কিয়ামতের পূর্বে কেউ স্বচক্ষে জাহান্নাম দর্শন করেছেন কি?
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর জীবদ্দশাতেই জাহান্নামকে দেখেছেন, যেমনিভাবে তিনি জান্নাতকে দেখেছেন। যার প্রমাণে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاس قَالَ انْخَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ … قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ ثُمَّ رَأَيْنَاكَ كَعْكَمْتَ قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ عُنْقُوْدًا وَلَوْ أَصَبْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وَأُرِيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَط أَفْضَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوا بِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ بِكُفْرِهِنَّ قِيْلَ يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ منْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ –
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় সূর্যগ্রহণ হল।…লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া ক্বায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি । আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কি কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহ্র সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে যদি তোমার হতে সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যাবহার পেলাম না। বুখারী হা/১০৫২, ‘সূর্যগ্রহণ-এর ছালাত জামা’আতের সঙ্গে আদায় করা’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ১/৪৯১ পৃঃ; মুসলিম হা/৯০৭; মিশকাত হা/১৪৮২।
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى صَلَاةَ الْكُسُوْفِ… فَقَالَ قَدْ دَنَتْ مِنِّي الْجَنَّةُ حَتَّى لَوِ اجْتَرَأَتُ عَلَيْهَا لَحِفْتُكُمْ بِقِطَافٍ مِنْ قِطَافِهَا وَدَنَتْ مِنّي النَّارُ حَتَّى قُلْتُ أَي رَبِّ وَأَنَا مَعَهُمْ فَإِذَا امْرَأَةٌ حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ تَحْدشُهَا هِرَّةٌ قُلْتُ مَا شَأْنُ هَذه قَالُوْا حَبَسَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ جُوْعًا لَا أَطْعَمَتْهَا، وَلَا أَرْسَلَتْهَا تَأْكُلُ –
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায় করলেন।অতঃপর ছালাত শেষে বললেন, জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছিল। এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তাহলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল । এমনকি আমি বলে উঠলাম, হে আল্লাহ আমিও কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রীলোককে দেখতে পেলাম।
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, একটি বিড়াল তাকে খামচাচ্ছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ স্ত্রীলোকটির এমন অবস্থা কেন? ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রীলোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করতে পারে। বুখারী হা/৭৪৫,২৩৬৪, ‘তাকবীরে তাহরীমার পরে কি পড়বে’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ১/৩৪৫ পৃঃ।
অনুরূপভাবে মৃত্যুর পরে মানুষ তার বারযাখী জীবনে তাদের অবস্থান অবলোকন করবে। মুমিন ব্যক্তিগণ জান্নাত এবং কাফিরগণ জাহান্নাম অবলোকন করবেন।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ يَبْعَثَكَ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ –
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে যদি জাহান্নামী হয়, তবে তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়)। আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি। বুখারী হা/১৩৭৯, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/৭২ পৃঃ; মুসলিম হা/২৮৬৬; মিশকাত হা/১২৭।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন