ইমাম আওযায়ীর সাথে বিতর্ক
ইমাম আবু হানীফা রহ. হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় গিয়েছিলেন। সেখানে শামের বিখ্যাত আলেম ইমাম আওযায়ীর সাথে সাক্ষাত হলো। ইমাম আওযায়ী রহ. ও ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মাঝে রফয়ে ইয়াদাইন তথা নামাযে রুকুর আগে-পরে হাত উত্তোলন সম্পর্কে এক বিতর্ক হয়, যা ইতিহাসে খুবই প্রসিদ্ধ। বিতর্কটি ছিলো এমন,
ইমাম আওযায়ী বললেন, আপনাদের ইরাকবাসীদের কি সমস্যা? আপনারা নামাযে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত উঠান না কেনো?
ইমাম আবু হানীফা বললেন, নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্যান্য স্থানে হাত উত্তোলন সম্পর্কে যে সকল হাদীস বর্ণিত রয়েছে, সেগুলো আমলযোগ্য হওয়ার মাপকাঠিতে পড়ে না ।
রফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছে। ইমাম যুহরী সালেম থেকে, সালেম তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন এবং যখন রুকু ও সিজদা থেকে উঠতেন, তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন ।
হাম্মাদ ইবরাহীম থেকে, ইবরাহীম আলকামা থেকে, আলকামা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময়ই হাত উত্তোলন করতেন। অন্য সময় হাত উঠাতেন না।
আমি যুহরী ও সালেমের সূত্রে হাদীস বর্ণনা করছি আর আপনি তার বিপরীতে হাম্মাদ ও ইবরাহীমের সূত্রে হাদীস শুনাচ্ছেন? এটা কেমন কথা?
ইমাম আওযায়ীর এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার বর্ণিত হাদীসের সনদ উঁচু ও শক্তিশালী। কারণ, তার সনদে মাত্র দুই ব্যক্তির মাধ্যমে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছা যায়। আর ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বর্ণিত হাদীসের সনদে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছতে তিন ব্যক্তি রয়েছে। তাই সনদের দিক থেকে ইমাম আওযায়ীর হাদীসই শক্তিশালী ।
ইমাম আবু হানীফা বললেন, হাম্মাদ যুহরীর চেয়ে বড় ফকীহ, ইবরাহীম সালেমের চেয়ে বড় ফকীহ, আর আলকামা ফিক্হের ক্ষেত্রে ইবনে উমরের চেয়ে কম নন। যদিও ইবনে উমর রা. সাহাবী হওয়ার কারণে তাঁর মর্যাদা রয়েছে। আর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ তো আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদই।
ইমাম আওযায়ী রহ. ইমাম আবু হানীফা রহ. এর এ ব্যাখ্যা শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলেন ।
তথ্যসূত্র:
বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প
লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ