মুসাফির ব্যক্তির রোযা সংক্রান্ত ১০ টি মাসআলা
সফরের সংজ্ঞা
১. মাসআলা : সফর চাই জায়েয পদ্ধতিতে হোক অথবা না জায়েয পদ্ধতিতে হোক অথবা মেহনত ব্যতীত হোক, যেমন রেলগাড়ী বা অন্য কোন গাড়ির দ্বারা হোক অথবা মেহনতের মাধ্যমে হোক, যেমন পায়ে হেঁটে ভ্রমন বা কোন প্রাণীর মাধ্যমে ভ্রমন, প্রত্যেক অবস্থায় রোযা না রাখা জায়েয আছে। কিন্তু মেহনতছাড়া ভ্রমনের মধ্যে মুস্তাহাব হল, রোযা রাখা। অবশ্য যদি তার সাথীদের মধ্য হতে কিছু লোক রোযা না রাখে, এমতাবস্থায় সে একা রোযা রাখলে, সাথীদের খাওয়া দাওয়া করার মধ্যে যদি কষ্ট হয়, তাহলে কষ্ট বিহীন সফর কালেও রোযা রাখবে না । (ইলমুল ফিকহ : ৩/৩৫)
২. মাসআলা : সফর অবস্থায় রোযা রাখা জায়েয এবং সওয়াবও আছে। তবে যদি না রাখে, তাহলে সেটা বৈধ। সফরের পরিমাণ আটচল্লিশ মাইল হওয়া জরুরী। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৩/৭৩)
একদিনের ভ্রমণ
৩. মাসআলা : যখন ৪৮-মাইলের ভ্রমণ হয়, তখনই রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে । এর কম ভ্রমণে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/১০৮)
পনের দিনের নিয়তের বিধান
৪. মাসআলা : যদি কোন স্থানে পনের দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করে, তাহলে তখন আর রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে এখন সে মুসাফির নয়; সুতরাং যদি পনের দিনের কম অবস্থানের নিয়ত করে থাকে, তাহলে রোযা না রাখা জায়েয আছে। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ২/১৬৮)
সুবহে সাদিকের পর সফর করা
৫. মাসআলা : যে ব্যক্তি সকাল বেলা সফরে না থাকে, তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। যদিও দিনে ভ্রমণের দৃঢ় ইচ্ছা করে। (আহসানুল ফাতাওয়া : 8/839)
দ্বিপ্রহের পূর্বেই ঘরে পৌঁছে যাওয়া
৬. মাসআলা : যদি কোন মুকিম রমযান শরীফের মধ্যে রোযার নিয়তের পর ভ্রমণ করে তাহলে তার উপর ঐ দিনের রোযা রাখা আবশ্যক। কিন্তু যদি ঐ রোযা ভঙ্গ করে দেয়, তাহলে কাফফারা দিতে হবে না । এমনিভাবে যদি কোন মুসাফির অর্ধ দিবসের পূর্বে মুকিম হয়ে যায় আর এখন পর্যন্ত কোন রোযা ভঙ্গের কাজ না করে, যেমন পানাহার ইত্যাদি তার দ্বারা হয়নি, তাহলেও রোযা রাখা আবশ্যক। কিন্তু যদি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে কাফফারা দিতে হবে। (ইলমুল ফিকহ : ৩/৩৫)
রোযাদার মুসাফিরের রোযা ভেঙ্গে দেওয়া
৭. মাসআলা : যদি মুকিম রোযার নিয়ত করার পর মুসাফির হয়ে যায়,সামান্য দূরে গিয়ে ভুলে রেখে গেছে এ ধরণের কোন বস্তু আনার জন্য স্বীয় ঘরে ফিরে আসে, আর স্বীয় স্থানে এসে রোযা ভঙ্গ করে ফেলে, তাহলে তার কাফফারা দিতে হবে। কারণ তার উপর ঐ সময় মুসাফিরের হুকুম প্রযোজ্য ছিলো না । সুতরাং সে (মুসাফির হিসেবে) থাকার নিয়তে যায়নি। আর সেখানে অবস্থানও করেনি। (ইলমুল ফিকহ : ৩/৩৬)
রোযা থেকে বাঁচার জন্য ভ্রমণ করা
৮. মাসআলা : মুসাফিরে শরয়ী এবং অসুস্থ ব্যক্তি রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে । তবে রোযা থেকে বাঁচার কোন ধরণের হিলা করা জন্য মন্দ এবং লজ্জাজনক কাজ। (রদ্দুল মুহ্তার ; ২/১৫৮)
মুসাফির রোযা রেখে ভেঙ্গে দেওয়া
৯. মাসআলা : কোন ব্যক্তি ভ্রমণের মধ্যে রোযার নিয়ত করল, কিন্তু পরে নিয়ত পরিবর্তন করে পানাহার করল, তাহলে তার জন্য কাফফারা লাগবে না। কেননা রোযা রাখার পর ভ্রমণ আরম্ভ করলে কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার মতানৈক্য রয়েছে। আর অধিকতর গ্রহণযোগ্য মত হলো এমতাবস্থায়ও কাফফারা ওয়াজিব নয় । (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৪৮)
সফরে তীব্র গরম হওয়ায় রোযা ভেঙ্গে ফেলা
১০.মাসআলা : যদি কোন ব্যক্তি রমাযান মাসে এ ধরণের ভ্রমনের সম্মুখীন হয় যে, সফরের দ্বারা শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফির হয় না। কিন্তু দ্বিপ্রহরে খুব রৌদ্র এবং তীব্র গরম হওয়ার কারণে অপারগ হয়ে রোযা ভেঙ্গে ফেলে এমন অবস্থায় ঐ ব্যক্তির উপর কাফফারা আবশ্যক হবে না, শুধু কাযা ওয়াজিব হবে । (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪৪৪)
তথ্যসূত্রঃ. লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)