ইসলাম

জাহান্নামের উপত্যকা, পাহাড়-পর্বত,

গর্ত, ঝর্ণাধারা এবং নদ-নদীসমূহ

হযরত আবু সায়ীদ (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— وَيْلٌ وَادٍ فِي جَهَنَّمَ يَهْوِى فِيْهِ الْكَافِرُ أَرْبَعِينَ خَرِيْفًا قَبْلَ أَنْ يَبْلُغَ قَعْرَهُ

ওয়াইল হল জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। যেখানে কাফেরদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। নিক্ষেপের পর চল্লিশ বছর পর্যন্ত নীচ দিকে যেতে থাকবে অতঃপর তলদেশে পৌছবে ।

ফায়দা ঃ এ হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ওয়াইল নামক উপত্যকাটি জাহান্নামের দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত থাকবে। কাফেরদেরকে তথায় নিক্ষেপ করা হলে সেই উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছতে তাদের সত্তর বছর লেগে যাবে। —ইবনে হিব্বান ও হাকেম

হযরত ইবনে মাসউদ, ওয়ায়েল ইবনে মুহানা এবং আবু আয়ায (রহঃ) বলেন, এটা হল ঐ উপত্যকা, যেখানে জাহান্নামবাসীদের পুঁজ প্রবাহিত হয়ে একত্রিত হবে।

হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রহঃ) বলেন, ওয়াইল হল জাহান্নামের ঐ উপত্যকা, যার উপর দিয়ে পাহাড় অতিক্রম করানো হলেও তা গরমে গলে যাবে।

হযরত মালেক ইবনে দ্বীনার (রহঃ) বলেন, এটা জাহান্নামের ঐ উপত্যকা যেখানে নানা ধরনের আযাবের সমাবেশ থাকবে।

হযরত আবু আয়ায (রহঃ) বলেন : ওয়াইল হল, জাহান্নামের একটি উপত্যকা, যেখানে পুঁজ প্রবাহিত হতে থাকবে। তিনি অন্যত্র বলেন, ওয়ায়েল হল জাহান্নামের তলদেশে অবস্থিত একটি হাউজ যেখানে জাহান্নামীদের পুঁজ প্রবাহিত থাকবে।

পাহাড়ে আরোহণের আযাব

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান, ‘আমি অচিরেই তাকে দোযখের পর্বতে আরোহণ করাব’। –সূরা মুদ্দাস্সির

হাদীস ঃ হযরত আবু সায়ীদ (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতের তাফসীরে এরশাদ ফরমান—জাহান্নামে একটি পাহাড় রয়েছে। যেখানে কাফেরদেরকে আযাব দেয়ার জন্য তাতে চড়ার আদেশ দেয়া হবে। সে যখনই পাহাড়ে হাত রাখবে, তখনই তার হাত গলে যাবে। আবার যখন সে হাত উঠাবে, তৎক্ষণাৎ তার হাত পূর্বের ন্যায় ভাল হয়ে যাবে। আর যখন সে পাহাড়ের গায়ে আপন পা রাখবে, তখন তার পা গলে যাবে। আবার যখন সে আপন পা সরিয়ে নিয়ে আসবে, তখন আবার তার পা ভাল হয়ে যাবে। এভাবে সে সত্তর বছর পর্যন্ত পাহাড়ে চড়তে থাকবে ।

ফায়দা ঃ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, এটা হবে আগুনের তৈরী একটা পিচ্ছিল পাহাড়। আল্লাহর নাফরমান বান্দা যখনই তাতে চড়তে চাইবে, তখনই সে তা থেকে পিছলিয়ে উপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়বে।

হযরত আতা ইবনে সায়েব (রহঃ) বলেন, এটা আগুনের পিচ্ছিল একটা বড় পাথরখন্ড । কাফেরদেরকে ঐ পাহাড়ে চড়তে বাধ্য করা হবে। সে যখনই ঐ পাহাড়ের চূড়ায় চড়বে, তখনই সে পাহাড়ের উপর থেকে পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে যাবে। এরপর আবারও তাকে পাহাড়ে উঠতে বাধ্য করা হবে। সদা তাকে এ অবস্থাতেই রাখা হবে। শুধু তাই নয়, তাকে লোহার শিকল দিয়ে আবদ্ধ করে ও পেছনে লৌহ হাতুড়ি দিয়ে বেদম প্রহার করা হবে এবং ঐ পাহাড়ে চড়তে বাধ্য করা হবে। এ অবস্থাতেই তার চল্লিশ বছর কেটে যাবে।

‘আকাবা’ নামক উপত্যকা

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— অতঃপর সে আকাবা ঘাটিতে প্রবেশ করেনি। –সূরা বালাদ-১১ এ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, ‘আকাবা’ হল জাহান্নামের প্রকম্পনশীল একটি পাহাড়। আবু রাজা (রহঃ) বলেন, এ পাহাড়ের উচ্চতা হল সাত হাজার বছরের পথ ।

‘গাই’ ও ‘আসাম’ নামক উপত্যকা

হাদীস ঃ হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— نَهْرُ غَيٌّ وَ أَثَامُ إِنَّ فِي أَسْفَلِ جَهَنَّمَ يَسِيْلُ فِيْهَا صَدِيدُ أَهْلِ النَّارِ

গাই ও আসাম হল জাহান্নামের তলদেশে প্রবাহিত দু’টি নদী। যার মধ্যে জাহান্নামবাসীদের পুঁজ প্রবাহিত হবে।

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান- ড ও অচীরেই তাদেরকে গাই উপত্যকায় নিক্ষেপ করা হবে। —সূরা মরিয়াম-৫৯

এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আবু উবায়দা ইবনে আবদুল্লাহ্ (রাযিঃ) বলেন, ‘গাই’ উপত্যকাটি জাহান্নামে অবস্থিত । যেখানকার পরিবেশ খুবই বিষাক্ত এবং যার গভীরতা খুব বেশি। —ইবনে আবিদ্দুয়া

বায়হাকী শরীফের এক রেওয়ায়ত আছে, এটা জাহান্নামের একটি খোলা নদী । যেখানে প্রবৃত্তির পদাঙ্ক অনুসারী লোকদেরকে নিক্ষেপ করা হবে ।

শফী ইবনে মাতেহ বলেন, জাহান্নামে একটি মহল রয়েছে, যার নাম হল ‘হাওয়া’। ঐ মহলের উপর থেকে যখন জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে তাদের চল্লিশ বছর সময় লেগে যাবে। এ সম্পর্কেই আল্লাহ তা’আলা এরশাদ ফরমান — وَمَنْ يَحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَيْ فَقَدْ هَوَى যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে । —সূরা ত্বা-হা-৮১

জাহান্নামের একটি উপত্যকা হল ‘আসাম’। তাতে শাস্তি দেয়ার জন্য রয়েছে অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছু। প্রত্যেক বিচ্ছুর এক লেজে সত্তরটি বড় মটকা বরাবর বিষ থাকবে। একটি বিচ্ছু হবে একটি গাভীন খচ্চরের সমান। বিচ্ছুটি যখন জাহান্নামীকে দংশন করবে, তখন তার পীড়ায় ও বিষ যন্ত্রণায় জাহান্নামের তাপকেও তাপ মনে হবে না ৷

অনুরূপ জাহান্নামের একটি উপত্যকা হল ‘গাই’। যেখানে শুধু রক্ত ও পুঁজ প্রবাহিত হতে থাকবে। জাহান্নামে সত্তর ধরনের রোগ থাকবে। তন্মধ্যকার প্রত্যেক রোগই জাহান্নামের একাংশ। —ইবনে আবীদ্দুয়া

‘মাওবিক’ নামক উপত্যকা

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান- আমি তাদের মাঝে মাওবিক রেখে দিয়েছি। –সূরা কাহাফ-৫২

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, মাওবিক হল জাহান্নামীদের পুঁজ ভরা একটি উপত্যকা। এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, এটা জাহান্নামের রক্ত ও পুঁজের নদী। আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ

‘ফালাক’ নামক উপত্যকা

হযরত আমর ইবনে আবাসা (রাযিঃ) বলেন, ফালাক হল জাহান্নামের একটি কূপ। যা দ্বারা জাহান্নামকে উৎক্ষীপ্ত করে তোলা হয়। ঐ কূপ থেকে জাহান্নাম এমনভাবে আশ্রয় চাইতে থাকে, যেমন মানবজাতি জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে । —ইবনে আবিদ্দুনয়া ও ইবনে আবী হাতেম

যায়েদ ইবনে আলী (রাযিঃ) স্বীয় পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন, একথা ব্যক্ত করেছেন যে, ফালাক হল জাহান্নামের তলদেশে অবস্থিত একটি কূপ। যার উপর একটি পর্দা পড়ে আছে। যখনই তা খোলা হবে, তখনই তা থেকে এমন ভয়াবহ আগুন নির্গত হতে থাকবে যে, তার প্রখরতা ও ক্ষীপ্ততা থেকে খোদ জাহান্নামও আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকে ।

হযরত কা’ব আহবার (রাযিঃ) একদা এক অপরূপ সুন্দর গির্জায় প্রবেশ করলেন। তিনি গির্জার সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তা দেখে তিনি বললেন, খুব সুন্দর কারুকাজ হয়েছে। এ গির্জা মানুষকে পথভ্রষ্ট বানিয়ে রেখেছে। আর তার জন্য ফালাকও রাজি হয়ে গিয়েছে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, এ ফালাক কি? তিনি উত্তরে বললেন, ফালাক হল জাহান্নামের একটি আবদ্ধ স্থান। যখন তাকে খুলে দেয়া হবে, তখন জাহান্নামবাসীরা সকলেই আর্ত চিৎকার করতে থাকবে ।

একদা জনৈক সাহাবী সিরিয়ায় গমন করলেন। সেখানকার কাফেরদের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপন ও ভোগ-বিলাসিতা দেখে তিনি বলতে থাকলেন, এ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অবস্থা আমার অন্তরে কিঞ্চিত আঘাত হানে না। কারণ, তাদের পেছনে কি ফালাক অপেক্ষা করছে না? কেউ জিজ্ঞাসা করল, এটা আবার কোন ফালাক? তিনি উত্তরে বললেন, এটা হল জাহান্নামের একটি আবদ্ধ স্থান । যখন তা খোলা হবে, তখন দোযখ-বাসীরা তার প্রখরতায় পুড়ে যাবে । —তাফসীরে ইবনে কাসীর

হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান ‘ফালাক’ হল জাহান্নামের একটি ঢেকে রাখা কূপ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, ‘ফালাক’ হল জাহান্নামের কারাগার।

‘সায়ীর’ উপত্যকা

হযরত সায়ীদ ইবনে জুবায়ের (রাযিঃ) বলেন, ‘সায়ীর’ হল জাহান্নামের একটি ময়দান, যেখানে শুধু পুঁজ আর পুঁজ থাকবে। —ইবনে আবী হাতেম ‘জুব্বুল হুযুন’ নামক উপত্যকা

হাদীস ঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান—

نَعُوذُ بِاللهِ مِنْ جُبِّ الْحُزْنِ قَالُوْا وَ مَا جُبُّ الْحُزنِ؟ قَالَ وَادٍ فِى جَهَنَّمَ تَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ يَدْخُلُهُ ؟ قَالَ الْقُرَّاءُ الْمَرَاؤُنَ بِأَعْمَالِهِمْ –

তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট জুব্বুল হুযুন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। সাহাবায়ে কেরামগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! জুব্বুল হুযুন কি? জবাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জুব্বুল হুযুন হল জাহান্নামের একটি প্রান্তর, যা থেকে খোদ জাহান্নামও প্রত্যহ একশ বার আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকে । সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তাতে কারা প্রবেশ করবে? তিনি উত্তরে বললেন, তাতে প্রবেশ করবে ঐ সকল কারীগণ, যারা লোক দেখানোর জন্য এবং নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে ।

‘হাব্‌হাব্’ কূপ বিশিষ্ট উপত্যকা

হাদীস ঃ হযরত আবু বুরদাহ (রাযিঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান — إِنَّ فِي جَهَنَّمَ لَوَادِيًا وَ لِذلِكَ الْوَادِى بِرُ يُقَالُ لَهُ هَبْهَبْ حَقٌّ عَلَى اللهِ آنْ يَسْكُنَهَا كُلَّ جَبَّارٍ –

জাহান্নামে একটি উপত্যকা রয়েছে, যেখানে হাব্‌হার্ নামক উপত্যকা রয়েছে । আল্লাহ্ তা’আলা এটা আবশ্যক করে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক অত্যাচারী ও অহংকারী লোককে তথায় নিক্ষেপ করা হবে।

জাহান্নামের কারাগার (বোলিশ)

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— يُحْشَرُ الْمُتَكَبِرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرَ فِى صُورَةِ النَّاسِ يَعْلُوهُمْ كُلُّ شَيْءٍ مِّنَ الصَّغَارِ حَتَّى يَدْخُلُوْا سَجَنًا فِي جَهَنَّمَ يُقَالُ لَهُ يُولَسْ تَعْلُوهُمْ نَارُ الْأَنْبَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ طِيْنِ الْخَبَالِ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ

হাশরের ময়দানে সকল অহংকারী ও দাপুটে লোকদেরকে ছোট ছোট পিপিলিকার সমান করে মানবাকৃতিতে উঠানো হবে। আকারে ছোট হওয়ার কারণে সব কিছুই তাদের নিকট বড় মনে হবে। তাদেরকে জাহান্নামের বুলাশ নামক জেলখানায় নিক্ষেপ করা হবে। ঐ জেলখানার উপর এমন ভয়াবহ আগুন থাকবে, যা জাহান্নামের সকল আগুনের উৎপত্তিস্থল হবে। তাদেরকে পান করানো হবে জাহান্নামের ধ্বংসাত্মক বিষ মিশ্রিত কাঁদামাটি, যা জাহান্নামীদেরপূঁজ থেকেই প্রস্তুত হবে ।

ফায়দা ঃ তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, জাহান্নামে একটি মহল রয়েছে যার নাম হবে ‘বোলিশ’ । তাতে প্রবেশ করবে একমাত্র অহংকারী ও অত্যাচারী লোকেরা। এ মহলটি জাহান্নামের অপরাপর সকল আগুনের উৎপত্তিস্থল হবে। এটা হবে একটা নিকৃষ্টতর মহল । যেখানে জাহান্নামীদের সর্বাপেক্ষা বেশি হতাশা ও দুশ্চিন্তা হবে। যেখানে সকল মউতেরও মউত হয়ে যাবে। সকল কূপ থেকে নিকৃষ্ট কূপ হবে ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, জাহান্নামে একটি জেলখানা রয়েছে, যেখানে নিকৃষ্টতর লোকেরাই প্রবেশ করবে। যার উপরেও আগুন থাকবে এবং নীচেও আগুন থাকবে (ছাদ ও পাতাল উভয়টাই আগুনের হবে। চতুর্পার্শ্বের প্রাচীরগুলোও আগুনের থাকবে। এমনকি তার ভেতর থেকেও ঝলসে দেয়ার মত আগুন বের হতে থাকবে।

হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি— তোমাদের মধ্যকার কেউ যেন অন্য কারও কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ না করে। নতুবা আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জাহান্নামের উপরে অবস্থিত পুলের উপর দাড় করিয়ে দিবেন। আর তার কারণে পুল কাঁপতে থাকবে। কে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেল আর কে না পেল সেটা পরের বিষয়। তখন প্রতিটি ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর সে যদি জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে সে জাহান্নামের একটি কালো কূপের ভেতরে গিয়ে পড়বে, যা কবর সদৃশ হবে। যার গভীরতায় সে সত্তর বছরেও পৌছাবে না ।

হাদীস ঃ হযরত হাজ্জাজ ইবনে আবদুল্লাহ শিমালী (রাযিঃ) বলেন, আমাকে সুফিয়ান ইবনে মুজীব (রাযিঃ) বলেন— জাহান্নামে সত্তর হাজার উপত্যকা রয়েছে। প্রত্যেক উপত্যকায় রয়েছে সত্তর হাজার ঘাটি । প্রত্যেক ঘাটিতে বিদ্যমান রয়েছে, সত্তর হাজার অজগর সাপ এবং সত্তর হাজার বিচ্ছু। যে কোন কাফের বা মুনাফেক তাতে পৌঁছবে, তাকেই সেগুলো দংশন করতে থাকবে।

ফায়দা ঃ এর কাছাকাছিই আরেকটি হাদীস হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহান্নামে সত্তর হাজার উপত্যকা রয়েছে, প্রত্যেক উপত্যকায় রয়েছে সত্তর হাজার ঘাটি। প্রত্যেক ঘাটিতে রয়েছে সত্তর হাজার পাথর। প্রত্যেক পাথরে রয়েছে একটি করে বিষাক্ত সাপ। যে জাহান্নামীদের মুখমণ্ডল গুলো দংশন করবে। —ইবনে আবিদ্দুয়া

হযরত আবুল মিনহাল আররাইয়াহী (রহঃ) বলেন, তাদের নিকট একথা পৌঁছেছে যে, জাহান্নামে ছোট ছোট বিল রয়েছে, যেখানে পানি রয়েছে। ঐ পানিতে উটের দেহের সমান সাপ এবং খচ্চরের দেহের সমান বিচ্ছু রয়েছে। যে কোন জাহান্নামী সেগুলোর সামনে পড়বে, তাকে দংশন করে বসবে । এত ক্ষীপ্ৰ বেগে দংশন করবে যে, সে তা থেকে বাঁচার জন্য ফরিয়াদ করতে থাকবে। —ইবনে আবিদ্দুয়া

হযরত মুজাহিদ (রহঃ) হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, জাহান্নামে একটি কূপ রয়েছে, যেখানে বিপদের পর্বত বিদ্যমান থাকবে। সেই কূপে উটের ন্যায় বড় বড় সাপ এবং কালো খচ্চরের ন্যায় বড় বড় বিচ্ছু রয়েছে। জাহান্নামীরা যখন আগুনের আযাব ভোগ করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে, তখন ঐ সাপের দিকেই দৌড়ে যেতে থাকবে। যাতে আযাবের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। সেখানে যেতে যেতেই সেগুলো জাহান্নামীদের চুল ও ঠোটের দিক থেকে দংশন করা শুরু করবে। ফলে তাদের দেহের গোশতগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে খসে পড়তে থাকবে। তাদেরকে দংশন করতে করতে তাদের পদযুগল পর্যন্ত পৌঁছবে। তখন তারা পুনরায় ঐ আগুনের দিকে ফিরে যেতে ফরিয়াদ করতে থাকবে এবং আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকবে ও আগুনের দিকে দৌড়াতে থাকবে। আর ঐ সাপ বিচ্ছুও তাদের পিছু ধাওয়া করতে থাকবে। যখন তাদেরকে আগুনে গ্রাস করে নিবে, তখন সেগুলো আপন স্থানে ফিরে যাবে। এসব সাপ বিচ্ছু জাহান্নামের কিনারাতেই বিচরণ করে থাকে।

হযরত তাউস (রহঃ) সুলায়মান ইবনে আবদুল মালিক (রহঃ)কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! জাহান্নামের এক কূপের কিনারা থেকে একটি পাথর খণ্ডকে যদি ফেলা হয়, তাহলে তা সত্তর বছর পর্যন্ত পড়তে পড়তে জাহান্নামের পাতালে গিয়ে পৌঁছবে। আপনার কি জানা আছে যে, তা কাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে? তিনি বললেন, না আমার জানা নেই। তিনি বললেন, নাশ হোক ঐ লোকের জন্য, যার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা ঐ জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। নাশ হোক ঐ ব্যক্তির জন্য, আল্লাহ্ তা’আলা শাসক বানাল অথবা রাষ্ট্রপ্রধান বানাল আর সে প্রজাদের উপর, অধিনস্থ কর্মচারীদের উপর অত্যাচার করতে থাকল । তাউস (রহঃ) বলেন, একথা শুনে হযরত সুলায়মান কেঁদে দিলেন। —হুলিয়াতুল আউলিয়া

হযরত হাসান ইবনে ইয়াহইয়া খুশানী (রহঃ) বলেন, জাহান্নামের প্রত্যেক ঘর, প্রত্যেক ঘাটি, প্রত্যেক বেড়ি ও শৃংখল এবং প্রত্যেক শিকলে ঐ ব্যক্তির নাম লেখা থাকবে, যার জন্য এগুলোকে ব্যবহার করা হবে । আহমদ ইবনে আবিল হাওয়ারী (রহঃ) বলেন, আমি আবু সুফিয়ানকে যখন পূর্বোক্ত কথাগুলো বললাম, তখন তিনি কেঁদে দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমার নাশ হোক! ঐ ব্যক্তির কী অবস্থা হবে, যে সবগুলোর যোগ্য হবে। যার গলায় পরানো থাকবে ফাঁদ, পায়ে থাকবে বেড়ি, হাতে থাকবে শিকল বাঁধা । অতঃপর তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে এবং মারপিট শুরু হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আযাব থেকে মুক্তি দান করুন। —আমীন

তথ্যসূত্র:

বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *