ইবাদত

মজলিসে বসার সুন্নাত তরীকা

১. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বড় মজলিসে বসতেন তখন তিনি অপরের সঙ্গে মিলে মিলে বসতেন (মাঝে ফাঁকা রাখতেন না) এবং বলতেন, তোমাদের কী হলো, আমি তোমাদের বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখছি। -সুনানে আবু দাউদ

২. সমবেত সাহাবায়ে কিরাম রাযি. এমন দৃঢ়ভাবে বসতেন যে মাথা পর্যন্ত নড়াচড়া করতেন না, মনে হতো তাঁদের মাথায় পাখি বসে আছে। -নববীকৃত আমালুল ইয়াওমি ওয়ান নাহার

৩. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মজলিসের জায়গা প্রশস্ত হলে) বেশি চাপাচাপি করে বসতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, সর্বোত্তম মজলিস তাই যা প্রশস্ত হয় (কেননা চাপাচাপি হলে শ্রোতাদের মন বসে না)। -সুনানে আবু দাউদ

  1. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মজলিসে পরে তাশরীফ নিলে যেখানে জায়গা পেতেন সেখানেই বসে যেতেন এবং অপরকেও এ নির্দেশ দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ

৫. হযরত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসের শেষে এই দু’আ পড়তেন (হাত উঠিয়ে দু’আ করার নিয়ম ছিলো না)- سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

অর্থ : “হে আল্লাহ! পবিত্রতা ও প্রশংসা তোমারই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, কাজেই তোমার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তোমার কাছেই তাওবা করছি।” -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪৮৬১; জামে তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৪৩৩

৬. সাহাবায়ে কিরাম রাযি. যখন কোনো এমন ছোট মজলিসে বসতেন যেখানে লোক সংখ্যা কম, সেখানে তারা গোল হয়ে বসতেন।

৭. গোল হওয়া অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে মিলে মিলে বসতেন।

৮. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে সাহাবায়ে কিরাম রাযি. আদবের সঙ্গে সুন্নাত তরীকায় বসতেন ।

৯. সাহাবায়ে কিরাম রাযি. মুজাহাদার সঙ্গে বসতেন, অর্থাৎ হাজারো জরুরত থাকলেও তা দাবিয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়ান শুনতে থাকতেন।

১০. তাকাব্বুরির কারণে না হলে চারজানু হয়ে বসা অর্থাৎ আসন গেড়ে বসা যেতে পারে।

১১. কিছু রোদে কিছু ছায়ায় এরকম অবস্থায় বসবে না। এমনটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

১২. কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে বসবে না।

১৩. মজলিসের মধ্যে যদি কেউ নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু শীঘ্র ফিরে এসে বসার ইচ্ছা করে, তবে সে জায়গা তার হক, অন্য কারও সে জায়গায় বাসা উচিত নয়।

১৪. মজলিসের মধ্যে কোনো দরকারবশত নিজের জায়গা থেকে উঠতে হলে যদি পুনরায় ফিরে আসার ইচ্ছা থাকে, তবে পাগড়ি, রুমাল বা অন্য কিছু সেখানে রেখে যাওয়া উচিত। তাহলে মানুষ বুঝবে যে, আবার আপনি ফিরে আসবেন।

১৫. আগে থেকে উপবিষ্ট দুজন লোকের মাঝখানে তাদের বিনা অনুমতিতে অন্য কারও এসে বসা উচিত নয়।

১৬. কোনো লোক মজলিসে এলে একটু সরে বসে তাকে জায়গা করে দিয়ে সম্মান করা উচিত।

১৭. মজলিসে এসে যেখানে জায়গা পাবে সেখানেই বসে পড়বে, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করবে না।

১৮. মজলিসে এমন ভাব নিয়ে বসবে না, যাতে সাধারণ লোক কথা বলতে ভয় পায়; বরং সকলের সঙ্গে মিলে-মিশে বসবে। সকলের সঙ্গে হাসিমুখে কথাবার্তা বলবে।

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *