ইবাদত

ইস্তিঞ্জার (পেশাব-পায়খানার) বিধিবিধান

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীকে পছন্দ করেন।” -সূরা বাকারা : ২২২

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা পবিত্রতার প্রতি বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বনকারীদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ করেন- فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَهِّرِينَ অর্থ : “সেখানে (মসজিদে কুবার আশপাশে) এমন লোক রয়েছে যারা পবিত্র থাকতে ভালোবাসেন। আর আল্লাহ তা’আলা পবিত্রদেরকে ভালোবাসেন।” -সূরা তওবা : ১০৮

হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রাযি., হযরত জাবের ও হযরত আনাস রাযি. প্রমুখ বলেন, কুবায় বসবাসকারী আনসার সাহাবী রাযি. গণের সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- “হে আনসারগণ! আল্লাহ তা’আলা পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন, এখন তোমাদের পবিত্রতার বর্ণনা দাও। তারা আরয করলেন, আমরা নামাযের জন্য উযূ করি। জানাবতের গোসল করি এবং ঢিলা ব্যবহার করার পর পানিও ব্যবহার করি। শুনে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- “হ্যাঁ এই সেই পবিত্রতা, তোমরা একে আকঁড়ে ধর।” –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৩৫৫; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস নং- ৫২৫

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ অর্থ : “পবিত্রতা ঈমানের অংশ।” -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২২৩

ইস্তিঞ্জার (পেশাব-পায়খানা) সময় আট কাজ করা সুন্নাত

১. বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। -আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩২

২. জুতা/স্যান্ডেল পায়ে রাখা। -তাবকাতে ইবনে সাদ : ১৮৫. কানয, হা: ১৭৮৭

৩. মাথা ঢেকে রাখা। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস নং- ৪৬৪, ৪৬৫

৪. দিলে দিলে ইস্তিগফার করা।

৫. ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা।’ -বাইহাকী, হাদীস নং- ৫১৭

৬. পানি খরচ করা। -সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং- ৮৩

৭. ডান পা দিয়ে বের হওয়া। -আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩২

৮. আগে ও পরে দু’আ পড়া।

ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশের দু’আ- بِسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ . অর্থ : “আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি (দুস্কৃতিকারী) শয়তান জ্বীন থেকে।” -সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৩৭৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস নং- ৩০৫২২

ইস্তিঞ্জাখানা থেকে বের হওয়ার দু’আ- غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي اذْهَبَ عَنِى الْأَذَى وَعَافَانِي অর্থ : “হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দিন। সকল প্রকার প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার। যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করেছেন এবং আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৩০০, ৩০১; জামে তিরমিযী, হাদীস নং- ৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস নং- ৯৮২৪, ৯৮২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস নং- ৩০৫৩০

পাঁচ দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ

১. কিবলার দিকে মুখ করে।

২. কিবলার দিকে পীঠ করে।

৩. চন্দ্র ও সূর্যের দিকে মুখ করে।

  1. প্রবল বাতাসের দিকে মুখ করে।

৫. একেবারে উলঙ্গ হয়ে।

ছয় জিনিস সঙ্গে নিয়ে ইস্তিঞ্জায় যাওয়া নিষেধ

১. আল্লাহ তা’আলার নাম।

২. নবী আ. গণের নাম।

৩. ফেরেশতাগণের নাম ৷

৪. কুরআন শরীফের আয়াত ।

৫. হাদীস শরীফের টুকরা।

৬. দু’আ কালাম (লিখিত বা অঙ্কিত)।

দশ জায়গায় ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ

১. মানুষ চলাচলের রাস্তায়।

২. ছায়াদার কিংবা ফলদার গাছের নিচে।

৩. উযূ ও গোসলের স্থানে।

  1. গর্তের ভিতরে।

৫. গোরস্থানে।

৬. দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে।

৭. বিনা ওযরে পানিতে।

৮. ঘরে বা বিছানায়।

৯. মসজিদের আঙ্গিনায় বা ঈদগাহে।

১০. মানুষের সম্মুখে।

ইস্তিঞ্জার সময় আট কাজ করা নিষেধ

১. কথা বলা।

২. যিকির করা বা তাসবীহ পড়া।

৩. কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।

৪. সালাম দেয়া।

৫. সালামের উত্তর দেয়া।

৬. খাওয়া ও পান করা ৷

৭. মিসওয়াক করা ৷

৮. কোনো কিছু পড়া বা লেখা।

ইস্তিঞ্জায় দশ জিনিস ব্যবহার করা নিষেধ

১. হাড্ডি।

২. কয়লা।

৩. কাগজ।

৪. কাঁচ।

৫.গাছের কাঁচা পাতা।

৬. খাদ্যদ্রব্য।

৭. শুকনো গোবর।

৮. যমযমের পানি ।

৯. ডান হাত দ্বারা।

১০. ব্যবহৃত ঢিলা পুনরায় ব্যবহার করা।

ইসলাহ :

(ক) পেশাবের ছিটা থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে বেঁচে থাকতে হবে। কেননা হাদীস শরীফে আছে, অধিকাংশ কবরের আযাব পেশাবের ছিটা থেকে সতর্ক না থাকার কারণে হয়। পেশাবখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে এমনভাবে নির্মাণ করা চাই, যাতে করে পেশাবের ছিটা শরীরে এবং জামায় না পৌঁছতে পারে।

(খ) পেশাব করার জন্য নরম বা ঢালু জায়গা খুঁজে নিবে, যাতে পেশাবের ছিটা শরীরে না আসে; বরং মাটি তা শুষে নেয় বা গড়িয়ে যায়।

পেশাব-পায়খানার কতিপয় আদব

১. পেশাব-পায়খানার বেগ থাকলে উযূ করার আগেই তা সেরে নিবে। পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রাখা উচিত নয় এবং এমতাবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ।

২. পেশাব-পায়খানার চাপ অনুভব হলে ঢিলা-কুলুখ এবং বদনা জাতীয় পাত্রে কিছু পানি নিয়ে ইস্তেঞ্জাখানা বা কোনো আড়াল জায়গায় গিয়ে প্রয়োজন সারবে।

৩. বসে পেশাব করবে। অপারগতা ছাড়া কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করবে না। -জামে তিরমিযী

৪. বসার সময় জামা-কাপড় রীতিমতো ঠিক করে নিবে। যেন তাতে কোনো নাপাকী না লাগতে পারে।

৫. বসার কাছাকাছি গিয়ে কাপড় উঠাবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড় খুলবে না। -সুনানে আবু দাউদ

৬. ইস্তেঞ্জার সময় যথাসম্ভব গুপ্তাঙ্গের দিকে নযর করবে না এবং তাতে ডান হাত লাগাবে না ৷

৭. পুরুষের পেশাব করা শেষ হলে, বাম হাতে গুপ্তাঙ্গের মাথায় ঢিলা ধরে নির্জন স্থানে উঠা-বসা এবং প্রয়োজনে একটু হাঁটাহাঁটি করবে। তারপর পেশাবের নির্গমন বন্ধ হওয়া নিশ্চিত হলে পানি ব্যবহার করবে।

৮. কুলুখ ব্যবহাররত অবস্থায় কারও সঙ্গে কথা বলবে না এবং জনসম্মুখে হাঁটাহাঁটি করবে না।

৯. ডান হাতে পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে শৌচকর্ম সমাধা করবে।

১০. কুলুখ ব্যবহার না করলে, পেশাবের ফোঁটায় কাপড়-চোপড় নাপাক হয়ে যেতে পারে এবং পেশাব নির্গমন বন্ধ হওয়ার আগে উযূ করলে উযূও সহীহ হবে না। কাজেই এরকম উযূ দিয়ে নামায আদায় করলে তাও সহীহ হবে না। উল্লেখ্য – একান্ত কারো নিকট কুলুখ না থাকলে কিছুক্ষণ বসে নড়াচড়া করবে এবং কয়েকবার কাশি বা খাকারী দিয়ে পেশাবের নির্গমন বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পানি ব্যবহার করবে।

১১. মহিলাদের জন্য পেশাব করে কুলুখ নেয়া জরুরী নয়। তারা শুধু পানি ব্যবহার করবে। তবে পায়খানার পর অবশ্যই কুলুখ ব্যবহার করবে।

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *