নামাযের ওয়াক্ত সমূহ
ফজরের নামাযের ওয়াক্ত
ফজরের ওয়াক্ত সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার সাথে সাথে আরম্ভ হয়। রাত্রির শেষ ভাগে আকাশের উপরের দিকে লম্বা- লম্বিভাবে একটি কালো রেখা স্তম্ভের ন্যায় দৃশ্যমান হয়, তখন সামান্য সময়ের জন্য একটু অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে, এটা হল সুবহে কাযিব। এরপর পূর্বাকাশে উত্তর দক্ষিণে আড়া- আড়িভাবে একটি সাদা রেখা বিস্তৃত হয়, একেই সুবহে সাদিক বলা হয়। তখন থেকেই ফজরের সময় শুরু হয়। আর পূর্বাকাশে সূর্য উদয় হওয়ার সাথে সাথে ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।
যোহরের নামাযের ওয়াক্ত
ওলামায়ে কেরাম এ কথার উপর একমত যে, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। তবে শেষ ওয়াক্ত নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানিফা রহ. এর মতে কোন বস্তুর মূল ছায়া ব্যতীত যখন তার ছায়া দ্বিগুণ হবে তখনই ওয়াক্ত শেষ হবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রহ. (সাহেবাইন) এর মতে মূল ছায়া ব্যতীত বস্তুর ছায়া একগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের সময় বাকী থাকে। তবে ফতোয়া ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর মতের ওপর।
আসরের নামাযের ওয়াক্ত
ইমামদের মতভেদ অনুযায়ী যোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। কিন্তু ইমাম মালেক রহ. এর মতে যোহরের সময় শেষ হওয়ার পর চার রাকাত নামায পড়ার সময় পরিমাণ যোহর ও আসর উভয়ই পড়া যায়। এ সময়কে তিনি মুশতারিক ওয়াক্ত বলেন। আর সূর্যাস্তের সাথে সাথে আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।
মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত
মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত নিয়ে কোন মতভেদ নেই অর্থাৎ সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। তবে শেষ সময় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মতে সূর্যাস্তের পর অযু, আযান, ইকামাত ও পাঁচ রাকাত নামায পড়তে যত সময় লাগে ঐ সময় পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত বাকী থাকে। অন্য বর্ণনায় শুধু তিন রাকাত পড়া পর্যন্ত বাকী থাকে। তৃতীয় বর্ণনা অনুযায়ী শাফাক (আকাশের লালিমা) ডুবে যাওয়া পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।
ইশার নামাযের ওয়াক্ত
ইমামদের মতভেদ অনুযায়ী মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়। এর শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেয়ী রহ. এর এক বর্ণনা মতে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ইশার ওয়াক্ত বাকী থাকে। ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ রহ. এর দ্বিতীয় বর্ণনা মতে অর্ধরাত পর্যন্ত ইশার সময় বাকী থাকে। আর হানাফী মাযহাব মতে মধ্যরাত পর্যন্ত জায়েয ওয়াক্ত, আর মধ্যরাতের পর হতে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত বাকী থাকে।
বিতর নামাযের ওয়াক্ত
ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রহ. এর মতে বিতরের নামাযের ওয়াক্ত ইশার নামাযের পরেই শুরু হয়। আর ইমাম আযম আবূ হানীফা রহ. এর মতে ইশাও বিতরের ওয়াক্ত একই সময় শুরু হয়। তবে উভয় নামাযের মধ্যে তারতীব ঠিক রাখা জরুরী। সুতরাং কোন ব্যক্তি রাতের শুরু অংশে ইশা ও শেষাংশে বিতর ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর মতে পড়ার পর ইহা সাব্যস্ত হয় যে, ইশার নামায বিনা অযুতে পড়া হয়েছে, তখন ব্যক্তি শুধু ইশার নামায পূণরায় পড়বে। বিতর পড়া লাগবে না। আর সাহেবাইন রহ. এর মতে যেহেতু বিতর ইশার পরে পড়তে হয় তাই পূণরায় ইশা ও বিতর উভয়টি পড়তে হবে। (কুদূরী)
ফজরের পর কতক্ষণ নামায পড়া নিষেধ
ফজরের পরে সূর্য উদয় হওয়ার সময় থেকে এক তীর পরিমাণ (অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী নয় মিনিট) নামায পড়া নিষেধ। তবে প্রচলিত ক্যালেন্ডারে সতর্কতার জন্য কিছু বেশী বিলম্বের কথা লিখা হয়েছে। গবেষক আলেমদের মতানুযায়ী ১৫ মিনিট বিলম্ব করা উত্তম। তাই এ মতটি আমল করা যায়। আবার কেউ অধিক সতর্কতার খাতিরে ২৩ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
যে সময়গুলোতে নামায পড়া সম্পূর্ণ নিষেধ
১. সূর্য উদিত হওয়ার সময়। ২. সূর্য ঢলার সময়। ৩. সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়। (শরহে বেকায়া)
তথ্যসূত্রঃ
বই: নামায পড়ি বেহেশতের পথে চলি
লিখক: মাওলানা মুমিনুল হক জাদিদ
মুহতামিম: ফেনী জামিয়া ইসলামিয়া