শিশুসন্তানকে ভালোবাসা
শিশুসন্তানের প্রতি পিতামাতার অকৃত্রিম ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত এবং সহজাত এতে কোনো সন্দেহ নেই । আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মাতা-পিতার অন্তরেই সন্তানের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। মাতা-পিতা মুসলিম হোক বা না হোক, কোনো ধর্ম বা আল্লাহতে বিশ্বাসী হোক বা না হোক তাতে কোনো তারতম্য নেই। কেননা, শিশুসন্তান হলো মাতা-পিতার এক উষ্ণ মিলনের ফলশ্রুতি। পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব দুটো মহৎ অর্থ বিশেষ। যার মধ্যে আল্লাহ গচ্ছিত রেখেছেন তাঁর করুণা ও ভালোবাসার কিছু নিদর্শন তিনি পিতা-মাতার উপর বর্ষণ করেছেন আপন দয়া ও কল্যাণের বারিধারা, যার কারণে তারা প্রাপ্ত হন পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং ধারাবাহিকতার অনুভূতি।
কুর’আন বলছে- مِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً
আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এও একটি যে, তিনি তোমাদের হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জুড়ি যাতে তোমরা তার নিকট গিয়ে প্রশান্তি পেতে পার, আর তোমাদের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভালোবাসা ও করুণার সম্পর্ক । (সূরা আর্ রুম ৩০ : ২১,৫২)
কোনো কোনো তাফসীরকার আয়াতে উল্লিখিত ভালোবাসা ও করুণার দ্বারা সন্তান-সন্ততির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কেননা, এর মাধ্যমেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক মজবুত হয় এবং এ সম্পর্কের মধ্যে স্থিতিশীলতা আসে।
মূলত স্বামী-স্ত্রীর আবেগ উচ্ছ্বাসপূর্ণ প্রেম-ভালোবাসা পরিণতি ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এ সন্তানের মাধ্যমে। সন্তান হচ্ছে দাম্পত্য-জীবনের নিষ্কলুষ পুষ্পবিশেষ। তাই সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার ভালোবাসা অকৃত্রিম ও নিখাদ ও স্বভাবজাত। সন্তানের ভালোমন্দ সম্পর্কে পিতা-মাতা সর্বাধিক সচেতন হয়ে থাকেন। সন্তানের প্রতি তাদের যদি এ অকৃত্রিম ভালোবাসা না থাকত তাহলে বিশ্ব চরাচরে মানব অস্তিত্ব চিরদিনের জন্য নিঃশেষ হয়ে যেত। সন্তান-সন্ততি মাতাপিতার জন্য অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ অলঙ্কার এবং মানব সম্পদ বিকশিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। সৎ সন্তান মাতাপিতার জন্য আশীর্বাদ ও আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহর কুরআনে এসেছে- الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا
“ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম। তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত হিসেবেও উৎকৃষ্ট। (সূরা আল কাহফ,১৮ : ৮৬)
ছোটদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার নির্দেশ ও বড়দের দেখানোর নির্দেশ সম্মান দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন- لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمُ صَغِيرَنَا وَيُوَقِّرُ كَبِيرَنَا “সে আমার দলভুক্ত নয়, যে ছোটদের প্রতি স্নেহপরায়ণ ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় ৷”(সহিহ মুসলিম)
এছাড়া স্নেহ ভালোবাসা পাওয়া শিশুদের অধিকার ।৪৩
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ جَاءَ أَعْرَانِي إِلَي النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ تُقَبلُونَ الصَّبيَانَ فَمَا نُقَبِّلُهُمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَم أَو أَمْلِك لَكَ أَن نَزَعَ اللهِ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةِ
“হযরত ‘আয়িশা রা. বলেন, “জনৈক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সা.-এর খিদমতে এসে বলল, আপনি কি শিশুদের চুমু দেন? আমরা তো কখনো শিশুদের চুমু দেই না। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে দয়া মহব্বত ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন, তবে আমারই বা কি করার আছে?(সহিহ বুখারী,হাদীস নং,৫৬৫৩)
عن أبي هريرة أن الأقرع بن حابس أبصر النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ لم يُقبلُ الْحَسَن فَقَالَ إِنَّ لِي عَشَرَ مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْت وَاحِدًا منْهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهُ مَنْ لَا يَرْحَمْ لَا يرحم
“হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সা. হযরত হাসান ইবনি ‘আলী রা. কে চুমু দিলেন, সেখানে আকরা ইবন হাবিস রা. উপস্থিত ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি বললেন, আমার দশটি সন্তান আছে, আমি কখনো তাদের চুমু দেইনি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সা. তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না ।”(সহিহ মুসলিম,হাদীস নং,২৩১৮)
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম