জুয়া খেলা হারাম।
ইসলামে জুয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং এটি একটি বড় গুনাহ। এটি সমাজে অর্থনৈতিক ও নৈতিক ক্ষতি ডেকে আনে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে জুয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো:
জুয়া কী?
জুয়া (আরবিতে: মাইসির) অর্থ হলো এমন কোনো খেলা বা কার্যক্রম যার মাধ্যমে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে সম্পদ অর্জন বা হারানোর ঝুঁকি থাকে। এটি এমন একটি কাজ যেখানে একপক্ষ লাভবান হয় এবং অপরপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কুরআনের আলোকে জুয়ার নিষেধাজ্ঞা
১. জুয়া শয়তানের কাজ
আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজা ও ভাগ্য নির্ধারণের তীর—এসব শয়তানের কাজের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সূরা আল-মায়েদা: ৯০)
এ আয়াতে জুয়াকে শয়তানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং একে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২. শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি
আল্লাহ আরও বলেন:
“শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে?” (সূরা আল-মায়েদা: ৯১)
এই আয়াতে জুয়ার সামাজিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে।
হাদিসের আলোকে জুয়ার নিষেধাজ্ঞা
১. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবাণী
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি বলে, ‘চল জুয়া খেলি,’ সে যেন দান-সদকা করে এই কথা বলার কাফফারা দেয়।” (সহিহ বুখারি: ৪৫৭৯)
এই হাদিসে জুয়ার প্রতি কেবল আগ্রহ প্রকাশ করাও নিষিদ্ধ এবং এ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২. হারাম উপার্জন
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “সততার মাধ্যমে উপার্জিত এক মুষ্টি খাদ্য হারাম পথে উপার্জিত পুরো পাহাড়সমান সম্পদের চেয়ে উত্তম।” (তিরমিজি: ১২০৯)
জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ হারাম এবং এটি আল্লাহর গজব ডেকে আনে।
জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব
১. দুনিয়াবী ক্ষতি:
অর্থনৈতিক ধ্বংস: জুয়া সম্পদের অপচয় ঘটায় এবং দারিদ্র্যের কারণ হয়।
পারিবারিক অশান্তি: জুয়া পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করে।
অপরাধ বৃদ্ধি: জুয়া অপরাধপ্রবণতা বাড়ায়, যেমন চুরি, প্রতারণা এবং সহিংসতা।
২. আখিরাতের শাস্তি:
জুয়া আল্লাহর গজব ডেকে আনে।
হাশরের ময়দানে লজ্জা ও অপমান।
জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।
জুয়া থেকে বাঁচার উপায়
১. আল্লাহর কাছে তওবা করা: জুয়া থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প নেওয়া। ২. অর্থনৈতিক সচেতনতা: হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। ৩. ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন: কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসারে জীবন পরিচালনা করা। ৪. পরিবার ও সমাজের ভূমিকা: পরিবার ও সমাজকে এ সম্পর্কে সচেতন করা এবং জুয়া প্রতিরোধে একত্রে কাজ করা।
উপসংহার
জুয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। কুরআন ও হাদিসে জুয়া নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। জুয়া থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুয়া ও সকল হারাম কাজ থেকে রক্ষা করুন।জু
তথ্যসূত্র:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স