ইসলাম

অহংকারীর দৃষ্টান্ত

এখানে অহংকারীদের কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হল, যাদের অহংকার তাদেরকে হকের অনুসরণ থেকে বিরত রেখেছে, সত্যের আনুগত্য থেকে বিমুখ করে দিয়েছে। যথা –

১. ইবলিস

অহংকারই ছিল ইবলিসের কুফরি ও তার রবের আদেশ অমান্য করার কারণ। যেমন, আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন— [স্মরণ করুন] যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো। অতঃপর সমস্ত ফেরেশতাই একযোগে সেজদায় নত হল, কিন্তু ইবলিস; সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কীসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম; আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। আল্লাহ বললেন, বের হয়ে যা এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত। তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, তোকে অবকাশ দেওয়া হল; নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার ইযযতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। তবে তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদের ব্যতীত। আল্লাহ বললেন, তাই ঠিক, আর আমি সত্য বলছি; তোর দ্বারা আর তাদের মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব। [হে নবী! আপনি] বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না আর আমি লৌকিকতাকারীও নই। এটা তো বিশ্ববাসীর জন্য এক উপদেশ মাত্র। [সূরা ছ-দ : ৭১-৮৭]

২. ফেরআউন ও তার বাহিনী

অনুরূপভাবে ফেরআউনের কুফরির কারণও ছিল অহংকার। যেমন, আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ফেরআউন বলল, হে পরিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ আছে বলে আমি জানি না। অতএব, হে হামান! তুমি ইট পোড়াও এবং আমার জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর যাতে আমি মুসার উপাস্যকে দেখতে পারি। আর নিশ্চয়ই আমি মনে করি, সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। ফেরআউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না। অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর আমি তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালিমদের পরিণাম কী হয়েছে! আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত। কেয়ামতের দিন তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। এই পৃথিবীতে আমি তাদের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি অভিশাপ এবং কেয়ামতের দিন তারা হবে ঘৃণিত। [সূরা কাসাস : ৩৮-৪২]

৩. সালেহ ( আঃ) এর সামূদ সম্প্রদায়

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন— তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সরদাররা সেই সম্প্রদায়ের ঈমানদার-যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত, তাদেরকে বলল, তোমরা কিবিশ্বাস কর যে সালেহ তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত?তারা বলল, আমরা তো তার আনীত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী।দাম্ভিকরা বলল, তোমরা যাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছ, আমরা তারপ্রতি অস্বীকারকারী। [সূরা আ’রাফ : ৭৫-৭৬]

৪. হৃদ ( আঃ) এর আদ সম্প্রদায়

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন— ﴾আর আদ সম্প্রদায়, তারা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করত এবং বলত, আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর কে আছে? তবে কিতারা লক্ষ করেনি, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? বস্তুত, তারা আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত। অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিবজীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করানোর জন্য তাদের উপর প্রেরণ করেছি ঝঞ্ঝাবায়ু বেশ কতিপয় অশুভ দিনে। আর পরকালের আযাব তো আরও লাঞ্ছনাদায়ক এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। [সূরা হা-মীম সেজদাহ : ১৫-১৬]

৫. শুআইব ( আঃ) এর সম্প্রদায়

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন— তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সরদাররা বলল, হে শুআইব! আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে শহর থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আমরা অপছন্দ করলেও কি? [সূরা আ’রাফ : ৮৮]

৬. নূহ ( আঃ) এর সম্প্রদায়

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন— সে [নূহ] বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি; কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের পলায়নকেই বৃদ্ধি করেছে। আমি যখনই তাদের দাওয়াত দিয়েছি, যাতে আপনি তাদের ক্ষমা করেন, তখনই তারা কানে আঙুল দিয়েছে, নিজেদের বস্ত্রাবৃত করেছে, জেদ করেছে এবং দম্ভভরে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। তারপর আমি তাদের প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি, অতঃপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারেও। [সূরা নূহ : ৫-৯]

৭. বনী ইসরাঈল

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয় আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূল পাঠিয়েছি। আমি মারইয়াম-তনয় ঈসাকে সুস্পষ্ট মু’জিযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে শক্তিদান করেছি।

অতঃপর যখনই কোনো রাসূল তোমাদের কাছে এমন কোনোনির্দেশ নিয়ে এসেছে, যা তোমাদের মনে ভালো লাগেনি, তখনইতোমরা অহংকার করেছ! শেষ পর্যন্ত তোমরা [নবী-রাসূলদের]একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছ এবং একদলকে হত্যা করেছ। আরতারা বলল, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত; বরং তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ তাদের লা’নত করেছেন। ফলে তারা খুব কমই ঈমান আনে। [সূরা বাকারা : ৮৭-৮৮]

৮. আরবের মুশরিক সম্প্রদায়

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- আর আপনার পূর্বে আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের এককে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। দেখি, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর কি না। আর আপনার পালনকর্তা সব কিছু দেখেন। যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না, তারা বলে,আমাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের পালনকর্তাকে দেখি না কেন? বস্তুত, তারা নিজেদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে এবং গুরুতর অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে। [সূরা ফুরকান : ২০-২১]

বই : অহংকার করবেন না

লিখক : শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *