জুয়া হারাম : রহস্য ও তাৎপর্য
জুয়া হারাম ঘোষণার পেছনে বহু রহস্য নিহিত রয়েছে।
১. অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা যে বিধান দিয়েছেন তার অনুসরণ, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত কর্তব্য। এ কারণেই জুয়াকে তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- إنَّ اللَّهَ طَيِّبُ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا আল্লাহ তাআলা পাক-পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিসই কবুল করে থাকেন।
২. ইসলাম এক মুসলমানের জন্য অপর ব্যক্তির মালামাল গ্রাস করাকে হারাম করে দিয়েছে। সুতরাং অন্যের মাল তার কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে কেবলমাত্র শরীয়তসম্মত বিনিময়ের মাধ্যমে অথবা সে যদি নিজের খুশিতে তা দান করে দেয় অথবা হিবা-উপহার দেয়, তবেই তা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অন্য যে কোন উপায়ে তা নেওয়া হারাম। এ দৃষ্টিতে বলা যায় যে, জুয়া হচ্ছে পরের ধন আহরণের বাতিল ও হারাম পদ্ধতি।
৩. জুয়া খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে গভীর শত্রুতা ও প্রতিহিংসার সৃষ্টি করে। মুখের কথায় ও বাহ্যত মনে হবে, তারা পরস্পরের প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন। কিন্তু আসলে তাদের মধ্যে পরাজিত-বিজয়ীর দ্বন্দ্ব এবং হিংসার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে প্রতি মুহূর্তে। পরাজিত ব্যক্তি চুপ করে থাকলেও ক্রোধ, আক্রোশ ও ব্যর্থতার প্রতিহিংসায় সে জ্বলতেই থাকে প্রতিনিয়ত। এ হিংসা-প্রতিহিংসা মারামারি এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে হত্যা পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়।
৪. খেলায় বাজি হেরে গেলে পরাজিত ব্যক্তি আবার খেলতে শুরু করে। তখন সে আশা করতে থাকে যে, সে যা হারিয়েছে তা তো পাবেই। এই ধ্যানেই সে মশগুল থাকে। অপরদিকে বিজয়ী ব্যক্তির জিহ্বায় লোভ লেগে যায়, তার মুখে পানি টসটস করতে থাকে। এজন্য সে বারবার খেলতে বাধ্য হয়। আরো বেশি অর্থ লুণ্ঠনের লোভ তাকে অন্ধ ও অপরিণামদর্শী বানিয়ে দেয়। খেলার ধারাবাহিকতা এরূপেই অবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে যে, পরাজিত বা বিজয়ী কেউই খেলা ছাড়তে প্রস্তুত থাকে না। এমনি করে তাদের নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী এবং পরিবার সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়।
৫. জুয়া খেলার নেশা যেমনিভাবে ব্যক্তির জন্য বিপদ ডেকে আনে তেমনি সমাজেও কঠিন বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। এ নেশা মানুষের শুধু ধন-সম্পদই হরণ করে না; বরং তার জীবনটাকেও বরবাদ করে দেয়।
৬. এ খেলা খেলোয়াড়দেরকে সম্পূর্ণ অকর্মণ্য বানিয়ে দেয়। তারা জীবনে অনেক কিছুই গ্রহণ করে কিন্তু জীবনকে দেয় না কিছুই। তারা ভোগ করে কিন্তু উৎপাদন করে না। জুয়ারী জুয়া খেলায় এতই মত্ত হয়ে যায় যে, এর ফলে সে নিজস্ব দায়িত্ব কর্তব্যের কথা ভুলে যায়। এমনকি তার প্রতি আল্লাহর আরোপিত কর্তব্য পালনও তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তার নিজের পরিবার, সমাজ ও জনগণের কথা স্মরণে রাখা তার পক্ষে সম্ভব হয় ধরনের লোক স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে নিজের দীন, ধর্ম, দেশকে বিক্রয় করে দিতেও কুণ্ঠিত হয় না কখনো। কেননা, জুয়ার আকর্ষণ তার নিকট এতই বেশি যে, এর সামনে অন্য কোন আকর্ষণ মুহূর্তের জন্যও টিকে থাকতে পারে না। উপরোক্ত কারণ এবং রহস্যের প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা মদ এবং জুয়াকে যুগপৎভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। কেননা, জুয়ার নেশা এবং এর ক্ষতি মদের নেশা এবং মদের ক্ষতি থেকেও মারাত্মক। উপরন্তু যেখানে এর একটি উপস্থিত সেখানে অপরটির উপস্থিতি অবধারিত। [আল হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম : পৃ. ২৯৬-২৯৭ ]