম, বিধবার মাল খাওয়া।
38. আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা।
39. মিথ্যা কসম খাওয়া।
40. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা।
41. ধোঁকা দেয়া।
42. বাদ্য বাজনা সহ নাচ-গান করা।
43. ডাকাতি করা, লুন্ঠন করা।
44. স্বামীর নাফরমানী করা।
45. জায়গা-জমির সীমানা নষ্ট করা।
46. শ্রমিকের মজুরী কম দেয়া।
47. মাপে কম দেয়া।
48. দ্রব্য-সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রিত করা।
49. খরিদ্দারকে ধোঁকা দেয়া।
50. স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে শর্তের সাথে হীলা করা।
51. নিজের অধীনস্থ মহিলাদিগকে পরপুরুষের সাথে অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ দেয়া।
52. ঘোড় দৌড় বা রেস খেলা।
53. পেশাব করে পানি না নেয়া বা পবিত্রতা অর্জন না করা।
54. গণকের কাছে যাওয়া।
55. পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি বা যে কোন ধরনের অলংকার পরা।
56. পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরা।
57. মেয়ে লোকের জন্য শরীরের রূপ ও গঠন প্রকাশ পায় এমন পোশাক পরিধান করা।
58. ঝগড়া-বিবাদে মিথ্যা মোকাদ্দমা দায়ের করা।
59. কোন মুসলমানকে ধোঁকা দেওয়া।
60. গুপ্তচরবৃত্তি করা অর্থাৎ, মুসলমান সমাজ ও রাষ্ট্রের গোপন কথা অন্য সমাজ বা রাষ্ট্রের নিকট প্রকাশ করা।
61. নর হয়ে নারীর এবং নারী হয়ে নরের বেশ-ভূষা অবলম্বন করা।
62. টাকা বা নোট জাল করা।
63. অন্তর এত শক্ত করা যে, গরীব দুঃখীর সীমাহীন কষ্ট দেখেও  দরদ না লাগা।
64. ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারায় ত্রুটি করা এবং দেশের জরুরী খাদ্য বা হাতিয়ার পাচার করা।
65. রাস্তা-ঘাটে বা ছায়াদার ফলদার বৃক্ষের নীচে পায়খানা করা।
66. হায়িয বা নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ করা।
67. যাকাত না দেয়া।
68. ইচ্ছা করে কোন নামায কাযা করা।
69. রমযানের কোন রোযা ইচ্ছা করে ভেঙ্গে ফেলা বা না রাখা।
70. জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করা।
71. ষাঁড় দ্বারা গাভীর এবং পাঠার দ্বারা ছাগীর পাল দিতে না দেওয়া।
72. পাড়া-প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।
73. সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করা।
74. জনগণ যাকে চায়না সে ব্যক্তির বাদশাহী বা নেতৃত্ব করা।
75. ইলমে দীনকে তুচ্ছ মনে করে অর্জন না করা।
76. বিনা জরুরতে জনসম্মুখে সতর খোলা।
77. ছেলেদের সঙ্গে কুকর্ম বা সমকাম করা।
78. ইসলামী রাষ্ট্রের বিদ্রোহী হওয়া।
79. নিজের পরিবার-পরিজনের খবর না নিয়ে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কষ্টে ফেলা।
80. খতনা না করা।
81. অন্যায়ের সমর্থন করা।
82. আত্মহত্যা করা।
83. পেশাব-পায়খানা করে ঢিলা-কুলুখ বা পানি ব্যবহার না করা।
84. উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবী করা, এবং আলেম ও হাফেজদের অমর্যাদা করা।
85. শুকরের গোশত খাওয়া।
86. হস্ত মৈথুন করা।
87. তামাশা দেখার জন্য ষাঁড়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদি লড়াইয়ের আয়োজন করা।
88. কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া।
89. কোন জীবন্ত ও জানদার জীবকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ,মারা।
90. আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।
91. আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া।
92. হালাল জানোয়ারকে গাইরুল্লাহর নামে যবেহ করা বা ভিন্ন উপায়ে মেরে খাওয়া।
93. অপচয় বা অপব্যয় করা।
94. বখিলী কানজূসী করা।
95. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন প্রবর্তন না করা।
96. সলামের নিয়মানুসারে আইন-কানুন জারী হওয়া সত্ত্বেও কোন আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা।
97. ডাকাতি, লুটতরাজ, পকেটমারী করা।
98. বিনা অনুমতিতে কারো বাড়ীতে বা ঘরে বা খাস কামরায় প্রবেশ করা।
99. মানুষের কষ্ট হয় এমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে খুশী হওয়া।
100. সুরত-শেকেলের কারণে বা গরীব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিটকারী করা।
101. বিদআত কাজ করা বা জারি করা।
102. দুনিয়া হাসিলের জন্য ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া।
103. ইলম গোপন করা।
104. জাল হাদীস বর্ণনা করা।
105. গুনাহের কাজে মান্নত করা।
106. প্রজাদের অধিকার খর্ব করা, জনগণের হক আদায় না  করা।
107. অবৈধ ট্যাক্স উসূল করা।
108. বিনা ঠেকায় ঋণ করে ঋণী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
109. দুমুখো স্বভাব ইখতিয়ার করা।
110. মহিলাদের খুশবু লাগিয়ে বাহিরে বের হওয়া।
111. বিজাতিদের অনুকরণ করা।
112. গোঁফ বড় করে রাখা।
113. অন্যের চুল ব্যবহার করা।
114. যথার্থ কারণ ছাড়া কাউকে অভিশাপ দেয়া।
115. অহেতুক কুকুর প্রতিপালন করা।
116. মাতম ও শোক প্রকাশ করা।
117. একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা।
118. সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলা বা সমালোচনা করা।
119. হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণ করা।
120. বিনা দাওয়াতে মেহমান হয়ে আহার করা।

 

তথ্য সূত্রঃ

মুফতি মন্সুরুল হক দাঃবাঃ

 

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *