ইসলাম

সালামের মাধ্যমে জান্নাতীদের বরণ নিবেন ফেরেশতারা

জান্নাত এমন একটি স্থান, যা আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। এটি এমন এক শান্তি ও সুখের আবাস, যেখানে কোনো ক্লান্তি, দুঃখ বা কষ্ট থাকবে না। কুরআন ও হাদিসে বারবার জান্নাতের বর্ণনা এসেছে, যা মুমিনদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দেয় এবং তাদের উৎসাহিত করে। জান্নাতের প্রতি এই আকর্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, জান্নাতে প্রবেশের মুহূর্তে ফেরেশতারা কীভাবে জান্নাতীদের বরণ করবেন। এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। এই প্রবন্ধে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতীদের বরণ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করব।


জান্নাতীদের বরণ কুরআনের আলোকে

কুরআনে জান্নাতীদের বরণ ও তাদের মর্যাদার কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরেশতাদের অভ্যর্থনার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জান্নাতীদের সম্মানিত করবেন।

১. দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ

আল্লাহ তাআলা বলেন: إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ

“যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ এবং এরপর তারা দৃঢ়তায় অটল থাকে, তাদের ওপর ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়। তারা বলে, ‘তোমরা ভয় পেও না এবং দুঃখ করো না; এবং তোমাদেরকে সেই জান্নাতের সুসংবাদ দাও যা তোমাদের প্রতিশ্রুত করা হয়েছে।’” (সূরা ফুসসিলাত: ৩০)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, সৎকর্মশীল মুমিনদের মৃত্যুর সময়ই ফেরেশতারা তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেয় এবং তাদেরকে দুঃখ ও ভয়ের হাত থেকে মুক্তি দেয়।

২. জান্নাতে প্রবেশের সময় অভ্যর্থনা

আল্লাহ তাআলা বলেন: وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ

যারা তাদের রবকে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যখন জান্নাতে পৌঁছবে এবং এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে, তখন জান্নাতের রক্ষক ফেরেশতারা বলবে, ‘তোমাদের ওপর সালাম। তোমরা কল্যাণ লাভ করেছ। সুতরাং তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল থাক।’”(সূরা আয-যুমার: ৭৩)

ফেরেশতারা জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে মুমিনদের “সালামুন আলাইকম” বলে অভ্যর্থনা জানাবে এবং তাদের চিরস্থায়ী সুখের জীবনযাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।

৩. ধৈর্যের জন্য পুরস্কার

আল্লাহ বলেন: سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

“তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক তোমাদের ধৈর্যের জন্য। এটাই তো উত্তম পরিণাম।”(সূরা আর-রাদ: ২৪)

ফেরেশতারা মুমিনদের ধৈর্যের প্রশংসা করে তাদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করবে এবং তাদের জন্য জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করবে।


জান্নাতীদের বরণ হাদিসের আলোকে

১. জান্নাতে প্রবেশের সময় সালাম

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: فَيُفْتَحُ لَهُ فَيُقَالُ لَهُ سَلَامٌ عَلَيْكَ طِبْتَ فَادْخُلْهَا خَالِدًا

“জান্নাতের দরজা তার জন্য খুলে দেওয়া হবে এবং তাকে বলা হবে, ‘তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তুমি কল্যাণ লাভ করেছ, চিরকাল এতে প্রবেশ কর।’’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৮৭৭)

২. জান্নাতের পথে ফেরেশতাদের অভ্যর্থনা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেছেন, ফেরেশতারা জান্নাতের পথে জান্নাতীদের সামনে থাকবে এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। ফেরেশতারা বলবে: سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ “তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক তোমাদের ধৈর্যের জন্য। এটাই তো উত্তম পরিণাম।”(সহীহ তাফসির, সূরা আর-রাদ: ২৪)

৩. জান্নাতের সীমাহীন সুখ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: فِي الْجَنَّةِ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ

“জান্নাতে রয়েছে এমন সব কিছু, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো মানুষের কল্পনায়ও আসেনি।” (সহীহ বুখারি, হাদিস: ৩০৭২; সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৮২৪)

এই হাদিস জান্নাতের অসীম সৌন্দর্য এবং জান্নাতীদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার চিত্র তুলে ধরে।


সংকলক: মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *