ইসলাম

ব্যক্তি তাকলীদ সম্পর্কে সাহাবার ঐকমত্য

হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহ.) ‘ইযালাতুল খিফা’ নামক গ্রন্থে বলেন, গবেষণামূলক বিধি-বিধান সমূহে পরামর্শ করা সত্ত্বেও এবং হাদীস সমূহ পুরোপুরি অনুসন্ধান করার পরও সাহাবাদের মধ্যে ব্যক্তি বিশেষের তাকলীদ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। কেননা, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তিরোধানের পর মুসলিম খলীফাগণ যখন কোন কাজে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতেন, তখন কেউ তাদের বিরোধিতা করতেন না। খলীফার গভীর পর্যবেক্ষণকৃত মতামতের বাইরে কোন কার্য সম্পাদন করা হত না। উক্ত পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কারণে এ যুগেও সুধী ও জ্ঞানীদের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য বা মাযহাবের বিভিন্নতা নেই। কেননা, সবাই চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাবে এবং একমতে ঐক্যবদ্ধ। যেমন নাকি মুসলিম খলীফাগণ মতামতের ব্যাপারে নিজ নিজ খিলাফতের যুগে হাদীস ফতওয়া (সমস্যা সমাধান) বিচার মীমাংসা ও ওয়ায-নসীহতে এককভাবে মুসলমানগণ কর্তৃক মান্য হয়ে আসছেন।

উমর (রাযি.) কর্তৃক আবূ বকর (রাযি.)-এর তাকলীদ

হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)-এর ‘ইলামুল মুয়াক্কিয়ীন’ গ্রন্থে এবং ‘সুনানে দারেমী’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর ফারূক (রাযি.) এই মর্মে কানুন জারী করেছিলেন, যে সমস্যায় কোন হাদীস পাওয়া যাবে না তাতে হযরত আবূ বকর (রাযি.)-এর ফয়সালার উপর আমল করা হবে। যদি তার কোন ফয়সালা না পাওয়া যায় তখন বিজ্ঞ সাহাবাদের পরামর্শ মুতাবিক আমল করা হবে।

প্রিয় পাঠক! হযরত উমর ফারুক (রাযি.)-এর উক্ত ফয়সালা থেকে ব্যক্তি বিশেষের বা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির তাকলীদের গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি।

মদীনাবাসীদের নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুসরণ

“মদীনাবাসীরা হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) কে ঐ মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, যে মহিলা ফরয তাওয়াফের পর ঋতুস্রাবে আক্রান্ত হয়েছে। (সে কি বিদায়ী তাওয়াফের জন্য পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? নাকি তার তাওয়াফ রহিত হয়ে যাবে এবং সে চলে যাবে?) হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) ফতওয়া দিলেন, উক্ত মহিলা চলে যেতে পারবে। মদীনাবাসীগণ বললেন, আমরা যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.)-এর মতামতের বিপরীতে আপনার মতামত অনুযায়ী আমল করতে পারব না।বুখারী ৩২৬, ১৭২৫ ।

ফাতহুল বারী নামক বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থে “সাকাফী (রহ.)-এর সূত্রে একই ঘটনার শব্দ ছিল এমন, আপনি ফতওয়া যাই দেন, হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.) তো বলতেন, উক্ত মহিলা তাওয়াফ শেষ না করে যেতে পারবে না।” ফাতহুল বারী ৩/৫৮৮।

“কাতাদার বর্ণনায় পাওয়া যায়, আনসাররা বলেছিলেন, হে ইবনে আব্বাস (রাযি.)! আমরা আপনাকে মানতে পারছি না। কারণ, আপনি যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.)-এর বিপরীত বলেছেন ।”ফাতহুল বারী ৩/৪৬৮।

তাছাড়া ‘ফাতহুল বারী’তে ‘মুসনাদে আবূ দাউদ তায়ালেসী’র উদ্ধৃতির সূত্রে হযরত কাতাদাহ (রাযি.) বর্ণিত হাদীসের নকল করা শব্দ হচ্ছে, فَقَالَتِ الْأَنْصَارُ انْتَابِعُكَ يَا ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا وَأَنْتَ تُخَالِفُ زَيْداً. فَقَالَ سَلُوْا صَاحِبَتَكُمْ أُمَّ سُلَيْمٍ. “আনসারগণ বললেন, আমরা যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.)-এর কথার বিপরীতে আপনার কথা অনুসরণ করতে পারব না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। ফাতহুল বারী ৩/৫৮৮।

আব্বাস (রাযি.) তখন বললেন, আপনারা হযরত উম্মে সুলাইম (রাযি.) কে (অর্থাৎ, আমি যা বলছি তাই ঠিক) উক্ত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মদীনাবাসীগণ হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.)-এর অনুসরণ করেছিলেন এবং তার বিপক্ষে কারো কথা শুনতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাছাড়া এতে এটাও প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বা অন্য কোন সাহাবী তাদেরকে শিরকের মত গুনাহর বা কবীরা গুনাহর মধ্যে জাড়িয়ে পড়ার ফতওয়া বা অপবাদ দেননি।

তথসূত্র:

তাকলীদ ও মাযহাব প্রসঙ্গ

মুফতি হিফজুর রহমান

প্রধান মুফতি,জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাতমসজিদ,মুহাম্মদপুর,ঢাকা।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *