সন্তানকে সঠিক লালনন-পালন
শিশু-সন্তান জন্মগ্রহণের পর প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশু প্রতিপালনের ব্যাপারে পিতা-মাতা ও অভিভাবকের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। হৃদয় নিংড়ানো ঐকান্তিক ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতার কোমল পরশে শিশুকে অতি যত্নসহকারে প্রতিপালন করা কর্তব্য।
পিতামাতার উচিত সন্তানদের প্রতিটি বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, তাদের যথাযথ পরিচর্যা করা, তাদের জন্য উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা এবং তাদের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ করা। এ বিষয়ে আল-কুরআনে এসেছে- وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُونِ “সন্তান ও জননীর ভরণ-পোষণের ভার পিতার উপরই ন্যস্ত। (সূরা আল বাক্বারা ২ : ২৩৩।)
পিতার নিকট সন্তানের অধিকার হচ্ছে তিনি তাদের তার খানাপিনা, থাকা ও পোশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে যতদিন সে নিজস্ব ক্ষমতায় উপার্জন করতে সমর্থ না হয়। আর এটা না করলে পিতা গুনাহগার হবে।
মহানবী (স.) বলেন— “যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত থাকে, সে যদি তা যথাযথভাবে পালন না করে তাদের ধ্বংস করে, তা হলে এতেই তার বড় গুনাহ হবে ৷”(ইমাম আবু দাউদ, সুনান আবু দাউদ, কিতাবুয যাকাত, বাবু ফি সিলাতির্ রিহমি, প্রাগুক্ত, খণ্ড-২, পৃ. ১৩২, হাদীস নং ১৬৯২; – ইমাম আহমদ, মুসনাদ আহমদ, মুসনাদুল মুকাচ্ছিরিনা মিনাস সাহাবা, প্রাগুক্ত, খণ্ড-২, পৃ. ১৬০, হাদীস নং ৬৪৯৫।)
বস্তুত জন্ম হওয়ার পর থেকে সে উপার্জনক্ষম হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা পিতার দায়িত্ব। এ হলো সন্তানের অধিকার। ৮ প্রত্যেক পিতাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তানের ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
আইনের মাধ্যমে এ কাজ তো বেশ কঠিনই হতো, যদি না আল্লাহ তা’আলা পিতার অন্তরে সন্তানের জন্য খরচ করার আবেগ সৃষ্টি করে দিতেন। তাই দেখা যায়, পিতা কঠোর পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে আয়- উপার্জন করেন তা দ্বিধাহীন চিত্তে সন্তানের জন্য খরচ করে থাকেন এবং সন্তানের হাসিমুখ দেখে প্রশান্তচিত্তে তা মেনে নেন ৷
তাছাড়া পিতামাতা সব সময় শিশুসন্তানের কল্যাণে সবকিছু করবে, সন্তানের কল্যাণকামী হবে, তাদের সৎপথে চালাবে। তাদের জন্য দু’আ করবে । আল-কুর’আনের বাণী, رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلُ دُعَاءَ “হে প্রভু! তুমি আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। প্রভু আমার, তুমি প্রার্থনা কবুল কর। (“সূরা ইবরাহিম,১৪:৪০)
নামাযের আদেশ করা এবং বিছানা আলাদা করে দেওয়া সন্তানকে বাল্যকাল থেকেই ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাত বছর বয়সে নামাযের আদেশ এবং দশ বছর বয়সে বিছানা আলাদা করে দেয়া পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা.-এর হাদীস, عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ .
হযরত ওমর ইবনে শুআইব তার পিতা, তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছরে উপনীত হলে নামাযের আদেশ দাও। আর যখন তারা দশ বছরে উপনীত হয়, তখন তাদেরকে (নামায না পড়লে) প্রহার কর এবং বিছানা আলাদা করে দাও। (সুনানে আবি দাউদ,হাদীস নং,৪৯৫)
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম