কিয়ামত কখন হবে?
কিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। এ বিষয়টি ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্গত। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অসংখ্য দলীল রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামত ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে বেশী বেশী আলোচনা করতেন। তাই লোকেরা তাঁকে কিয়ামতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করতো। তিনি তাদেরকে সংবাদ দিতেন যে, কিয়ামতের বিষয়টি একটি গায়েবী বিষয়। আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কেউ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে অবগত নয় । আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ يَسْأَلُونَكَ عَنْ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ)
“তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কিয়ামত কখন প্রতিষ্ঠিত হবে? আপনি বলে দিন যে, এই বিষয়ে আমার প্রতিপালকই জ্ঞানের অধিকারী। শুধু তিনিই কিয়ামতকে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করবেন। আকাশ রাজ্যে ও পৃথিবীতে তা হবে একটি ভয়াবহ ঘটনা। তোমাদের উপর তা হঠাৎ করেই চলে আসবে। এমনভাবে ওরা আপনাকে প্রশ্ন করছে আপনি যেন এ বিষয়ে সবিশেষ অবগত। (অর্থাৎ তারা এটা মনে করে আপনাকে প্রশ্ন করছে যে, আপনি কিয়ামতের সময় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন। অথচ এ বিষয়ে আপনার কোন জ্ঞান নেই) আপনি বলে দিন যে, এ সম্পর্কে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা।” (সূরা আ’রাফঃ ১৮৭)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنْ السَّاعَةِ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا) “লোকেরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুনঃ এর জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই। আপনি এটা কি করে জানবেন যে, সম্ভবত কিয়ামত শীঘ্রই হয়ে যেতে পারে!”। (সূরা আহযাবঃ ৬৩)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ (يَسْأَلُونَكَ عَنْ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا إِلَى رَبِّكَ مُنتَهَاهَا ) “তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত সম্পর্কে যে, ওটা কখন ঘটবে? এর আলোচনার সাথে আপনার সম্পর্ক কি? এর চরম জ্ঞান আছে আপনার প্রতিপালকের নিকটেই”(সূরা নাযিআ’তঃ ৪২-৪৪) ।
তিনি আরো বলেনঃ إنّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ ) “কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে”। (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
উপরোক্ত আয়াতগুলো এবং অন্যান্য আয়াতে আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আদেশ দিচ্ছেন তিনি যেন কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারীদেরকে বলে দেন, কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে। তিনিই তার সঠিক সময় সম্পর্কে অবগত আছেন। আকাশ-যমিনের কারো কাছে কিয়ামতের কোন জ্ঞান নেই।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিবরাঈল (আঃ) যখন প্রশ্ন করলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? তিনি উত্তর দিলেনঃ مَا الْمَشْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ “এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশী অবগত নয়”।’
সুতরাং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জানতেন না, জিবরীল (আঃ)ও নয়, এমন কি যেই ফেরেশতা শিঙ্গামুখে নিয়ে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন তিনিও কিয়ামতের সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ।
কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় গোপন রাখার রহস্যঃ
আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের সঠিক সময় কাউকে অবগত করেন নি। উদ্দেশ্য হলো মানুষ যাতে সবসময় সতর্ক থাকে পরকালের জন্যে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং সদাসর্বদা সৎকাজে লিপ্ত থাকে। জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করলঃ কিয়ামত কখন হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ কিয়ামতের জন্যে কি প্রস্তুত করেছো? সে বললোঃ কোন কিছুই প্রস্তুত করিনি। তবে আমি আল্লাহকে ভালবাসি এবং আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসি। তখন নবী (সাঃ) তাকে বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস কিয়ামতের দিন তুমি তার সাথেই থাকবে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমরা একথা শুনে যতটা খুশী হলাম তত খুশী আর কখনও হইনি। আনাস (রাঃ) আরো বলেনঃ আমি নবীকে ভালবাসি, আবু বকরকে ভালবাসি এবং উমারকে ভালবাসি। আশা করি তাদেরকে ভালবাসার কারণে আমি তাদের সাথেই থাকব। যদিও আমি তাদের ন্যায় আমল করতে পারিনা”।’ মোটকথা হাদীছ থেকে আমরা যা অবগত হলাম তা এই যে, কিয়ামত কখন হবে তা নিয়ে গবেষণা করা অনর্থক। কিয়ামতের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং সদাসর্বদা আনুগত্যের কাজে লিপ্ত থাকাই প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তির একান্ত করণীয়।