নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিঈদের যুগে গান বাজনা
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াত লাভের পূর্বে এবং অব্যবহিত পরেও আরবে গান বাজনার প্রচলন ছিলো। কিন্তু যাঁরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে গান বাজনার তেমন চর্চা দৃষ্ট হয় না। আল কুরআনের ভাব ও ভাষা, ছন্দের দ্যোতনা, প্রাঞ্জল বর্ণনা, বিষয়বস্তুর অনির্বচনীয় সম্মোহনী শক্তি তাদের মন মানসিকতা থেকে গান বাজনার নেশা-ই যেন দূর করে দিয়েছিলো।
দ্বিতীয়তঃ গান বাজনা সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নেতিবাচক উক্তির কারণে তাঁরা গান বাজনা এড়িয়ে চলতেন। পুরো জাযিরাতুল আরব ইসলামের অধিনস্থ হওয়ার পরে ভালো (শির্ক ও অশ্লীলতামুক্ত) কবিতা চর্চা অব্যাহত ছিলো। সেই কবিতা এবং বিভিন্ন যুদ্ধের ওপর রচিত কাব্যগাথা নিয়ে শিশু কিশোররা ছড়াগান গাইতো। দাসী বাঁদীরাও বিয়ে এবং ঈদের অনুষ্ঠানে গান গাইতো। তবে তা ছিল শির্ক মুক্ত ও শালীন কথা সম্বলিত গান। তা এতো সীমিত পর্যায়ে ছিলো যে, মুহাজিরদের মধ্যে গানের চর্চা ছিলো না বললেই চলে, যা কিছু ছিলো তা কেবল আনসারদের মধ্যেই।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতের পর সাহাবা কিরামের যুগেও গান বাজনার প্রসার ঘটেনি। আবু বাকর (রা)-এর শাসনামলও নবীযুগের অনুরূপ ছিল। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) খালিফা নির্বাচিত হওয়ার পর রাতে মদীনার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতেন। যদি কোথাও গান কিংবা দফ (খঞ্জরী) এর আওয়াজ শুনতে পেতেন, লোকদের জিজ্ঞেস করতেন সেখানে কী হচ্ছে? যদি বলা হতো বিয়ে কিংবা খাতনার অনুষ্ঠান হচ্ছে তখন তিনি চুপ থাকতেন। আর যদি অন্য কোনো অনুষ্ঠানের কথা বলা হতো তাহলে তিনি চাবুক দিয়ে শাস্তি দিতেন উমার (রা)-এর পর উসমান (রা) খালিফা নির্বাচিত হন। তাঁর সময়েও গান বাজনার ব্যাপক প্রচলন হয়নি। অথচ তিনি মনে করতেন, গানের সাথে যদি হারাম কিছুর মিশ্রণ না ঘটে তাহলে সেই গান শোনা জায়েয। আলী (রা) বলতেন, সবচেয়ে খারাপ ঘর সেইটি যা গানের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে যায় ৷
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) গানের প্রতিটি বাক্যকেই মাকরূহ মনে করতেন। অর্থাৎ অপছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন এতে মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর কিছু নেই। বরং মুসলিমগণ এতে মত্ত হয়ে তার চেয়ে প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জিনিস থেকে অমনোযোগী হয়ে যায় । তিনি বলতেন- الغناء ينبت النفاق في القلب كما ينبت الماء البقل -‘গান অন্তরে নিফাক (মুনাফেকী) এর সৃষ্টি করে, যেভাবে পানি ফসলের উৎপাদন করে।
অবশ্য তিনি বিয়ে কিংবা ওয়ালিমা (বিবাহ ভোজ) এর অনুষ্ঠানে গানের অনুমতি দিতেন। ইবনু মাসউদ (রা) একবার এমন ওয়ালিমার অনুষ্ঠানে গেলেন যেখানে গান হচ্ছিলো, তিনি সেখানে গিয়ে বসে পড়লেন, কিন্তু গান থামাতে বললেন না।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবা কিরাম (রা)-এর যুগের পর তাবিঈদের যুগেও গান বাজনা ব্যাপকতা লাভ করেনি। সাধারণ মুসলিমগণ যাদের অনুসরণীয় মনে করতেন সেই নেতৃস্থানীয় তাবিঈদের অভিমত থেকে ও আমাদের কাছে সেই সমাজের চিত্র পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এক ব্যক্তি কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহ)কে গান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, “তোমার জন্য তা শোভনীয় নয়, আমি তোমাকে গান থেকে নিষেধ করছি।’ প্রশ্নকারী বললেন, ‘তাহলে কি গান হারাম?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘ভাতিজা, তুমিই দেখ যখন আল্লাহ্হ ক ও বাতিলের পার্থক্য করে দিয়েছেন তখন তুমি গানকে কোথায় স্থান দেবে?
প্রখ্যাত তাবিঈ শা’বী (রহ) যারা গান শুনে এবং যারা গান গায় তাদের প্রত্যেককে অভিসম্পাত দিতেন। বলতেন- গায়ক, গায়িকা এবং শ্রোতা সবাইকে লা’নত ৷ (তাবিঈ) ফুদাইল ইবনু আয়াদ (রহ) বলেছেন-الغناء مفسدة للقلب مسخطة للر ‘গান প্রতিপালকের ক্রোধ ও অন্তরের বিপর্যয়ের কারণ । দাহ্হাক (রহ) বলেছেন- الغناء رقية الزنا – ‘গান ব্যভিচারের মন্ত্র।