যাকাত আদায় না করার শাস্তি
কুরআন এর আলেকে যাকাত আদায় না করার শাস্তি
১. আল্লাহ তায়ালা বলেন “আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও জমিনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। ’ (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ১৮০)
২.যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে রাখে এবং এগুলোকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেনা (অর্থাৎ, যাকাত প্রদান করেনা)তাদেরকে ভীষণ কষ্টকর শাস্তির সুসংবাদ (তিরস্কার স্বরূপ ব্যবহৃত) শুনিয়ে দিন। যেদিন স্বর্ণ রৌপ্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং এর দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে (এবং বলা হবে) এগুলো তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। অতএব, এখন যা জমা করে রেখেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা তাওবা ৩৪.৩৫)
হাদীসের আলোকে যাকাত আদায় না করার শাস্তি
বিষধর সাপের দংশনঃ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ। ’ অতঃপর রাসুল (সা.) ওপরে উল্লিখিত সুরা আলে ইমরানের আয়াতটি পাঠ করেন। (বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)
সম্পদ দিয়ে শরীরে দাগঃ
নিসাব পরিমাণ সব ধরনের সম্পদের জাকাত আদায় করতে হবে। যারা যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘স্বর্ণ ও রুপার মালিকরা এসবের জাকাত না দিলে কিয়ামতের দিন তার জন্য এসব সম্পদকে আগুনের পাত বানানো হবে এবং জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। এরপর তা দিয়ে পার্শ্ব, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। তা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আবার উত্তপ্ত করা হবে। এমন দিবসে তা করা হবে, যখন এক দিন ৫০ হাজার বছরের সমান হবে। এই অবস্থা চলতে থাকবে যতক্ষণ না বান্দাদের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হয়। অতঃপর তাদের গন্তব্য হয়তো জান্নাত বা জাহান্নাম। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৮৭)
দুর্ভিক্ষের কারণঃ
হাদিসে পার্থিব জীবনে যাকাত না দেওয়ার কয়েকটি শাস্তির কথাও এসেছে। বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে জাতি যাকাত দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে আল্লাহ সে জাতিকে দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত করেছেন।’ (বাইহাকি, হাদিস : ৬৬২৫)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে এসে বললেন, ‘হে মুহাজিররা, তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তোমরা তার মুখোমুখি না হও। কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মহামারির মতো প্লেগ রোগ ও এমন ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে, যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করলে তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ, শাসকদের নিপীড়ন ও কঠিন বিপদ নেমে আসে। কোনো জাতি জাকাত না দিলে তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করা হয়। যদি চতুষ্পদ জন্তু না থাকত তাহলে কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। … (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৯)
যাকাত অনাদায়ী জাহান্নামে যাবেঃ
আনাস রা. বলেন : রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন: যারা যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তারা জাহান্নামে যাবে। (তাবরানী : ১/৭৬০)
আল্লাহর দেয়া সম্পদের যাকাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ পার্থিব জীবনে যেমন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করে, তেমনি পরকালীন জীবনে জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতের অফুরন্ত সুখ লাভে ধন্য হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত সোনা-রূপা ও গবাদি পশুসহ সকল সম্পদের যাকাত সঠিকভাবে আদায় করা এবং মহান আল্লাহ নির্দেশিত পথে খরচ করা। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
তথ্যসূত্রঃ. লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)