ইসলাম

জাহান্নামের পাথরসমূহ

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— يَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَ أَهْلِيكُمْ نَارًا

হে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার- পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও । অন্যত্র এরশাদ ফরমান — فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَ لَنْ تَفْعَلُوْ فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ –

আর যদি তোমরা তা না পারো, অবশ্য তা আর কখনও পারবে না। অতএব, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যা তৈরি করা হয়েছে কাফের সম্প্রদায়ের জন্য। —সূরা বাকারা-২৪

এ আয়াতদ্বয় দ্বারা জানা গেল, মানব জাতির ন্যায় পাথরও জাহান্নামের ইন্ধন হবে। কোন কোন তাফসীরবিদগণ বলেন, এ পাথর দ্বারা ঐ সকল মূর্তিসমূহ উদ্দেশ্য, যেগুলোকে পৌত্তলিকরা পূজাপাট করত কিংবা এগুলো সম্পর্কে এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা হত যে, এরা তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সুপারিশ করবে ও আল্লাহ্র নিকটবর্তী বানিয়ে দিবে। পাথরগুলোকে কাফেরদের সাথেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাদেরকে লাঞ্ছিত করার জন্য। এ অবস্থা দেখে কাফেররা আফসোস ও আক্ষেপের হাত মাথায় মারতে থাকবে। কারণ, যখন তারা দেখতে পাবে যে, উপাসক ও উপাস্য উভয়কেই জাহান্নামে জ্বালানো হচ্ছে, তখন তাদের আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

অধিকাংশ তাফসীরকারগণ : (হিজারা) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ঐ পাথর উদ্দেশ্য, যা আগুনের প্রখরতাকে আরও অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি করে। যাকে আরবীতে কিবরীত এবং উর্দূতে গন্ধক বলা হয়। এ জাতীয় পাথরের মাঝে মোট পাঁচ প্রকার আযাব রয়েছে, যা অন্যান্য পাথরের মধ্যে পাওয়া যায় না। (১) দ্রুত প্রজ্বলিত হওয়া । (২) দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া। (৩) অধিক ধুম্রবিশিষ্ট হওয়া । (৪) দেহের সাথে অধিক সম্পৃক্ত হওয়া। (৫) গরম হওয়ার পর আরও তীব্রতার সাথে দগ্ধ করা।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে পাথর দ্বারা কিবরীত তথা গন্ধকই উদ্দেশ্য। আল্লাহ্ তা’আলা এ পাথরগুলোকে ঐ দিনই সৃষ্টি করেছেন, যেদিন আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। আর সেদিন থেকেই আল্লাহ্ তা’আলা এগুলোকে কাফের সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি করে রেখেছেন। —ইবনে আবী হাতেম

সুদ্দী (রহঃ) বলেন, হযরত ইবনে মাসউদ ও ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, ১৮, তা অন্ত, এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ঐ পাথর উদ্দেশ্য, যাকে “কিবরীতে আসওয়াদ’ বলা হয়। জাহান্নামে কাফেরদেরকে এ পাথরগুলোর দ্বারাই আযাব দেয়া হবে। হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, এখানে পাথর দ্বারা কিবরীত পাথর উদ্দেশ্য যা পঁচা-মরদেহ অপেক্ষা আরও বেশি দুর্গন্ধময়। হযরত আবু জা’ফর ইবনে জুরাইজ এবং উমর ইবনে দ্বীনার (রহঃ) প্রমুখ ব্যক্তিগণও এরূপ অর্থ প্রকাশ করেছেন।

হাদীস ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন— সাত যমীনের মধ্য থেকে প্রতিটির নীচে অপর যমীনের দূরত্ব হল পাঁচশত বছরের পথ। সর্বোচ্চ যমীনের স্তরটি একটি মাছের পীঠের উপর অবস্থিত। যে মাছ তার দু’টি পাখনা আসমানে বিছিয়ে রেখেছে। আর ঐ মাছটি একটি বড় পাথরের উপর অবস্থিত। আর ঐপাথর এক ফেরেশতার হাতে অবস্থিত। আর দ্বিতীয় যমীন হল বাতাসের জেলখানা । যেখানে বাতাসকে আটকে রাখা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা যখন আ’দ জাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করলেন,বাতাসের পর্যবেক্ষক ফেরেশতাকে আদেশ করলেন যে, এ জাতির উপর এই পরিমাণ বাতাস ছাড়, যা দ্বারা এ জাতি ধ্বংস হয়ে যায়। তখন ফেরেশতা বলল,হে আল্লাহ্! গরুর নাকের ছিদ্র পরিমাণ বাতাস ছাড়ব কি? আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করলেন, তা তো পুরো পৃথিবীবাসী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। না, এমন নয়; বরং একটি আংটি পরিমাণ ছিদ্রে বাতাস ছাড়, এদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান—مَا تَذَرُ مِنْ شَيْءٍ أَتَتْ عَلَيْهِ إِلَّا جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيْمِ “এ বাতাস যার উপরই প্রবাহিত হয় ঐ বস্তুকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে ।”

যমীনের তৃতীয় স্তরে হল পাথর। চতুর্থ স্তরে হল গন্ধক । সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! জাহান্নামেও কি গন্ধক রয়েছে? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, ঐ সত্তার শপথ! যার কুদরতী হাতে আমার জীবন, সেখানে তো বিশাল বিশাল গন্ধকের উপত্যকা ও ময়দান রয়েছে। সেখানে যদি বড় বড় পর্বতকেও নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তাও বিগলিত হয়ে যাবে । যমীনের পঞ্চম স্তরে রয়েছে জাহান্নামের সাপসমূহ । প্রতিটি সাপের মুখ হবে বিশাল উপত্যকার মত প্রশস্ত। এ সাপ যখন কাফেরদেরকে একবার দংশন করবে, তখন তার দেহে কোন গোশত থাকবে না। (অর্থাৎ, সকল গোশত ঝরে যাবে শুধু খাঁচাটুকু বিদ্যমান থাকবে। আর ষষ্ঠ স্তরে রয়েছে জাহান্নামের বিচ্ছু। তন্মধ্যকার সর্বাপেক্ষা ছোট বিচ্ছুটি হবে একটি গাভীন খচ্চরের সমান। (অর্থাৎ, যেমন মোটা তেমনই বড়)। এ বিষ্ণু যখন কাফেরদেরকে একবার দংশন করবে তার যন্ত্রণা এতই বেশি হবে যে, তারা জাহান্নামের আগুনের কষ্টকে তুচ্ছ মনে করতে থাকবে।) আর যমীনের সপ্ত স্তরে রয়েছে ‘সাকার’। সেখানে শয়তানকে তার পিঠের পেছন দিক থেকে হাতগুলো বেঁধে রাখা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা যখন চান তখন তাকে ছেড়ে দেন।

তথ্যসূত্র:

বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *