জাহান্নামের চিরস্থায়ী বাসিন্দা

মানব জাতির মধ্যে যারা আল্লাহ তা’আলার সাথে বড় শিরকে লিপ্ত হয় এবং কুফরী করে তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। কখনই তারা জাহান্নামের শাস্তি হতে সামান্যতম অবকাশ পাবে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

‘যারা আমার আয়াত সমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী’ (আ’রাফ ৭/৩৬)।

তিনি অন্যত্র বলেন, لَوْ كَانَ هَؤُلاءِ آلِهَةً مَا وَرَدُوْهَا وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ –

যদি তারা ইলাহ হত তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না। আর তারা সবাই তাতে স্থায়ী বসবাস করবে’ (সূরা আম্বিয়া ২১/৯৯)।

তিনি অন্যত্র বলেন, إِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ –

‘নিশ্চয়ই অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে স্থায়ী হবে; (সূরা যুখরুফ ৪৩/৭৪)।

তিনি অন্যত্র বলেন, وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لاَ يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُحَفِّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا-

‘যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফায়ছালা দেওয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না’ (সূরা ফাতির ৩৫/৩৬)।

তিনি অন্যত্র বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ خَالِدِينَ فِيهَا لاَ يُخَفِّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنْظَرُوْنَ –

‘নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লা’নত। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবেনা। (সূরা বাকারা,২/১৬১-১৬২)

তিনি অন্যত্র বলেন,

أَلَمْ يَعْلَمُوْا أَنَّهُ مَنْ يُحَادِدِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنْ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ذَلِكَ الْحَزْيُ الْعَظِيمُ

‘তারা কি জানে না? যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, তবে তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহা লাঞ্ছনা। (সূরা তাওবা,৯/৬৩)

তিনি অন্যত্র বলেন,

مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ أَنْ يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ أُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ –

‘মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহ্র মসজিদ সমূহ আবাদ করবে, নিজেদের উপর কুফরীর সাক্ষ্য দেওয়া অবস্থায়। এদেরই আমল সমূহ বরবাদ হয়েছে এবং আগুনেই তারা স্থায়ী হবে’ (সূরা তাওবা ৯/১৭)। অতএব কাফির-মুশরিকগণ জাহান্নামের মধ্যে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে এবং জাহান্নামের আযাব তাদের উপর স্থায়ী হবে যা কখনও অবকাশ দিবে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنَ النَّارِ وَمَا هُمْ بِخَارِحِيْنَ مِنْهَا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ –

‘তারা চাইবে আগুন থেকে বের হতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব’ (সূরা মায়েদাহ ৫/৩৭)।

তিনি অন্যত্র বলেন, ثُمَّ قِيْلَ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا ذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ –

‘এরপর যারা যুলম করেছে তাদের বলা হবে, স্থায়ী আযাব আস্বাদন কর। তোমরা যা অর্জন করতে তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে’। (সূরা ইউনুস,১০/৫২)

হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ ثُمَّ يَقُوْمُ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ يَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ الجَنَّة لاَ مَوْتَ خُلُوْدٌ

ইবনু ওমর (রা:) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে বর্ণিত, জান্নাতে প্রবেশ করবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তখন তাদের মাঝে একজন ঘোষণাকারী দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেবে যে, হে জাহান্নামীরা! এখানে মৃত্যু নেই। আর হে জান্নাতবাসীরা! এখানে মৃত্যু নেই। এ জীবন চিরন্তন। (বুখারী,হাদীস,৬৫৪৪)

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَارَ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلَى الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ إِلَى النَّارِ جِيءَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يُجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لاَ مَوْتَ يَا أَهْلَ النَّارِ لاَ مَوْتَ فَيَزْدَادُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ

ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতীরা জান্নাতে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাওয়ার পর মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে, এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্য স্থানে রাখা হবে। এরপর তাকে যবেহ্ করে দেওয়া হবে, অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে যে, হে জান্নাতীরা! আর মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীরা! আর মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতীদের বাড়বে আনন্দের উপর আনন্দ। আর জাহান্নামীদের বাড়বে দুঃখের উপর দুঃখ। বুখারী হা/৬৫৪৮, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৬/৬৩ পৃঃ; মুসলিম হা/২৮৫০; মিশকাত হা/৫৫৯১।

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُؤْتَى بِالْمَوْتِ كَهَيْئَةِ كَبْشٍ أَمْلَحَ فَيُنَادِى مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ، فَيَشْرَئِئُونَ وَيَنْظُرُونَ فَيَقُولُ هَلْ تَعْرِفُوْنَ هَذَا فَيَقُولُونَ نَعَمْ هَذَا الْمَوْتُ، وَكُلُّهُمْ قَدْ رَآهُ، ثُمَّ يُنَادِى يَا أَهْلَ النَّارِ، فَيَشْرَبُونَ وَيَنْظُرُونَ ، فَيَقُوْلُ هَلْ تَعْرِفُوْنَ هَذَا فَيَقُولُوْنَ نَعَمْ هَذَا الْمَوْتُ، وَكُلُّهُمْ قَدْ رَآهُ، فَيُذْبَحُ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ، خُلُوْدٌ فَلاَ مَوْتَ، وَيَا أَهْلَ النَّارِ، خُلُوْدٌ فَلَا مَوْتَ-

আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মৃত্যুকে একটি ধূসর রঙের মেষের আকারে আনা হবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তাঁরা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এ হল মৃত্যু। কেননা সকলেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! তখন জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। তখন সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কেননা তারা সকলেই তাকে দেখেছে । তারপর (মৃত্যুকে) যবেহ করা হবে। আর ঘোষণাকারী বলবেন, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে এখানে থাক । তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই । আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন এখানে থাক। তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই ৷ বুখারী হা/৪৭৩০; মুসলিম হা/২৮৪৯।

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, মৃত্যুকে যবেহ করার পর যখন চিরস্থায়ী বসবাসের ঘোষণা দেওয়া হবে তখন জান্নাতীরা এতো বেশী খুশী হবে যে, আল্লাহ না বাঁচালে খুশীর আধিক্য হেতু তারা মরেই যেত। আর জাহান্নামবাসীরা ভীষণ দুঃখিত হবে।

তথ্যসূত্র:

জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব

শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন