ইসলাম

কুরআন ,হাদীস ,ইজমার আলোকে মদের ভয়াবহতা

আল কুরআনের আলোকে মদ

ইসলামে সকল প্রকার মদ ও মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণরূপে স্থায়ীভাবে হারাম। কুরআন মজীদের স্পষ্ট ঘোষণা থেকে তা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقَعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءُ فِى الْخَمْرِ وَالمَيسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلوة فَهَلْ أَنتُمْ مُنْتَهُونَ )

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ, জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায়। এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না? [৫ : মায়িদা : ৯০-৯১]

উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের প্রথমটিতে মদ পান করাকে ঘৃণ্য কাজ বলা হয়েছে। আর ঘৃণ্য কাজ সর্বদাই পরিত্যাজ্য। এর দ্বারাও মদ হারাম হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। এমনিভাবে এ আয়াতে একে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। এতেও মদ পান করার বিষয়টি হারাম বলে প্রতীয়মান হয়।

অনুরূপভাবে উক্ত আয়াতে মদ পান করার বিষয়টিকে জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী এবং ভাগ্য নির্ণয়ক শর ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে একত্রিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী এবং ভাগ্য নির্ণয়ক শর ইত্যাদির ব্যবহার এবং এগুলোর উপর বিশ্বাস রাখা যেমনিভাবে হারাম ঠিক তদ্রুপ মদ পান করাও হারাম। অধিকন্তু এ (তোমরা তা বর্জন করবে) আয়াতাংশ দ্বারাও মদ হারাম হওয়ার বিষয়টি সুপ্রমাণিত। কেননা, মদ হালাল হলে আল্লাহ তাআলা তা বর্জন করার হুকুম করতেন না । [প্রাগুক্ত পৃ-১১]

আর দ্বিতীয় আয়াতে এ কথা বলা হয়েছে যে, শয়তান মদ, জুয়া ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এবং মুসলমানদেরকে যিকর ও সালাত আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে। কাজেই মদ পান করা কোনভাবেই জায়েয হতে পারে না। মদ পানের কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাণহানিও এ কারণে ঘটে থাকে। তাই মদ পান আত্মহত্যার শামিল।

এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ এবং তোমরা নিজের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিজে নিক্ষেপ করবে না। [২ : বাকারা : ১৯৫] অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ه আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করবে না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। [৪ : নিসা : ২৯]

কুরআন মজীদের একাধিক আয়াতে উৎকৃষ্ট ও হালাল বস্তু আহার করার জন্য হুকুম করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- وَكُلُوا مِمَّا رَزَقُكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়েছেন তা হতে ভক্ষণ কর। [৫ : মায়িদা : ৮৮]

আরো ইরশাদ হয়েছে- يَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ . হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।[২ : বাকারা : ৭২]

অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে— يَأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيْمٌo হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত । [২৩ : মুমিনূন : ৫১]

হাদীসের আলোকে মদ

মদ ও মাদকদ্রব্য হারাম হওয়ার বিষয়টি হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত।

(১) হযরত ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيْهَا وَبَائِعَها وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرُهَا وَمُعْتَصِرُهَا وَحَامِلُها والْمَحْمُولَة إِلَيْهِ10:14

আল্লাহ তাআলা লা’নত করেন মদের উপর, মদ্যপায়ীর উপর, মদ পরিবেশনকারীর উপর, ক্রয়কারীর উপর, বিক্রয়কারীর উপর, প্রস্তুতকারীর উপর, যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তার উপর, বহনকারীর উপর এবং যার জন্য বহন করে আনা হয় তার উপর । [আবু দাউদ : পৃ. ৫১৭]

(২) মদ হল সমস্ত অকল্যাণের মূল। এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- اجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلَّ شَرٌ

মদ থেকে দূরে থাকবে। কেননা, মদ সমস্ত অকল্যাণের চাবি । [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৫] অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি- হযরত জিবরাঈল (আ.) আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মদ! মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি প্রতিমাপূজারী ব্যক্তির মত। (কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৫]

**(৩)**অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- أَوَّلَ مَا نَهَانِي عَنْهُ رَبِّى بَعْدَ عِبَادَةِ الأُوثَانِ شرب الْخَمْرِ وَمُلَاحَاةَ الرَّجُلِ

প্রতিমাপূজার নিষেধাজ্ঞার পর আমার প্রতিপালক সর্বপ্রথম আমাকে মদ পান এবং মানুষের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। [কানযুল উম্মাল : (বায্যার, তাবরানী) ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৬]

(৪) বস্তুত মদ হচ্ছে যাবতীয় দুষ্কৃতি ও রকমারী পাপের উৎস। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- إِيَّاكَ وَالْخَمْرَ فَإِنَّ خَطِيئَتَهَا تَفْرَعُ الْخَطَايَا كَمَا أَنَّ شَجَرَتَهَا تَفْرُعُ الشَّجَرَةَ

মদ থেকে দূরে থাকবে। কেননা মদ্যপানের পাপ একাধিক পাপকে জন্ম দেয় যেমন এক বৃক্ষ থেকে একাধিক বৃক্ষ জন্ম নেয়। (কানযুল উম্মাল (ইবন মাজা) ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৬]

(৫) অপর এক হাদীসে আছে- اجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا أُمُّ الْخَبَائِثِ

তোমরা সর্ব প্রকার মাদকদ্রব্য পরিহার কর। কেননা, তা হচ্ছে সমস্ত পাপের উৎস। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড]

হযরত উসমান (রা.) জনৈক মদ্যপায়ীর দুষ্কৃতির বিবরণ দিয়ে বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল। সে সর্বদা ইবাদত-বন্দেগী করত এবং লোকালয় থেকে নির্জনে থাকত । হঠাৎ এক ভ্ৰষ্টা মেয়ে তার পেছনে লাগল এবং সে তার দাসীকে ঐ লোকটির নিকট পাঠাল। দাসী তার নিকট গিয়ে বলল, অমুক মহিলা সাক্ষ্য প্রদানের নিমিত্তে আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে। এ কথা শুনে লোকটি ঐ দাসীর সাথে সাথে চলতে লাগল । তারপর কোন এক ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে অমনি ঐ দাসী ঘরের দরজাটি বন্ধ করে দেয়। এমনি করে সে একজন সুন্দরী রমণীর কাছে পৌছে যায়। তার পাশেই একজন যুবক এবং একটি মদের বোতল রক্ষিত ছিল। লোকটি মহিলার নিকট পৌছার পর মহিলা বলল, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদানের জন্য ডেকে আনিনি। আমি তো আপনাকে এজন্য ডেকে এনেছি, যাতে আপনি আমার সাথে সঙ্গম করেন অথবা এখান থেকে এক পেয়ালা মদ পান করেন অথবা এই যুবককে হত্যা করেন। (এই তিন কাজের কোন একটি না করা পর্যন্ত আপনাকে যেতে দেয়া হবে না।) লোকটি নিরুপায় হয়ে এবং কম মাত্রার পাপ মনে করে বলল, আমাকে এই এক পেয়ালা মদ পান করতে দাও।তাকে মদ পান করতে দেওয়া হল। তারপর সে বারবার চেয়ে চেয়ে অনেক মদ পান করল। পরে সে মহিলার সাথে সঙ্গম করল এবং যুবকটিকে হত্যা করল । সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর। আল্লাহর শপথ! ঈমান ও মদ পান এই দুই জিনিস একত্রিত হতে পারে না। হয় ঈমান থাকবে, না হয় চলে যাবে- থাকবে শুধু মদ পান। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৮৬/

(৬) মদপানকারী ব্যক্তি পরকালে জান্নাতী শরবত থেকে বঞ্চিত থাকবে । হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا حُرِمَهَا فِي الْآخِرَةِ

যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এরপর সে তা থেকে তাওবা করেনি সে ব্যক্তি আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। [বুখারী : কিতাবুল আশরিবা : ৮৩৬]

(৭) মদপানকারী ব্যক্তি সর্বদা শয়তানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। শয়তান তার নিত্য সঙ্গী হয়ে যায়। এমনকি শয়তান তার হাত, পা, কান, চোখ ইত্যাদি হয়ে যায় এবং তাকে সর্বপ্রকার অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায় ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي فُسْحَةٍ مِّنْ دِينِهِ مَا لَمْ يَشْرَبٍ الْخَمْرُ فَإِذَا شَرِبَهَا خَرَقَ اللهُ عَنْهُ سَتْرَهُ وَكَانَ الشَّيْطَانُ وَلِيَّةٌ وَسَمْعُهُ وَبَصَرُهُ وَرِجْلَه يَسُوقه. إلى كُلِّ شَيْ ويصرفه عن كُلّ خَيْرٍ বান্দা মদ পান না করা পর্যন্ত দীনের গণ্ডিতে সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে। যখন সে মদ পান করে অমনি আল্লাহ তাআলা তার সংরক্ষণের পর্দাটি বিদীর্ণ করে দেন। তখন থেকে শয়তান তার বন্ধু হয়ে যায়। এমনকি শয়তান তার হাত, পা, কান, চোখ ইত্যাদি হয়ে যায় নানা সমারে এবং তাকে সর্বপ্রকার অকল্যাণের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায় আর তাকে সমুদয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। (কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৬

(৮) মদ্যপানের এ গর্হিত কাজের কারণে পৃথিবীতে ভূমিকম্প, ভূমি ধসে যাওয়া, প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া এবং আকৃতি বিকৃত হওয়া ইত্যাদি সংঘটিত হয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- لَيَكُونَنَّ فِى هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفُ و قذف وَمَسْحُ وَذَلِكَ إِذَا شَرِبُوا الْخُمُورَ وَاتَّخَذُوا الْقَيْنَاتِ وَضَرَبُوا بالمعازِفِ এ উম্মতের লোকরা যখন মদ পান করবে, গায়িকাদের দ্বারা গান করাবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে তখন তাদের উপর ভূমিকম্প, প্রস্তর বৃষ্টি এবং আকৃতি বিকৃত হওয়া সংঘটিত হবে। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৪৭] অপর এক হাদীসে আছে, এ জাতীয় লোকদেরকে বানর এবং শূকরে পরিণত করে দেওয়া হবে । [প্রাগুক্ত]

(৯) মদ পানকারী ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের নূর থাকবে না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ شَرِبَ خَمْرًا خَرَجَ نُورُ الْإِيْمَانِ مِنْ جَوْفِهِ কেউ মদ পান করলে তার ভেতর থেকে ঈমানের নূর বের হয়ে যায় । [প্রাগুক্ত]

(১০) অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- مَنْ شَرِبَ الْخَمْرُ أَتَى عَطْشَانَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ মদপানকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন পিপাসার্ত অবস্থায় ময়দানে হাশরে উপস্থিত হবে। [প্রাগুক্ত]

(১১) মদপানকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُؤْمِنُ خَمْرٍ মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। [প্রাগুক্ত : ৩৫২]

(১২) মদ পান করা এমন অভিশপ্ত কাজ যে, এতে নামায পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-لَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ رَجُلٌ مِّنْ أُمَّتِي فَيَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَلَاةَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا – আমার উম্মতের মধ্যে কোন ব্যক্তি মদ পান করলে তার চল্লিশ দিনের নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না । (কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৫২]

(১৩) অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ شَرِبَ الْخَمر لم تقبل لَهُ صَلوةَ أَرْبَعِيْن صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ فَإِنْ عَادَ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ صَلوةَ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَإِنْ عَادَ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ صَلوةَ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَإِنْ عَادَ الرَّابِعَةَ لَمْ يُقَبَلِ اللَّهُ صَلوةَ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ لَمْ يَتُبْ عَلَيهِ وَسَقَاهُ مِن نَّهْرِ الْخَبَالِ

কেউ মদ পান করলে তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না। যদি সে তাওবা করে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা মঞ্জুর করে নেন। যদি সে পুনরায় পান করে তবে চল্লিশ দিনের নামায আবার কবুল হবে না। যদি সে তাওবা করে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নেন। যদি সে আবার মদ পান করে তবে পুনরায় তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না। এরপরও যদি সে তাওবা করে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নেন। যদি সে চতুর্থবার আবার পদ পান করে তবে আবার তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না। এবার সে তাওবা করলেও তার তাওবা কবুল হবে না। অধিকন্তু জাহান্নামীদের পুঁজ তাকে পান করানো হবে। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৩]

(১৪) মদপানকারী ব্যক্তি কোন কথা বললে তাকে বিশ্বাস করা হবে না। এমনকি বিবাহের প্রস্তাব করলে তার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে না এবং বিবেচনায়ও তা আনা হবে না ।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- من شَرِبَ الحَمرُ بَعْدَ أَنْ حَرَّ مَهَا اللَّهُ تَعَالَى عَلَى لِسَانِي فَلَيسَ لَه أَن يزوج إِذَا خَطَبَ وَلَا يُشْفَعُ إِذَا شفَعَ وَلَا يُصَدَّقَ إِذَا حَدَّثَ.

আল্লাহ তাআলা মদ হারাম করেছেন- এ কথা আমার মুখ থেকে বের হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি তা পান করে তবে সে বিবাহের প্রস্তাব করলেও তার নিকট কন্যা বিবাহ দেওয়া হবে না, কারো ব্যাপারে সুপারিশ করলে তা মঞ্জুর করা হবে না এবং কোন কথা বললে তা বিশ্বাস করা হবে না। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬১]

**(১৫)**মদপানকারী ব্যক্তির উপর আল্লাহ নারাজ ও অসন্তুষ্ট হন। এমনকি এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলে তার এ মৃত্যু হবে কুফরীর মৃত্যু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ شَرِبَ الْخَمْرُ لَم يَرْضَ اللَّهُ عَنْهُ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فَإِنْ مَاتَ مَاتَ كَافِرًا، وَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَسْقِيَة مِنْ طِيْنَةٍ الْخَبَالِ صَدِيدِ أَهْلِ النَّارِ –

কেউ মদ পান করলে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। এমনকি এ অবস্থায় সে যদি মারা যায় তবে সে কাফির অবস্থায় মারা গেল। অবশ্য মদ্যপানের পর তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। এরপর পুনরায় পান করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে জাহান্নামীদের পুঁজ পান করাবেন । (কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬১]

(১৬) কিয়ামতের দিন মদ্যপায়ী ব্যক্তির এমন বীভৎস চেহারা হবে যা দেখে মানুষ ভয় পাবে এবং ঘৃণা করবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- مَنْ مَاتَ وَهُوَ مُدْ مِنْ خَمْرٍ لَقِىَ اللهَ تَعَالَى وَهُوَ مُسَوَّدُ الْوَجْهِ مُظْلَمُ الْجَوفِ لِسَانُهُ سَاقِط عَلَى صَدْرِهِ يَقْذِرُهُ النَّاسُ –

মদ্যপানে অভ্যস্ত অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে আল্লাহর সাথে তার এ অবস্থায় সাক্ষাৎ হবে যে, তার চেহারা থাকবে কাল-কৃষ্ণবর্ণ, পেট হবে অন্ধকার এবং জিহ্বা বক্ষের উপর ঝুলানো থাকবে। এতে লোকেরা তাকে দেখে ঘৃণা করবে। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬২]

(১৭) অপর এক হাদীসে মদ্যপায়ী ব্যক্তিকে মুশরিক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ صَبَاحًا كَانَ مَا لَمُشْرِكِ بِاللهِ حَتَّى يُمْسِيَ وَكَذلِكَ إِنْ شَرِبَهَا لَيْلا كَانَ كَا لْمُشْرِكَ بِاللَّهِ حَتَّى يُصْبِحَ، وَمَنْ شَرِبَهَا حَتَّى يُسْكِرَ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ لَهُ صَلوةَ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَمَنْ مَاتَ وَفِي عُرُوقِهِ مِنْهَا شَيء مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيَّةٍ

কেউ যদি সকাল বেলা মদ পান করে তবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি শিরককারী ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কেউ যদি রাতে মদ পান করে তবে সে সকাল পর্যন্ত মুশরিক ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যায়। নেশা উদ্রেক করে কেউ এ পরিমাণ মদ পান করলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোন নামায কবুল হবে না। ধমনীতে বিন্দু পরিমাণ মদ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কেউ মারা গেলে সে জাহিলিয়াতের অবস্থায় মারা গেল। [প্রাগুক্ত]

(১৮) মদ খেয়ে মারা গেলে, কিয়ামতের দিন তাকে সমস্ত মানুষের সামনে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ مَاتَ وَفِي بَطْنِهِ رِيحُ الْفَضِيخِ فَضَحَهُ اللهُ عَلَى رُوسِ الْأَشْهَادِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

মারা যাওয়ার সময় কারো পেটে যদি ফাযীখ (এক প্রকারের মদ) এর গন্ধ পাওয়া যায় তবে তাকে কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সামনে আল্লাহ তাআলা লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৩]

(১৯) মদখোর ব্যক্তির দুআ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। এমনকি শবে বরাতেও নয় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- لا يَحْجُبُ قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ عَنِ اللَّهِ إِلَّا مَا خَرَجَ مِنْ قَمِ صَاحِبِ الشَّارِبِيْنَ لَيْلَةَ النَّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমা আল্লাহর দরবারে পৌছার ক্ষেত্রে কোন কিছুই অন্তরায় হতে পারে না । কিন্তু মদখোর ব্যক্তি শবে বরাতে এ কালেমা পাঠ করলেও তা আল্লাহর দরবারে পৌছে না । [প্রাগুক্ত]

(২০) তিনি আরো ইরশাদ করেন- مَنْ وَضَعَ الْخَمْرَ عَلَى كَفِهِ لَم تُقبل لَهُ دَعَوَة যে ব্যক্তি হাতে মদ রাখল তার কোন দুআ আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। (প্রাগুক্ত)

(২১) কিয়ামতের দিন মদখোর ব্যক্তির এক ভয়াবহ দৃশ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- يَخْرُجُ شَارِبُ الْخَمْرِ مِنْ قَبْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُتَوَرّمُ بَطْنِهِ مُتَوَزِمُ شَدْقَاهُ مُدَلَّعُ لِسَانِهِ يَسِيلُ لُعَابَهُ عَلَى بَطْنِهِ نَارٌ فِي بَطْنِهِ تَأْكُلُهُ حَتَّى يَفْرُعْ مِنْ الْخَلَائِقِ

মদখোর ব্যক্তি পেট ও গণ্ডদেশ ফুলা অবস্থায় রক্তিম চেহারা নিয়ে ময়দানে হাশরে উঠবে। তখন তার মুখ থেকে লালা পেটের উপর পড়তে থাকবে। পেটের ভেতর আগুন জ্বলতে থাকবে। সে আগুনে তার পেটের সব কিছুকে খেয়ে শেষ করে দিবে। হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এরূপ চলতে থাকবে।

(২২) মদখোর ব্যক্তিকে মাতাল অবস্থায় হাশরে উঠানো হবে। ইরশাদ হয়েছে- يُلْقَى اللَّهُ شَارِبَ الْخَمْرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِينَ يَلْقَاهُ وَهُوَ سَكَرَانَ فَيَقُولُ: وَيْلَكَ مَا شَرِبْتَ ؟ فَيَقُولُ: الْخَمْرُ فَيَقُولُ: أَلَمْ أَحْرِمَهَا عَلَيْكَ ؟ فَيَقُولُ: بَلَى فَيَوْمُرُ بِهِ إِلَى النَّارِ

হাশরের ময়দানে মাতাল অবস্থায় মদখোর ব্যক্তির আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হবে। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কী পান করেছ? সে বলবে, আমি মদ পান করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি তা তোমার জন্য হারাম করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ করেছেন। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হবে। [প্রাগুক্ত)

(২৩) মদ খাওয়া চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- اهْرِقِ الْخَمْرُ وَاكَسِرِ الدُّنَانَ মদ ফেলে দাও এবং এর সব মটকা ভেঙ্গে দাও । [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : পৃ. ৩৬৮]

(২৪) মদ্যপান উৎখাতের লক্ষ্যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- إِذَا شَرِبَ الخمر فَاجْلِدُوهُ، ثُمَّ إِذَا شَرِبَ فَاجْلِدُوهُ ثُمَّ إِذَا شَرِبَ فَاجْلِدُوهُ ثُمَّ إِذَا شَرِبَ الرَّابِعَةَ فَاضْرِبُوْا عُنُقَهُ

কেউ মদ পান করলে তাকে দোররা মারবে, এরপর আবার পান করলে আবার দোররা মারবে। এরপর আবার পান করলে পুনরায়ও দোররা মারবে। চতুর্থবার পান করলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : পৃ. ৩৬৮]

হাদীসে আছে, মদ হারাম হওয়ার হুকুম নাযিল হলে পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীর মাধ্যমে মদীনাতে তা প্রচার করিয়েছেন। এ ঘোষণা শুনে যার হাতে শরাবের যে পাত্র ছিল তা তিনি সেখানেই ফেলে দেন। যার হাতে মদের কলস বা মটকা ছিল তিনি তা ঘর থেকে বের করে তৎক্ষণাৎ ভেঙ্গে ফেলেন।

অপর এক বর্ণনায় আছে, মদ হারাম ঘোষণার পর যার হাতে মদের পেয়ালা ছিল এবং তা সে ঠোঁট পর্যন্ত পৌছিয়েছিল ঘোষণা শুনার পর তৎক্ষণাৎ তিনি তা ছুঁড়ে মারলেন। সে দিন মদীনায় এই পরিমাণ মদ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল যে, মদীনার অলি-গলিতে মদের বন্যা প্রবাহিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত মদীনার অলি-গলির অবস্থা এমন ছিল যে,বৃষ্টি হলেই মদের গন্ধ পাওয়া যেত।

নিজে হাদীস শরীফে এ-ও বর্ণিত আছে যে,মদের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে আদেশ দিলেন যে, যার কাছে যত রকমের মদ আছে তা অমুক স্থানে একত্রিত কর। এ আদেশ পালনকল্পে সাহাবীগণ বিনা দ্বিধায় তা নির্ধারিত স্থানে একত্রিত করলেন। তারপর নিজে উপস্থিত হয়ে স্বহস্তে মদের অনেকগুলো পাত্র ভাংলেন।আর অবশিষ্টগুলো সাহাবীদের মাধ্যমে ভাঙ্গালেন। জনৈক সাহাবী মদের ব্যবসা করতেন এবং সিরিয়া থেকে মদ আমদানি করতেন।

ঘটনাক্রমে ঐ সময় তিনি মদ আনার জন্য সিরিয়া গিয়েছিলেন। তিনি ব্যবসায়ের এ পণ্য নিয়ে মদীনায় প্রবেশ করার পূর্বেই মদ হারাম হওয়ার সংবাদ তাঁর কানে পৌছল। তখন সে সাহাবী তাঁর আনীত মদ যা অনেক মুনাফার আশায় আনা হয়েছিল এক পাহাড়ের পাদদেশে রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হলেন এবং এসব মদ কী করতে হবে এ বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ প্রার্থনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম করলেন, মদের মটকাগুলো ভেঙ্গে সমস্ত মদ ভাসিয়ে দাও। সাহাবী বিনা আপত্তিতে তাঁর সমূদয় পুঁজির বিনিময়ে সংগৃহীত এ পণ্য স্বহস্তে মাটিতে ঢেলে দিলেন। [মা’আরিফুল কুরআন (সংক্ষিপ্ত) : পৃ. ১১৪]

**(২৫)**মদ ও মাদকদ্রব্যের পরিণাম হচ্ছে গোমরাহী। এ কারণেই মিরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের পেয়ালা স্বহস্তে তুলে নেননি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّعَمْ آتَى ليلة أسرِى بِهِ بِاليَاءَ بِقَدَ حَيْنِ مِنْ خَمْرٍ وَلَبَنٍ فَنَظَرَ إِلَيْهِمَا ثُمَّ اَخَذَ اللَّبَن فَقَالَ جِبْرَئِيلُ: الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي هَدَاكَ الْفِطْرَةِ وَلَوْ أخذت الخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتَكَ

ইসরা ও মিরাজ রাতে ঈলয়া নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে মদ ও দুধের দুটি পেয়ালা পেশ করা হয়েছিল। তিনি উভয়টির দিকে নজর করলেন। এরপর দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলেন। তখন জিবরাঈল (আ.) বললেন, সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আপনাকে স্বভাবজাত জিনিসের দিকে পথ দেখিয়েছেন। যদি আপনি মদের পেয়ালাটি গ্রহণ করতেন তবে আপনার উম্মত গোমরাহ হয়ে যেত । [বুখারী শরীফ : ৮৩৬]

(২৬) মদ পান কিয়ামতের আলামত। হাদীসে আছে- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَعَمَ قَالَ: مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَظْهَرَ الْجَهْلُ وَيَقِلُّ العلم يَظْهَرُ النَ وتُشرب الْخَمْرُ وَيَقِلُّ الرِّجَالُ وَيَكْثُرُ النِّسَاءُ حَتَّى يَكُونَ الخَمْسِينَ اِمْرَأَةٍ قَيْمُهُنَّ رَجُل وَاحِدٌ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের লক্ষণসমূহের কতেক হল এই যে, তখন অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, ইলমেদীন কমে যাবে, ব্যভিচার প্রকাশ্যে হতে থাকবে, মদ্যপানের ছড়াছড়ি চলবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে আর নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। শেষ অবধি অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে, পঞ্চাশজন নারীর জন্য তাদের পরিচালক হবে একজন পুরুষ। [বুখারী শরীফ : পৃ. ৮৩৬]

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন- أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: لَا يَزْنِي حِيْنَ يَزُ نِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ،

(২৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময় ঈমানদার অবস্থায় থাকে না। মদপানকারী মদ পান করার সময় ঈমানদার অবস্থায় থাকে না। এমনিভাবে চোর চুরি করার সময় ঈমানদার অবস্থায় থাকে না। [বুখারী শরীফ : পৃ. ৮৩৬]

(২৮) মদের নাম পরিবর্তন করে সেবন করলেও তা মদ হিসাবেই গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- لَيَشْرَبَنَّ أُنَاسٌ مِّنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ يُسَمُّو نَهَا بِغَيْرِ اسمها আমার উম্মতের কতিপয় লোক মদ পান করবে এবং তারা মদের নাম পরিবর্তন করে ভিন্ন নাম রাখবে। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : পৃ. ৩৬৭]

(২৯) মদপানকারী ব্যক্তির উপর আসমান-জমিনের ফিরিশতাগণ সকলেই লা’নত করেন। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- إِذَا وَضَعَ الرَّجُلُ قَدَحًا مِّنْ خَمْرٍ عَلَى يَدِهِ لَعَنَتُهُ مَلَئِكَةُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ فَإِنْ شَرِبَهُ لَمْ تُقْبَلْ كَعَابِدٍ صَلوتُهُ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً وَإِنْ دَاوَمَ عَلَيْهَا الوثن

কেউ যদি মদের পেয়ালা হাতে রাখে তবে তার প্রতি আসমান জমিনের ফিরিশতাগণ সকলেই লা’নত করেন। যদি সে তা পান করে তবে তার চল্লিশ দিনের নামায আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না। আর যদি সে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে যায় তাহলে সে প্রতিমাপূজারী ব্যক্তির মত হয়ে যায়। [মাওসূ’আতুল ফিক্হ আল ইসলামী : ১২তম খণ্ড : পৃ. ৮-৯]

**(৩০)**মদ পান তো দূরের কথা, মদখোর লোকদের মজলিশে বসে খানা খাওয়াও জায়েয নেই। হাদীসে আছে- نَهى رَسُولُ اللَّهِ صَعَلَمَ أَنْ يَأْكُلُ الْمُسْلِمُ عَلَى مَائِدَةٍ عَلَيْهَا الْخَمْرُ .

যে দস্তরখানে মদ রয়েছে ঐ দস্তরখানে বসে খানা খেতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে নিষেধ করেছেন। [মাওসূ’আতুল ফিক্হ আল ইসলামী]

(৩১) চুরি ও যিনা থেকেও মদ্যপানের অপরাধ ভয়াবহ। হাদীসে আছে- عَنْ عَلِيَّ رَضِ أَنَّهُ قِيلَ لَهُ: أَنَّ شُرْبَ الْخَمْرِ أَشَدُّ مِّنَ الزَّنَا وَالسَّرَقَةِ؟ قَالَ: نَعَمْ أَنَّ شَارِبَ الْخَمْرِ يَزْنِي وَيَسْرِقُ وَيَقْتُلُ وَيَدَعُ الصَّلوةَ –

হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, চুরি এবং যিনা থেকেও কি মদের অপরাধ আরো মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। কেননা, মদ পানের পর মদখোর ব্যক্তি যিনা করে, চুরি করে এবং এমনকি নামায পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : পৃ. ৪৮৫]

(৩২)মদ এবং নেশা জাতীয় সমস্ত মাদকদ্রব্য হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- الَا أَنَّ كُلَّ مُسْكِرٍ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ حَرَامُ

নিশ্চয়ই নেশা জাতীয় সমস্ত পানীয় বস্তু মুমিনদের সকলের জন্য হারাম। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : ৩৬৮]

(৩৩) তিনি আরো বলেন- كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرُ وَمَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَام নেশা জাতীয় সমস্ত পানীয় বস্তু হারাম। আর যা অধিক পরিমাণ মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তা স্বল্প পরিমাণ পান করাও হারাম। [প্রাগুক্ত]

(৩৪) মদ্যপানে অভ্যস্ত লোকদের শূকর বা বানরে পরিণত হওয়ারও আশংকা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- إِنَّ نَاسًا بَاتُوا فِي شَرَابٍ وَدُفُوفٍ وَغِنَاء فَاصْبَحُوا قِرَدَة একদল লোক মদ, গান-বাজনা এবং নৃত্য-নাচে রাত কাটানোর পর সকালে দেখা গেল যে, তারা সকলেই শূকর ও বানর হয়ে গিয়েছে। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : পৃ. ৪৫৭]

(৩৫) মদখোর ব্যক্তির নিকট মেয়ে বিয়ে দেওয়া মানে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ زَوَّجَ ابْنَتَهُ أَو وَاحِدَةً مِّنْ أَهْلِهِ مِمَّنْ يَشْرَبُ الْخَمْرَ فَكَأَنَّمَا قَادَهَا إِلَى النَّارِ –

যে ব্যক্তি তার কন্যা বা বংশের অন্য কাউকে কোন মদখোর ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিল সে যেন তাকে জাহান্নামে ঠেলে দিল । [প্রাগুক্ত]

(৩৬) মদ পান করলে তার নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী এবং দান খয়রাত কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- مَنْ شَرِبَ الْخَمْرُ حَسْوَةٌ مِّنْ خَمْرٍ لَم يَقَبلِ اللهُ مِنْهُ ثُلُثَةَ أَيَّامٍ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا وَمَنْ شَرِبَ كَأْسًا لَم يُقْبَلِ اللَّهُ مِنْهُ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَمُدْمِنَ الْخَمْرِ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ نَهْرِ الْخَبَالِ، قِيلَ: يَارَسُوْلُ اللَّهِ! وَمَا نَهْرُ الْخَبَالِ؟ قَالَ صَدِيدُ أَهْلِ النَّارِ –

কেউ যদি মুখ ভরে মদ পান করে তবে তিন দিন পর্যন্ত তার নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী এবং দান- খয়রাত কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আর কেউ যদি পেয়ালা ভরে মদ পান করে তবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী এবং দান- খয়রাত কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের পুঁজ সেবন করাবেন। (কানজুল উম্মাল, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৫৯

**(৩৭)**মদ পান করলে ব্যক্তি নাপাক হয়ে যায়। হাদীসে আছে- مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ كَانَ نَجِسًا أَرْبَعِينَ يَوْمًا فَإِنْ تَابَ مِنْهَا تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ عَادَ نَجِسًا أَرْبَعِينَ يَوْمًا فَإِنْ تَابَ مِنْهَا تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَإِنْ رَبَّعَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْسَقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ

কেউ মদ পান করলে সে নাপাক হয়ে যাবে এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত নাপাক রয়ে যাবে। সে এর থেকে তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নিবেন। কিন্তু পুনরায় তা পান করলে সে পুনরায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত নাপাক রয়ে যাবে। আবার তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নিবেন। চতুর্থবার পান করলে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামীদের পুঁজ পান করাবেন । [প্রাগুক্ত]

(৩৮) তিন ব্যক্তির উপর জান্নাত হারাম। তাদের মধ্যে মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি অন্যতম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ثَلَاثَةٌ لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ – مُدْ مِنْ الْخَمْرِ وَقَاطِعُ الرّحمِ وَمُصَدِّقُ بِالسِّحْرِ –

তিন ব্যক্তি জান্নাতে দাখিল হতে পারবে না। ১. মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। ২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি। ৩. আর যে ব্যক্তি যাদুকরের কথায় বিশ্বাস করে। [মিশকাত শরীফ : পৃ. ৩১৮]

(৩৯) তিনি আরো ইরশাদ করেন- ثَلُثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ – مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقِ وَالدَّيُوثِ الَّذِى يَقَرُفِى أَهْلِهِ الْخُبُثَ .

তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ তাআলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। ১. মদখোর ব্যক্তি। ২. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান। ৩. আর দায়ূস- যে তার পরিবারে যিনা জাতীয় পাপকর্মকে জারী রাখে। [মিশকাত শরীফ : ৩১৮]

(৪০) অপর এক হাদীসে আছে- قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى بَعَثْنِي رَحْمَةً لِّلْعَلَمِينَ وَهُدًى لِّلْعَلَمِينَ، وَأَمَرَنِي رَبِّي عَزَّوَجَلَّ بِمُحْقِ الْمَعَازِفِ وَالْمَزَامِيْرِ وَالْأَوْثَانِ وَالصَّلْبِ وَامْرُ الْجَاهِلِيَّةِ، وَحَلَفَ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ بِعِزَّتِي لَا يَشْرَبُ عَبْدُ مَنْ عَبِيدِى جُرْعَةً مِّنْ خَمْرٍ إِلَّا سَقَيْتُهُ مِنَ الصَّدِيدِ مِثْلَهَا وَلا يَتْرُكُهَا مِنْ مَخَافِتِى إِلَّا سَقَيْتُهُ مِنْ حِيَاضِ الْقُدْسِ –

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ এবং জগতসমূহের জন্য পথ প্রদর্শক করে পাঠিয়েছেন। আমার প্রতিপালক আমাকে বাদ্যযন্ত্র, প্রতিমা, খৃষ্টানদের ক্রুশ এবং জাহিলী যুগের রসূমসমূহ মিটানোর জন্য হুকুম করেছেন। আর আমার প্রতিপালক কসম করে বলেছেন, আমার কোন বান্দা যদি এক গ্লাস মদ পান করে তবে আমি তাকে অনুরূপ পরিমাণ পুঁজ পান করাব। আর যে ব্যক্তি আমার ভয়ে মদ পান বর্জন করবে আমি তাকে পবিত্র হাউয থেকে শরবত পান করাব। [মিশকাত শরীফ : পৃ. ৩১৮]

(৪১) মদপানকারী ব্যক্তির উপর দণ্ডাদেশ জারী করা হবে। হাদীসে আছে- أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ الْخَمْرَ ، فَضَرَبَهُ بِجِرِيدَ تَيْنِ نَحُوا مِنْ ارْبَعِينَ ثُمَّ صَنَعَ ابُو بَكْر ذَلِكَ، عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ عَوْفٍ أَخَفُ الْحُدُودِ ثَمَانُونَ قَفَعَاذَلِكَ –

এক মদখোর ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে আসার পর তিনি দুটি ডাল নিয়ে তাকে চল্লিশটার মত বেত লাগালেন।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তিরোধানের পর আবু বকর সিদ্দীক (রা.)ও অনুরূপ বিধান জারী রাখলেন। এরপর হযরত উমর (রা.) তার খেলাফতকালে সাহাবীগণকে ডেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। তখন আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা.) বললেন, সর্বাধিক লঘু দণ্ড হল আশিটি বেত মারা। উমর (রা.) এর উপরই আমল জারী রাখলেন। [কানযুল উম্মাল : ৫ম খণ্ড : পৃ. ৪৮৬]

(৪২) অপর এক হাদীসে আছে- لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَارِقٌ وَلَا قِمَّارٌ وَ لَا مَنَّانٌ وَلَا مُدْمِن خَمْرٍ

মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ারী, যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে বারবার বলে এবং মদখোর ব্যক্তি জান্নাতে দাখিল হবে না । [মিশকাত : পৃ. ৩১৮]

(৪৩) হযরত মু’আয (রা.) থেকে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- أَوْصَا نِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَشْرِ كَلِمَاتٍ قَالَ: لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتُ ، وَلَا تَعِقْنَ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ اَهْلِكَ وَمَالِكَ وَلَا تَتْرُكْنَ صَلَاةٌ مَّكْتُو بَة مُتَعَمِّدًا فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلوةٌ مَّكْتُو بَةً مُتَعَمِّدًا. رِنَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ، وَلَا تَشْرَبْنَ خَمْرًا فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلَّ فَاحِشَةٍ، وَإِيَّاكَ وَالْمَعْصِيَةَ فَإِنَّ بِالْمَعْصِيَةِ حَلَّ سَخَطُ اللَّهِ، وَإِيَّاكَ وَالْفِرَارَ مِنَ الزَّحْفِ وَإِنْ هَلَكَ لنَّاسُ وَإِذَا اَصَابَ النَّاسُ مَوْتَ وَأَنْتَ فِيْهِمْ فَاثْبُتْ، وَأَنْفِقْ عَلَى عِيَالِكَ مِنْ طَوْلِكَ وَلَا تَرْفَعْ عَنْهُمْ عَصَاكَ ادَبا وَاخِفَهُمْ فِي اللَّهِ –

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দশটি বিষয়ে হুকুম করেছেন। ১. আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় এবং জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ২. মাতা-পিতার নাফরমানী করবে না। যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার এবং ধন-সম্পদ ত্যাগ করার হুকুম করে। ৩. ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ফরয নামায তরক করবে না। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায তরক করল সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে গেল। ৪. তোমরা কখনো মদ পান করবে না। কেননা, এ হচ্ছে সমস্ত অশ্লীলতার মূল। ৫. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা, গুনাহের কারণে আল্লাহ তাআলা নারাজ হন। ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে কখনো পলায়ন করবে না, যদিও সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়। ৭. যদি কোথাও ব্যাপক মৃত্যু তথা মহামারী দেখা দেয় আর তুমি সেখানে থাক তবে স্থানেই অবস্থান করবে (অন্যত্র যাবে না)। ৮. নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য সাধ্যানুসারে ব্যয় করবে। ৯. আদব শিক্ষা দেওয়ার নিমিত্তে শাসনের দণ্ড তাদের থেকে উঠিয়ে নিও না। ১০. আর আল্লাহর ব্যাপারে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করবে। [মিশকাত শরীফ : পৃ. ১৮

ইজমার আলোকে মদ

মদ হারাম হওয়ার বিষয়টি যেমন কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অনুরূপভাবে এ বিষয়টি ইজমা দ্বারাও প্রমাণিত। কাজেই এ কথা বলা যায় যে, মদ হারাম হওয়ার বিষয়টি অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং মদ পান করাকে হালাল জ্ঞান করা কুফরী ও পান করা ফিস্ক এবং মদপানকারীর উপর দণ্ডাদেশ জারী করা হবে। মদ অল্প-বেশি সবই হারাম। বেশি পান করলে যা হুকুম অল্প পান করলেও ঐ হুকুম প্রযোজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- حُرِّمَتِ الْخَمْرُ لِعَيْنِهَا قَلِيلُها وَكَثِيرُهَا وَالْمُسْكِرُ مِنْ كُلِّ شَرَابٍ۔ মদ অল্প-বেশি সবই হারাম এবং নেশা জাতীয় পানীয় বস্তু হারাম। স্মর্তব্য যে, মদ স্বল্প পরিমাণ পান করাও অধিক পান করার সমান। অর্থাৎ উভয় অবস্থাতেই মানুষ আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যায়। অধিকন্তু স্বল্প পরিমাণ মদ পান করা অধিক পরিমাণ পান করতে মানুষকে বাধ্য করে। জ্ঞানী লোকেরা বলেন, যাবতীয় পানীয় ও খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে এ কথা স্বীকৃত যে, পানাহারের প্রাথমিক অবস্থায় শেষ অবস্থার তুলনায় অধিক স্বাদ অনুভূত হয় কিন্তু মদের বিষয়টি এর থেকে ব্যতিক্রম ৷ [মাউসূ’আতুল ফিক্‌হ আল ইসলামী : ১২তম খণ্ড : পৃ. ৯]

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *