কুদৃষ্টির চিকিৎসা
বর্তমানে ইন্টারনেট টিভি ও ভিসিআরের কারণে ঘরে-ঘরে ফ্লিম নাটকের ছড়াছড়ি। নগ্নতা ও অশ্লীলতার তুফান চলছে। যুবতীরা পর্দাহীন হয়ে দেহপ্রদর্শনী করে মার্কেটে-মার্কেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ্যাডভেটাইসের নামে পথের কিনারায় নারীদের আকর্ষণীয় ছবি দেখা যাচ্ছে। সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে নারীদের উত্তেজক ছবি তো এখন সাধারণ বিষয়। এহেন পরিবেশে যুবক তো পরের কথা, বুড়োদের দৃষ্টি সংযত রাখাও মহা আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শতচেষ্টা সত্ত্বেও এ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। যাদের অন্তরে হেদায়েতের আলো আছে, তারা গুনাহটির ব্যাপকতা দেখে ভেতরে-ভেতরে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তরিকতের সালিক-মুরিদ ও শিষ্যরা নিজেদের পীরের কাছে এ থেকে পরিত্রাণের ওষুধ প্রার্থনা করেন। তাই প্রয়োজন মনে হল, এ থেকে পরিত্রাণের কিছু পরীক্ষিত ওষুধ কুরআন-হাদীসের আলোকে পেশ করব। যাতে দৃষ্টি হারামপাত্র থেকে ফিরে এসে হালালপথে ধাবিত হয়। যৌন উম্মাদনার জ্বলে ওঠা আগুন নিভে যায়। পবিত্র ও শালীন জীবনযাপন সহজ হয়ে যায়।
পবিত্র কুরআনের আলোকে
কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশে পবিত্র কুরআনের আলোকে সাতটি ব্যবস্থাপত্র নিম্নে উপস্থাপন করা হল-
এক. মহান আল্লাহ বলেন- قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ ‘মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে।’
কুদৃষ্টির সর্বোত্তম চিকিৎসা হল, নিজের দৃষ্টি অবনত রাখা। সুতরাং সালেক তথা আত্মশুদ্ধি প্রত্যাশীব্যক্তির জন্য আবশ্যক হল, পথে চলতে গিয়ে দৃষ্টিকে অবনত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা।পায়ে হেঁটে চললে দৃষ্টি নিচের দিকে রাখুন। গাড়িতে থাকলে দৃষ্টি এতটুকু উঠিয়ে রাখুন, যেন অন্যান্য গাড়ির চলাচল বুঝতে সক্ষম হন। কারো চেহারার প্রতি দৃষ্টি নয়; কারণ ফেতনার শুরুটা এটা দ্বারাই হয়। দৃষ্টি ভুল করে ফেললে ইসতেগফার করুন এবং দৃষ্টি নামিয়ে নিন। এ অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন, এমনকি এটাকে জীবনের অংশ বানিয়ে নিন। অফিসিয়াল কাজে কিংবা কেনাকাটার সময় কোনো নারীর সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে তার চেহারার দিকে তাকাবেন না। যেমনিভাবে কেউ কারো ওপর অসন্তুষ্ট থাকলে কথা বলার সময় পরস্পরের প্রতি তাকায় না। দৃষ্টি বিনিময় করেনা। অনুরূপভাবে কোনো প্রয়োজনে পরনারীর সাথে কথা বলতে হলে এটা মনে রাখবেন যে, আল্লাহর নির্দেশের কারণে আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট, সুতরাং তার চেহারার প্রতি তাকাব না ।
দুই. আল্লাহতাআলা বলেন- ‘فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاءِ নারীদের থেকে তোমাদের পছন্দমত বিয়ে কর।’ -সূরা নিসা : ৩
যত দ্রুত সম্ভব দীনদার অনুগত ও সুন্দরীনারী দেখে বিয়ে করে নিন, যাতে করেজৈবিক চাহিদা পূরণ করা যায়। ক্ষুধার্তব্যক্তি যদি অধিক নফল নামায পড়াকে নিজের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থাপত্র মনে করে তাহলে তার চিকিৎসা করা উচিত। ক্ষুধার ওষুধ হল, খানা খাওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষুধা নিবারণের প্রার্থনা করা। অনুরূপভাবে দৃষ্টি পবিত্র রাখার ব্যবস্থাপত্র হল, বিয়ে করা এবং আল্লাহর কাছে পবিত্র জীবনযাপনের জন্য দুআ করা। সুযোগ পেলে স্ত্রীর চেহারার দিকে ভালবাসাপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে ঞ্জতাকাবেন। আল্লাহর শোকর আদায় করবেন যে, নেয়ামতটি না পেলে কত গস্নানি যে পোহাতে হত!
যে কামদৃষ্টি মার্কেটে বিচরণশীল নারীর প্রতি দেন তা স্ত্রীর প্রতি দিন। স্ত্রীকে পরিষ্কার-পচ্ছিন্ন থাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন। ভাল কাপড় কিনে দিন। অন্য নারীর কাছে যা কিছু আছে তার সবই আপনার স্ত্রীর কাছেও আছে। ভাবুন, আমি যদি পরনারীর প্রতি তাকাই তাহলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন। পক্ষান্তরে নিজের স্ত্রীকে দেখলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। হাদীসে আছে-যে ব্যক্তি স্ত্রীর প্রতি মুচকি হেসে তাকায় এবং যে স্ত্রী স্বামীর প্রতি মুচকি হেসে তাকায় তখন আল্লাহ তাআলা উভয়ের প্রতি মুচকি হেসে তাকান ।
হালালকে দেখুন প্রাণভরে, যেন হারামের প্রতি লোভ না জাগে। যখনই মন পরনারীর প্রতি আকর্ষণবোধ করবে তখনই স্ত্রীর কথা কল্পনায় আনুন। দেখবেন, গুনাহর চিন্তা অন্তর থেকে দূর হয়ে যাবে।
তিন. আল্লাহতা’আলা বলেন- إِنَّ الذِّيْنَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوْا فَإِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহতাআলাকে ভয় করে যখন তাদেরকে শয়তানের কোনো দল ঘিরে ধরে তখন তারা আল্লাহর যিকির করে। সুতরাং তাদের অনুভূতি ফিরে আসে।’ আয়াতটিতে এ রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে যে, যখনই শয়তান আক্রমন করবে, অন্তরে কুমন্ত্রণা ঢেলে দিবে তখনই যিকিরের অস্ত্র ব্যবহার করে তা প্রতিহত করবে। এজন্য রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে তাসবীহ রাখবেন। অন্যথায় মনে-মনে যিকির করবেন। অলসতা গুনাহর অন্যতম ভূমিকা। সুতরাং যিকির দ্বারা অলসতা দূর করুন। যিকিরের আলো অন্তরে অপার্থিব প্রশান্তির জন্ম দেয়।তখন নিষিদ্ধস্থানে চোখও তুলতে মন চায় না। دو عالم سے کرتی ہے بیگا نہ دل کو – عجب چیز ہے لذت آشنائ ‘যখন দুই জগত থেকে হৃদয়কে অপরিচিত করে নেয়, তখন বন্ধুত্বের স্বাদ মুগ্ধতাছড়ানো হয়।’
চার. আল্লাহতাআলা বলেন- أَلَمْ يَعْلَمْ مِّأَنَّ اللَّهُ يَرِى ‘সে কি জানে না যে আল্লাহ দেখতে পাচ্ছেন।’ (সূরা আলাক : ১৪) আত্মার সংশোধনপ্রয়াসী সালেক যখনই পরনারীর প্রতি তাকানোর ইচ্ছা করবে তখনই এ কল্পনা করবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। এতে দৃষ্টির হেফাজত করা সহজ হবে। এর দৃষ্টান্ত হল,ওই নারীর বাবা কিংবা স্বামী যদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে তবে কি আমি ওই নারীর প্রতি তাকিয়ে থাকতে পারব? তখন কি আমার মনে হবে না যে, ওই নারীর বাবা বা স্বামী আমার ওপর রাগ করবেন? অনুরূপভাবে ভাবুন, আমি যদি পরনারীর প্রতি তাকাই, অথচ আল্লাহ আমাকে দেখছেন, তখন অবশ্যই তিনি রাগ করবেন। যদি তিনি পাকড়াও করেন তাহলে আমার কী অবস্থা হবে?
পাঁচ. আল্লাহতাআলা বলেন- وَالذَّيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ‘যারা আমার পথে সাধনা করে আমি অবশ্যই তাদেরকে পথ দেখাব।’ (সূরা আনকাবুত : ৬৯) তাফসীরবিশারদগণ লিখেছেন, শরীয়তের ওপর চলার উদ্দেশ্যে মনের বিপরীত আমল করাকেই মুজাহাদা তথা সাধনা বলে। এটা বাস্তব যে, মুজাহাদা দ্বারা ‘মুশাহাদা’ লাভ হয়। সুতরাং পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দিতে যখনই মন চাইবে তখনই নিজের ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে তার বিরোধিতা করবেন।
`মনে একথা বদ্ধমূল রাখবেন, এই সাধনার দ্বারা আমার প্রকৃত মাহবুব তথা আল্লাহতাআলার মুশাহাদা বা দর্শন নসিব হবে। এমনিতে এ ধরনের সাধনা হয় কয়েক মুহূর্তের। অথচ মুশাহাদার স্বাদ হবে চিরদিনের জন্য। মনে রাখবেন, যবতে-নফস তথা নফসকে দমানোর নূর দ্বারা অন্তর খুব দ্রুত পরিষ্কার হয়। তাসবিহর দানাও এর সামনে কিছু নয়। সাহসহারা হওয়া সমস্যার সমাধান নয়। হিম্মত ধরে রাখলে সমস্যার সমাধান হয়। সুতরাং মনের ওপর জোর খাটান। তাকে শরীয়তের লাগাম পরিয়ে দিন, যেন কেয়ামতের দিন সৌভাগ্যের মালা পরার ভাগ্য জুটে।
ছয়. আল্লাহতাআলা বলেন- اِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَؤَدُّوْا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে দিয়ে দিতে।’ (সূরা নিসা : ৫৮) সংশোধন প্রত্যাশী সালেক এই কল্পনা ধরে রাখবে যে, আমার চোখ আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। এই আমানত ব্যবহার করতে হবে তাঁরই নির্দেশ অনুপাতে। বিপরীত করলে আমানতের খেয়ানতকারী হয়ে যাব। সাধারণত নিয়ম হল, আমানতে একবার খেয়ানত করলেও তার কছে দ্বিতীয়বার আমানত রাখা হয় না। এমন যেন না হয় যে, দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া দৃষ্টিশক্তি পরনারীর পেছনে ব্যয় করলাম, পরিণামে তিনি আমার দৃষ্টিশক্তি আখেরাতে ফেরত দিবেন না। ওইদিন যদি অন্ধ হয়ে ওঠতে হয় তাহলে কী অবস্থা হবে? পবিত্র কুরআনে এটার প্রমাণ আছে যে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কিছুলোককে অন্ধ করে ওঠাবেন। তখন তারা জিজ্ঞেস করবে- رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِيْ أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‘প্রভু! আমাকে অন্ধ বানিয়ে ওঠালেন কেন? আমার তো দৃষ্টিশক্তি ছিল!’
এটা ভাবনার বিষয় যে, আমরা এমন যুগে দুনিয়াতে সৃষ্টি হয়েছি যখন আল্লাহর প্রিয়বন্ধুর দর্শনলাভ করতে পারি নি। কেয়ামতের দিনও যদি অন্ধ করে ওঠানো হয় তাহলে আল্লাহর প্রিয়বন্ধুর দর্শনলাভ থেকে বঞ্চিত হব। আল্লাহর প্রিয়বন্ধুর নাম হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দ্বিতীয়বার বঞ্চিত হওয়া থেকে বাঁচান। সুতরাং দৃষ্টিসংরক্ষণ জরুরি, যেন কেয়ামতের দিন আমানতটি দ্বিতীয়বার ফেরত পাই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَمِيْلٌ ‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর।’ (আলজামিউসসাগীর, খন্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৬৩)
এ কথাটা মাথায় রাখবেন যে, যদি আমি দুনিয়ার সুন্দরীদের প্রতি কুদৃষ্টি দেই তাহলে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার সৌন্দর্যের দর্শনলাভ থেকে আমাদের বঞ্চিত করে দেন কিনা!
সাত. আল্লাহতাআলা বলেছেন- أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ ‘যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিগলিত হওয়ার সময় কি আসে নি?” সালেক তথা আত্মার সংশোধনপ্রত্যাশীর মন যখনই কুদৃষ্টির গুনাহতে লিপ্ত হওয়ার জন্য ইতিউতি করবে, তখনই সঙ্গে সঙ্গে আয়াতটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করবে। তখনই নিজেকে সম্বোধন করে বলবে ‘ঈমানদারের কি এখনও আল্লাহকে ভয় করার সময় হয় নি?’ প্রতিটি কৃদৃষ্টির সময় আয়াতটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভাবতে থাকুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে থাকুন। এতে আল্লাহ তাআলা নিজের ভয় আপনার অন্তরে তৈরি করে দিবেন এবং কুদৃষ্টি থেকে সত্যিকারের তাওবা আপনার নসিব হবে।
পবিত্র হাদীসের আলোকে
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃষ্টিসংরক্ষণের প্রতি অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। মানুষের চেহারার আকর্ষণ তো আছেই, এমন কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবজন্তুর লজ্জাস্থানের প্রতি তাকানো থেকেও নিষেধ করেছেন। তিনি দৃষ্টিকে বলেছেন ‘ইবলিসের একটি বিষমিশ্রিত তীর’। হাদীসশরীফের প্রতি লক্ষ্য করলে কুদৃষ্টির চিকিৎসা সম্পর্কে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়। যথাক্রমে-
এক. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পরনারীর প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর যদি তার রূপলাবণ্য তোমাকে আকর্ষিত করে তাহলে ঘরে এসে নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাস কর।’ কারণ পরনারীটির কাছে যা আছে তোমার স্ত্রীর কাছেও তা-ই আছে। এর দ্বারা বোঝা গেল, বৈধ উপায়ে নিজের প্রয়োজন পূরণ করার দ্বারা হারাম থেকে বাঁচা সহজ হয়।
দুই. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এক যুবক এল। বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে ব্যভিচারের অনুমতি দিন। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শাসালেন না; বরং স্নেহের সুরে বললেন, কেউ তোমার মায়ের সাথে ব্যভিচার করাটাকে তুমি কি পছন্দ করবে? যুবক বলল, না। নবীজী বললেন, তাহলে তোমার স্ত্রীর সাথে কেউ ব্যভিচার করুক- এটা কি চাও? যুবক উত্তর দিল, না। নবীজী বললেন, তাহলে তোমার বোনের সাথে ব্যভিচার করা হোক- এটা কি চাও? যুবক এবারও উত্তর দিল, না। এবার নবীজী বললেন, তবে তো তোমার মেয়ের সাথে এমনটি হোক- এটা কামনা কর কি? যুবক এবারও উত্তর দিল, না।
যুবকের উত্তরগুলো শুনে এবার প্রিয় নবী বললেন, যার সাথে ব্যভিচার করার জন্য তুমি এতটা আগ্রহী সে তো নিশ্চয় কারো মা কিংবা স্ত্রী কিংবা বোন কিংবা মেয়ে হবে। যেমনিভাবে তোমার এসব মাহরাম নারীর সাথে ব্যভিচার হওয়াটা তোমার জন্য অসহনীয়, অনুরূপভাবে অপরলোকটিও তো তার নিকটাত্মীয় নারীর সাথে এমনটি হওয়াটা কোনোভাবেই কামনা করে না। এ বলে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র হাত যুবকটির বুকে রেখে তার জন্য পবিত্রতা ও সম্ভ্রমবোধ সংরক্ষণের দুআ করলেন। এ যুবক সাহাবী বলেন, এরপর থেকে আমার বুক থেকে ব্যভিচারের কামনা সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে গেল এবং অন্যান্য গুনাহর চেয়েও ব্যভিচারের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি আরো অনেক বেশি হল।
এর দ্বারা বোঝা গেল, সালেক একথা ভাববে- ‘যেমনিভাবে আমার নিকটতম কোনো নারীর প্রতি পরপুরুষের লোভাতুর শয়তানিদৃষ্টি আমার কাছে বিরক্তিকর ও আপত্তিজনক মনে হয়, তেমনিভাবে অন্যরাও এটা মোটেও পছন্দ করে না যে আমি তাদের নিকটতম কোনো নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাই।’ এরূপ ভাবনার দ্বারা অন্তর স্থির ও শান্ত হয়ে যাবে। কুদৃষ্টির তাড়না নিস্তেজ হয়ে পড়বে। তাছাড়া কোনো কামেল শায়েখের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে তাঁর কাছে রোগটির কথা খুলে বলুন এবং দুআ ও তাওয়াজ্জুহ কামনা করুন। পীর-মাশায়েখ নবীদের স্থলাভিষিক্ত হন। তাঁদের তাওয়াজ্জুহ দ্বারা অন্তরের অন্ধকার দূর হয়। তখন মানুষ প্রবৃত্তির নীচুতা থেকে বের হয়ে আধ্যাত্মিকতার সুউচ্চ স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হয়। তাঁদের সান্নিধ্য ওষুধ এবং তাঁদের দৃষ্টি চিকিৎসা হয়ে থাকে।
সালাফ তথা পূর্বসূরী বুযুর্গদের বাণীর আলোকে
পীরমাশায়েখ তাঁদের ভক্ত-মুরিদদেরকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশে বিভিন্ন উপায় বলে দিয়েছেন। মৌলিকভাবে সেগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
এক. কল্পনা পাল্টানো
যখনই নফস-প্রবৃত্তি পরনারীকে দেখার ইচ্ছা করবে তখনই সালেক তথা আত্মশুদ্ধি-প্রয়াসীব্যক্তির উচিত নিজের কল্পনা পরনারী থেকে সরিয়ে অন্যদিকে নিবদ্ধ করা। ইচ্ছা করে যদি অন্য কল্পনা ঢুকানো যায় তাহলে পরনারীর চিন্তা আপনা আপনি দূর হয়ে যাবে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিম্নে উপস্থাপন করা হল-
ক. ইমাম গাযালী রহ. বলেন, ‘হে প্রিয়! জেনে রেখো, কোনো পরনারী তোমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শয়তান কামনা করে যে, তুমি তার প্রতি দৃষ্টি দিবে। একটু দেখে নিবে যে, নারীটি কেমন এরূপ পরিস্থিতিতে শয়তানের সাথে বিতর্ক জুড়ে দাও যে, আমি কেন দেখব? নারীটি যদি কুশ্রী হয় তাহলে আমি তো স্বাদহীন গুনাহয় লিপ্ত হব। আর সুন্দরী হলে গুনাহতো হবে, পাশাপাশি এই আফসোস ও অন্তরে জন্ম নিবে যে, আহ! তাকে যদি আমি পেতাম! কিন্তু সকল নারীকে তো পাওয়া যায় না। সুতরাং অন্তরকে আফসোসের মধ্যে ফেলে দেয়ার মাঝে কী ফায়দা! এভাবে বিতর্ক করলে অন্তরই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিবে যে, দেখব না। গুনাহ করব না।মনকে আফসোসে ও ফেলব না। মনের স্বস্তি দূর করে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।
খ. হযরতের আকদাস থানভী রহ. বলতেন, ‘কোনো সুন্দরীর নারীর প্রতি আকর্ষণ হলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো কুশ্রীব্যক্তির কল্পনা করুন। এমন ব্যক্তির কল্পনা করুন যার রঙ কালো, চেহারায় দাগ, চোখ অন্ধ, চুল এলোমেলো, দাঁতালো চোয়াল, ঠোঁট মোটা, নাক থেকে পানি বেয়ে ঠোঁট অবধি পৌঁছেছে-যেখানে মাছি বসে আছে। এভাবে কল্পনা করলে রুচিতে একপ্রকার ঘেন্না সৃষ্টি করে, যা আপনার অন্তর থেকে সুন্দরীর প্রতি আকর্ষণকে নষ্ট করে দিবে। কখনও কখনও ভাবুন, কল্পিত সুন্দরীটি মারা গেলে তাকে কবরে রাখা হবে। তার দেহ গলে মাটির সাথে মিশে যাবে। পোকামাকড় দেহটাকে খেয়ে ফেলবে। দুর্গন্ধ বের হবে। সুতরাং একে দেখে নিজের মালিককে অসন্তুষ্ট করব কেন?”
গ. জনৈক বুযুর্গ বলেন, ‘কোনো সুন্দরীর প্রতি আসক্ত হলে সাথে সাথে তার বৃদ্ধবেলার কথা কল্পনা করুন। কোমর কুঁজো হয়ে যাবে। হাড্ডিসার দেহ হয়ে যাবে। দৃষ্টিশক্তি তার একেবারে দুর্বল হয়ে পড়বে। কানে শুনতে পাবে না। মুখে দাঁত থাকবে না, পেটে আত থাকবে না। বসলে পেশাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। চোয়াল ভেতরে ঢুকে যাবে। সুতরাং একে দেখে আমার প্রভুকে অসন্তুষ্ট করবৎকেন?
ঘ. জনৈক বুযুর্গ বলতেন, কোনো সুন্দরীকে দেখতে মন চাইলে সঙ্গে সঙ্গে কল্পনা করুন, আমার শায়েখ আমাকে দেখছেন। তাহলে মন আন্দোলিত হবে। দৃষ্টি সরে যাবে। তারপর ভাবুন, আমার শায়েখ আমার একাজটি দেখে কত না অসন্তুষ্ট হবেন! অথচ আল্লাহ তাআলা বাস্তবেই দেখছেন। সুতরাং তিনি কী পরিমাণ অসন্তুষ্ট হবেন। এভাবে ভাবতে পারলে কুদৃষ্টি থেকে তাওবা নসিব হবে।
দুই. নিজেকে সাজা দিন
কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার দ্বিতীয় পদ্ধতি হল, নিজেই নিজের জন্য সাজা নির্ধারণ করা যে, কুদৃষ্টি হয়ে গেলে আমি নিজেকে এই শাস্তি দিব। যেহেতু কুদৃষ্টির মজার চাইতে সাজার কষ্টটা বেশি হবে তাই ধীরে ধীরে কুদৃষ্টির অভ্যাস থেকে ফিরে আসা সহজ হয়ে যাবে।
ক. হযরত আকদাস থানবী রহ. বলতেন, ‘কুদৃষ্টির গুনাহর জন্য বিশ রাকাত নফল পড়ার সাজা ঠিক করে নাও। এতে নফস এক দু’দিনেই চিৎকার দিয়ে ওঠবে এবং কুদৃষ্টি থেকে ফিরে আসবে। শয়তানও বলবে, লোকটি তো দেখি একটি কুদৃষ্টির পরিবর্তে বিশটি সিজদা করছে। এমন যেন না হয় এর গুনাহগুলো নেকি দ্বারা পাল্টে দেয়া হবে। তখন তো আমার সারাজীবনের চেষ্টা বরবাদ হয়ে যাবে। সুতরাং একে কুদৃষ্টির কুমন্ত্রণা দেয়া যাবে না।”
খ. জনৈক বুযুর্গ বলতেন, ‘যে লোকটি ভোজনপ্রিয় তার উচিত তিনদিনের রোযার সাজা নির্ধারণ করা। যখন ক্ষুৎপিপাসায় থাকবে তখন রিপুর সব তাড়না নিস্তেজ হয়ে পড়বে।’
গ. জনৈক বুযুর্গ বলতেন, ‘কুদৃষ্টিতে অভ্যস্ত ব্যক্তি যদি গরিব হয় তাহলে সে নিজের ওপর কিছু সদকা নির্ধারণ করে নেয়ার শাস্তি আরোপ করবে। যখন নিজের প্রয়োজনকে কুরবানি দিয়ে সদকা করার প্রয়োজন পড়বে তখন সব ঘোর এমনিতে কেটে যাবে।’
ঘ. জনৈক বুযুর্গ বলতেন, ‘মনে কুদৃষ্টির তাড়না তৈরি হলে নির্জনে কাপড় পেঁচিয়ে তৈরি করা চাবুক দিয়ে নিজের পেটে কয়েকটি আঘাত করুন। তারপর ভাবুন, যখন কেয়ামতের দিন ফেরেশতারা চাবুক মারবে তখন কী অবস্থা হবে? এ পদ্ধতিতে কয়েকদিনের মধ্যেই কুদৃষ্টির অভ্যাস খতম হয়ে যাবে।’
অধমের অতিরিক্ত কিছু পরীক্ষিত ব্যবস্থাপত্র
নিচে কয়েকটি ব্যবস্থাপত্র উল্লেখ করা হল। এগুলোর দ্বারা অধম ও সংশ্লিষ্টরা অনেক উপকৃত হয়েছে। পাঠকরাও এগুলো অন্তরে গেঁথে নিতে পারলে উপকৃত হবেন- ইনশাআল্লাহ।
এক. কুদৃষ্টির পরিবেশ থেকে বাঁচুন
এটাই সবচেয়ে বড় সতর্কর্তা যে, যেসব পরিবেশে কুদৃষ্টি হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। বিয়ে- শাদির অবাধ অনুষ্ঠানগুলোতে মোটেও যাবেন না। কোথাও যাওয়ার দুটি পথ থাকলে ওই পথ বেছে নিন যেখানে কুদৃষ্টির আশঙ্কা কম থাকে। কারো দরজার কড়া নেড়ে সরাসরি না দাঁড়িয়ে একপাশে দাঁড়ান। এমন যেন না হয় যে, কোনো বালিকা দরজা খুলে দিল আর পর্দার লঙ্ঘন হয়ে গেল। বিমান ইত্যাদির টিকেট কাটার সময় ওই কাউন্টারে যান যেখানে পুরুষ আছে, যেন মহিলার সাথে কথা বলতে না হয়। গাড়িতে চলার সময় আশপাশের গাড়িগুলোর প্রতি তাকাবেন না। হতে পারে কোনো নারীর ওপর কুদৃষ্টি পড়ে যাবে। নিজের বাসায় ঢোকার সময় গলা খাঁকারি দিয়ে বা আওয়াজ করে ঢুকুন। যাতে পরনারী থাকলে সে পর্দা করতে পারে। ট্রেন বা বিমান সফরে নিজের প্রিয় কোনো বই সঙ্গে রাখুন এবং তা পড়ে সময় কাটাবেন। ক্লান্তি আসলে শুয়ে পড়ুন। ঘুম না আসলে মুরাকাবার নিয়তে বসে থাকুন। চোখ খুললে ভ্রমণকারী নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়ার আশঙ্কা আছে।
রাস্তায় চলার সময় এমনভাবে দৃষ্টিকে অবনত করে রাখুন, যাতে পায়ের আওয়াজে অনুমান করতে পারেন নারী না পুরুষ। সবসময় মনে রাখুন, নারীরা আমাদের সাথে পর্দা করবে না, আমাদেরকেই তাদের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। তাওয়াফকালীন দৃষ্টি পায়ের দিকে রাখুন। দৃষ্টি মোটেও ওঠাবেন না। বিনোদনকেন্দ্রে প্রথমত যাবেন না, একান্তই যদি যেতে হয় তাহলে এমন দিন বেছে নিন যেদিন লোকজন থাকে না বললেই চলে। যদি কোনো অফিস বা বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে, সেখানে যদি টিভি চলে কিংবা নারীর ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ড থাকে, তাহলে ইচ্ছা করেই এসবের দিকে পিঠ দিয়ে বসুন। সড়কের পাশের সিনেমার পোস্টার বা বিজ্ঞাপনের দিকে তাকাবেন না। মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি চালানোর সময় রিকশা ইত্যাদি সামনে পড়লে সেখানে বসে থাকা নারীর প্রতি দৃষ্টি যেতে দিবেন না। যেসব সড়কে কিংবা গলিতে মেয়েদের স্কুল-কলেজ আছে সেগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
বিধর্মীরাষ্ট্রে সফর করার প্রয়োজন পড়লে উত্তম হল, কারো চেহারা না দেখা। কারণ, প্রথমত যদি গ্রীস্মকাল হয় তখন তারা অর্ধনগ্ন থাকে। আর শীতকালে পোশাক দ্বারা দেহ ঢাকলেও নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য করা কঠিন হয়। সবাইকে এক টাইপের মনে হয়। নারীরাও শাট-কোর্ট-টাই পরে। পুরুষের মত চুল কাটে। এই মসিবতের সামাধান এটাই যে, দৃষ্টি অবনত রাখুন এবং নিজের ঈমান বাঁচান। আল্লাহতাআলার কাছে বিনীত প্রার্থনা করুন। কবির ভাষায়- غم حیات کے ساۓ محیط نہ کرنا کسی غریب کو دل کا غریب نہ کرنا میں امتحان کے قابل نہیں مرے مولی گناہ کا موقع نصیب نہ کرنا ‘বিষণ্ণজীবনের ছায়ায় আমাকে বেষ্টিত করবেন না। গরিবকে অন্তরের গরিব করবেন না। মাওলা আমার! আমি পরীক্ষার যোগ্য নই, আমাকে গুনাহ করার সুযোগ দিবেন না।’
দুই. স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখুন
নিজের স্ত্রীর সাথে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখুন। তার সব বিষয়েয় প্রতি লক্ষ্য রাখুন। ঘরের স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে ভালোবাসা মোহিত ঘনিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারলে মুচকিহেসে স্বামীকে অভ্যর্থনা জানালে স্বামীর চিন্তা পরনারীর প্রতি যায় না। একটু ভেবে দেখুন যদি স্বামী-স্ত্রীর প্রতিদিনের সম্পর্কটা বিরক্তি মাখা ঝগড়াপূর্ণ হয়, মন খারাপ করে স্বামী নাস্তা ছাড়া অফিসে চলে যায়, আর সেখানে পর্দাহীনা কোনো সহকর্মী হাসির আভা ছড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, স্যার! কেমন আছেন আপনি! তখন এই নারীর এই হাসিটা দাম্পত্যজীবনের জন্য বিষের ভূমিকা পালন করে। এভাবেই সংসারে ভাঙ্গন ধরে। ঘরে যখন সুন্দরী স্ত্রী ঝগড়াটে হয় তখন বাইরের কুশ্রী নারীও ‘জান্নাতের হুর’ মনে হয়।
এজন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ের চেষ্টা থাকা উচিত, সংসারে যেন প্রেম-ভালোবাসার পরিবেশ থাকে। তখন বাইরের প্রতিকূলতা থেকে নিরাপদ থাকা সহজ হবে। সাধারণত কুদৃষ্টির শিকার হন তারাই যাদের স্ত্রী নেই কিংবা স্ত্রী থাকলেও জৈবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে স্ত্রী পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে না। পবিত্র কুরআনে স্ত্রীর ‘উদ্দেশ্য’ বলা হয়েছে- لِتَسْكُنُوْا إِلَيْهَا ‘যাতে তাদের কাছে স্বস্তি লাভ কর।’
যে স্ত্রীর কাছে স্বামী অস্বস্তিতে থাকে, সে স্ত্রী আল্লাহর কাছে কী জবাব দিবে? এখনকার যুবকেরা যে উদ্দীপনা নিয়ে টেলিভিশন দেখে অনুরূপ আগ্রহ নিয়ে যদি নিজের স্ত্রীকে দেখত তাহলে তাকে জান্নাতের হুর মনে হত। প্রসিদ্ধ আছে, ভালোবাসার আতিশয্যের কারণে জুলায়খা প্রতিটি জিনিসের নাম রেখেছিলেন ‘ইউসুফ’। তার কাছে ইউসুফ ছাড়া দুনিয়ার অন্যকিছু চোখে ভাসত না। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এরূপ অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকলে স্বামীর দৃষ্টি পরনারীর প্রতি যাবে না।
তিন. নিজেকে নির্লোভ করে নিন
সালেক নিজের অন্তরে এ কল্পনা বারবার বদ্ধমূল করে নিবে যে, আমি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করতে চাই না। পরনারীর প্রতি উত্থিত প্রতিটি দৃষ্টি আমাকে আমার প্রকৃত প্রেমাস্পদ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। পক্ষান্তরে পরনারীর প্রতি দৃষ্টি বিরত রাখার প্রতিটি দৃষ্টি আমাকে আমার প্রেমাস্পদের সাথে ঘনিষ্ঠ করে তুলবে। সুতরাং আমি আল্লাহর ঘনিষ্ঠতার পথকে নিজের জন্য বেছে নিলাম। তাঁর ভালোবাসায় আমি পরনারীকে দেখা থেকে তাওবা করে নিলাম। এবার যেকোনো পর্দাহীননারী আমার সামনে আসলে তার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। সে কালো কিংবা সুন্দরী, মোটা কিংবা চিকন, হূর কিংবা ডাইনি- যাই হোক না কেন; আমার জন্য নয়। সে অন্যের জন্য। তার দ্বারা যেহেতু আমার উদ্দেশ্য পূরণ হবার নয়, সুতরাং তার প্রতি তাকিয়ে লাভ কী?
বাজার-গলি দিয়ে চলার সময় নফস যখন পরনারীর প্রতি তাকানোর জন্য ইতিউতি করবে তখনই এই কল্পনার পুনরাবৃত্তি করবে যে, এর প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। আপনার অভিজ্ঞতা হয়ত আছে যে, বাসে কিংবা স্টেশনে যদি আপনার পাশের চেয়ারে কোনো পুরুষ বসে তাহলে আপনার অনুভূতিকে আন্দোলিত করে না। কিন্তু যদি কোনো নারী বসে তাহলে বিচিত্র ভাবনা আপনাকে আন্দোলিত করে। এর কারণ হল, নফসের মধ্যে লোভ থাকে। ওই নারীটি যদি বৃদ্ধা হয় তাহলে তার সম্পর্কেও আপনার মাঝে কোনো ভাবনা আসবে না। এটা এ কথারই প্রমাণ যে, নফস বা প্রবৃত্তির মাঝে নষ্টামিও আছে। সুতরাং এই লোভ ও নষ্টামি থেকে নফসকে ইচ্ছাকৃতভাবে বের করার চেষ্টা করতে হবে।
রাতের শেষপ্রহরে তাহাজ্জুদ-নামাযের পর মহান আল্লাহর কাছে দুআ করুন, হে মালিক! আমাকে পরনারী থেকে নির্লোভ করে দিন। হে ওই সত্তা! যার আঙ্গুলের মাঝে মানুষের অন্তর, আমার অন্তর থেকে পরনারীর আকর্ষণ দূর করে দিন। যাতে আমার কাছে পরনারী ও দেয়ালের মাঝে কোনো পার্থক্য না থাকে। এভাবে করতে পারলে কয়েকদিনের মধ্যে ফল পাবে। পরীক্ষা করে দেখুন।
চার. হুরদের সৌন্দর্যের কল্পনা করুন
নফস প্রবৃত্তি যদি পরনারী দেখতে চায় তাহলে সালেক তথা সংশোধন প্রত্যাশীব্যক্তি মনে মনে হুরের সৌন্দর্য নিয়ে কল্পনা করবে। যেমন-حُوْرٌ مَّقْصُوراتٌ فِي الْخِيَامِ ‘তাবুতে উপবিষ্ট হূরসমূহ’ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ যাদেরকে কোনো মানুষ কিংবা জিন স্পর্শ করে নি। كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ ‘ইয়াকুত (পদ্মরাগ) ও মারজান (প্রবাল) মোতির মত।’ أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةً ‘হায়েয-নেফাস থেকে পবিত্র স্ত্রীরা।
হুরদের এসব গুণের বিপরীতে পরনারী সম্পর্কে ভাবুন, কখনও হায়েযের রক্ত, কখনও সন্তান জন্ম দেয়ার রক্ত ঝরে। প্রতিদিন কয়েকবার পেশাব-পায়খানার ময়লা পেট থেকে বের হয়। নাক থেকে ময়লা ঝাড়ে। মুখ থেকে কফ-থুথু বের হয়। বগল থেকে ঘামের গন্ধ বের হয়। মাথায় উকুন পড়ে থাকে। কয়েকদিন গোসল না করলে শরীর থেকে উৎকট গন্ধ ছড়ায়। মেসওয়াক না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। অসুস্থ হলে কয়েক দিনের মধ্যেই নেতিয়ে পড়ে। বৃদ্ধ হলে চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। মুখে দাঁত থাকবে না। পেটে আঁত থাকবে না। কোমর বাঁকিয়ে চলাফেরা করবে। কথা স্পষ্ট বলতে পারবে না। গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার না করলে জঙ্গলসদৃশ হয়ে যাবে। সবসময় পেটে পেশাব-পায়খানার ময়লা নিয়ে চলে। এমন নারীর প্রতি তাকিয়ে কি আমার প্রভুকে অসন্তুষ্ট করব? জান্নাতের হূর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হব?
সেই হূর থেকে যারা সবসময় কুমারী থাকবে। মোতির মত বিভা ছড়াবে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সুগন্ধি দ্বারা মোহিত করবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে।পানিতে থুথু ফেললে পানি সুমিষ্ট হয়ে যাবে। আঙ্গুল বের করলে সূর্যের আলোর মত ঝলমলিয়ে ওঠবে। মৃতের মাঝেও প্রাণ চলে আসবে। যাকে কেউ স্পর্শ করে নি। যার অন্তস্থল থেকে উতলে ওঠা ভালোবাসা মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পাবে। অসুস্থ হবে না। লাবণ্যহারা হবে না। এরূপ গুণবতী বিশ্বস্ত রূপ প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ স্ত্রীকে পরনারীর প্রতি একটুখানি তাকানোর কারণে হারাব- এটা কোন ধরনের বুদ্ধিমানের কাজ? সুতরাং দুনিয়াতে আমার জন্য আছে হালাল স্ত্রী। আখেরাতে আছে মুগ্ধতাছড়ানো হূর। মার্কেটে ঘুরঘুরকারী মহিলাদের প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ নেই। এদের থেকে আমার দৃষ্টিকে সংরক্ষণন করব। মালিককে সন্তুষ্ট করব। হূরের অধিকারী হব।
পাঁচ. আল্লাহর দর্শন লাভ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা ভাবুন
হাদীস শরীফের ভাষ্য মতে জান্নাতিরা জান্নাতে আল্লাহর দর্শন লাভে ধন্য হবে। কেউ একবার দর্শন লাভ করবে। কেউ প্রতি বছর একবার, কেউ প্রতি মাসে একবার, কেউ প্রতি শুক্রবারে একবার,কেউ প্রতিদিন একবার দর্শন লাভ করার অকল্পনীয় সুযোগ পাবেন। যে লোকটি দুনিয়াতে অন্ধ হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন, যাপিতজীবনে সৎ ও আল্লাহভীরু ছিলেন এবং সবর ও শোকরের সাথে জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর সুমহান সৌভাগ্য হবে প্রতিটি মুহূর্তে তিনি আল্লাহকে দেখে বিমোহিত হবেন।ৎ
আল্লাহ বলবেন, এতো আমার ওই বান্দা, যে দুনিয়াতে কাউকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখে নি। এখন সে যখন ইচ্ছা করবে, আমার নূরানী চেহারা দেখতে পারবে। কোনো কোনো আলেম লিখেছেন, পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া থেকে নিজের দৃষ্টিকে যে দুনিয়াতে সংরক্ষণ করবে, মহান আল্লাহ তাকে প্রতিটি বিরত রাখা দৃষ্টির বিনিময়ে একবার করে নিজের দর্শন দিয়ে ধন্য করবেন। সালেকের উচিত বিষয়টি নিয়ে মোরাকাবা করা এবং মনকে বুঝানো যে, কয়েক মুহূর্তের কুদৃষ্টির কারণে আল্লাহর সুমহান দর্শন থেকে বঞ্চিত হব কেন?
ছয়. নিজের মা-মেয়ের কল্পনা করুন
নফস যদি পরনারীকে দেখার জন্য লালসা করে তাহলে সঙ্গে-সঙ্গে নিজের মা-মেয়ের কল্পনা করুন। এ সম্পর্ক দু’টি এতই পবিত্র যে, প্রবৃত্তির তাড়না এমনভাবে মিটে যায় যেমনভাবে আগুনে পানি দিলে আগুন নিভে যায়। তবে এই আমল শালীনতাবোধ সম্পন্ন শরীয়ত দ্বারা সমৃদ্ধ লোকদের জন্য অধিক উপকারী।
সাত. চোখে শলাকা পড়ার কথা ভাবুন
ওলামায়েকেরাম লিখেছেন, কুদৃষ্টিকারী যখন জাহান্নামে যাবে তখন ফেরেশাতারা তার চোখে গলিত শীশা ঢেলে দিবে। কোনো কোনো কিতাবে লেখা হয়েছে, লোহার শলাকা গরম করে তার চোখে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। সালেকের নফস কুদৃষ্টির প্রতি যখন তাড়িত করবে তখন কল্পনা করুন,ক্ষণিকের মজার কারণে উত্তপ্ত শলাকা আমার চোখে বিদ্ধ করা হলে তখন আমার কী অবস্থা হবে! কয়েকদিন নিয়মিত এ কল্পনা করলে নফসের নষ্টামি দূর হয়ে যাবে।
আট. নিয়মের কথা ভাবুন
যেসব লোকের কুদৃষ্টির অভ্যাস পুরনো এবং প্রাথমিক চিকিৎসায় কাজ হয় না, তাদের উচিত হল, নিজেকে বুঝানো যে, আল্লাহর একটা নিয়ম আছে। কেউ যখন কোনো গুনাহর কাজ শুরু করে তখন আল্লাহ তার সঙ্গে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার আচরণ করেন। এতেও যদি বান্দা পিছু না হটে তাহলে তার সঙ্গে তিনি কিছু দিন যাবত দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখার আচরণ করতে থাকেন। এরপরেও ফিরে না আসলে আল্লাহ তাকে সাজা দেয়ার ইচ্ছা করেন। আর যে দুর্ভাগার ব্যাপারে তিনি শাস্তির ইচ্ছে করেন তাকে তিনি নাচিয়ে ছাড়েন। তখন তাকে ঘরে বসিয়ে রেখে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন। এমন কি অন্যের জন্য ওই শাস্তিকে দৃষ্টান্ত বানিয়ে দেন।
সুতরাং এভাবে ভাবুন, আমি অনেক দিন থেকে কুদৃষ্টির গুনাহয় লিপ্ত। এখন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা দোষ গোপন করে রাখার আচরণ করছেন। যদি শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করে ফেলেন তাহলে আমার দীন-দুনিয়া উভয়টাই যাবে। আমার কিছু থাকবে না। আল্লাহতা আলা বলেন-وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِم ‘আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন, তার সম্মানদাতা কেউ নেই।’ -সূরা হজ্ব : ১৮ আয়াতটি নিয়ে ভাবলে কুদৃষ্টি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়া যায়।
নয়. নিজের নফসের সাথে বিতর্ক করুন
যখন নফস কুদৃষ্টি দেয়ার চেষ্টা করবে তখন তার সাথে বিতর্ক করুন যে, হে নফস! তোমার নাম এত উঁচু অথচ তোমার কর্মকান্ড কত নিচু। তুমি সৃষ্টিকুলের চোখে আল্লাহর বন্ধু, কিন্তু কাজ কর তাঁর দুশমনের মত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ঈমানদার অথচ ভেতরে-ভেতরে পাক্কা গুনাহগার। লেবাসে সূরতে ‘লা- ইলাহা’, লোকচক্ষুর আড়ালে ‘প্রতিমা-প্রতিমা।’ মানুষের সামনে আল্লাহর বান্দা, অন্দরমহলে শয়তানের গোলাম। তোমার যবান আল্লাহর তলবগার, তোমার চোখে পরনারীর পেয়ার। তুমি সকলের কাছে সাধাসিধে সূফী-বেচারা কিন্তু স্রষ্টার দৃষ্টিতে ক্ষমাযোগ্য বেচারা। তোমার উপরটা সুন্নাতসমৃদ্ধ, অথচ ভেতরটা যৌনতা তাড়িত। মাখলুকের কাছে তোমার স্বভাবচরিত্র গোপন, কিন্তু স্রষ্টার কাছে তো সবই দৃশ্যমান। দৃশ্যত তুমি জান্নাত প্রত্যাশী, বাস্তবে তুমি জাহান্নাম খরিদকারী।
তোমার জন্য এই লোকসানের ব্যবসা থেকে ফিরে আসাটাই শ্রেয়। ছাড়ো এ ক্ষতির ব্যবসা। আল্লাহ তোমার জন্য তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। হতে পারে এটাই তোমার জন্য সুযোগ লুফে নেয়ার আখেরি দিন। পরে আক্ষেপ অনুশোচনার মাঝে কোনো ফায়দা নেই। اب پچھتاۓ کیا ہوت جب چڑیاں چگ گئیں کھیت
‘এখন আফসোস করে কী হবে! চড়ুইরা তো ক্ষেত বিরাণ করে দিয়েছে।’ কয়েকবার নিজের নফসের সাথে এভাবে বিতর্ক করলে কুদৃষ্টির ব্যাপারে তার দাপানি যথেষ্ট কমে আসবে।
দশ. আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন
কুদৃষ্টিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সালেক তথা আত্মশুদ্ধি প্রত্যাশী আল্লাহর সান্নিধ্যের অনুভূতি অন্তরে তৈরি করার উদ্দেশে প্রত্যেক নামাযের পর কিছু সময়ের জন্য নিম্নোক্ত আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন। هُوَ مَعَكُمْ أَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’ এরপর নিজের নফসকে বুঝাবেন যে, দেখো, তুমি আল্লাহর দৃষ্টি থেকে কোনোভাবেই ভাগতে পারবে না। তুমি যখন পরনারীর প্রতি তাকাও তখনও তোমার প্রভু তোমাকে দেখেন। এটা তো তার মহান ধৈর্যের পরিচয় যে, তিনি তোমাকে পাকড়াও করেন না। কিন্তু তুমি যদি এভাবে চলতে থাক তবে তিনি কতকাল ধৈর্য ধরবেন। এই দৃষ্টি তোমার জন্য রূহানী মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যদি তুমি পরনারীকে কুদৃষ্টিতে দেখ তাহলে তোমার আপন-নারীদের প্রতি অন্যপুরুষরা কুদৃষ্টিতে দেখবে। جیسے کرنی ویسی بھرنی نہ ما نے تو کرکے دیکھ – جنت بھی ہے دوزخ بھی ہے نہ ما نے تو مرکے دیکھ ‘যেমন কর্ম তেমন ফল, না মানলে করে দেখ – জান্নাত আছে জাহান্নামও আছে, না মানলে মরে দেখ।’ উক্ত মুরাকাবা করলে আল্লাহ তাআলার রহমত তোমার সঙ্গী হবে এবং কুদৃষ্টি থেকে তাওবা করার খোশ নসিব হবে। ইনশাআল্লাহ।
একটি ভুল বুঝাবুঝি
কিছু তরুণ যুবক এই প্রত্যাশা করে যে, তার মনে যেন পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার চিন্তাই সৃষ্টি না হয়। এই মর্যাদা লাভ না হলে তারা খুব চিন্তিত হয়। ভাবে, যিকির ও মুরাকাবায় কাজ হয় নি। মনে রাখবে, এটা শয়তানি কুমন্ত্রণা। নফস বা মনে যদি কুদৃষ্টির বাসনাই উদিত না হয় তাহলে তা থেকে বেঁচে থাকাটা কোন্ ধরনের বাহাদুরি। যদি কোনো ‘অন্ধ’ পরনারীকে না দেখার দাবী করে তাহলে এটা কোনো গৌরব বা অহঙ্কারের বিষয় নয়। মজা তো হল উদ্দাম যৌনচাহিদা থাকা সত্ত্বেও গুনাহ থেকে বেঁচে যাওয়া। অন্তরে লজ্জা সৃষ্টি করা।
পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া থেকে বেঁচে থাকা অনেক বড়জিহাদ। উল্লেখিত আমলগুলো সারাজীবন করতে হয়। নিজের দোষ-ত্রুটির জন্য কান্নাকাটি করতে হয়। এ অবস্থায় মারা গেলে শান্তিময় ঘুম আসবে। হয়ত তখন মুনকার-নাকীর ফেরেশতা বলাবলি করবে-سربا نے میر کے آہستے ہو لو ابھی تک روتے روتے سو گیا ہے ‘আমির সাহেবের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আস্তে কথা বল এই পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে মাত্র।’
তথ্যসূত্র: বই: কুদৃষ্টি
লিখক: আল্লমা যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী