জুমার দ্বিতীয় আজানের ইতিহাস
জুমার দিন সপ্তাহের সেরা একটি দিন। এটা মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীকে উপহার দিয়েছেন, যা অন্য কোনো জাতিকে দেননি। জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। সেখানে জুমার দিনের প্রধান আমল নামাজের কথা বলা হয়েছে। জুমার নামাজের জন্য দুটি আজান দেওয়া হয় । সানি আজানের ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
প্রথম যুগে জুমার আজান
আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং আবু বকর ও ওমর (রা.)-এর জামানায় জুমার দিন মাত্র একটি আজান ও একটি ইকামাত প্রচলিত ছিল। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, মদিনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমার দিন দ্বিতীয় আজান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন উসমান ইবনে আফফান (রা.)। নবী করিম (সা.)-এর সময় জুমার জন্য একজন ব্যতীত মুয়াজ্জিন ছিল না এবং জুমার দিন আজান দেওয়া হতো যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের ওপর খুতবার আগে। (বুখারি, হাদিস : ৮৬৭)
দ্বিতীয় আজানের প্রচলন
উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে বহু এলাকা খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন তিনি সবার কাছে জুমার নামাজের আহ্বান পৌঁছানো এবং সবাইকে নিয়ে যথাসময়ে জুমা আদায় করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিতে দ্বিতীয় আজানের প্রচলন করেন। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, নবীজি, আবু বকর এবং ওমর (রা.)-এর সময় জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বরের ওপর বসতেন তখন প্রথম আজান দেওয়া হতো। পরে যখন উসমান (রা.) খলিফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি জাওরা থেকে দ্বিতীয় আজান বৃদ্ধি করেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, জাওরা হলো মদিনার অদূরে বাজারের একটি স্থান। (বুখারি, হাদিস :৮৬৭)
দ্বিতীয় আজান সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত
দ্বিতীয় আজানের প্রবক্তা উসমান ইবনে আফফান (রা.) হওয়ার কারণে তাঁকে বিদআত বলা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন ফজরের নামাজের পর রাসুল (সা.) আমাদের এমন এক উচ্চাঙ্গের নসিহত করলেন যে তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল এবং অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন এক ব্যক্তি বলেন, এ তো বিদায়ি ব্যক্তির মতো নসিহত হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের ওপর কী অসিয়ত করে যাচ্ছেন? তিনি বলেন, তোমাদের আমি আল্লাহকে ভয় করার অসিয়ত করছি, যদি এই হাবশি গোলামও আমির নিযুক্ত হয়, তবু তার প্রতি অনুগত থাকবে। তার নির্দেশ শুনবে। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা বহু বিরোধ প্রত্যক্ষ করবে। তোমরা সাবধান থাকবে নতুন নতুন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে। কারণ তা হলো গোমরাহি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ওই যুগ পাবে তার কর্তব্য হলো আমার সুন্নত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতের ওপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৫৫২, তিরমিজি, হাদিস : ২৬৭৬)
দ্বিতীয় আজানের জবাব
নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী জুমার দ্বিতীয় আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেওয়া জায়েয।
আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাহ. বলেন, আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে মিম্বরের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আযানে আল্লাহু আকবার বললেন তখন তিনিও আল্লাহু আকবার বলেছেন …। এরপর আযান শেষ হলে তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিসে অর্থাৎ যখন মুয়াযযিন আযান দেন এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি আপনারা আমাকে বলতে শুনলেন। **-**সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯১৪
অন্য বর্ণনায় সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না আর ইমাম খুতবা শুরু করলে কথা বলা যাবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৩৪২
আর খুতবার সময় যেহেতু চুপ থাকা ও মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব তাই আযানের পরপরই ইমাম খুতবা শুরু করে দিলে আযানের দুআ পড়া যাবে না। কিন্তু যদি ইমাম খুতবার জন্য দাঁড়াতে বিলম্ব করেন তবে এ সময় আযানের দুআও পড়া যাবে।
তথ্যসূত্রঃ. লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)