ইসলাম

ব্যভিচারের দুনিয়াবী শাস্তি

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলাম ব্যভিচার (জিনা)-কে একটি জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটি কেবল ব্যক্তির জন্য নয়, বরং সমাজ ও মানবজাতির জন্য ধ্বংসাত্মক। আল্লাহ তা’আলা কোরআন ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিসে ব্যভিচারের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।

কোরআনে ব্যভিচারের শাস্তি

কোরআনে ব্যভিচারের শাস্তি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

“ব্যভিচারিণী নারী এবং ব্যভিচারী পুরুষ—তোমরা তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করো। আর যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও, তবে এই শাস্তি কার্যকর করতে তোমাদের মনে কোনো প্রকার দয়া আসা উচিত নয়। আর তাদের শাস্তি কার্যকর করার সময় মুমিনদের একটি দল উপস্থিত থাকবে।” (সূরা আন-নূর: ২৪:২)

এখানে অবিবাহিতদের জন্য শাস্তি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিসে বিবাহিত ব্যভিচারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানও উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদিসে ব্যভিচারের শাস্তি

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যভিচারের শাস্তি কঠোরভাবে প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা হলো:

১. মাআজ ইবনে মালিক (রাঃ)-এর ঘটনা:

তিনি স্বেচ্ছায় নিজের অপরাধ স্বীকার করলে রাসূল (সাঃ) তাকে তওবা করতে বলেন। কিন্তু তিনি অনড় থাকলে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬৮২৪)

২. গামিদিয়া নারীর ঘটনা:

এক নারী ব্যভিচারের অপরাধ স্বীকার করলে রাসূল (সাঃ) তার সন্তান জন্মানো ও দুধ ছাড়ানোর পর তার শাস্তি কার্যকর করেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৯৫)

দুনিয়াবী ও পরকালীন শাস্তি

ইসলামি শরিয়তে ব্যভিচারের শাস্তি দুনিয়া ও পরকালে বিভক্ত। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যভিচারের কারণে ছয়টি শাস্তি রয়েছে—তিনটি দুনিয়ায় এবং তিনটি পরকালে।

দুনিয়ার তিনটি শাস্তি:

১. মর্যাদাহানি:

ব্যভিচারকারী ব্যক্তির সমাজে ইজ্জত ও সম্মান নষ্ট হয়ে যায়।

২. দারিদ্র্যের কবলে পড়া:

ব্যভিচারের ফলে জীবনে বরকত চলে যায় এবং ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

৩. আকস্মিক মৃত্যু বা বিপর্যয়:

ব্যভিচার আল্লাহর গজব নেমে আসার কারণ হতে পারে, যা ব্যক্তি বা সমাজে ধ্বংস ডেকে আনে।

পরকালের তিনটি শাস্তি:

১. আল্লাহর ক্রোধ:

ব্যভিচারকারী আল্লাহর ক্রোধের শিকার হবে এবং আল্লাহ তাকে পরকালে কঠোরভাবে শাস্তি দেবেন।

২. কবরের শাস্তি:

ব্যভিচারকারীরা মৃত্যুর পর কবরেই কঠিন শাস্তি পায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মিরাজের সময় তিনি দেখেছিলেন যে ব্যভিচারকারীরা একটি তন্দুরের মতো গর্তে আগুনে পুড়ছে। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৭০৪৭)

৩. জাহান্নামের শাস্তি:

ব্যভিচারকারী তওবা ছাড়া মারা গেলে তার স্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম।

আল্লাহ বলেন: “যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে, সে পরকালে লাঞ্ছিত হবে এবং তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে।” (সূরা আল-ফুরকান: ২৫:৬৮-৬৯)

তওবার সুযোগ ও আল্লাহর রহমত

ব্যভিচার একটি মারাত্মক পাপ হলেও আল্লাহর দরবারে আন্তরিক তওবা করলে তিনি ক্ষমা করেন। আল্লাহ বলেন:

“যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলোকে সৎকর্মে পরিণত করেন।” (সূরা আল-ফুরকান: ২৫:৭০)

রাসূল (সাঃ) আরও বলেন:

“তওবাকারী ব্যক্তি সেই ব্যক্তির মতো, যে কখনো পাপ করেনি।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪২৫০)


উপসংহার

ব্যভিচার ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ, যা ব্যক্তির আত্মা, পরিবার এবং সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। এই পাপের কারণে দুনিয়ায় মর্যাদাহানি, দারিদ্র্য, এবং বিপর্যয় নেমে আসে। পরকালে এটি আল্লাহর ক্রোধ, কবরের শাস্তি, এবং জাহান্নামের আজাবের কারণ হয়। তবে তওবার দরজা সবসময় খোলা। আল্লাহর দিকে ফিরে এসে সৎকর্মে লিপ্ত হলে আল্লাহ এই পাপ ক্ষমা করে দেন এবং তার জন্য জান্নাতের পথ উন্মুক্ত করেন।

তথ্যসূত্র:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *