কেমন হবে জান্নাতের আকৃতি?
জান্নাত এমন এক স্থান, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন। এটি এমন এক চিরস্থায়ী আনন্দের জায়গা, যেখানে থাকবে সুখ, শান্তি এবং আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ। কুরআন এবং হাদিসে জান্নাতের বিস্তৃতি, সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তৃত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই প্রবন্ধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতের আকৃতি, সৌন্দর্য এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
জান্নাতের বিশালতা
জান্নাতের বিস্তৃতি অসীম। এটি দুনিয়ার আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত সীমানা ছাড়িয়ে বিশালতায় পরিপূর্ণ।
কুরআনে আল্লাহ বলেন: وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর সমান। এটি মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)
এছাড়াও, জান্নাতের স্তর ও তার বিস্তৃতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
إِنَّ فِي ٱلۡجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا ٱللَّهُ لِلۡمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِهِۦ، مَا بَيۡنَ ٱلدَّرَجَتَيۡنِ كَمَا بَيۡنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ
“জান্নাতে একশত স্তর রয়েছে, যা আল্লাহ তার পথে মুজাহিদদের জন্য প্রস্তুত করেছেন। প্রত্যেক স্তরের মধ্যে ব্যবধান আসমান ও জমিনের ব্যবধানের মতো।” (সহীহ বুখারী: ২৭৯০)
জান্নাতের নির্মাণশৈলী
জান্নাতের বাড়ির রূপ-বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। নির্মাণশৈলী আলাদা।
কোনো শিল্পী তাঁর রংতুলিতে তা আঁকতে পারবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! জান্নাতের নির্মাণ কী দিয়ে? তিনি বলেন, এর একটি ইট হলো রুপার, আরেকটি হলো সোনার। এর গাঁথুনি হলো সুগন্ধময় মিশকের। এর নুড়িগুলো হলো মাটির ও ইয়াকুতের।
মাটি হলো জাফরানের। যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করবে সে নিয়ামত ও সুখ ভোগ করবে। কষ্ট পাবে না কখনো। সর্বদা থাকবে—মৃত্যু হবে না কখনো। তাদের পরিচ্ছদ কখনো পুরনো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো শেষ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫২৬)
জান্নাতি বৃক্ষের মহিমা
জান্নাতের বৃক্ষরাজি অত্যন্ত সুবিশাল ও সৌন্দর্যপূর্ণ।
আল্লাহ বলেন: وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ
“আর ডানদিকের সাথীরা! কী অপূর্ব ডানদিকের সাথীরা! তারা থাকবে কাঁটাহীন লোটাবৃক্ষের নিচে এবং স্তরে স্তরে সাজানো কলাগাছে।” (সূরা ওয়াকিয়া: ২৭-২৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জান্নাতের বৃক্ষের ছায়া সম্পর্কে বলেছেন:
إِنَّ فِي ٱلۡجَنَّةِ لَشَجَرَةً يَسِيرُ ٱلرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقۡطَعُهَا “জান্নাতে একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ার নিচ দিয়ে একশত বছর ধরে চললেও শেষ হবে না।”(সহীহ বুখারী: ৩২৫১)
জান্নাতি ফলের সৌন্দর্য
জান্নাতের ফল দুনিয়ার যেকোনো ফলের চেয়ে সুস্বাদু এবং সহজলভ্য।
কুরআনে বলা হয়েছে: وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ لَّا مَقۡطُوعَةٖ وَلَا مَمۡنُوعَةٖ
“সেখানে থাকবে প্রচুর ফলমূল, যা কখনো শেষ হবে না এবং তাদের নাগালের বাইরে যাবে না।” (সূরা ওয়াকিয়া: ৩২-৩৩)
আরও বলা হয়েছে: قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ “এর ফলমূল হবে কাছে টানা অবস্থায়।”(সূরা হাক্কাহ: ২৩)
জান্নাতের নদী
জান্নাতে প্রবাহিত হবে চিরবহমান নদী, যা জান্নাতের অপূর্ব সৌন্দর্য ও প্রশান্তির মূল উৎস।
আল্লাহ বলেন: فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٞ لِّلشَّـٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗى
“জান্নাতে প্রবাহিত হবে পানির নদী, যা কখনো দূষিত হবে না; দুধের নদী, যার স্বাদ কখনো পরিবর্তিত হবে না; মদের নদী, যা পানকারীদের জন্য উপাদেয়; এবং বিশুদ্ধ মধুর নদী।” (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
জান্নাতের ঝর্ণা
জান্নাতে ঝর্ণার কথাও বর্ণিত হয়েছে, যা জান্নাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
আল্লাহ বলেন: إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ
“নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় এবং ঝর্ণাধারার পাশে।” (সূরা মুরসালাত: ৪১)
এছাড়াও, কুরআনে উল্লেখ রয়েছে: عَيۡنٗا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلۡسَبِيلٗا
“সেখানে থাকবে একটি ঝর্ণা, যার নাম সালসাবিল।” (সূরা ইনসান: ১৮)
উপসংহার
জান্নাত এমন এক স্থান, যা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য প্রস্তুত। এর আকৃতি, বিস্তৃতি, বৃক্ষ, ফল, নদী, ঝর্ণা এবং সৌন্দর্য আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। কুরআন ও হাদিসে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা প্রমাণ করে যে এটি হবে এক অসীম সুখের স্থান। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।
সংকলক:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স