গান বৈধ হওয়ার শর্তাবলী
কা’ব ইবনু মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করেছিলেন— يا رسول الله ماذا ترى فى الشعر فقال ان المؤمن يحارب بسيفه ولسانه ـ
‘হে আল্লাহর রাসূল! কবিতা আবৃত্তির ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন— ‘অবশ্যই একজন মুমিন তরবারী ও কথার দ্বারা জিহাদ করে।
কিন্তু গানের ব্যাপারে এইরূপ সাধারণ অনুমোদনমূলক কোনো উক্তি আমরা আল হাদীসে পাই না। তবে বিয়ে-শাদী ও ঈদ উপলক্ষে দফ বাাজিয়ে গান গাওয়াকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমোদন দিয়েছেন।
উপরে উল্লেখিত হাদীসটি একটি মূলনীতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর তাৎপর্য হচ্ছে- মুসলিমগণ প্রয়োজনে দীন ও ঈমানের স্বার্থে যেমন অস্ত্র দিয়ে জিহাদ করে তেমনিভাবে প্রয়োজনে কবিতা রচনা করে শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে। গানের বিষয়টি অনুরূপ বলে কেউ কেউ মনে করেন।
ইমাম আল গাযালী গান অবৈধ হওয়ার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন ।
কারণগুলো নিম্নরূপ- العارض الأول : أن يكون المسمع امرأة لا يحل النظر إليها وتخشى الفتنة من سماعها، وفي معناها الصبى الأمرد الذي تخشى فتنة ــ
العارض الثاني : الآلة بأن تكون من شعار أهل الشرب أو المخنثين، وهى المزامير والأوتار وطبل الكوبة، فهذه ثلاثة أنواع ممنوعة، وما عدا ذلك يبقى على أصل الإباحة كالدف وإن كان فيه الجلاجل ـ
العارض الثالث : في نظم الصوت وهو الشعر، فإن كان فيه شئ من الغناء الفحشى والهجو أو ما هو كذب على الله وعلى رسوله أو على الصحابة رضی الله عنهم كما رتبه الروافض في هجاء الصحابة وغيرهم، فسماع ذلك حرام بإلحان وغير الحان والمستمع شريك للقائل، وكذلك ما فيه وصف امرأة بعينها ـ
العارض الرابع : فى المستمع وهو أن تكون الشهوة غالبة عليه، وكان في غرة الشباب، وكانت هذه الصفة أغلب عليه من غيرها، فالسماع حرام عليه سواء غلب على قلبه حب شخص معين أو لم يغلب؛ فإنه كيفما كان فلا يسمع وصف الصدغ والخد والوصال إلا ويحرك ذلك شهوته ويتزله على صورة معينة ينفخ الشيطان بها فى قلبه فتشتعل منه نار الشيطان –
والعارض الخامس : أن يكون الشخص من عوام الخلق، ولم يغلب عليه حب الله تعالى فيكون السماع له محبوبا ولو غلبت عليه شهوة فيكون في حقه محظورا، ولكنه أبيح فى حقه كسائر أنواع اللذات المباحة؛ إلا أنه إذا اتخذه ديدته وهجيراه وقصر عليه أكثر أوقاته فهذا هو السفيه الذي تردشهادته)
১. গায়ক-গায়িকা সংক্রান্ত : গায়িকা এমন (গাইরি মুহাররাম) মহিলা হওয়া যাকে দেখা বৈধ নয় এবং যার গানে ফিতনার আশংকা থাকে। গোঁফ দাড়ি ওঠেনি এমন কিশোর বালকের বিধানও তাই। কারণ তার গানেও ফিতনার আশংকা থাকে।
২. বাদ্যযন্ত্র সংক্রান্ত ঃ অর্থাৎ গানে এমন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যা রাখা মদ্যপায়ী কিংবা হিজড়াদের বৈশিষ্ট্য। যেমন বাঁশি, তারের বাদ্যযন্ত্র এবং ঢোল-তবলা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। এই তিন প্রকার (বাদ্যযন্ত্র) নিষিদ্ধ। এ ছাড়া অবশিষ্টগুলো বৈধ। যেমন দফ-ঝুনঝুনি বিশিষ্ট হলেও।
৩. কবিতার সুরের ব্যাপারে ঃ অর্থাৎ যদি এতে অশ্লীল গান, বাজে ও বিদ্রূপাত্মক এবং আল্লাহ্, রাসূল ও সাহাবা কিরামের ব্যাপারে অসত্য বিষয়বস্তু সম্বলিত হয়। রাফেযী সম্প্রদায়ের লোকেরা সাহাবা কিরাম ও অন্যদের কুৎসা করতে এধরনের কবিতা রচনা করে থাকে। এই ধরনের কবিতা সুর কিংবা সুর ব্যতীত শোনা হারাম। শ্রোতা ও গায়ক উভয়ই সমান। অনুরূপভাবে সেই গানও হারাম যাতে মহিলাদের রূপ যৌবনের বর্ণনা থাকে।
৪. শ্রোতা সংক্রান্ত ব্যাপার : অর্থাৎ শ্রোতার মধ্যে যৌবনের উন্মত্ততা থাকা। তার মধ্যে এ স্বভাব অন্য স্বভাবের চেয়ে বেশি থাকা। (এরূপ ব্যক্তির জন্য গান শোনা হারাম)। তার অন্তরে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য প্রেম ভালোবাসার প্রাবল্য হোক চাই না হোক। কারণ সে যখনই কেশগুচ্ছ, অবয়ব, বিরহ মিলনের বর্ণনা শুনবে তখনই তার যৌনাকাঙ্ক্ষা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবে। শয়তান ভেতরে (কল্পনায়) কামনার আগুন প্রজ্জলিত করে দেবে।
৫. শ্রোতা সাধারণ মানের হওয়া ঃ তার মধ্যে আল্লাহ্র ভালোবাসা এত প্রবল নয় যে, সামা (গান) তার কাছে প্রিয় মনে হবে। এবং তার মধ্যে যৌন উদ্দীপনাও এত প্রবল নয় যে, গান তার জন্য নিষিদ্ধ হবে। এসব লোকের জন্য সামা” অন্যান্য বৈধ জিনিসের মতোই। কিন্তু সে যদি সামা’কে অভ্যাসে পরিণত করে নেয় এবং অধিকাংশ সময় এতেই ব্যয় করে তবে সে নির্বোধ। তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
আহকামুল কুরআনে গান বাজনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর উপসংহার স্বরূপ বলা হয়েছে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ পাওয়া গেলে গান সর্বসম্মতিক্রমে হারাম ।
১ . পার্থিব কিংবা দীনি প্রয়োজন ছাড়া কেবল (সময় অপচয়কারী) বিনোদনের জন্য বাঁশি অথবা অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান। তা নিজে নিজেই গাওয়া হোক কিংবা অপরকে শুনানোর জন্য।
২. বাঁশী বা অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে বিনোদন লাভের জন্য সুর তোলা। সাথে গান গাওয়া হোক বা না হোক ৷
৩. গান বাজনাসহ ক্রীড়া কৌতুকে এমনভাবে নিবিষ্ট হয়ে যাওয়া যাতে ওয়াজিব (অপরিহার্য কাজকর্ম) বাদ পড়ে যায় ৷
৪. গান বাজনাকে পেশা হিসেবে নেয়া কিংবা বাদ্যযন্ত্র তৈরি বা গান লেখাকে পেশা হিসেবে নেয়া। কোনো মুসলিমের জন্য এ চারটি কাজ বৈধ নয়। এর বৈধতার কোনো প্রমাণ আল্লাহর কিতাব, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহ্, সাহাবা কিরামের আমলী জিন্দেগীতে নেই। এমনকি তাবিঈন এবং সম্মানিত ইমামদের কার্যকলাপেও এসবের কোনো প্রমাণ নেই।
তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলো ছাড়া নিম্নোক্ত কারণে গান গাওয়া হলে তা মুবাহ্ (পাপ পুণ্য কোনোটিই নয়) হিসেবে গণ্য হবে। এ সম্পর্কে সকল ইমাম একমত ।
১. নিজে আনন্দ লাভের জন্য গুনগুনিয়ে গান গাওয়া। ২. নির্জনতায় একাকীত্ব কাটানোর জন্য গান গাওয়া । ৩. সফরের ক্লান্তি কিংবা ভারী বোঝা বহনের কষ্ট দূরকল্পে গান গাওয়া ৷ ৪. শিশুদের মনোতুষ্টির জন্য গান গাওয়া । ৫. উট চালনার জন্য হুদী গান গাওয়া । ৬. ছন্দ শেখা কিংবা শেখানোর জন্য গান গাওয়া । ৭. অবসাদ দূর করার জন্য নিজে নিজে গান গাওয়া ৷ তবে শর্ত হচ্ছে গানের কথা অশ্লীল (বা শির্ক যুক্ত) হতে পারবে না। একে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না। কোনো সময়কে নির্দিষ্ট করা যাবে না। এবং একে বিনোদনের (একমাত্র) মাধ্যম বানিয়ে নেয়া যাবে না । বাদ্য যন্ত্র থাকবে না। দ’ফ এর ব্যতিক্রম ।
এসব নীতিমালার আলোকে আমরা বলতে পারি এমন গান রয়েছে যা বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গাওয়া হলে কিংবা শুনলে কোনো দোষ নেই ৷
“ইসলামী গান’
‘ইসলামী গান’, ‘ইসলামী সংগীত’, ‘গজল’ ‘হামদ’ (আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসামূলক গান) এবং ‘নাত’ [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসামূল গান] এগুলো শরঈ পরিভাষা নয়। নবী যুগে কিংবা সাহাবী যুগে বা তাবিঈ যুগে এই পরিভাষাগুলো ছিলো না। পরবর্তীতে এসব পরিভাষা সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘হামদ’, ‘না‘ত’ ও ‘ইসলামী গান’ এ তিনটি পরিভাষা আধুনিক আলিম সমাজের কাছে পছন্দনীয় ও সমাদৃত হয়েছে। ইসলামী গান বলতে ইসলাম নিষেধ করে না এরূপ গানকেই বুঝানো হয় ৷
উল্লেখ্য যেসব গান ইসলামী গান বলে প্রচলিত সেসবের মধ্যেও বেশ কিছু গান রয়েছে ইসলাম যেগুলোকে অনুমোদন দেয় না। সেসব গান হয় তাওহিদী চিন্তাচেতনার পরিপন্থী, না হয় ইসলামী মূল্যবোধের বিপরীত। যেমন- একটি গানে বলা হয়েছে, ‘ফুল ফোটে হেসে বলে ইয়া রাসূলাল্লাহ’ একথা ইসলামী আকীদার পরিপন্থী। কারণ আল কুরআনে বলা হয়েছে আসমান জমিনে যা কিছু আছে সবই মহান আল্লাহর তাসবীহ্ পাঠ করছে। অথচ গানে বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তাসবীহ্ পাঠের কথা।
তেমনিভাবে অন্য গানে বলা হয়েছে— ‘নবী নাম জপে যেজন সেইতো দোজাহানের ধনী’ এখানেও সেই একই ধরনের কথা। নবীর নাম জপের কথা বলা হয়নি, আল কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আল্লাহর নাম জপ করতে এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করতে। দরূদ পাঠ করা আর নাম জপ করা এক কথা নয়। বিভিন্ন আস্তানায় যেসব ভক্তিমূলক গান গাওয়া হয় তার একটিও ইসলাম সম্মত গান নয়। যদিও তারা এসব গানের নামকরণ করেছে— মুর্শিদী; মারফতী, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদী ইত্যাদি। তারা মনে করে এগুলো আরবীতে ‘সামা’ নামে যে গানের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেসবের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ‘সামা’ এর সাথে এ সবের দূরতম সম্পর্কও নেই। তাছাড়া সামা ও নিশর্তভাবে বৈধ নয়। এগুলো শির্ক, বিদআত ও অশ্লীলতায় ভরপুর।
গানে মত্ত ব্যক্তির অবস্থা
গানে মত্ত ব্যক্তির অবস্থা কেমন হয়, সে সম্পর্কে মোবারক হোসেন খান বলেছেন— ‘সুর সাধক একবার সাধনায় নিমগ্ন হলে পার্থিব দুনিয়ার সবকিছু বেমালুম ভুলে যায়। তখন তার একমাত্র লক্ষ্য হয় সুরের সন্ধান লাভ করা। সুর নামক অধরাকে ধরবার জন্যে সে আপন সুখ-দুঃখের কথা বিস্মিত হয়। পরিবার পরিজনদের কথা তার মনের কোণে ঠাঁই পায় না। সে তখন সম্পূর্ণ এক নতুন পৃথিবীর মানুষে পরিণত হয়। যে পৃথিবীতে সুর ছাড়া আর কিছু নেই।
তাই যে কাজ মানুষকে তার কর্তব্যকর্ম ভুলিয়ে দেয় আখিরাত সম্পর্কে উদাসীন করে তোলে, এমন কোনো কাজ মুসলিমের জন্য বৈধ হতে পারে না।
গান বাজনা সম্পর্কে ইমাম আমর ইবনু হাযম (রহ)-এর অভিমত : একটি পর্যালোচনা
স্পেনের অধিবাসী ইমাম আমর ইবনু হাযম ছিলেন যাহেরী মাযহাব এর একজন ফকীহ্ মুহাদ্দিস (মৃ. ৪৫৬ হিজরী)। যাহেরী মাযহাব এর দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে রচিত তাঁর আল মুহাল্লা গ্রন্থটি বেশ প্রসিদ্ধ। তাঁর অনেক অভিমত প্ৰসিদ্ধ চার মাযহাব (অর্থাৎ হাম্বলী, মালিকী, শাফেয়ী ও হানাফী) এর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যশীল। আবার কিছু কিছু অভিমত এমনও রয়েছে যা প্রসিদ্ধ চার মাযহাব এর দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত। যেমন— চার মাযহাব এর বক্তব্য হচ্ছে, ব্যভিচারের সাক্ষী চারজন পুরুষ হতে হবে। এক্ষেত্রে মহিলাদের সাক্ষ্য গ্রহণ যোগ্য নয়।
অথচ আমর ইবনু হাযম (রহ)-এর মতে- ‘ব্যভিচারের সাক্ষ্যের ব্যাপারে দুজন মুসলিম নারী একজন পুরুষের সমান বলে বিবেচিত হবেন। যেমন- তিনজন পুরুষ ও দুজন মহিলা অথবা দুজন পুরুষ ও চারজন মহিলা অথবা একজন পুরুষ ও ছ’জন মহিলা কিংবা আটজন মহিলা যাদের সাথে পুরুষ সাক্ষী থাকবে না। তিনি বিয়ের জন্য কনে দেখার ব্যাপারেও এমন অবস্থান নিয়েছেন যা প্রসিদ্ধ অন্যান্য মাযহাবের বিপরীত। তিনি মনে করেন- يباح له النظر الى بدها ما ظهر منه وما بطن الا الفرج والدبر ـ (বিয়ের উদ্দেশ্যে কনে দেখতে গেলে) কনের প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সবকিছুই সে (হবু বর) দেখতে পারে কেবল লজ্জাস্থান ও নিতম্ব ছাড়া। অবশ্য অন্যান্য সকল মাযহাবের ইমাম ও আলিমগণের মতে কেবল সতরের বাইরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখা যেতে পারে। যেমন- মুখমণ্ডল, হাত, পা ইত্যাদি।
ইমাম আবু হানিফা (রহ) ইমাম মালিক (রহ), ইমাম শাফেয়ী (রহ) ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহ) সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ আলিমদের মতে মহিলাদের মাসজিদে যাওয়া জায়িয তবে ঘরে নামায পড়া উত্তম। তাঁদের এই মতের পক্ষে বেশ কিছু হাদীস উল্লেখ করা হয়। ইমাম ইবনু হাযম এই ক্ষেত্রেও ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁর মতে মহিলাদের মাসজিদে যাওয়া উত্তম।
গান বাজনা সম্পর্কেও তাঁর অভিমত প্রসিদ্ধ চার মাযহাব এর দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত। তিনি মনে করতেন গান বাজনা অবৈধ নয়, বৈধ। তাঁর সুস্পষ্ট অভিমত হচ্ছে- إنه لا يصح في الباب حديث ابدأ وكل ما فيه موضوع ـ
‘গান বাজনা সংক্রান্ত অধ্যায়ের কোনো হাদীসই সহীহ্ নয়। বরং তার প্রত্যেকটি হাদীস-ই জাল (মাওদূ’)। ان حديث ابي عامر او ابى مالك الاشعرى المذكور في اول الباب منقطع –
আবু আমির কিংবা আবু মালিক আল আশআরী বর্ণিত (সহীহ্ আল বুখারী) এই অনুচ্ছেদের প্রথম হাদীসটি মুনকাতি।’
সহীহ্ আল বুখারীর হাদীসটি হচ্ছে- حدثنا عبد الرحمن بن غنم الاشعرى قال حدثنى ابو عامر او ابو مالك الاشعرى والله ما كذبني سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول ليكونن من امتى اقوام يستحلون الحر والحرير والخمر والمعازف ـ
আবদুর রহমান ইবনু গানাম আল আশআরী (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে আবু আমির অথবা আবু মালিক আল আশআরী (এ হাদীসটি) বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম, তিনি আমার কাছে মিথ্যে বলেননি। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে বলতে শুনেছেন- আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু গ্রুপের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মাদকদ্রব্য ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে।
সহীহ আল বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আলআসকালানী (মৃত্যু ৮৫২ খ্রি.) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বলেছেন, والحديث صحيح معروف الاتصال على شرط الصحيح ـ ‘হাদীসটি সহীহ্, প্রসিদ্ধ এবং সহীহ্ আল বুখারীর শর্তানুযায়ী, সনদ অবিচ্ছিন্ন। , ১৬৮ এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (মৃত্যু- ১৭৬২ খ্রি.) বলেছেন, ‘হাদীসটি সহীহ্ এবং মুত্তাসিল’ (সনদ অবিচ্ছিন্ন)।
অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইমাম আত তিরমিযি (রহ) এর সুনান আত তিরিমিযি। তিনি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আলী ইবনু ইয়াযীদ সম্পর্কে বলেছেন, ‘কতিপয় হাদীস বিশারদ তাঁকে দুর্বল বর্ণনাকারী বলেছেন।’ কিন্তু ইমাম আত তিরমিযি তাঁর বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন বলে তিনি তাঁর সুনানে এটি বর্ণনা করেছেন। আলী ইবনু ইয়াযীদ কর্তৃক বর্ণিত অনেক হাদীস ইমাম আদ দারিমীও গ্রহণ করে তাঁর সুনান আদ দারিমীতে বর্ণনা করেছেন।
তাছাড়া আমরা উপরে দেখেছি সাহাবা কিরাম, তাবিঈন এবং প্রসিদ্ধ চার ইমাম তথা ইমাম আবু হানিফা (মৃ-১৫০ হি/৭৬৭ খ্রি.), ইমাম মালিক ইবনু আনাস (মৃ- ১৭৯হি/৭৯৫ খ্রি.), ইমাম শাফিঈ (মৃ-২০৪হি/৮২০ খ্রি.) এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (মৃ-২৪১ হি/৮৫৫খ্রি.) কে গান বাজনার বিপরীতে অবস্থান গ্রহণরত এক্ষেত্রেও ইমাম ইবনু হাযম (রহ)কে আমরা মূল ধারার বিপরীতে অবস্থান রত দেখি। আল কুরআন, আল হাদীস এবং পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন ইমামগণের অভিমতের বিপক্ষে তাঁর মত গ্রহণযোগ্য নয় ।
শেষ কথা
আল কুরআন ও আস্ সুন্নাহ্ (যা আল কুরআনের ভাষ্য বলে পরিচিত) দৃষ্টিভংগি এবং সাহাবা কিরামের আমলী জিন্দেগী, তাবিঈন ও প্রখ্যাত চার ইমাম সহ (দু একজন ছাড়া) প্রায় সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহর অভিমত হচ্ছে প্রচলিত গান বাজনার বিপক্ষে। অবশ্য ইসলামী ভাবধারা ও চিন্তা চেতনা মূলক গান (যদি শির্ক, অশ্লীলতা এবং দফ ছাড়া অন্য সব বাদ্যযন্ত্র থেকে মুক্ত থাকে) ইসলাম নিষিদ্ধ করেনি। এসব গান অবশ্যই প্রচলিত গান বাজনার বিকল্প হতে পারে। তবে সেটিও অবাধ এবং শর্তহীন নয়।