তাকলীদ শব্দের শাব্দিক ওপারিভাষিক সংঙ্গা
তাকলীদ শব্দের শাব্দিক অর্থ
تَقْلِيْدُ শব্দটি এসেছে الْقِلَادَةُ থেকে, যার অর্থ হল গলার হার।
আল কামূসুল মুহীত গ্রন্থে এসেছে : الْقِلَادَةُ مَا جُعِلَ فِى الْعُنُقِ وَ تَقَلَّدَ : لَبِسَهَا … وَمِنْهُ تَقْلِيْدُ الوُلَاةِ الْأَعْمَالَ . “কিলাদার অর্থ হল, যা গলায় দেয়া হয়। তাকাল্লাদা শব্দের অর্থ হল, সে হার পরিধান করেছে। এ শব্দ থেকে আরবীতে تَقْلِيْدُ الوُلَاةِ الْأَعْمَالَ এসেছে যার অর্থ প্রশাসকদেরকে কাজের দায়িত্ব দেয়া ।”আল কামূসুল মুহীত ১/৪৫৭, লি মাজদুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকূব ইবনে মুহাম্মাদ আল ফাইরূয আবাদী আস সিরাযী আশ শাফেঈ, মৃত ৮১৭ হিজরী, মুদ্রণ : মাকতাবাতু দারিল বায, মক্কাতুল মুকাররামা ।
আরবী প্রসিদ্ধ অভিধান গ্রন্থ লিসানুল আরাবে এসেছে : এসেছে। القِلَادَةُ مَا جُعِلَ فِي الْعُنُقِ يَكُونُ لِلْإِنْسَانِ وَالْفَرَسِ وَ الْكَلْبِ وَالْبَدَنَةِ الَّتِي تُهْدَى وَنَحْوُهَا. “কিলাদার অর্থ হল, যা গলায় দেয়া হয়। এটা মানুষের জন্য, ঘোড়া, কুকুর ও উটের জন্য হয়ে থাকে, যে উট হাদী হিসাবে পেশ করা হয়।”লিসানুল আরাব ১১/২৭৬, লি ইবনিল মানযূর আল আফ্রীকী, মৃত ৭১১ হিজরী, মুদ্রণ : দারু ইহ্ইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী, বাইরূত।
তাকলীদ শব্দের শাব্দিক অর্থ অনুসরণ করা, আনুগত্য করা, নির্দেশ মেনে চলা, অনুকরণ করা ইত্যাদি। বিখ্যাত অভিধান গ্রন্থগুলোতে শাব্দিক অর্থের স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘আল মু’জামুল ওয়াসীত’-এর মধ্যে রয়েছে, কোন ব্যক্তি কারো তাকলীদ করলে বলা হয়, قلدَ فُلاناً الامْرَأَوِ الْعَمَلَ فَوَّضَهُ إِلَيْهِ وَالْزَمَ إِيَّاهُ “সে অমুকের আদেশ মেনে চলেছে অথবা কাজেকর্মে তার অনুসরণ করেছে। তার প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেছে এবং তার সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নিয়েছে।”আল মু’জামুল ওয়াসীত ৭৫৪, মুদ্রণ: কুতুবখানায়ে হুসাইনিয়া, দেওবন্দ, ভারত।
আল্লামা মুতাররিযী (রহ.) তার আরবী অভিধান গ্রন্থে লিখেছেন : تَقْلِيْدُ الْهَدْيِ اَنْ يُعَلَّقَ بِعُنُقِ الْبَعِيرِ قِطْعَةُ نَعْلِ اَوْ مُزَادَةٌ لِيُعْلَمَ أَنَّهُ هَدْى. تَقْلِيْدُ الْهَدْيِ : এর অর্থ হল, “উটের গলায় জুতা অথবা চামড়ার টুকরা লটকিয়ে দেওয়া, যাতে করে লোকেরা বুঝে যে এটা কুরবানীর জানোয়ার। আর মুগরিব ২/১৩১।
সোরাহ গ্রন্থকার লিখেছেন, “তাকলীদ হলো, গলায় হার বা এ জাতীয় কোন কিছু ঝুলিয়ে দেয়া। কুরবানীর জন্তুর গলায় কোন কিছু ঝুলিয়ে দেয়া আলামত হিসাবে।
তাকলীদের পারিভাষিক সংঙ্গা
তাকলীদের পারিভাষিক সংঙ্গা দিতে যেয়ে ‘উসূলে ফিকহ’র প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হুসামী’র ব্যাখ্যাকার লিখেছেন, التَّقْلِيدُ اتَّبَاعُ الْغَيْرِ عَلَى ظَنْهِ مُحِقِّ بِلَانَظُرِ فِي الدَّلِيلِ .. “তাকলীদ বলা হয়, কাউকে সত্যপন্থী মনে করে কোনো প্রকার দলীলের প্রতি দৃষ্টিপাত না করেই তার আনুগত্য করা।”আন নামী শরহুল হুসামী ১৯০।
আহলে হাদীসের খ্যাতনামা আলিম মাওলানা নাযীর হুসাইন (রহ.) বলেন, ‘পরিভাষায় তাকলীদের অর্থ হলো, কোন ব্যক্তির উক্তি দলীল ছাড়া মেনে নেয়া এবং তদানুযায়ী আমল করা, যার উক্তি শরয়ী দলীল নয়। মি’ইয়ারে হক ৪৫।
মাওলানা কাযী মুহাম্মদ আলী থানভী (রহ.) লেখেন, التَّقْلِيدُ اتَّبَاعُ الْإِنْسَانِ وَغَيْرِهِ فِيْمَا يَقُولُ اَوْ يَفْعَلُ لِلْحَقِّيَّةِ مِنْ غَيْرِ نَظْرٍ إِلَى الدَّلِيلِ. “তাকলীদ হলো, কোন ব্যক্তিকে সত্যপন্থী বিশ্বাস করে তার কথা ও কর্মের অনুকরণ করা, কোন দলীল-প্রমাণ না দেখে।”কাশ্শাফু ইস্তেলাহাতিল ফনূন ১১৭৮ ।
মূলকথা হলো, কুরআন-হাদীসের সঠিক ও অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যার জানা নেই, সে ব্যক্তি দীনের গভীর ইলমের অধিকারী কোন মুজতাহিদের আনুগত্য করবে, যেহেতু মুজতাহিদ শরীয়ত প্রণেতা নয়, তাই তার বক্তব্য শরয়ী দলীলও নয়। সে শুধু শরীয়ত পর্যন্ত পৌছার মাধ্যম বা রাহনুমা। আর এটাই তাকলীদ।
তথসূত্র:
তাকলীদ ও মাযহাব প্রসঙ্গ
মুফতি হিফজুর রহমান
প্রধান মুফতি,জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাতমসজিদ,মুহাম্মদপুর,ঢাকা।