ইসলাম

শিরক থেকে বেঁচে থাকার পুরস্কার

শিরক সর্বোচ্চ গুনাহ, যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করেন না যদি কেউ তাওবা ছাড়া এই অবস্থায় মারা যায়। কিন্তু যে ব্যক্তি শিরক থেকে বেঁচে থাকে এবং একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিবেদিত রাখে, তার জন্য রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার। কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিম্নে এসব পুরস্কারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো।

১. জান্নাতের নিশ্চয়তা

যে ব্যক্তি শিরক থেকে মুক্ত থেকে মৃত্যুবরণ করবে, তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।

কুরআনে আল্লাহ বলেন:“যে কেউ আল্লাহর সাথে শরিক না করে এবং একমাত্র তাঁর ইবাদত করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুরা আন-নিসা: ১২৪)

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরিক না রেখে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৩)

২. গুনাহসমূহ ক্ষমা হয়ে যাবে

শিরক ছাড়া অন্য সব গুনাহ আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করেন। তাই যে ব্যক্তি তাওহিদের উপর অটল থাকে, তার গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

কুরআনে আল্লাহ বলেন:“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরিক করে। আর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, যে তাঁর চেয়ে নিচু অন্য কোনো গুনাহ করে।” (সুরা আন-নিসা: ৪৮)

অর্থাৎ, শিরক থেকে বেঁচে থাকলে ব্যক্তির অন্যান্য ছোট-বড় গুনাহ আল্লাহর ইচ্ছায় ক্ষমা হয়ে যেতে পারে।

৩. দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা

যারা একমাত্র আল্লাহর উপর ঈমান রাখে এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা লাভ করবে।

কুরআনে আল্লাহ বলেন: “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি, তাদের জন্যই রয়েছে নিরাপত্তা এবং তারাই সৎপথে রয়েছে।”(সুরা আল-আনআম: ৮২)

দুনিয়ার নিরাপত্তা: শিরক থেকে বেঁচে থাকলে আল্লাহ তার দুনিয়াবি জীবন সহজ করে দেন, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।

আখিরাতের নিরাপত্তা: কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তি লাভ করবে।

৪. বড় শাফায়াত (সুপারিশ) পাওয়ার অধিকার

কিয়ামতের দিন নবী (ﷺ)-এর বিশেষ শাফায়াত (সুপারিশ) পাওয়ার জন্য শিরকমুক্ত ঈমান থাকা আবশ্যক।

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “আমার শাফায়াত তারাই লাভ করবে যারা অন্তরে একনিষ্ঠভাবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে মৃত্যু বরণ করেছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৭৩)

যে ব্যক্তি শিরক থেকে মুক্ত থাকে, সে এই বড় শাফায়াত পাওয়ার যোগ্য হবে এবং জান্নাতে সহজেই প্রবেশ করবে।

৫. আমলসমূহ কবুল হবে

যে ব্যক্তি শিরক থেকে মুক্ত থাকে, তার আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

কুরআনে আল্লাহ বলেন: “তাদের কাছে (কিয়ামতের দিন) ঘোষণা করা হবে, তোমাদের আমল কবুল হয়েছে, কারণ তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তার সাথে কাউকে শরিক করনি।”

(সুরা আত-তাওবা: ১০৫)

অন্যদিকে, যারা শিরক করে, তাদের আমল আল্লাহ কবুল করেন না। যেমন,

“তোমাদের নিকট যদি শিরক থাকে, তাহলে তোমাদের সব আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে।” (সুরা আজ-জুমার: ৬৫)

তাই, শিরক থেকে বেঁচে থাকলে ব্যক্তির নামাজ, রোযা, হজ, দান-সদকা, সকল আমল আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় এবং তার বিপুল সওয়াব লাভ হয়।

৬. অন্তরের প্রশান্তি ও তাওয়াক্কুলের শক্তি

যে ব্যক্তি শিরকমুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, তার অন্তর প্রশান্তিতে ভরে যায়।

কুরআনে আল্লাহ বলেন:“নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। শুনে রাখো! আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।” (সুরা রা’দ: ২৮)

শিরক থেকে মুক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল (নির্ভরতা) সহজ হয়।

সে দুনিয়ার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে এবং আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে।

৭) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ:

যারা ঈমান ও ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না পরকালে আল্লাহ তাদের সাক্ষাৎ দেবেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন:‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)

আল্লাহ আমাদের সকলকে শিরকমুক্ত খাঁটি ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। আমিন।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *