ইসলাম

জাহান্নামের প্রশস্ততা ও গভীরতা

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যার প্রশস্ততা বিশাল এবং গভীরতা অনেক। জাহান্নামের প্রশস্ত তা ও গভীরতা কেমন হতে পারে, তার কতিপয় দালীলিক প্রমাণ পেশ করা হল ।

১- পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

জাহান্নামীদের সংখ্যার আধিক্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এর পরেও আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদেরকে বিশাল আকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন- তাদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ, চামড়া হবে তিন দিনের পথ পরিমান মোটা, যা জাহান্নামীদের দেহ অবয়ব অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে ইন্‌শাআল্লাহ। এতো বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তা পূর্ণ হবে না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের পাঁ জাহান্নামের উপর রাখবেন। যেমন- আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে বলবেন, يوم نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدِ –

‘সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরও কিছু আছে কি?’ (সূরা ক্বাফ ৫০/৩০)।

এই উত্তর শুনে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজ পাঁ জাহান্নামের উপর রাখবেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لَا تَزَالُ جَهَنَّمُ يُلْقَى فِيْهَا وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيْهَا قَدَمَهُ فَيَنْزَوِي بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ وَتَقُوْلُ قَط قَط بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ –

আরো অধিক কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজ পা জাহান্নামের উপর রাখবেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে, তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে । বুখারী, হাদীস 6661

২- জাহান্নামের গভীরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ سَمِعَ وَجَبَةٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَدْرُوْنَ مَا هَذَا؟ قَالَ قُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، سَبْعِينَ خَرِيْفًا فَهُوَ يَهْوِى فِي النَّارِ الآنَ قَالَ هَذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। যখন তিনি একটি শব্দ শুনলেন তখন বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? তখন আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এটি এক খন্ড পাথর যা ৭০ বছর পূর্বে জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সে নিচের দিকে অবতরণ করছে জাহান্নামের তলা খুঁজে পাওয়া অবধি ৷ মুসলিম, হাদীস,২৮৪৪

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ أَنَّ حَجَرًا مِثْلَ سَبْعِ خَلِفَات أُلْقِيَ مِنْ شَفِيْرِ جَهَنَّمَ أَهْوَى فِيْهَا سَبْعِيْنَ عَامًا، لَا يَبْلُغُ قَعْرَهَا – হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি বড় পাথর খণ্ডের দিকে ইশারা করে বলেন যে, যদি এই পাথরটি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা হয়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবেনা। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৫২৮৪; ছহীহুল জামে’ হা/৫২৪৮; সিলসিলা ছহীহা হা/২১৬৫।)

৩- জাহান্নাম এতো বিশাল যে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে টেনে আনতে বিপুল পরিমাণ ফেরেশতার প্রয়োজন হবে।

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكَ يَجُرُّونَهَا –

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, যার ৭০ টি লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে তারা তা টেনে আনবে। (মুসলিম হা/২৮৪২; মিশকাত হা/৫৬৬৬, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১০/১৬০ পৃঃ।)

৪- ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর দু’টি বিশাল সৃষ্টি চন্দ্র-সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ

عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ قَالَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ثَوْرَان مُكَوَّرَان يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ الْحَسَنُ مَا ذَنْبُهُمَا؟ فَقَالَ إِنَّمَا أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَكَتَ الْحَسَنُ –

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ) হতে এ ব্যাপারে যাকিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন। (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫৬৯২, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১০/১৬৯ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহা হা/১২৪।)

উপরোল্লিখিত দলীল সমূহ থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, জাহান্নামের বিশালত্ব .অকল্পনীয়। কারণ এত বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন জাহান্নামী এবং পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড় সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পরেও যদি তার পেট পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তা’আলার পাঁ জাহান্নামের উপর রাখার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা কত বিশাল হতে পারে তা আমাদের কল্পনার বাইরে । আল্লাহ আমাদের তা হতে রক্ষা করুন । আমীন!

তথ্যসূত্র:

জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব

শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *