ইফতার সংক্রান্ত ১০ টি মাসআলা
ইফতারীর জন্য ঘণ্টা ইত্যাদির ব্যবহার
১. মাসআলা : সাহরী ও ইফতারের সময় যদি জানা না থাকে আর রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তখন ঢোল, ঘণ্টা, অথবা তোপ ধ্বনি ইত্যাদির ব্যবহার বৈধ হবে। কিন্তু মসজিদ কিংবা মসজিদের ছাদের উপর এটা হওয়া উচিত নয়; বরং মসজিদ থেকে সরে অন্য কোনো স্থানে হওয়া উচিত; কেননা এ সকল বস্তু মসজিদের মর্যাদা হানি করে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৭/৩৯২)
মসজিদে সাহরী ও ইফতার করা
২. মাসআলা : মসজিদে ইফতার ও সাহরী করা যাবে। তবে উত্তম হলো এমতাবস্থায় ইতিকাফের নিয়ত করবে। মসজিদে ইফতার ও সাহরী খাওয়া বৈধ। কিন্তু যতটুকু সম্ভব মসজিদের আদব ও তা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা । (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া : ১/৫০৮)
সূর্যাস্তের পূর্বে আযানের কারণে ইফতার
৩. মাসআলা : মুয়াযযিন সাহেব প্রায় সাত মিনিট পূর্বে আযান দিয়েছেন।কেউ ঐ আযানের উপর ভরসা করে ইফতার করে ফেলেছে।
তাহলে তার রোযা হবে না। আর যদি ঐ আযান সহীহ সময়ে হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা জন্মে, তাহলে শুধু কাযা ওয়াজিব, কাফ্ফারা নয় । আর যদি আযান সহীহ হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ থাকা অবস্থায় ইফতার করে থাকে, তাহলে কাফ্ফারাও ওয়াজিব হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৪৬)
ইফতারের সঠিক সময়
৪. মাসআলা : সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতারে বিলম্ব করা মাকরূহ। হ্যাঁ, তবে যদি মেঘ-বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে সন্দেহ জাগে, তখন দু’চার মিনিট দেরী করা উত্তম। আর তিন মিনিট সাবধানতাবশত দেরী করা সর্বাবস্থায় উচিত । খেজুর অথবা খোরমা দ্বারা ইফতার করা উত্তম। এ ছাড়া অন্য কোনো জিনিস দ্বারা ইফতার করলেও কোনো অসুবিধা নেই। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ : ১/৩৮১)
ইফতার কিসের দ্বারা করবে
৫. মাসআলা : খেজুর দ্বারা ইফতার করা শ্রেয়। (মেশকাত শরীফ : ১/১৭৫)
রাসূল সা. এর ইফতার
৬. মাসআলা : তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। অন্যথায় শুকনা খেজুর দ্বারা। যদি তাও না হয়, তবে পানি দ্বারা ইফতার করা যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৬) খেজুর কিংবা পানি দ্বারা ইফতার করার দ্বারা স্পষ্টভাবে এটা বুঝা যায়, যখন পাকস্থলী খালি হয় আর খাবারের চাহিদা পূর্ণভাবে হয়, তখন যে কোনো জিনিস খাওয়া হয় পাকস্থলী তাকে ভালোভাবে গ্রহণ ও হজম করে। এ জন্য এ অবস্থায় যখন মিষ্টিদ্রব্য পাকস্থলীতে পৌঁছে তখন শরীরের পক্ষে তা অনেক উপকারী হয়। কেননা মিষ্টান্ন দ্রব্যের গুণ হলো এর দ্বারা শারীরিক শক্তি তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। বিশেষত মিষ্টান্ন দ্রব্যের দ্বারা দৃষ্টি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। আরবে মিষ্টান্নের অধিকাংশই খেজুরের। আরববাসীদের মেজাযের মাঝেই খেজুরের প্রতি অন্তরঙ্গতা বিদ্যমান । কাজেই, খেজুর দ্বারা ইফতার করার কথা বলা হয়েছে। খেজুর না পাওয়া অবস্থায় পানি দ্বারা ইফতার করার কথা বলা হয়েছে। কেননা পানি বাহ্যিক ও ভেতরগত পবিত্রতার উত্তম পদ্ধতি। ইবনে মালেক রহ. বলেন, উত্তম হওয়ার কারণ শরী‘য়ত প্রবর্তকের প্রতি সোপর্দ করা। (মাযাহেরে হক : ৪/৯৫)
ইফতারের কারণে জামাতে বিলম্ব করা
৭. মাসআলা : ইফতারের কারনে মাগরিবের নামাযে কিছুক্ষণ দেরী করা জায়েয আছে। এতে কনো অসুবিধা নেই। প্রশান্তির সাথে পানি পান করে বা কোনো কিছু খেয়ে ইফতার করে নামায আদায় করে নেবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই আমলের বিলম্ব করার কারণে অসন্তুষ্ট হয় এবং একাকী নামায পড়ে সে ভুলের মধ্যে আছে। তার উচিত জামাতের সাথে শরীক হওয়া। আর যে বিলম্ব ইফতার করার কারণে হয়, সেটাকে শরীয়ত পরিপন্থী মনে করবে না; এটাই হলো শরীয়ত সম্মত বিধান। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী : ১/৪৯)
অমুসলিমদের পাঠানো বস্তু দিয়ে ইফতার করা
৮. মাসআলা : একজন অমুসলিম প্রতি রমযান মাসে দুধ, চিনি ও বরফ ক্রয় করে মুসলমানদের কে দেয়, তাহলে এর দ্বারা ইফতার করতে কোনো অসুবিধা নেই। অমুসলিমের পাঠানো জিনিস গ্রহণ করে তার দ্বারা ইফতার করা জায়েয। (কিফায়াতুল মুফতী : ৪/২৩৪)
মুয়াজ্জিন প্রথমে ইফতার করবে না কি আযান দিবে
৯. মাসআলা : সূর্যাস্তের পর ইফতার করে আযান দেবে। ইফতারের কারণে জামাতে ৫/৭মিনিট বিলম্ব করার সুযোগ আছে (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া : ২/৩৮)
ইফতারের কারণে জামাত দেরীতে করা
১০. মাসআলা : ইফতারের জন্য মাগরীবের জামাতে ৫/৭মিনিট দেরী করার সুযোগ আছে।
তথ্যসূত্রঃ. লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)