দোযখের গভীরতা ও তার প্রশস্ততা
হযরত খালেদ ইবনে উমায়ের (রহঃ) বলেন, আমাদেরকে হযরত উতবা ইবনে গাযওয়ান (রাযিঃ) খুতবা প্রদান করতে করতে বললেন— إِنَّهُ ذَكَرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ فَيَهْوِى فِيْهَا سَبْعِينَ عَامًا مَا يُدْرِكُ لَهَا فَعْرًا وَلِلَّهِ لَتَمْلَانَّهُ أَفَعَجِبْتُمْ ؟
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শুনিয়েছেন যে, একটি পাথর জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে, পাথরটি সত্তর বছর পর্যন্ত নীচে নামছে এরপরও সে জাহান্নামের পাতালে গিয়ে পৌঁছেনি। কসম আল্লাহ্! আল্লাহ্ তা’আলা এত গভীর জাহান্নাম অবশ্যই মানব ও দানব জাতি দ্বারা ভরে দিবেন । তোমরা কি এতে আশ্চর্য বোধ করছ? –মুসলিম
হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, হযরত উতবা ইবনে গাযওয়ান বসরার মিম্বরে দাড়িয়ে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ ভাষণ প্রদান করলেন যে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— إِنَّ الصَّخْرَةَ الْعَظِيْمَةَ لَتُلْقَى مِنْ شَفِيْرِ جَهَنَّمَ فَتَهْوِيْ سَبْعِينَ عَامًا وَ مَا تَقْضِي إِلى قَعْرِهَا –
নিঃসন্দেহে জাহান্নামের কিনারা থেকে যদি বিশাল একটি পাথর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে সত্তর বছর পর্যন্ত নীচে যেতে থাকবে। এর পরেও তা জাহান্নামের পাতালে গিয়ে পৌঁছবে না । —তিরমিযী
ফায়দা ঃ হযরত ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলতেন, হযরত উমর (রাযিঃ) বলতেন, তোমরা জাহান্নামকে খুব স্মরণ কর। কারণ, তার তাপ খুব প্রখর, তার গভীরতা বহু দূর এবং তার মুগুর হবে লোহার।
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমরা একবার হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম। হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পেলাম।
হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন— اَتَدْرُونَ مَا هَذَا؟ فَقُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ اَعْلَمُ . قَالَ هَذَا حَجَرٌ أُرْسِلَ فِي جَهَنَّمَ مُنْذُ سَبْعِينَ خَرِيْفًا فَالْآنَ إِنْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا –
‘তোমরা কি জান, এটা কিসের আওয়াজ? আমরা আরয করলাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইলেন, এটা একটা পাথর পড়ার শব্দ। যা আল্লাহ্ তা’আলা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছিলেন। আজ তা জাহান্নামের পাতাল পৃষ্ঠে গিয়ে পৌঁছেছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, ঐ সত্তার কসম, যার কুদরতী হাতে আবু হুরায়রার জীবন, জাহান্নামের গভীরতা হল সত্তর বছরের রাস্তা। —মুসলিম
ফায়দা ঃ এখানে সত্তর বছর দ্বারা আখেরাতের সত্তর বছর উদ্দেশ্য, দুনিয়ার নয় । যেমন বহু প্রমাণ দ্বারা একথা বুঝা যায় ।
হাদীস : হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান — لَوْ أُخِذَ سَبْعُ خَلْفَاتٍ بِشُحُوْمِهِنَّ وَالْقِيْنَ مِنْ شَفِيْرِ جَهَنَّمَ مَا انْتَهَيْنَ إِلى آخِرِ سَبْعِينَ عَامًا
যদি সাতটি গর্ভবতী উষ্ট্রীকে তার চর্বি সহকারে নেয়া হয় এবং তাকে জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে সত্তর বছরেও তা জাহান্নামের পাতালে গিয়ে পৌঁছতে পারবে না। —হাকেম
হাদীস ঃ হযরত বুরাইদা (রাযিঃ) বলেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান — إِنَّ الْحَجَرَ لَيَزِنُ سَبْعَ خَلْفَاتٍ يُرْمَى بِهِ فِي جَهَنَّمَ فَيَهْوِي سَبْعِينَ خَرِيْفًا وَمَا يَبْلُغُ قَعْرَهَا –
সাতটি গাভীন উটনীর ওজন সমান একটি পাথর যদি জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে সত্তর বছরেও তা জাহান্নামের পাতালে গিয়ে পৌঁছবে না । –তাবরানী
হাদীস ঃ হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাযিঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- الَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ مَا بَيْنَ شَفَةِ النَّارِ وَ قَعْرِهَا كَصَخْرَةٍ زِنَةِ سَبْعِ خَلْفَاتٍ بِشُهُوْمِهِنَّ وَ حُوْمِهِنَّ وَ اَوْلَادِهِنَّ مِنْ شَفَةِ النَّارِ قَبْلَ أَنْ تَبْلُغَ قَعْرَهَا سَبْعِينَ خَرِيفًا –
কসম ঐ সত্তার, যার কুদরতী হাতে আমার জীবন, জাহান্নামের কিনারা থেকে তার গভীরতার দূরত্ব এতটুকু, যেমন সাতটি গাভীন উট ও তার চর্বি ও বাচ্চা সহকারে যতটুকু ওজন হয়, তৎসম পরিমাণ একটি পাথর যদি জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তা জাহান্নামের পাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে সত্তর বছর লেগে যাবে।
গই ও আসাম নামক জাহান্নামের দু’টি উপত্যকা
হাদীস ঃ হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) বলেন— إِنَّ مَا بَيْنَ شَفِيْرِ جَهَنَّمَ مَسِيرَةَ سَبْعِينَ خَرِيْفًا مِنْ حَجَرٍ يَهْوِي أَوْ صَخْرَةٍ تَهْوى عَظْمُهَا كَعَظْمٍ عَشَر عَشَرَوَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ هَلْ تَحْتَ ذُلِكَ مِنْ شَيْءٍ يَا أَبَا أُمَامَةَ ؟ قَالَ نَعَمْ غَيٌّ وَأَثَامُ –
জাহান্নামের কিনারা থেকে তার গভীরতার দূরত্ব হল সত্তর বছরের দূরত্ব। এমন একটি পাথর যার ওজন দশটি মোটা তাজা গাভীন উটনী সমান হয়, তা জাহান্নামের পাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে সত্তর বছর লেগে যাবে। কেউ জিজ্ঞাসা করল, হে আবু উমামা! এর নীচেও কি আরও কিছু আছে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, দু’টি উপত্যকা— (১) গই (২) আসাম ।
একটি দুর্বল রেওয়ায়েতে এ অংশটিকেও বৃদ্ধি করা হয়েছে যে, আবু উমামা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, গই ও আসাম কি? তিনি উত্তরে বললেন, তা দু’টি কূপের নাম যেখানে জাহান্নামীদের পুঁজ জমা হয়ে থাকে। আল্লাহ্তা ‘আলা কুরআনে পাকে এগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন গুরুতর অচীরেই তারা ‘গই’-এর সাক্ষাত করবে। (—সূরা মরিয়াম-৫৯) অন্যত্র
এরশাদ হচ্ছে— তো সে আসাম প্রত্যক্ষ করবে। —সূরা ফুরকান-৬৮
বদকার শাসকরা
হাদীস ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- مَا مِنْ حَاكِمٍ يَحْكُمُ بَيْنَ النَّاسِ إِلَّا يُحْبَسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ مَلَكُ أَخَذَ بِقَفَاهُ حَتَّى يَقِفُهُ عَلَى جَهَنَّمَ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ إِلَى اللَّهِ عَزَّوَجَلَّ فَإِنْ قَالَ لَهُ اَلْقِهِ الْقَاهُ فِي مَهْوَى أَرْبَعِينَ خَرِيْفًا –
‘যেই শাসক বা বিচারক লোকজনের মাঝে বিচারাচার করে বেড়ায়, কেয়ামতের দিবসে তাকে কারাবদ্ধ করা হবে। এক ফেরেশতা তার ঘাড় ধরে জাহান্নামের কিনারায় নিয়ে দাড় করাবে। অতঃপর ফেরেশতা আল্লাহ্ তা’আলার সামনে গিয়ে মাথা উঠাবে। যদি আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেন, তাহলে ফেরেশতা তাকে এমন গর্তে নিক্ষেপ করবে, যার গভীরে পৌঁছতে তার চল্লিশ বছর লেগে যাবে ।
হাদীস : হযরত আবু যর (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-
يُجَاءُ بِالْوَالِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُنْبَرُ عَلَى جِسْرٍ جَهَنَّمَ فَيَرْتَجُ ذَلِكَ الجِسْرُ ارْتِجَاجَةً لَا يَبْقَى مِنْهُ مَفْصَلُ إِلَّا زَالَ عَنْ مَكَانِهِ فَإِنْ كَانَ مُطِيعًا لِلَّهِ فِي عَمَلِهِ مَضَوْا بِهِ وَإِنْ كَانَ عَاصِيًّا لِلهِ فِي عَمَلِهِ الْخَرَقَ بِهِ الْجِسْرُ فَيَهْوى فِي جَهَنَّمَ مِقْدَارَ خَمْسِينَ عَامًا –
‘কেয়ামতের দিবসে শাসকদেরকে আনা হবে। পুলসিরাতে তাদেরকে বাধা দেয়া হবে। তার কারণে পুরো পুল এমনভাবে গর্জিয়ে উঠবে, তার সবকটি জোড়া নড়ে যাবে । যদি সে আমলের দিক দিয়ে অনুগত ও বাধ্যগত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ফেরেশতারা পার করে দিবে। আর যদি অবাধ্য ও নাফরমান হয়ে থাকে, তাহলে পুল ভেঙ্গে যাবে। ফলে সে সেখান থেকে পঞ্চাশ বছরের দূরত্বে গিয়ে পৌঁছবে।
ফায়দা : উপরের হাদীসে চল্লিশ বছরের দূরত্ব আর এ হাদীসে পঞ্চাশ বছরের দূরত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বৈপরিত্য বিন্দুমাত্র নেই। কারণ, শাসকের আমলের ব্যবধানের কারণে এ দূরত্বেও ব্যবধান হবে।
একটি অসাধু কথার শাস্তি
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান—
إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيْهَا يَزِلُ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدُ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ –
মানুষ কখনো চিন্তা ভাবনা না করে এমন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে জাহান্নামের এত গভীরে গিয়ে পতিত হবে, যেমন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ব্যবধান ও দূরত্ব হয়ে থাকে। —বুখারী, মুসলিম
হাদীস ঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান — اِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ لَا يَرى بِهَا بَأْسًا يَهْوِى بِهَا فِي النَّارِ سَبْعِينَ
‘মানুষ কখনো এমন (জঘন্য) কথা বলে ফেলে, যাকে সে অন্যায় মনে করে না, অথচ সে জাহান্নামের নিচে সত্তর বছরের দূরত্বে গিয়ে পতিত হল।’তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আহমদ
ইহুদীদের ধারণার অপনোদন
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— وَقَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَةً
তারা বলে, আগুন আমাদেরকে স্পর্শ করবে না, তবে হাতে গোনা কয়েক দিন। —সূরা বাকারা-৮০
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, ইহুদীরা তাওরাতে একথা দেখতে পেয়েছে যে, জাহান্নামের উভয় প্রান্তের দূরত্ব হল চল্লিশ বছরের পথ। এরপর হল যাক্কুম গাছের ক্ষেত। যা জাহীমের গোড়ায় অবস্থিত। জাহীম দোযখের ঐ স্তর যেখানে শুধু যাক্কুমের গাছ বিদ্যমান। আল্লাহর শত্রু ইহুদীদের ধারণা হল, চল্লিশ বছর অতিক্রম করতে করতে আল্লাহ্তা ‘আলা তাদের উপর থেকে আযাব সরিয়ে নিবেন। ইতিমধ্যে জাহান্নামকেও নিস্তেজ করে দেয়া হবে। আলোচ্য আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের এ ধারণার অপনোদন ঘটিয়েছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, অথচ যখন ইহুদীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে এবং তারা আযাবে ডুবে থাকবে, তখন ঐ গাছের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতেই চল্লিশ বছর কেটে যাবে।
এরপর তাদের যাক্কুম খাওয়া শুরু হবে। তা দিয়েই তারা আপন উদর পূর্তি করবে। তারা তাদের গণনার দিনগুলোর শেষ দিনে পৌঁছবে। এবার ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেন, তোমরা ধারণা করেছিলে যে, তোমাদেরকে হাতে গোনা কয়েক দিনই জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এর বেশি নয়।
তোমাদের সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন থেকে চিরকাল তোমরা জাহান্নামেই থাকবে। এখন তোমাদেরকে সাউদ পাহাড়ে উঠার আযাব দেয়া হবে। —তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাবারী
উক্ত রেওয়ায়েত থেকে এটাও প্রমাণিত হল যে, দোযখের গভীরতা এবং তার দূরত্ব হল চল্লিশ বছরের পথ। যা তাওরাতে উল্লিখিত রয়েছে। তবে ইহুদীরা এর মাঝে বিকৃতি সাধন করে তার কিনারার দূরত্ব উদ্দেশ্য নিয়েছে। তাদের ধারণা হল, যখন এ সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে, তখন দোযখকে নিঃশেষ করে দেয়া হবে। অথচ এ জাতীয় ধারণা আল্লাহ তা’আলার উপর একটি মিথ্যা অপবাদ এবং তাওরাতের বিকৃতি সাধন।
জাহান্নামের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ
হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি জানা আছে যে, জাহান্নামের প্রস্থ কত? আমরা বললাম, না আমাদের জানা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ভেবে দেখ, কসম আল্লাহ তোমরা কখনও অনুধাবন করতে পারবে না। শুধুমাত্র এক জাহান্নামীর কানের লতি থেকে নাক পর্যন্ত দূরত্ব হল সত্তর বছরের পথ। আর তাতে রক্ত ও পুঁজের নদী বয়ে যাবে । অতঃপর তিনি আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জান, জাহান্নামের প্রস্থ কতটুকু? আমরা বললাম, না আমরা জানি না । তিনি বললেন, আমার নিকট হযরত আয়শা (রাযিঃ) এক হাদীস বয়ান করেছেন যে, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম— وَالْاَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوتُ مُطْوِيَّاتُ بِيَمِينِهِ
‘কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুঠোতে এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে । –সূরা যুমার-৬৭
আমি আরও জিজ্ঞাসা করলাম, সেদিন লোকেরা কোথায় থাকবে? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, জাহান্নামের পুলের উপর থাকবে। —হাকেম, আহমদ, নাসায়ী
ফায়দা ঃ যদি জাহান্নামের পুলের উপরই এত মানুষের অবস্থান হয়, তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, জাহান্নামের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত বড় হবে। এছাড়াও আরও বহু হাদীস সামনে উল্লেখ করা হবে, যেগুলোতে জাহান্নামীদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অনুমান করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র:
বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী