ইবাদত

তাকবীরে তাহরীমা

নামাযের ভিতরে ফরযসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলা। তাকবীরে তাহরীমা মুখে উচ্চারণ করা ফরয।

মাসআলা : তাকবীরে তাহরীমা মুখে উচ্চারণ করে বলা ফরয। মুখে উচচারণ না করে শুধু মনে মনে বললে নামায হবে না। তাকবীরে তাহরীমা মুখে এমনভাবে উচ্চারণ করে বলা ফরয, যাতে সে নিজে শুনতে পায়। কাজেই যে ব্যক্তি তা অস্পষ্ট স্বরে শুধু জিহ্বা আওরিয়ে অথবা মনে মনে বলবে তার তাকবীরে তাহরীমা সহীহ হবে না। কিতাবুল ফিকহি আলাল মাযাহিবিল আরবা ১/১৮১

তাকবীরের তিন অবস্থা

বিভিন্ন প্রকারের নামাযে যতগুলো তাকবীর আমরা বলি, সবগুলো বিশ্লেষণ করলে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. ফরয তাকবীর ২. ওয়াজিব তাকবীর ৩. সুন্নাত তাকবীর

ফরয তাকবীর : শুধু জানাযা নামায ছাড়া যে কোনো নামাযে একটি মাত্র তাকবীর ফরয। আর সেটি হলো তাকবীরে তাহরীমা। জানাযায় চার তাকবীর ও তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোনো তাকবীর ফরয হওয়ার কথা জানা যায় না।

ওয়াজিব তাকবীর : দুই ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর ওয়াজিব।

সুন্নাত তাকবীর : আমরা নামাযে এক রুকন থেকে অন্য রুকনে পরিবর্তিত হই। যেমন- কিয়াম থেকে রুকূ, রুকূ থেকে কওমা, কওমা থেকে সিজদা ইত্যাদি। এই পরিবর্তনসমূহে আমরা যে তাকবীর বলে থাকি তাকে তাকবীরে ইন্তেকালিয়া বলে। এই তাকবীরে ইন্তেকালিয়া সুন্নাতে মুআক্কাদাহ।

ইসলাহ : কিছু মুক্তাদীকে দেখা যায় যে তারা তাকবীরে তাহরীমা ইমামের আগে শুরু করেন ইমামের সঙ্গে বা পরে শেষ করেন। আবার অনেকে ইমামের সঙ্গে শুরু করেন ইমামের আগে শেষ করেন।

মাসআলা : উল্লেখিত দু’টি সুরতই গলত। কোনো সুরতেই মুক্তাদীর নামায হবে না। কারণ ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পরপরই মুক্তাদীর ইক্তেদা সহীহ হয়। তাই মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা ইমামের তাকবীরের পরে হওয়া বাঞ্ছনীয়। মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা ইমামের তাকবীরের আগে শুরু হলে অথবা ইমামের তাকবীর শুরুর পর মুক্তাদীর তাকবীর শুরু হয়ে ইমামের তাকবীর শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলে সে তাহরীমা বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন ফাতওয়ার কিতাবে এসেছে- যদি মুক্তাদী — আল্লাহু’ বলে তাকবীর শুরু করে এবং ইমামের আল্লাহু বলার আগেই তার আল্লাহু শব্দ শেষ করে ফেলে তাহলে তার তাহরীমা সহীহ হবে না। যদি তার আকবার শব্দটি ইমামের আকবার শব্দ বলার পর সমাপ্ত হয় তবুও সহীহ হবে না। কারণ এ ক্ষেত্রে সে শুধু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা করেছে হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর শুধু আকবার শব্দ দিয়ে তাহরীমা সহীহ হয় না। -মুনয়াতুল মুসল্লী, ২২৮

মুক্তাদী ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে তাকবীর বলবে এটা ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মত। অবশ্য তার শাগরিদ ইমাম আবু ইউসুফ এবং ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর মতে মুক্তাদী ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পরে তাকবীরে তাহরীমা বলবে। আর ২য় মতটির উপরই ফাতওয়া। -ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/৬৮

ইসলাহ : তাকবীরে তাহরীমা বলা ফরয। আর তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো সুন্নাত। সঠিক নিয়ম হলো হাত উঠানোর এই কাজটি তাকবীর বলার সঙ্গে সঙ্গে সম্পন্ন করা। কিন্তু অনেককে দেখা যায় তাকবীরে তাহরীমার মাঝে বা পরে হাত উঠায়। আবার অনেকে তাকবীরে তাহরীমার বলার পর হাত সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে তারপর বাঁধে। এরকম করা সম্পূর্ণ ভুল।

মাসআলা : এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো তাকবীরে তাহরীমা বলার পুর্বে হাত কান পর্যন্ত উঠানো এবং তাকবীর বলে হাত বেঁধে ফেলা।

ইসলাহ : তাকবীর বলতে গিয়ে আমরা আরো নানা ধরনের ভুলের শিকার হই। “আল্লাহ” শব্দের হামযাকে টেনে লম্বা করে আল্লাহ বলি। কখনো আকবার শব্দের হামযাকে লম্বা করি। আবার কখনো আকবার শব্দের “বা” কে লম্বা করে “আকবার” উচ্চারণ করে থাকি।

মাসআলা : এগুলো সবই ভুল। ফাতওয়ার কিতাবাদিতে উল্লেখ আছে যে, যদি কেউ আল্লাহু শব্দের হামযা কে টেনে আর আকবার শব্দের আলিফকে টেনে অথবা কে টেনে পড়ে তাহলে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমা ও অন্যান্য তাকবীরের একই হুকুম। কারণ এ-রকম ভুলের কারণে অর্থ পরিবর্তন হয়ে কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়৷ যেমন আল্লামা শামী রহ. বলেছেন, আল্লাহু শব্দের হামযাকে দীর্ঘ করলেও নামায নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি আকবার শব্দের হামযাকে দীর্ঘ করলেও। কেননা এটি প্রশ্নবোধকে পরিণত হয়ে যায়। এমনটি ইচ্ছাকৃতভাবে করলে কুফুরী হবে। অতএব এটা তাকবীর না হওয়ায় এর দ্বারা নামাযের সূচনা সহীহ হবে না। বরং এতে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আবার “আকবার” শব্দের ”বা” কে টেনে পড়লে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা তখন তা ”আকবার” এর বহু বচন হবে। যার অর্থ ঢোল বা তবলা অথবা হায়া কিংবা শয়তানের প্রতি শব্দ। তখন শব্দটি তাকবীরের অর্থ থেকে বের হয়ে যায়। ফলে সেটা আর তাকবীরে তাহরীমা থাকবে না ৷

মাসআলা : তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মাথা সোজা রাখা সুন্নাত। কিন্তু অনেকে মাথা সোজা না রেখে সামনের দিকে ঝুকিয়ে তাকবীর বলে। এরূপ মাথা ঝুকিয়ে তাকবীর বলা আদ্দুররুল মুখতার রচয়িতার মতে বিদ’আত। যদি মুসল্লী ইমামকে রুকুর মধ্যে গিয়ে পায় এবং আল্লাহু আকবার বলে তাঁর পিছনে নামায পড়তে শুরু করে। কিন্তু তার দাঁড়ানো অবস্থায় আল্লাহু শব্দ আদায় হয় আর রুকূতে আকবার শব্দ আদায় হয়, তাহলে তার তাহরীমা সহীহ হবে না। -ফাতওয়ায়ে আলমগীরী

তাকবীরে তাহরীমা বলা যেমন ফরয তেমনি তাকবীরে তাহরীমা দাঁড়িয়ে বলা ফরয। কাজেই অর্ধেক রুকূতে গিয়ে বললে অথবা পুরোটাই রুকূতে গিয়ে বললে নামায হবে কী ভাবে?

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *