হযরত মাহ্দী সম্বন্ধে আকীদা
কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশিত বড় বড় আলামতের মধ্য হতে প্রথম আলামত ইমাম মাহ্দী এর আত্মপ্রকাশ। কিয়ামতের ছোট ছোট আলামত প্রকাশিত হওয়ার পর একটা সময় এমন আসবে, যখন কাফেরদের প্রভাব খুব বেশী হবে, চতুর্দিকে নাসারাদের রাজত্ব কায়েম হবে, খায়বারের নিকট পর্যন্ত নাসারাদের আমলদারী হবে। এমন সময় মুসলমানগণ তাদের বাদশা বানানোর জন্য হযরত মাহ্দীকে তালাশ করবেন এবং এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক নেক লোক মক্কায় বায়তুল্লাহ শরীফে তওয়াফরত অবস্থায় হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে তাঁকে চিনতে পারবেন এবং তার হাতে বায়’আত করে তাঁকে খলীফা নিযুক্ত করবেন। এ সময় তাঁর রয়স হবে ৪০ বৎসর। ঐ সময় একটি গায়েবী আওয়াজ আসবে যে, “ইনিই আল্লাহর খলীফা মাহদী। তোমরা তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর।
মাহ্দী শব্দের শাব্দিক অর্থ হেদায়েতপ্রাপ্ত। এ অর্থের দিক থেকে সকল হক্কানী আলেম ও পরহেযগার মুসলমানকেও মাহ্দী বলা যেতে পারে। কিন্তু যে মাহদীর আগমনের কথা রাসূল (সাঃ) বলে গেছেন তিনি হবেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। সেই হযরত মাহ্দীর নাম হবে মুহাম্মাদ। তাঁর পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ। তিনি ফাতেমা (রাঃ)-এর বংশোদ্ভুত সাইয়্যেদ বংশীয় হবেন।
নিম্নোক্ত হাদীছে এ বিষয়গুলি বর্ণিত হয়েছেঃ মদীনা তাঁর জন্ম স্থান হবে। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস হিজরত করবেন। তাঁর দৈহিক গঠন ও আখলাক-চরিত্র রাসূল (সাঃ)-এর অনুরূপ হবে। তিনি নবী হবেন-না, তাঁর উপর ওহীও নাযিল হবে না। মক্কায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে। ইরাক ও সিরিয়ার ওলী-আবদাল তাঁর হাতে বায়’আত হবেন। এবং কাবা ঘরের নীচে যে সম্পদ সঞ্চিত ও রক্ষিত আছে তিনি তা বের করে মুসলমানদের মাঝে বিতরণ করবেন। তিনি মুসলমানদের খলীফা হবেন ৷ প্ৰথমে শুধু আরবের এবং পরবর্তীতে সমগ্র বিশ্বের খলীফা হবেন । সারা দুনিয়ায় ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করবেন। অবশ্য তার পূর্বে দুনিয়া অন্যায়-অবিচারে, যুলুম-নির্যাতনে পিষ্ট হতে থাকবে। মুহাম্মাদী শরী’আত অনুযায়ী তার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। তিনি আধিপত্য বিস্তারকারী নাসারাদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করবেন এবং তাদের দখল থেকে শাম, কনষ্ট্যান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) প্রভৃতি অঞ্চল জয় করবেন। তাঁর যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।
হযরত মাহ্দীর শাসনামলেই একদিন হযরত ঈসা (আঃ) ফজরের নামাযের সময় দামেস্কের এক মসজিদের পূর্ব দিকের মিনারার নিকট আসমান থেকে অবতরণ করবেন। এবং হযরত মাহ্দী (আঃ)-এর পিছনে মুক্তাদি হয়ে নামায আদায় করবেন। হযরত ঈসা (আঃ)-এর আগমনের পর তিনি ইন্তেকাল করবেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত শেষ যামানায় হযরত মাহ্দীর আগমনকে সত্য বলে বিশ্বাস করে এবং এর উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী মনে করে। কারণ, হযরত মাহ্দীর আগমনের বিষয়টি মুতাওয়াতির হাদীছ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। যদিও বা কিছু বিবরণ خبر واحد দ্বারা প্রমাণিত। হযরত মাহদীর আগমনের বার্তা সাহাবা ও তাবেয়ীন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সকল প্রান্তে, সকল যুগে, সর্বস্তরের উলামা, সুলাহা, আম-খাছ মুসলমান বর্ণনা করে আসছেন !
মিথ্যা মাহ্দী দাবীদারদের প্রসঙ্গ :
হাদীছে প্রতিশ্রুত মাহ্দী এর পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্য সবিস্তারে বর্ণিত হওয়া সত্বেও যুগে যুগে অসংখ্য প্রতারক নিজেদেরকে মাহদী দাবী করেছে। কিন্তু হাদীছে বর্ণিত মাহ্দীর একটি আলামতও তাদের মাঝে পাওয়া যায়নি। কোন কোন দাবীদার সে আলামতগুলোর মনগড়া ও কাল্পনিক ব্যাখ্যা করে বাস্তব ও সত্য আলামত ত্যাগ করে কাল্পনিক আলামত নিজের মাঝে ফিট করে দেখিয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার! এ তো সে মাহ্দী নয় যার আলামত বার্তা হাদীছে এসেছে। কারণ, এরূপ মাহ্দী দাবীদারদের মাঝে হাদীছে বর্ণিত আলামত গুলির একটি আলামতও বিদ্যমান নেই; বরং তারা মনগড়া-কাল্পনিক আলামতের আধিকারী স্বঘোষিত মাহ্দী।
এরূপ কাল্পনিক ও মনগড়া আলামত দ্বারা মাহ্দী হওয়ার দাবী যারা করেছে, তাদের মধ্যে একজন হল মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী। সে শুধু মাহ্দী নয় ঈসা হওয়ার দাবীও করেছিল। অতপর নিজের মাঝে ঈসা ও মাহ্দী (আঃ) হওয়ার কোন একটি আলাম- তও দেখাতে না পেরে সে দাবী করে বসল আমি ঈসা এর মত-উপমা। কিন্তু তার এ দাবীটিও সত্য প্রমাণ করতে পারেনি।
যুগে যুগে এরূপ আরও অনেকে মাহ্দী হওয়ার দাবী করেছে কিন্তু হাদীছে বর্ণিত মাহ্দীর একটি আলামতও তাদের মাঝে পাওয়া যায়নি। যার ফলে তারাও ভণ্ড এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারাও বোকা ও বিভ্রান্ত।
তথ্য সূত্রঃ
কিতাবঃ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, তাঁতিবাজার, ঢাকা – ১১০০। মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩৩২, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ১২৩৬