ইসলাম

যাকাত আদায় না করার ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি:

যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এটি প্রত্যেক সক্ষম মুসলিমের জন্য ফরজ। এটি কেবল ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যাকাত আদায় না করলে এর ইহকালীন এবং পরকালীন শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। কোরআন ও হাদিসে এর ব্যাপারে কঠোর সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়েছে।


ইহকালীন শাস্তি: কোরআন ও হাদিসের আলোকে

যাকাত আদায় না করার ফলে দুনিয়াতে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি নেমে আসতে পারে, যা সমাজ ও ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলে।

১. সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া

যাকাত না দিলে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় এবং বরকত উঠিয়ে নেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: لَا تُؤَدَّى زَكَاةُ الْمَالِ إِلَّا أُهْلِكَ الْمَالُ “যখন সম্পদের যাকাত আদায় করা হয় না, তখন সেই সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়।”(সহিহ বুখারি)

২. খরা ও বৃষ্টি বন্ধ হওয়া

যাকাত বন্ধ রাখার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

مَا مَنَعَ قَوْمٌ الزَّكَاةَ إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا

“যে সম্প্রদায় যাকাত বন্ধ করে, তাদের জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টি বন্ধ করা হয়। আর যদি পশুপাখি না থাকত, তাহলে তাদের জন্য একেবারেই বৃষ্টি হত না।”(ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)

৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি

যাকাত দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করে। এটি বন্ধ রাখলে সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বেড়ে যায়। ফলে সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

৪. দারিদ্র্যের প্রসার

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: مَا مَنَعَ قَوْمٌ الزَّكَاةَ إِلَّا احْتَاجُوا

“যে জাতি যাকাত বন্ধ করে, তারা নিজেরাই অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে।”(তাবরানি)

৫. বরকতের অভাব

আল্লাহ বলেন: وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

“তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, আল্লাহ তা পূর্ণ করবেন এবং তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা।”(সুরা সাবা: ৩৯) যাকাত না দিলে সম্পদে আল্লাহর বরকত উঠে যায় এবং জীবনে অশান্তি নেমে আসে।


পরকালীন শাস্তি: কোরআন ও হাদিসের আলোকে

১. কঠিন আযাবের হুমকি

আল্লাহ বলেন: وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

“যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের জন্য এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।” (সুরা আত-তাওবা: ৩৪)

২. কিয়ামতের দিনে সম্পদ শাস্তির উপকরণ হবে

আল্লাহ বলেন: يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ

“যে দিন তাদের জমা করা সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে।” (সুরা আত-তাওবা: ৩৫)

৩. সর্পের আকারে সম্পদ ফেরা

হাদিসে এসেছে: مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ، مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيبَتَانِ

“যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং সে যাকাত আদায় করেনি, তার সেই সম্পদ কিয়ামতের দিন বিশাল বিষাক্ত সাপের রূপ নেবে, যার দুই চোখের উপর বিষ থাকবে। সে তার মালিককে চিবিয়ে খাবে এবং বলবে: ‘আমি তোমার ধন-সম্পদ।’”(সহিহ বুখারি: ১৪০৩)

৪. জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া

যাকাত আদায় না করা ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।

কোরআনে বলা হয়েছে: إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بان لهم الجنه

“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।” (সুরা আত-তাওবা: ১১১) যারা এই সম্পদের হক আদায় করে না, তারা জান্নাতের এই প্রতিশ্রুতি থেকে বঞ্চিত হবে।


উপসংহার

যাকাত আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। এটি কেবলমাত্র ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। যারা যাকাত আদায় করে না, তারা ইহকাল ও পরকালে উভয় জগতে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হবে।

কীভাবে শাস্তি থেকে বাঁচা যায়?

  1. যাকাত সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
  2. নিয়মিত নিজের সম্পদের হিসাব রেখে যাকাত আদায় করা।
  3. সমাজে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা।

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং ইহকাল ও পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *