ইসলাম

আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করার পরিণতি

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। এই নিয়ামতগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পদ, জ্ঞান, পরিবার, এবং প্রকৃতির অপরিসীম দান। কুরআনুল কারীম এবং হাদিসে বারবার আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এগুলো স্বীকার করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে, যারা আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করে, তাদের জন্য শাস্তির ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

এই প্রবন্ধে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করার পরিণতি বিশদভাবে আলোচনা করব।

আল্লাহর নিয়ামত: একটি অপার দান

আল্লাহ তাআলা বলেছেন: وَإِن تَعُدُّوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحْصُوهَآ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ

“আর যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গুণতে চাও, তবে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা নাহল: ১৮)

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহর দান এতটাই অসীম যে তা গণনা করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। তাই, এগুলো অস্বীকার করা স্পষ্টতই অকৃতজ্ঞতা।

নিয়ামত অস্বীকার করার কারণ

নিয়ামত অস্বীকারের পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে:

অজ্ঞতা : মানুষ যখন আল্লাহর দান এবং সৃষ্টির মাহাত্ম্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তখন তারা নিয়ামত অস্বীকার করে।

অহংকার: নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করা এবং আল্লাহর দানের জন্য কৃতজ্ঞ না হওয়া।

শয়তানের প্ররোচনা : শয়তান মানুষের মনে অবাধ্যতা এবং অকৃতজ্ঞতার চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়।

নিয়ামত অস্বীকারের শাস্তি কুরআনের আলোকে

কুরআনে আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকারকারীদের কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আযাবের ঘোষণা

: وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِى لَشَدِيدٌ

“তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের আরও দান করব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন।’”(সূরা ইবরাহিম: ৭)

পথভ্রষ্টতা:

যারা আল্লাহর দান অস্বীকার করে, তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়ে যায় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

হাদিসের আলোকে নিয়ামত অস্বীকারের শাস্তি

হাদিসে নিয়ামত অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে কঠিন সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়।” — (তিরমিজি: ১৯৫৪)

এখানে বুঝানো হয়েছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভাব শয়তানের অনুসরণ এবং নিয়ামত অস্বীকারের সমতুল্য।

নিয়ামত অস্বীকারের দুনিয়াবি পরিণতি

আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করলে বা আল্লাহর নেয়ামতের না-শোকরি করলে আল্লাহ তাআলা নগদেই শাস্তি দেন। সুরা নাহালে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিজিক তাতে বিপুলভাবে আসত। অতঃপর সে আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করল। তখন তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন।’ (সুরা নাহাল: ১১২)

১.দৈহিক ও মানসিক কষ্ট: অশান্তি এবং হতাশা বৃদ্ধি পায়।

২.বরকত হ্রাস: সম্পদ, সময়, এবং জীবনে বরকত কমে যায়।

৩.মানুষের সাথে সম্পর্কের অবনতি: কৃতজ্ঞতাহীন মানুষ সমাজে অপ্রিয় হয়ে পড়ে।

নিয়ামত অস্বীকার থেকে বাঁচার উপায়

নিয়ামত অস্বীকার থেকে বাঁচতে আমাদের নিম্নলিখিত কাজগুলো করা উচিত:

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া: সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করে তাঁর নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা।

সৎকর্ম করা: নিয়ামতের যথাযথ ব্যবহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

প্রার্থনা করা: আল্লাহর থেকে নিয়ামত গ্রহণ করার পাশাপাশি সেগুলো রক্ষার জন্য দোয়া করা।


উপসংহার

আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করা একটি গুরুতর অপরাধ। যারা এটি করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়ামতকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *