ইসলাম

লজ্জাস্থান রক্ষার পথে একান্ত বাধাসমূহ

যৌনাঙ্গ রক্ষার ফলাফল যখন জান্নাতই তখন এর পথে যে কোনো বাধা থাকা নিতান্তই স্বাভাবিক। তাই নিম্নে এ জাতীয় কিছু বাধা সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

১. মহিলাদের নতুন নতুন মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদ:

বর্তমান যুগের মহিলারা বাজারে উঠেই নতুন নতুন মডেলের পোশাক- পরিচ্ছদ খুঁজে বেড়ায়। যা সামনে পায় তাই খরিদ করে। যদিও তা পাশ্চাত্য স্টাইলের এবং ইসলামী শরী’আত বিরোধীই হোক না কেন। মূলতঃ এ পোশাক-পরিচ্ছদ মুসলিম মহিলাদেরকে ধ্বংস করার একটি বিরাট মাধ্যম। যা ইসলামের শত্রুরা আজ ইসলামের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে যাচ্ছে। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়েলি পোশাকের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ শরীর ঢেকে রাখা এবং ভারিক্কিপনা অবলম্বন করা তথা উলঙ্গতা ও চঞ্চলতা থেকে দূরে থাকা। যেন মহিলারা ফিতনা ও খবিস লোকদের খপ্পর থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়।

অন্য দিকে পাশ্চত্য স্টাইলের পোশাকসমূহের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, উলঙ্গতা ও বেলেল্লাপনা। যাতে যুবক যুবতীদের লুক্কায়িত কু-প্রবৃত্তি জাগরিত হয় এবং তাদের মধ্যে যৌন ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। লজ্জা, সাধুতা ও পবিত্রতা বলতে যেন তাদের মধ্যে আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে। মানুষ যেন প্রবৃত্তির গোলাম হয়ে যায়।

২. টিভি চ্যানেল:

বর্তমান যুগের টিভি চ্যানেলগুলোতে যে কোনো অনুষ্ঠান, নাটক, গান কিংবা ছায়াছবিই দেখানো হোক না কেন তার অধিকাংশই প্রেম- ভালোবাসা, ফ্যামিলিগত অশ্লীলতা, স্বামী-স্ত্রীর যৌন কেলেঙ্কারী, উলঙ্গতা, নির্লজ্জতা, চুমোচুমি, শরী‘আতের বিরোধিতা কিংবা শরী’আতের কোনো ব্যাপার নিয়ে ঠাট্টা-মশকারা করা ছাড়া তেমন আর গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নয়। যেমন, বহু বিবাহ নিয়ে ঠাট্টা করা কিংবা মহিলাদের ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব নিয়ে তামাশা করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

সুতরাং কোনো যুবক-যুবতী দীর্ঘ সময় এ সমস্ত অশ্লীলতা, উলঙ্গতা ও নির্লজ্জতা তথা প্রেম-ভালোবাসার আবেগ তাড়িত রকমারি ডায়ালগ শুনে নিজের সাধুতা ও সতীত্ব কীভাবে রক্ষা করতে পারবে ? নিচে এ সম্পর্কে জনৈকা যুবতীর সুস্পষ্ট হুবহু উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে, যা শুনে আমরা প্রত্যেকেই সময় থাকতে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি ।

সে একদা নাম উল্লেখ না করার শর্তে এবং চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বলে: “আমি ছোট বেলা থেকেই প্রেম জনিত ছায়াছবি দেখতে অভ্যস্ত। এমনকি তা দেখতে এখন আমার খুবই ভালো লাগে। এতে করে এখন আমার মধ্যে এমন এক ধরনের অদম্য যৌন স্পৃহা জন্ম নিয়েছে যা সত্যিই অস্বাভাবিক। আর এটা আমার জন্য নতুন কিছুই নয়। কারণ, আমি সাবালক হওয়ার বহু পূর্বেই যৌন সংক্রান্ত সব কিছুই জেনে ফেলি। এখন আমি আমার মধ্যে এক অদম্য যৌন আবেগ অনুভব করছি। যা আমার পুরো অনুভূতিকে এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমি এখন রাত্রি বেলায় এতটুকুও ঘুমোতে পারছি না। ঘুমোতে গেলে অনেক ধরনের চিন্তা ও স্বপ্ন আমাকে ঘিরে নেয়। যখনই আমি আবেগ তাড়িত কোনো ফিল্ম দেখি অথবা এ জতীয় কোনো উপন্যাস পড়ি তখনই আমার আবেগ ও যৌন উত্তেজনা অত্যধিক বেড়ে যায়। তখনই আমার মনে হয়, আহ্! কেউ যদি এখন আমার সাথে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতো। এ পরিস্থিতিতে আমি এখন কি করতে পারি দয়া করে সুন্দর পরামর্শ দিয়ে আমাকে কৃতার্থ করবেন”

৩. ইন্টারনেট:

এর খপ্পরে পড়েছে বহু যুবক-যুবতী। তারা এখন একে উত্তেজনা বৃদ্ধির এক মাধ্যম হিসেবেই গ্রহণ করেছে। সময় পেলেই তারা অশ্লীল অবস্থানগুলোতে অবস্থান নিয়ে যৌন সঙ্গম, ব্যভিচার ও সমকামিতার প্রকাশ্য অনুশীলন দেখতে চায়। এ কথা সবারই জানা যে, ইন্টারনেটে জীবন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। তবে তা ব্যবহারের সময় কিছু ধর্মীয় বিধি-বিধান অবশ্যই মানতে হবে। অন্তরে সর্বদা আল্লাহভীতি জাগরূক থাকতে হবে।

৪. অশ্লীল ম্যাগাজিন ও রুচিহীন পত্র-পত্রিকা :

মানব জীবনে এগুলোর প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। কারণ, এগুলো উলঙ্গতা ও বেহায়াপনা শিক্ষা দেয়। এগুলোতে নতুন নতুন মডেলের পোশাক পরিহিতা বহু নারী ও পুরুষ প্রদর্শিত হয়। তাতে করে পাশ্চাত্য মডেলের সকল পোশাক-পরিচ্ছদ মুসলিম সমাজে প্রচলন পায়। যা খরিদ করে মুসলিমরাই নিজের অজান্তে কাফিরদের অর্থনৈতিক শক্তি ও সামর্থ যোগান দেয়; অথচ তারা জানে না যে, প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব পোশাক রয়েছে। যা অন্যের জন্য কোনোভাবেই মানানসই নয়।

৫. ক্যামেরাযুক্ত অত্যাধুনিক মোবাইল সেট:

এগুলো চরিত্র নষ্টের আরেকটি বিরাট মাধ্যম। প্রেম-ভালোবাসার জগতে মোবাইলের ব্যবহার তো সবারই জানা। এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে ক্যামেরাযুক্ত অত্যাধুনিক মোবাইল সেট। যাতে অশ্লীল ছায়াছবি ও কুরুচিপূর্ণ যৌনসঙ্গম ধারণ করা ও অন্যের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছিয়ে দেওয়া যায়। ফলে তা তথাকথিত প্রেম-ভালোবাসাকে ব্যভিচার ও সমকামিতার দিকে অতি দ্রুত অগ্রসর করে।

এ কথা সবারই জানা যে, মোবাইলের মাধ্যমে অন্যের সাথে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে তা ব্যবহারের সময় কিছু ধর্মীয় বিধি- বিধান অবশ্যই মানতে হবে। অন্তরে সর্বদা আল্লাহভীতি জাগরূক থাকতে হবে৷

৬. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং গোপনে সহাবস্থান:

নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অন্তরের বিক্ষিপ্ততা এবং যৌন উত্তেজনাকে বৃদ্ধি করার একটি বিরাট মাধ্যম। কারণ, কোনো পুরুষ অন্য কোনো নারীর সাথে অবাধ মেলামেশার সুযোগ পেলেই তো সে তাকে ধীরে ধীরে নিজের প্রতি আকর্ষণ করার সুযোগ পায়। তেমনিভাবে কোনো নারী অন্য কোনো পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশার সুযোগ পেলেই তো সে তাকে ধীরে ধীরে নিজের প্রতি আকর্ষণ করার সুযোগ পায়। অন্যথায় নয়।আর তখনই উভয়ের মধ্যে পরস্পর গোপনে মিলনের চিন্তা আসে এবং তখনই ব্যভিচার সংঘটিত হয়।

আল্লামা ইবনুল-কাইয়্যেম রহ. বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাই সকল বিপদ ও অঘটনের মূল। এরই কারণে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের ওপর ব্যাপক শাস্তি নেমে আসে এবং এরই কারণে দুনিয়াতে ব্যক্তি ও সমষ্টিগত ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়।

আর পোপনে নারী-পুরুষের সহাবস্থান তো ব্যভিচারের প্রতি কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া বৈ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لاَ يَخلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ

“কোনো পুরুষ অন্য কোনো মহিলার সাথে একান্তে মিলিত হলে শয়তান হয় তাদের তৃতীয় জন”।

৭. অসৎ বন্ধু-বান্ধব :

বন্ধু-বান্ধব তো এতোই প্রভাবশালী হয় যে, কোনো বন্ধু ইচ্ছে করলেই তার অপর বন্ধুকে দিয়ে যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। এ ব্যাপারে পুরুষের চাইতে মহিলারাই বেশি পারদর্শী এবং তারাই পুরুষের চাইতে বেশি নিজ বান্ধবী কর্তৃক প্রভাবিত হয়। এ কারণেই বন্ধু-বান্ধব চয়ন করার সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে। বন্ধু-বান্ধব যেন দীনদার ও চরিত্রবান হয়। যাতে একে অপরকে নেক কাজে সহযোগিতা করতে পারে। কেউ গাফিল হলে অন্য জন তাকে নেক কাজে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। কেউ পথভ্রষ্ট হলে অন্য জন তাকে সতর্ক করতে পারে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ؛ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ» “মানুষ তার একান্ত বন্ধুর ধর্মই গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই যেন একটু ভেবে দেখে যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে যাচ্ছে”।

৮. বিলম্বে বিবাহ করা:

বিবাহ হচ্ছে বৈধ পন্থায় যৌন উত্তেজনা প্রশমনের একটি বিরাট মাধ্যম। সুতরাং কেউ বিবাহ করতে বা বসতে দীর্ঘ দিন বিলম্ব করলে সে স্বভাবতই তার অদম্য যৌন উত্তেজনা প্রশমনের বৈধ কোনো ক্ষেত্র না পাওয়ার দরুন তা অক্ষেত্রে অপচয় করতে পারে। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদেরকে দ্রুত বিবাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجُ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءً “হে যুবকরা! তোমাদের কেউ বিবাহ করতে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, তা চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং লজ্জাস্থানকে করে পবিত্র। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন সাওম পালন করে। কারণ, তা সত্যিই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী”।’সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০০

৯. অপর কোনো পুরুষ বা মহিলার সাথে যে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো:

উক্ত শৈথিল্য পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তা যেমন মহিলার ক্ষেত্রে হতে পারে তেমনিভাবে তা পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তবে তা পুরুষের ক্ষেত্রে খুবই কম; কিন্তু কোনো মহিলা যদি আঁট-সাঁট, পাতলা, খাটো কিংবা জায়গায় জায়গায় খোলা ও কারুকার্যময় পোশাক পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তা হলে পুরুষরা স্বভাবতই তাকে লজ্জা ও চরিত্রহীনা মনে করে তার প্রতি অতি সত্বর ঝুঁকে পড়বে।

তেমনিভাবে কোনো পুরুষও যদি ফাসিকের পোশাক পরিধান করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তা হলে খারাপ মহিলারাও স্বভাবতই তার পিছু নিবে। উক্ত শিথিলতা আবার কখনো কখনো আচার-আচরণ এবং চলাফেরার ঢংয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাতে করে মহিলাদের প্রতি পুরুষদের সরল দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে এবং তাদের সুপ্ত উত্তেজনা জেগে উঠবে।

তেমনিভাবে মহিলারাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং তাদের সুপ্তউত্তেজনা জেগে উঠবে। আবার তা কখনো কখনো কথা-বার্তার ঢংয়েও হতে পারে। কারণ, কোনো মহিলা অপর পুরুষের সাথে ইচ্ছাকৃত কোমল ও সুমিষ্ট এবং দীর্ঘ অপ্রয়োজনীয় আলাপ করলে স্বভাবতই পুরুষরা তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। আর এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে ইচ্ছাকৃত বিনম্র কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفا “তোমরা যদি মহান আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে থাকো তা হলে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলতে কোমল কন্ঠে কথা বলো না। তা হলে যে কোনো অন্তরের রোগী তোমাদের প্রতি প্রলুব্ধ হবে। তবে তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২]

১০. যত্রতত্র চোখের দৃষ্টি ক্ষেপন:

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পুরুষরা যেমন আদিষ্ট তেমনিভাবে মহিলারাও। কোনো যুবক-যুবতী যদি চরিত্রহীন বা চরিত্রহীনা হয়ে থাকে তা হলে এর মূলে রয়েছে যত্রতত্র দৃষ্টি ক্ষেপন।

এ ছাড়াও যৌনাঙ্গ রক্ষার পেছনে বাধা হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকেও গণ্য করা হয়:

যৌনকর্ম সম্পৰ্কীয় আলোচনা, গানের নেশা, খারাপ উপন্যাস ও খারাপ কবিতা পড়ার নেশা, শয়তানের কুমন্ত্রণার কাছে হার মানা, কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ, দীর্ঘ আশা ও দুনিয়ার ভালোবাসা, নিয়ন্ত্রণহীন সুখভোগ এবং সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের লাগাতার অবহেলা ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহ তা’আলা শুধু যৌনকর্মকেই হারাম করেন নি, বরং তিনি এরই পাশাপাশি সব ধরনের অশ্লীলতাকেও হারাম করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, (قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَنَا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ )

“(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও, নিশ্চয় আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোনো দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা (সূরা আল আরাফ: আয়াত ৩৩)

আল্লাহ তা’আলা যখন ব্যভিচারকর্মকে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন তিনি সে সকল পথকেও নীতিগতভাবে রোধ করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে স্বভাবতঃ ব্যভিচারকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা পুরুষ ও মহিলা উভয় জাতিকে লজ্জাস্থান হিফাযতের পূর্বে সর্বপ্রথম নিজ দৃষ্টিকে সংযত করতে আদেশ করেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, قُل لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَرِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ * وَقُل لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَرِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ )

“(হে মুহাম্মাদ) তুমি মুমিনদেরকে বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মুমিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, يَعْلَمُ خَابِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُورُ ) [غافر: ١٩] “তিনিই চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্তু সম্পর্কেও অবগত”। [সূরা গাফির, আয়াত: ১৯]

আল্লাহ তা’আলা কাউকে অন্য কারোর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে চক্ষুর অপব্যবহার না হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, يَتأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ * فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ ﴾ [النور: ۲۷، ۲۸]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তো তোমাদের জন্য অনেক শ্রেয়। আশাতো তোমরা উক্ত উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যদি তোমরা উক্ত গৃহে কাউকে না পাও তা হলে তোমরা তাতে একেবারেই প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তোমাদেরকে তাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয় যে, ফিরে যাও, তাহলে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তো তোমাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত”। [সূরা আন-নূর: ২৭- ২৮]

আল্লাহ তা’আলা বিশেষভাবে মহিলাদেরকে অপর পুরুষ থেকে পর্দা করতে আদেশ করেছেন। যাতে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি তার অপূর্ব সৌন্দর্যের উগ্র আকর্ষণ থেকে রক্ষা পায় এবং ক্রমান্বয়ে সে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত না হয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ ءَابَآبِهِنَّ أَوْ ءَابَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَابِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَآبِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَنُهُنَّ أَوِ التَّبِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴾ [النور: ۳۱]

“মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য (শরীরের সাথে এঁটে থাকা অলংকার বা আকর্ষণীয় পোষাক) প্রকাশ না করে। তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ পেয়ে যায় (বোরকা, চাদর, মোজা ইত্যাদি) তা প্রকাশ পেলে কোনো অসুবিধে নেই। তারা যেন তাদের ঘাড়, গলা ও বক্ষদেশ (চেহারাসহ ) মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইপো, বোনপো, স্বজাতীয় মহিলা, মালিকানাধীন দাস, যৌন কামনা রহিত অধীন পুরুষ, নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তেমনিভাবে তারা যেন সজোরে ভূমিতে নিজ পদযুগল ক্ষেপণ না করে। কারণ, তাতে করে তাদের আভ্যন্তরীণ সৌন্দৰ্য প্ৰকাশ পাবে, বরং হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ তা’আলার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। তখনই তোমরা সফলকাম হতে পারবে”। [সূরা আন- নূর, আয়াত: ৩১]

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *