ইসলাম

সমকামিতার চিকিৎসাসমূহ

১. প্রথমে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট উক্ত গুনাহ্ থেকে খাঁটি তাওবা করে নিন।

কারণ, কেউ আল্লাহ্ তা’আলা নিকট একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য অথবা তাঁরই কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাওবা করে নিলে আল্লাহ্তা ‘আলা অবশ্যই তা কবুল করবেন এবং তাকে সেভাবেই চলার তাওফীক দিবেন।

. আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি দৃঢ় একনিষ্ঠ হোন।

এটিই হচ্ছে এর একান্ত মহৌষধ। আল্লাহ্ তা’আলা হযরত ইউসুফ (আ:) কে একনিষ্ঠতার কারণেই ‘ইশ্ট এবং প্রায় নিশ্চিত ব্যভিচার থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْءِ وَ الْفَحْشَاءَ ، إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِيْنَ )

অর্থাৎ তাকে (হযরত ইউসুফ কে) মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্যই এভাবে আমি আমার নিদর্শন দেখালাম। কারণ, তিনি তো ছিলেন আমার একান্ত একনিষ্ঠ বান্দাদের অন্যতম।

৩. ধৈর্য ধরুন।

কারণ, কোন অভ্যাসগত কঠিন পাপ ছাড়ার জন্য ধৈর্যের একান্তই প্রয়োজন। সুতরাং ধৈর্য ধারণের বার বার কসরত করতে হবে। এমনিভাবেই ধীরে ধীরে এক সময় ধৈর্য ধারণ অভ্যাসে পরিণত হবে। হযরত আবু সা’ঈদ খুদরী (রা,)থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল ইরশাদ করেনঃ وَ مَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ ، وَ مَا أَعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَ أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যই তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিবেন। আল্লাহ্ তা’আলা কাউকে এমন কিছু দেন নি যা ধৈর্যের চাইতেও উত্তম এবং বিস্তর কল্যাণকর।(বুখারী, হাদীস ১৪৬৯, ৬৪৭০ মুসলিম, হাদীস ১০৫৩ )

এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, মনের কোন চাহিদা পূরণ করা থেকে ধৈর্য ধারণ করা অনেক সহজ তা পূরণ করার পর যে কষ্ট, শাস্তি, লজ্জা, আফসোস, লাঞ্ছনা, ভয়, চিন্তা ও অস্থিরতা পেয়ে বসবে তা থেকে ধৈর্য ধারণ করার চাইতে। তাই একেবারে শুরুতেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

. মনের বিরোধিতা করতে শিখুন।

যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মনের বিরোধিতা করবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ وَ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ، وَ إِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ ) অর্থাৎ যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। আল্লাহ্ তাআলা নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের সাথেই রয়েছেন।(‘আন্কাবূত : ৬৯)

৫. আল্লাহ্ তা’আলা যে সর্বদা আপনার কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আছেন তা অনুভব করতে শিখুন।

সুতরাং উক্ত কাজ করার সময় মানুষ আপনাকে না দেখলেও আল্লাহ্ তা’আলা যে আপনার প্রতি দেখেই আছেন তা ভাবতে হবে। এরপরও যদি আপনি উক্ত কাজে লিপ্ত থাকেন তখন অবশ্যই এ কথা ভাবতে হবে যে, আল্লাহ্ তা’আলার সম্মান ও মর্যাদা আপনার অন্তরে নেই। তাই আল্লাহ্ তা’আলা আপনার উক্ত কর্ম দেখলেও আপনার এতটুকুও লজ্জা হয় না। আর যদি আপনি এমন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা আপনার কর্মকাণ্ড দেখছেনই না তা হলে তো আপনি নিশ্চয়ই কাফির।

৬. জামাতে নামায পড়ার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হোন ।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ إِنَّ الصَّلاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَ الْمُنْكَرِ )

অর্থাৎ নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।(‘আন্কাবূত : ৪৫)

৭. বেশি বেশি নফল রোযা রাখতে চেষ্টা করুন।

কারণ, রোযার মধ্যে বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি উত্তেজনা প্রশমনেরও এক বাস্তবমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। যেমনিভাবে রোযা আল্লাহভীরুতা শিক্ষা দেয়ার জন্যও এক বিশেষ সহযোগী।

হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’উদ্ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল ইরশাদ করেনঃ يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَرَوَّج ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجُ ، وَ مَنْ لَمْ يَسْتَطعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ ، فَإِنَّهُ لَهُ وَجَاء

অর্থাৎ হে যুবকরা! তোমাদের কেউ সঙ্গমে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ তার চোখকে নিম্নগামী করবে এবং তার লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কারণ, রোযা তার জন্য একান্ত যৌন উত্তেজনা প্রতিরোধক।(বুখারী, হাদীস ১৯০৫, ৫০৬৬ মুসলিম, হাদীস ১৪০০ )

৮. বেশি বেশি কোর’আন তিলাওয়াত করুন।

কারণ, কোর’আন হচ্ছে সর্বরোগের চিকিৎসা। তাতে নূর, হিদায়াত, মনের আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। সুতরাং উক্ত রোগে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি কোর’আন তিলাওয়াত, মুখস্থ ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা অবশ্যই কর্তব্য যাতে তার অন্তর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়।

৯. বেশি বেশি আল্লাহ্’র যিকির করুন।

কারণ, আল্লাহ্ তা’আলার যিকিরে অন্তরের বিরাট একটা প্রশান্তি রয়েছে এবং যে অন্তর সর্বদা আল্লাহ্’র যিকিরে ব্যস্ত থাকে শয়তান সে অন্তর থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। সুতরাং এ জাতীয় ব্যক্তির জন্য যিকির অত্যন্ত উপকারী।

১০. আল্লাহ্ তা’আলার সকল বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান হোন।

তা হলে আল্লাহ্ তা’আলাও আপনার প্রতি যত্নবান হবেন। আপনাকে জিন ও মানব শয়তান এবং অন্তরের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করবেন। তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা’আলা আপনার ধার্মিকতা, সততা, মানবতা এবং সম্মানও রক্ষা করবেন।

১১. অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ কার্য সম্পাদন করুন।

তা হলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সহজেই আপনি একটি হালাল ক্ষেত্র পেয়ে যাবেন।

১২. জান্নাতের ‘হুরের কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন।

যাদের চোখ হবে বড় বড় এবং যারা হবে অতুলনীয়া সুন্দরী লুক্কায়িত মুক্তার ন্যায়। নেককার পুরুষদের জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পেতে হলে দুনিয়ার ক্ষণিকের অবৈধ স্বাদ পরিত্যাগ করতেই হবে।

১৪. তেমনিভাবে উত্তেজনাকর সকল বস্তু থেকেও দূরে থাকুন যেগুলো আপনার লুক্কায়িত কামনা-বাসনাকে দ্রুত জাগ্রত করে।

অতএব মহিলা ও শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে মেলামেশা করবেন না। বিশ্রী ছবি ও অশ্লীল গান শুনবেন না। আপনার নিকট যে অডিও ভিডিও ক্যাসেট, ছবি ও চিঠি রয়েছে সবগুলো দ্রুত নস্যাৎ করে দিন। উত্তেজনাকর খাদ্যদ্রব্য আপাতত বন্ধ রাখুন। তা আর কিছু দিনের জন্য গ্রহণ করবেন না। ইতিপূর্বে যেখানে উক্ত কাজ সম্পাদিত হয়েছে সেখানে আর যাবেন না।

১৫. লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকুন।

কখনো একা ও অবসর থাকতে চেষ্টা করবেন না। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ইত্যবসরে ঘরের প্রয়োজন সমূহ পূরণ করতে পারেন। কুর’আন শরীফ মুখস্থ করতে পারেন অথবা অন্ততপক্ষে বেচাকেনা নিয়েও ব্যস্ত হতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি ।

১৬. সর্বদা শয়তানের ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করুন। কোন কুমন্ত্রণাকে একটুর জন্যও অন্তরে স্থান দিবেন না ।

১৭. নিজের মনকে দৃঢ় করুন। কখনো নিরাশ হবেন না।

কারণ, এ ব্যাধি এমন নয় যে তার কোন চিকিৎসা নেই। সুতরাং আপনি নিরাশ হবেন কেন?

১৮. উচ্চাকাঙ্খী হোন।

উচ্চাভিলাসের চাহিদা হচ্ছে এই যে, আপনি সর্বদা উন্নত গুণে গুণান্বিত হতে চাইবেন। অরুচিকর অভ্যাস ছেড়ে দিবেন। লাঞ্ছনার স্থান সমূহে কখনো যাবেন না। সমাজের সম্মানি ব্যক্তি সেজে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব হাতে নিবেন ।

১৯. অভিনব বিরল চিকিৎসা সমূহ থেকে দূরে থাকুন।

যেমনঃ কেউ উক্ত কাজ ছাড়ার জন্য এভাবে মানত করলো যে, আমি যদি এমন কাজ আবারো করে ফেলি তা হলে আল্লাহ্ তা’আলার জন্য ছয় মাস রোযা রাখা অথবা দশ হাজার রিয়াল সাদাকা করা আমার উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। তেমনিভাবে এ বলে কসম খেলো যে, আল্লাহর কসম! আমি আর এমন কাজ করবো না। শুরুতে কসমের কাফ্ফারার ভয়ে অথবা মানত ওয়াজিব হওয়ার ভয়ে উক্ত কাজ করা থেকে বেঁচে থাকলেও পরবর্তীতে তা কাজে নাও আসতে পারে।

কখনো কখনো কেউ কেউ কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী কোন কোন ওষুধ সেবন করে। তা একেবারেই ঠিক হওয়ার ভয়ে উক্ত কাজ করা থেকে বেঁচে থাকলেও পরবর্তীতে তা কাজে নাও আসতে পারে। কখনো কখনো কেউ কেউ কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী কোন কোন ওষুধ সেবন করে। তা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

২০. নিজের মধ্যে প্রচুর লজ্জাবোধ জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।

কারণ, লজ্জাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যা কল্যাণই কল্যাণ এবং তা ঈমানের ও একটি বিশেষ অঙ্গ বটে। লজ্জাবোধ মানুষকে ভালো কাজ করতে উৎসাহ যোগায় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।

নিম্নোক্ত কয়েকটি কাজ করলে যে কোন ব্যক্তির মাঝে ধীরে ধীরেলজ্জাবোধ জন্ম নেয়ঃ

১. বেশি বেশি রাসূল এর জীবনী পড়বেন। ২. সাহাবায়ে কিরাম ও প্রসিদ্ধ লজ্জাশীল সালফে সালিহীনদের জীবনী পড়বেন। ৩. লজ্জাশীলতার ফলাফল সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করবেন। বিশেষ করে লজ্জাহীনতার ভীষণ কুফল সম্পর্কেও সর্বদা ভাববেন । ৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবেন যা বললে বা করলে লজ্জাবোধ কমে যায়। ৫. লজ্জাশীলদের সাথে বেশি বেশি উঠাবসা করবেন এবং লজ্জাহীনদের থেকে একেবারেই দূরে থাকবেন । ৬. বার বার লজ্জাশীলতার কসরত করলে একদা সে ব্যক্তি অবশ্যই লজ্জাশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে এমন গুণ থাকা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তখনই সে বড় হলে তা তার বিশেষ কাজে আসবে। হযরত ওয়াহাব বিন্ মুনাব্বিহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ إِذَا كَانَ فِي الصَّبِيِّ خَصْلَتَانِ: الْحَيَاءُ وَ الرَّهْبَةُ رُجِيَ خَيْرُهُ অর্থাৎ কোন বাচ্চার মধ্যে দু’টি গুণ থাকলেই তার কল্যাণের আশা করা যায়। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে লজ্জা আর অপরটি হচ্ছে ভয়-ভীতি।

ইমাম আস্‌মা’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ مَنْ كَسَاهُ الْحَيَاءُ ثَوْبَهُ لَمْ يَرَ النَّاسُ عَيْبَهُ অর্থাৎ লজ্জা যার ভূষণ হবে মানুষ তার দোষ দেখতে পাবে না ৷

২১. যারা অন্যজন কর্তৃক এ জাতীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন (বিশেষ করে

তা উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) তাদের একান্তই কর্তব্য হচ্ছে সর্বদা সতর খোলা থেকে সতর্ক থাকা।

চাই তা খেলাধুলার সময় হোক বা অন্য কোন সময়। কারণ, এরই মাধ্যমে সাধারণত অন্য জন তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে।

২২. সাজ-সজ্জায় স্বাভাবিকতা বজায় রাখবেন।

উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবেই প্রযোজ্য। সুতরাং এদের জন্য কখনোই উচিৎ নয় যে, এরা কড়া সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ব্যতিক্রমধর্মী আঁটসাঁট পোশাক পরবে। সাজ-সজ্জার ব্যাপারে কাফির ও মহিলাদের অনুসরণ করবে। মাথা আঁচড়ানো বা চুলের ভাঁজের প্রতি গুরুত্ব দিবে। এ জন্যই যে, তা অন্যের ফিৎনার কারণ ।

২৩. উঠতি বয়সের ছেলেদের আরেকটি কর্তব্য হচ্ছে, তারা যে কারোর সঙ্গে

মজা বা রঙ্গ-তামাশা করা থেকে বিরত থাকবে।

কারণ, অধিক কৌতুক মানুষের সম্মান বিনষ্ট করে দেয় এবং বোকাদেরকে তার ব্যাপারে অসভ্য আচরণ করতে সাহসী করে তোলে। তবে জায়িয কৌতুক একেবারেই নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু তা নেককারদের সঙ্গেই হওয়া উচিৎ এবং তা ভদ্রতা ও মধ্যপন্থা বজায় রেখেই করতে হবে।

২৪. আত্ম সমালোচনা করতে শিখবেন।

সময় থাকতে এখনই নিজের মনের সঙ্গে বুঝাপড়া করে নিবেন। চাই আপনি ছোটই হোন অথবা বড়। সেই কর্মটি আপনিই করে থাকুন অথবা তা আপনার সাথেই করা হোক না কেন। আপনি যদি বড় বা বয়স্ক হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, এখনো আমি কিসের অপেক্ষায় রয়েছি? এ মারাত্মক কাজটি এখনো ছাড়ছিনা কেন? আমি কি সরাসরি আল্লাহ্ তা’আলার শাস্তির অপেক্ষা করছি? না কি মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছি? আর যদি আপনি অল্প বয়স্ক বা ছোট হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, আমি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আমি অনেক দিন বাঁচবো। না কি যে কোন সময় আমার মৃত্যু আসতে পারে অথচ আমি তখনো উক্ত গুনাহে লিপ্ত। আর যদি আমি বেঁচেই থাকি তা হলে এমন ঘৃণ্য কাজ নিয়েই কি বেঁচে থাকবো? আমার যৌবন কি এ কাজেই ব্যয় হতে থাকবে? আমি কি বিবাহ্ করবো না? তখন আমার স্ত্রী ও সন্তানের কি পরিণতি হবে? আমি কি কোন এক দিন মানুষের কাছে লাঞ্ছিত হবো না? আমি কি কখনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হবো না? আমার কারণেই কি এ পবিত্র সমাজ ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে না? আমি কি আল্লাহ্ তা’আলার শাস্তি ও অভিশাপের কারণ হচ্ছি না? কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলার সামনে আমার অবস্থান কি হবে?

২৫. উক্ত কর্মের পরিণতি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করবেন।

কারণ, কিছুক্ষণের মজার পরই আসছে দীর্ঘ আপসোস, লজ্জা, অপমান ও শাস্তি ।

২৬. মনে রাখবেন, এ জাতীয় মজার কোন শেষ নেই।

এ ব্যাধি হচ্ছে চুলকানির ন্যায়। যতই চুলকাবেন ততই চুলকানি বাড়বে। একটি শিকার মিললেই আরেকটি শিকারের ধান্ধায় থাকতে হবে। কখনোই আপনার এ চাহিদা মিটবে না ।

২৭. নেককারদের সাথে উঠাবসা করবেন ও বদকারদের থেকে বহু দূরে থাকবেন।

কারণ, নেককারদের সাথে উঠাবসা করলে অন্তর সজীব হয়, ব্রেইন আলোকিত হয়। আর বকারদের থেকে দূরে থাকলে ধর্ম ও ইয্যত রক্ষা পায়।

২৮. বেশি বেশি রুগ্ন ব্যক্তির শুশ্রূষা করবেন, বার বার মৃত ব্যক্তির লাশদেখতে যাবেন, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করবেন ও তার কবর যিয়ারত করবেন। তেমনিভাবে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করবেন। কারণ, তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনের এক বিশেষ সহযোগী।

২৯. কারোর হুমকির সামনে কোন ধরনের নতি স্বীকার করবেন না। বরং তা

দ্রুত প্রশাসনকে জানাবেন।

বিশেষ করে এ ব্যাপারটি ছোটদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। কারণ, এ কথাটি আপনি বিশেষভাবেই জেনে রাখবেন যে, এ জাতীয় ব্যক্তিরা যতই কাউকে ভয় দেখাক না কেন তারা এ ব্যাপারে উক্ত ব্যক্তির কঠিনতা বা সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা দেখলে অবশ্যই পিছপা হতে বাধ্য হবে। কেউ এ ব্যাপারে নিজকে অক্ষম মনে করলে সে যেন দ্রুত তা নিজ পিতা, বড় ভাই, আস্থাভাজন শিক্ষক অথবা কোন ধার্মিক ব্যক্তিকে জানায়, যাতে তারা তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারে ।

৩০. বেশি বেশি সাধুতা ও তাওবাকারীদের কাহিনী সম্ভার পড়বেন।

কারণ, তাতে বহু ধরনের শিক্ষা, আত্মসম্মানের প্রতি উৎসাহ এবং বিশেষভাবে অসম্মানের প্রতি নিরুৎসাহ সৃষ্টি হবে ।

৩১. বেশি বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ক্যাসেট সমূহ বিশেষ মনযোগ সহ শ্রবণ করবেন এবং গানের ক্যাসেট সমূহ শুনা থেকে একেবারেই বিরত থাকবেন।

৩২. সমাজের যে যে নেককার ব্যক্তিরা যুবকদের বিষয় সমূহ নিয়ে

বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন তাদের কারোর নিকট নিজের এ দুরবস্থা বিস্তারিত জানাবেন।

যাতে তাঁরা আপনাকে এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকটও আপনার এ অবস্থার পূর্ণ বিবরণ দিতে পারেন যাতে তিনি আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেন অথবা উত্তেজনা প্রশমনের কোন পদ্ধতি বাতলিয়ে দিতে পারেন। প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই এ কথা জানা উচিত যে, শরীয়ত ও বিবেককে আশ্রয় করেই কোন মানুষ তার সার্বিক কল্যাণ ও তার পরিপূর্ণতা এবং সকল অঘটন অথবা অন্ততপক্ষে তার কিয়দংশ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে থাকে ।

সুতরাং বিবেকবানের সামনে যখন এমন কোন ব্যাপার এসে পড়ে যার মধ্যে ভালো ও খারাপ উভয় দিকই রয়েছে তখন তার উপর দু’টি কর্তব্য এসে পড়ে। তন্মধ্যে একটির সম্পর্ক জ্ঞানের সাথে এবং অপরটির সম্পর্ক কাজের সাথে। অর্থাৎ তাকে সর্ব প্রথম এ কথা জানতে হবে যে, উক্ত উভয় দিকের মধ্য থেকে কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সে সেটিকেই প্রাধান্য দিবে। আর এ কথা সবারই জানা যে, কোন মেয়ে বা শ্মশ্রুবিহীন ছেলের প্রেমে পড়ার মধ্যে দুনিয়াবী বা ধর্মীয় কোন ফায়েদা নেই।

বরং তাতে দীন-দুনিয়ার অনেকগুলো গুরুতর ক্ষতি রয়েছে যার কিয়দংশ নিম্নরূপঃ

ক. আল্লাহ্ তা’আলার ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে তাঁর কোন সৃষ্টির ভালোবাসা ও তার স্মরণে নিমগ্ন হওয়া। কারণ, উভয়টি একত্রে সমভাবে কারোর হৃদয়ে অবস্থান করতে পারে না ।

. তার অন্তর আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসার দরুন নিদারুণ কষ্ট ও শাস্তির সম্মুখীন হয়। কারণ, প্রেমিক কখনো চিন্তামুক্ত হতে পারে না। বরং তাকে সর্বদা চিন্তাযুক্তই থাকতে হয়। প্রিয় বা প্রিয়াকে না পেয়ে থাকলে তাকে পাওয়ার চিন্তা এবং পেয়ে থাকলে তাকে আবার কখনো হারানোর চিন্তা।

গ. প্রেমিকের অন্তর সর্বদা প্রিয় বা প্রিয়ার হাতেই থাকে। সে তাকে যেভাবেই চালাতে চায় সে সেভাবেই চলতে বাধ্য। তখন তার মধ্যে কোন নিজস্ব ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে না। এর চাইতে আর বড় কোন লাঞ্ছনা আছে কি?

ঘ. দীন-দুনিয়ার সকল কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত হয়। কারণ, ধর্মীয় কল্যাণের জন্য তো আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি অন্তরের উন্মুখতা একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা প্রেমিকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অন্য দিকে দুনিয়াবী কল্যাণ তো দীনি কল্যাণেরই অধীন। দীনি কল্যাণ যার হাত ছাড়া হয় দুনিয়ার কল্যাণ সুস্থভাবে কখনো তার হস্তগত হতে পারে না ।

ঙ. দীন-দুনিয়ার সকল বিপদ তার প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। কারণ, মানুষ যখন আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর প্রেমে পড়ে যায় তখন তার অন্তর আল্লাহ্বি মুখ হয়ে পড়ে। আর কারোর অন্তর আল্লাহ্ বিমুখ হলে শয়তান তার অন্তরে হাঁটু গেড়ে বসে। তখনই সকল বিপদাপদ তার দিকে দ্রুত ধাবমান হয় কারণ, শয়তান তো মানুষের আজন্ম শত্রু। আর কারোর কঠিন শত্রু যখন তার উপর কাবু করতে পারে তখন কি সে তার যথাসাধ্য ক্ষতি না করে এমনিতেই বসে থাকবে?!

চ. শয়তান যখন প্রেমিকের অন্তরে অবস্থান নিয়ে নেয় তখন সে উহাকে বিক্ষিপ্ত করে ছাড়ে এবং তাতে প্রচুর ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ঢেলে দেয়। কখনো কখনো এমন হয় যে, সে একান্ত বদ্ধ পাগলে পরিণত হয়। লাইলী প্রেমিক ঐতিহাসিক প্রেমপাগল মজনুর কথা তো আর কারোর অজানা নয় ৷

ছ. এমনকি প্রেমিক কখনো কখনো প্রেমের দরুন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিজের সকল অথবা কিছু বাহ্যেন্দ্রিয় হারিয়ে বসে। প্রত্যক্ষ তো এভাবে যে, প্রেমে পড়ে তো অনেকে নিজ শরীরই হারিয়ে বসে। ধীরে ধীরে তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তার কোন ইন্দ্রিয়ই আর সুস্থভাবে বাহ্যিক কোন কাজ সমাধা করতে পারে না।

একদা জনৈক যুবককে ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এর নিকট হাযির করা হলো। তখন তিনি “আরাফাহ্” ময়দানে অবস্থানরত। যুবকটি একেবারেই দুর্বল হয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেলো। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আন্‌হুমা) উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ যুবকটির কি হলো? লোকেরা বললোঃ সে প্রেমে পড়েছে। এ কথা শুনেই তিনি তখন থেকে পুরোদিন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রেম থেকে আশ্রয় কামনা করেন ।

পরোক্ষ বাহ্যেন্দ্রিয় লোপ তো এ ভাবেই যে, প্রেমের দরুন তার অন্তর যখন বিনষ্ট হয়ে যায় তখন তার বাহ্যেন্দ্রিয়গুলোও আর সঠিক কাজ করে না। তখন তার চোখ আর তার প্রিয়ের কোন দোষ দেখে না। কান আর প্রিয়কে নিয়ে কোন গাল শুনতে বিরক্তি বোধ করে না। মুখ আর প্রিয়ের অযথা প্রশংসা করতে লজ্জা পায় না।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *