শিরকের পরিণতি কি :
১. ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ :
আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيْمًا
অর্থ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ব্যতীত অন্য সব, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করল, বস্ত্ততঃ সে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করল’ (আন্ নিসা : ৪৮)।
২. জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেয় :
মানুষকে শিরক জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ.
অর্থ ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (আল মায়িদাহ :৭২)।
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِىْ لاَيُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ.অর্থ ‘আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (রাবী বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে থাকে তবুও? তিনি বললেন, যদিও সে যেনা করে এবং চুরি করে থাকে’।
অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ لَقِىَ اللهَ لاَيُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ.
অর্থ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।
৩. পূর্বের আমল সমূহ বিনষ্ট করে দেয় :
আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সৎ কাজগুলোকে বৃদ্ধি করে দেন। কিন্তু শিরক বান্দার ভাল আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ বলেন, وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُوْنَ.
অর্থ ‘যদি তারা শিরক করে তবে তাদের আমল সমূহ নষ্ট হয়ে যাবে’ (আল্ আন‘আম:৮৮)।
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ.
অর্থ ‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর শরীক স্থির কর, তবে তোমার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আয্ যুমার :৬৫)।
৪. সবচেয়ে বড় গুনাহ :
বীরা তথা বড় গুনাহের একটি হ’ল শিরক। একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে
বললেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ اللهِ. قَالَ اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.
অর্থ ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? আমরা বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া’।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَارَسُوْلَ الله وَمَا هُنَّ؟ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِىْ حَرَّمَ اللهُ إِلإَّ بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّىْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاَتِ الْغَافِلاَتِ وَالْمُمْنِاَتِ.
অর্থ ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থেকো। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি কি? তিনি জবাবে বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, যাদু করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন, সূদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, সরলা নির্দোষ সতী-সাধ্বী মুমিনা মহিলাকে অপবাদ দেওয়া’।[সহীহ বুখারী, ইফা: ২৫৭৮]
অন্য হাদীসে রাসূল (স.) বলেন, সবচেয়ে বড় গুনাহ তিনটি (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং (৩) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া’।
৫. জঘন্যতম পাপ :
যেসব কাজ করলে আল্লাহর আনুগত্যের পরিবর্তে পাপ অর্জিত হয় শিরক তার অন্যতম। শিরককে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) জঘন্যতম পাপ বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহর সাথে শিরক করল সে জঘন্য পাপ করল’ (আন্ নিসা :৪৮)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قُلْتُ يَارَسُوْلَ اللهِ أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَجْعَلَ لِلّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ.
‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকট জঘন্যতম পাপ কোনটি? জবাবে তিনি বললেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো (শরীক করা), অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। [ বুখারী, ইফা: ৫৫৭৫]
অতএব খালেছ তাওহীদ বিশ্বাস ও শিরক থেকে বেঁচে থাকা ব্যতীত জান্নাত হাসিল করা সম্ভব নয়। সেকারণে আমাদেরকে আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরক মুক্ত তাওহীদ পন্থী এবং আমলের ক্ষেত্রে বিদ‘আত মুক্ত সুন্নাতপন্থী হ’তে হবে।
একজন মুসলিম বা বিশ্বাসী ব্যক্তি যখন জেনে বা না জেনে শিরক করে ফেলে তখন তা ঈমান ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে। কোনো ভাবে যাতে আল্লাহর ও তাঁর সাথে শরিক হয় এমন কোনো কাজ আমরা না করে ফেলি।
তথ্যসূত্র: