জাহান্নামীদের আযাব শুরু হবে কখন থেকে?
মৃত্যুর পরে যখন মানুষকে দাফন করা হবে, তখন ফেরেশ্তা কর্তৃক প্রশ্ন- উত্তরের মাধ্যমে তাকে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী হিসাবে আখ্যায়িত করা হবে। জান্নাতী হলে কবরে জান্নাতের সুখ ভোগ করবে। আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। অতএব জাহান্নামীদের শাস্তি শুরু হবে কবর থেকেই।
হাদীছে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتُعَادُ رُوْحُهُ فِي جَسَده وَيَأْتِيهِ مَلَكَان فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلاَنِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ هَاهُ هَاهُ لَا أَدْرِي فَيَقُولاَن لَهُ مَا دِينَكَ فَيَقُوْلُ هَاهُ هَاهُ لاَ أَدْرِي فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ فَافْرِشُوْهُ مِنَ النَّارِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ، قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُوْمِهَا قَالَ وَيُضَيِّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى يَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلاعُهُ وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيْحُ الْوَجْهِ قَبيْحُ الشَّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيحِ فَيَقُولَ أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوْعَدُ فَيَقُوْلُ لَهُ مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَحِيُّ بِالشَّرِّ فَيَقُولُ أَنَا عَمَلُكَ الْحَبِيْثُ –
বারা ইবনে আযেব (রা:) বলেন,রাসূল (সা:) বলেছেন,লাশ কবরে রাখা হলে আত্মা তার দেহে ফেরত দেয়া হয়। তখন তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রতিপালক কে? তখন সে উত্তরে বলে, হায়! হায়! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করেন তোমার দ্বীন কি? তখন সে উত্তরে বলে, হায়! হায়! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে যিনি প্রেরিত এসময় আকাশের দিক হতে একজন ঘোষণাকারী ডেকে বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও । তখন তার দিকে জাহান্নামের গরম হাওয়া আসতে থাকে। আর তার কবর এত সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, তার এক দিকের পাজরের হাড় অপর দিকে ঢুকে যায়।
এ সময় তার নিকট অতি কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট নোংরা বেশী দুর্গন্ধযুক্ত লোক এসে বলে, তোমাকে দুঃখিত করবে এমন জিনিসের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর। এদিন সম্পর্কে তোমাকে পৃথিবীতে ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল। তখন সে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? কি কুৎসিত তোমার চেহারা, যা মন্দ সংবাদ বহন করে! সে বলে আমি তোমার বদ আমল’। (আহমদ,হাদীস,১৮৫৫)
অন্যত্র রাসূল (সা:) বলেন وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلاَنِ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ هَاهُ هَاهُ لَا أَدْرِي، فَيَقُوْلاَنِ لَهُ مَا دِينَكَ فَيَقُولُ هَاهُ هَاهُ لَا أَدْرِي فَيَقُوْلاَنِ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ هَاهُ هَاهُ لاَ أَدْرِي فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ فَافْرِشُوْهُ مِنَ النَّارِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا إِلَي النَّارِ، قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُوْمِهَا قَالَ وَيُضَيِّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى يَخْتَلِفَ فِيْهِ أَضْلاعُهُ ثُمَّ يُقَيِّضُ لَهُ أَعْمَى أَصَمُّ مَعَهُ مِرْزَبَةٌ مِنْ حَدِيْدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلْ لَصَارَ تُرَابًا فَيُضْرَبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ إِلا الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيْرُ تُرَابًا ثُمَّ يُعَادُ فِيهِ الرُّوْحُ
‘তার আত্মাকে তার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দু’জন ফেরেশতা তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রতিপালক কে? তখন সে বলে, হায়! হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? সে পুনরায় বলে, হায়! হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তারা ইশারা করে বলেন, এই লোকটি কে, যিনি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন? সে পুনরায় বলে, হায়! হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। তারপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তখন তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তখন তার দিকে জাহান্নামের গরম হাওয়া আসতে থাকে। এছাড়া তার জন্য তার কবরকে এত সংকীর্ণ করে দেয়া হয় যাতে তার এক দিকের পাঁজরের হাড় অপর দিকের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। অতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার সাথে একটি লোহার হাতুড়ি থাকে। যদি এই হাতুড়ি দ্বারা কোন পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড়ও ধূলিকণায় পরিণত হয়ে যাবে। আর সেই ফেরেশতা এ হাতুড়ি দ্বারা তাকে অতীব জোরে আঘাত করেন। আর সে আঘাতের চোটে এত জোরে চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিমের সব কিছুই তা শুনতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর আবার তার দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকে)’। (আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; মিশকাত হা/১৩১; বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) হা/১২৪; আলবানী, সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে’ হা/১৬৭৬।)
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন