ইসলাম

ইসলামে আমানতের ধারণা

আমরা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়কে অত্যন্ত সীমিত অর্থে গ্রহণ করছি। এই আমানতের কথাই ধরুন ! আমরা মনে করি এর সম্পর্ক কেবল টাকা-পয়সার সাথে। কেউ কিছু টাকা এনে বলল, এটা আপনার কাছে আমানত রাখুন। আমার যখন দরকার হবে আপনার কাছ থেকে নিয়ে নিব। ব্যস এটা আমানত। কেউ যদি এতে খেয়ানত করে, নিজে সে টাকা হজম করে ফেলে বা মালিক এসে যখন তা ফেরত চায় তখন দিতে অস্বীকার করে, তবে সে হয় খেয়ানতকারী। আমানত ও খেয়ানত সম্পর্কে আমাদের ধারণা ব্যস এতটুকুই।

এ ব্যাপারে আমরা এর বেশি কিছু ভাবি না। সন্দেহ নেই এটাও আমানত ও খেয়ানত। কিন্তু কুরআন হাদীছের দৃষ্টিতে আমানত এরই মধ্যে সীমবদ্ধ নয়। বরং এর সীমারেখা অনেক বিস্তৃত। আরও অনেক জিনিসই আমানতের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোকে সাধারণত আমরা আমানতের মধ্যে গণ্য করি না। ফলে সে সব ব্যাপারে আমরা ভয়াবহ রকমের অবহেলা করে থাকি । অথচ সেগুলোও আমানত এবং সেই গুরুত্বের সাথেই সেগুলো দেখা উচিত।

আমানতের অর্থ

‘আরবী ভাষায়’ ‘আমানত’-এর অর্থ কোন বিষয়ে কারও প্রতি নির্ভর করা। সুতরাং যে সব বিষয় কারও প্রতি ন্যস্ত করা হয় এবং সে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবে ও তার হক আদায় করবে বলে ভরসা রাখা হয়, তাই আমানত। কাজেই কারও প্রতি কোন কাজের দায়িত্ব অর্পন করা হলে সেটা তার জন্য আমানত হয়ে যায় । কেননা, দায়িত্ব অর্পনকারী ব্যক্তি সে কাজের দায়িত্ব তাকে এই ভরসায় দিয়েছে যে, সে তা যথাযথভাবে আনজাম দেবে।

এমনিভাবে কোন বস্তু বা টাকা-পয়সা গচ্ছিত রাখা হলেও তা আমানত ৷ যেহেতু তার প্রতি আস্থা রাখা হয়েছে যে, সে তা পুরোপুরি সংরক্ষণ করবে, তাতে কোন ত্রুটি করবে না । এভাবে আমানতের মর্মবস্তুর প্রতি লক্ষ করলে অনেক কিছুই এর আওতায় পড়ে যাবে।

রূহানী জগতের স্বীকারোক্তি

রূহানী জগতে আল্লাহ তা’আলা মানুষের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, বল তো আমি তোমাদের রব্ব কি না ? এবং তোমরা আমার আনুগত্য করবে কি না ? সমস্ত মানুষ স্বীকার করেছিল, আপনিই আমাদের রব্ব এবং আমরা আপনার অনুগত্য করব। সূরা আহযাবের শেষ রুকুতে আল্লাহ তা’আলা এই প্ৰতিশ্ৰুতিকে আমানত শব্দেই ব্যক্ত করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَ حَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا

‘আমি তো আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি আমানত অৰ্পণ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শংকিত হল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল। সে তো অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ।আহযাব ৭২

অর্থাৎ আমি প্রথমে যমীনের সামনে আমানত পেশ করে বললাম, তুমি কি এ আমানতের ভার বহন করবে ? সে তা বহন করতে অস্বীকার করল। তারপর আসমানের সামনে পেশ করে বললাম, তুমি কি এ ভার বহন করবে? সেও তা বহন করতে অস্বীকার করল । তারপর পাহাড়ের সামনে এ আমানত পেশ করলাম । সেও এর ভার বহন করতে রাজি হল না। এভাবে তারা সকলেই এর ভার গ্রহণ করতে ভয় পেল।

পরিশেষে যখন মানুষের সামনে পেশ করলাম, তোমরা কি আমানতের ভার বহন করবে, তখন সে বড় সাহস দেখাল এবং স্বীকার করল, হ্যাঁ আমি এই ভার বহন করব । আল্লাহ তা’আলা বলেন, বস্তুত্ব মানুষ বড় জালেম ও জাহেল এবং সে কারণেই সে এত বড় ভার বওয়ার সাহস দেখাল, চিন্তা করল না যে, আদৌ তা বহন করতে পারবে কি না। আর যদি নাই পারে তবে তার পরিণাম কত অশুভ হতে পারে।

বই : মন্দচরিত্র ও তার সংশোধন

লিখক : জাস্টিজ আল্লামা তাকী উসমানী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *